আচ্ছা বলেন তো, ২টা শার্ট আর একটা প্যান্ট ধুতে হলে কতটুকু পানিতে কতটুকু হুইল দিতে হবে?
আজ শুক্রবার তাই অফিসটা বন্ধ। সেই কারনে আজকে আমার মূল কাজ হলো খাওয়া আর ঘুমানো। বিকালে সাড়ে ৪টার দিকে কারো ডাকে আমার দুপুরের ঘুমটা ভাঙ্গলো। মুখে বিরক্ত নিয়ে চেয়ে দেখি মা আমায় ডাকছে। তাই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম…
— কি হয়েছে? এই অসময়ে ডাকছো কেন?
— তোর বাবা আর আমি বসার রুমে আছি। একটু দুই কাপ কফি বানিয়ে দিয়ে যা তো।
— মানে কি? আমাকে এখন কফি বানাতে হবে নাকি?
— হুমম তারাতারি দুই কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আয় তো।
— যাও বসো, যাচ্ছি
কষ্ট আর রাগ দুইটাই নিয়েই বিছানা ছাড়তে হলো। মা, বাবা আর আমার জন্য তিন কাপ কফি বানিয়ে বসার রুমে গেলাম। বাবা আমাকে দেখে মুচকি হাসছে।
— মা এটা কি হলো? সামান্য কফির জন্য আমার দুপুরের ঘুমটা ভাঙ্গালে।
— সেই ২ টাই ঘুমিয়েছিস। এখন পাঁচটা বাজতে চললো। আর কত ঘুমাবি?
— মা আমি তো সপ্তাহে এই একটা দিনই দুপুরে ঘুমানোর সময় পাই।
— আমরাও তো এই একদিনই তোর হাতে কফি খাওয়ার সুযোগ পাই।
— হইছে। এবার সত্যি করে বলো আমাকে ঘুম থেকে ডাকলে কেন?
— এবার একটা বিয়ে কর। তাহলে আর অসময়ে আমাদের কফি বানিয়ে খাওয়াতে বলবো না। তোর বউই না হয় আমাদের খাওয়াবে।
— হুমম আবার শুরু করলে।
— তো কি করবো? আমাদের বয়স হয়েছে। আর তোর বয়সের ছেলেরা তো কত আগেই প্রেম করে বিয়ে নিয়ে ঝামেলা করে। তোর যদি কোন মেয়ে পছন্দ থাকে তাহলে বলে দে। আমরা যাবো সেই মেয়ের বাসায়।
— মা এইসব আমি করি না আর এখন বিয়ে করার কোন শখ নেই। প্রতি সপ্তাহে একবার তোমাদের কফি খাওয়ানোর
জন্য বিয়ে করবো। এতটা বোকাও আমি নই।
কথাটা বলেই আমার রুমে চলে গেলাম। আর পিছন থেকে মায়ের সেই এক ইমুশনাল ডায়লগ ” আমাদের বয়স হয়েছে। যেকোন দিন মারা যেতে পারি। মরার আগে ছেলের বউকে দেখে যাওয়ার সুযোগটা দে।”
আমি বিছানায় বসে ভাবতে লাগলাম। না এবার সত্যটা সবার সামনে আনা খুব প্রয়োজন। আজকে প্রিয়ার সাথে দেখা করতে হবে। সবার জি এফ বিয়ের জন্য প্যারা দেয় আর আমার জি এফ একদম উল্টা। ফোনটা বের করে প্রিয়াকে ফোন দিলাম। মেয়েটাও মনে হয় ঘুমাচ্ছে। ঘুম ঘুম চোখে বলল…
— আপনার ডায়াল কৃত মানুষটি এখন ঘুমাচ্ছে। আর কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করুন ধন্যবাদ।
— ওই কুম্ভকর্ণের বউ আমি রাজ বলতাছি।
— আরে তুমি। বেঁচে আছো তাহলে। গত ৫ দিন আগে মনে হয় ফোন দিয়েছিলে একবার।
— কাজের অনেক চাপ তো। যাই হোক, এখন রেডি হয়ে লেকের পাশে আসো। আমি তোমার জন্য ওয়েট করবো।
— হুমম তুমি ৩০ মিনিট ওয়েট করো, আমি মেকাপটা করেই আসছি।
— ওই সিম্পল ভাবে আসো।
— দেখি।
আর কোন কথা না বলে ফোনটা কেটে দিলো। বিরক্তকর লাগছে এখন। সব মেয়েরা তার বয়ফ্রেন্ডের জন্য পাগল আর আমার জি এফের তো কোন তাপ উত্তাপ নেই।
কিছুক্ষণের মাঝে তৈরি হয়ে লেকের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম। লেকের পাড়ে একটা বসার জায়গায় বসে বসে মহারাণীর জন্য অপেক্ষা করছি আর মেডামের আসার নাম নেই। কিছুক্ষণ পর মেডামের আসার সময় হলো। আমার পাশে এসে বলল..
— হুমম বলো তোমার জরুরী কথা কি?
— বাবা মা বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে প্রিয়া।
— হা হা হা হা ( হেসেই চলল)
— ওই হাসছো কেন?
— হাসবো না তো কি করবো? এই কথাটা গার্লফ্রেন্ড তার বয়ফ্রেন্ডকে বলে থাকে। কিন্তু তুমি ঠিক তার উল্টা।
— ধ্যাত প্রিয়া বুঝার চেষ্টা করো আর তুমি চাইলে আমি বাসায় তোমার কথাটা বলবো।
— যেহেতু এতদিনেও বলতে পারো নি তাই আর বলে লাভ নেই।
— মানে??
— রাজ একটা জিনিস ভেবে দেখো তো ভালবাসায় কি দরকার?
— বিশ্বাস,অপেক্ষা,সময়, রাগ আর অভিমান।
— ঠিক বলেছো। এবার একটু বলো তো, এই গুলোর মাঝে তুমি কোনটা আমায় দিয়েছো।
— একটাও না।
— যদি কোনটা না দিয়ে থাকো তাহলে আমাদের ভালবাসা পূর্ণতা পায় নি। আর ভালবাসা যদি পূর্ণ না হয় তাহলে তোমাকে বিয়ে করার কোন প্রশ্নই হয় না।
— এটা কেমন লজিক? তুমি তো আমাকে ভালবাসো।
— ভালবাসতাম কি না সেটাও মনে পড়ছে না। আসলে রনি নামে একটা ছেলে গত এক বছর ধরে আমার পিছনে
ঘুরছে। গতকাল আমায় প্রপোজ করেছিল আর আমিও রাজি হয়ে গেছি। কারন কাল বিকালে তোমাকে ১২টা ফোন দেই কিন্তু একবারও তুমি ফোনটা ধরো নি। এমন কি ফোনটাও ব্যাক করো নি। তাহলে এবার বলো, তোমার মত এমন ছেলেকে কিভাবে ভালবাসা যায়। সরি এন্ড ব্রেকআপ।
— প্রিয়া তুমি এমনটা করতে পারো না।
— চুপ করো তো। যখন এভয়েট করেছো তখন খেয়াল ছিল না। ফুলের চারপাশে যে চুর ঘুরে বেড়ায়।চোখের আড়াল হলেই ফুল চুরি হতে পারে।
–বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু প্রিয়া।
— তোমার বাসার রাস্তাটা ওই দিকে। সাবধানে রাস্তা মাপো।
কথাটা বলেই প্রিয়া আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেল আর আমি এক জায়গাতে বসে বসে ভাবছি প্রিয়া তো কোন ভুল করে নি বা ভুল বলেও নি। আর বসে না থেকে আমিও বাসার দিকে রওনা দিলাম।
বাসায় আসতেই মা বলল…
— কিরে কোথায় গিয়েছিলি? এত তারাতারি চলে আসলি।
— ফাইনাল ডিসিশন নিতে।
— মানে?
— তোমরা মেয়ে দেখো, আমি বিয়ে করার জন্য রেডি।
— মেয়ে দেখবো কি রে? অল রেডি কথা চলছে।
মায়ের কথা শুনে আমি শকড খেলাম। আমার মা তো আমার থেকেও ফাস্ট। কে বলে বাংলাদেশে 4G আসে নি? আমার মা তো 10G স্পিডে আমার বিয়ের দেখাশোনা করছে। আমি একটু শান্ত হয়ে বললাম।
— মেয়ের বাসা কোথায় আর নাম কি?
— বলতেছি, তুই চাইলে এখন গিয়ে দেখা করে আয়। আসলে আমি আর তোর বাবা পছন্দ করেছি। এখন তুই তোর কোন বন্ধুকে নিয়ে একটু মেয়েটা দেখে আয়। নয়ত কালকে বলবি ” আমার অফিসে অনেক কাজের চাপ। ”
— ঠিক আছে তুমি মেয়ের বাসায় ফোন দিয়ে জানাও। আমি দেখি রিজুকে ফোন দিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় কি না?
মা হাসি মুখে মেয়ের বাসায় ফোন দিতে চলে গেল আর আমি রুমে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এবার রিজুকে ফোন দিলাম।
— হে রাজ বল।
— কোথায় আছিস এখন?
— বাসায় আছি। কেন রে?
— মেয়ে দেখতে যাবো…
— ছিঃ রাজ তুই এতো নিচে নামলি যে আজকাল ফালতু ছেলেদের মত মেয়ে দেখবি।
— আমার কথা তো শেষ করতে দিবি নাকি। মা আমার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখেছে। ওই মেয়ের বাসাতে যাবো। আর তুই চাইলেও যেতে পারিস। শুধু তুই আর আমি।
— দোস্ত মেয়ের ছোট বোন আছে নি।
— মাইর খাইছোস নাকি খাবি।
— হা হা হা ওকে তুই আমার বাসার সামনে এসে ফোন দিস।
— ওকে ।
তারপর মায়ের থেকে বাড়ির ঠিকানা নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম আর মেয়ের নামটা জেনে নিলাম। মেয়ের নাম হলো সঞ্চিতা। মেয়েদের বাসা আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় ৪০ মিনিটের পথ। রিজুকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।দুই বন্ধুই চুপচাপ ভদ্র হয়ে বাসায় গেলাম। মেয়ের বাসায় কলিং বেল চাপতেই মেয়ের বাবা এসে দরজা খুলে দিলো। আমাকে মনে হয় ওনারা চিনেন। আংকেল খুব সহজ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন..
— রাজ, বাবা ভাল আছো?
— জ্বি আঙ্কেল আপনারা সবাই কেমন আছেন?
— হুমম ভাল। তোমার সাথে ও মনে হয় তোমার বন্ধু ।
— হুমম ওর নাম রিজু।
— যাক গে, তুমি যে আসবে আমরা কেউ ভাবতেও পারি নি।
— কেন?
— আসলে তোমার মা বলে ছিল তুমি নাকি বলছিলে “বিয়ের আগে তুমি মেয়ে দেখতে চাও না”।
— এটা আবার কবে বললাম? (আস্তে আস্তে)
— কিছু বললে বাবা।
— না কিছু না।
আমরা আসবো বলে বাসায় ভালই আয়োজন করা হয়েছে। মেয়ের বান্ধবী আর বোনেরা চারি দিকে হৈ চৈ করছে। আর এদিকে রিজুর মনে লাড্ডু ফুটছে কথার মাঝে আমাদের ফল আর শরবত দিয়ে যাওয়া হলো। ফল খাওয়ার সময় বুঝলাম আজ ডিনার এখানেই করতে হবে। অনেকক্ষন গল্প করার পর আঙ্কেলকে রিজু বলল…
— আঙ্কেল রাজ আসলে বৌদির সাথে একা দেখা করতে চায়। মানে আপনার মেয়ের সাথে।
— তা তো অবশ্যই।
আঙ্কেল বলেই চলে গেল আর আমিও রিজুর দিকে তাকিয়ে বললাম…
— ওই হারামী কখন আমি একা দেখা করতে চাই বললাম।
— দোস্ত এই বিষয়ের আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তোর মনে কি চলছে আমি জানি?
— তুই বাইরে যা, আজ তোর হচ্ছে।
এর কিছুক্ষণ পর একটা মেয়ে এসে বলল..
— রাজ দা চলুন। আপনাকে দিভাইয়ের রুমে নিয়ে যাই।
— হুম।
আমি আর কোন কথা না বলে চুপচাপ মেয়ের পিছন পিছন সঞ্চিতার রুমে গেলাম। মেয়েটা দরজাটা হালকা লাগিয়ে দিয়ে চলে গেল। সঞ্চিতা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি রুমটা ভাল করে দেখতে লাগলাম।বাহ্ মেয়েটা তো বেশ ঘুছানো। একদম সব পরিপাটি। তাই আমি বললাম…
— আপনি দেখতে যেমন সুন্দর। আপনার ঘরটাও সুন্দর করে ঘুছিয়ে রাখছেন।
— আমি ঘুছাই নি। আপনি আসবেন বলে ছোট বোনেরা এসে ঘুছিয়ে দিয়ে গেছে। নয়ত সারা ঘর চিড়িয়াখানার বানরের ঘরের মত থাকে।
আমি মেয়ের উত্তর শুনে কাশতে শুরু করলাম। আর মেয়েটা আমার দিকে জল এগিয়ে দিলো। বাপরে, এটা মেয়ে নাকি রোবট। একদম সরাসরি উত্তর।আমি বললাম…
— আপনি তাহলে বিয়ের পর আমার ঘর এমন করে রাখবেন?
— যদি আপনি অর্ধেক ঘর ঘুছিয়ে দেন তাহলে আমি বাকি ঘর ঘুছিয়ে দিতে পারবো। ( মুচকি হাসি দিয়ে)
–বুঝছি আপনি বিয়ের জন্য রাজি।
মেয়ে কোন কথা বলল না তবে এমন একটা প্রশ্ন করলো যা শুনে আমি দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লাম।
— আচ্ছা বলেন তো, ২টা শার্ট আর একটা প্যান্ট ধুতে হলে কতটুকু পানিতে কতটুকু হুইল দিতে হবে?
— মানে কি? এই প্রশ্ন কেন?
— এমনি জানতে চাইলাম আর কি?
— জানি না।
— তার মানে আপনার শার্ট প্যান্ট আপনার মা ধুয়ে দেয়। এখন থেকে নিজে ধুয়ে নিতে শিখে নেন। আমি হেল্প করবো মাঝে মাঝে।
— হুমম।
— কি হুমম? প্রশ্ন করবেন না আমার বি এফ আছে কি না?
— হুমম মনে ছিল না, আছে নাকি?
— ছিল না তবে এখন থেকে আপনি। আর কোন মেয়ের দিকে ঝুকলে, একদম ঝুকিয়ে দিবো মনে থাকে যেন।
— ( মেয়ের উত্তরে শকড)
— কি হলো চুপ হয়ে গেলেন কেন?
— জানি না।
— বসার রুমে গিয়ে বলবেন মেয়ে পছন্দ হয়েছে। ঠিক আছে।
— হুমম।
এটা মেয়ে নাকি অগ্রিম বিপদ সংকেত। আমি মেয়ের রুম থেকে রিজুর পাশে এসে বসলাম।রিজু কিছু একটা খেতে খেতে বলল…
— দোস্ত বৌদি কেমন দেখলি?
— চিনির প্যাকেটে মরিচের গুড়া।
— মানে?
— এখন আমার কথার মানে বুঝবি না। তোর বিয়ের কথা চলুক তাহলেই বুঝবি কেমন লাগে?
— একটু আমার বাসায় জানাই দিস তো আমারও বিয়ে করার মন চায়।
— কী???
— না কিছু না।
বিয়ের জন্য কিছু পাবলিক এতটা লাফায় কেন? আমার তো ইচ্ছাই করে নি বিয়ে করতে। অনেক কথা আর আড্ডা দিয়ে রাতের খাবার খেলাম। খাওয়ার সময় চরম পর্যায়ের জামাই আদর পেয়ে ছিলাম। শোনেছি বলি দেওয়ার আগে নাকি ছাগলকে অনেক খাওয়ানো হয়। যাক গে, খুব আদর যত্ন সহ্য করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। মাঝ রাস্তায় অবশ্য রিজু জানতে চেয়ে ছিল একা ঘরে আমার আর সঞ্চিতার মাঝে কি কথা হয়ে ছিল তবে বলার মত তো কিছুই হয় নি। আর যা কথা হয়েছে তা বললে, আমার ইজ্জত আর ঠিক থাকবে না।
বাসায় এসে মা একবারও জানতে চায় নি আমার এই বিয়েতে মত আছে কি না। শুধু আসার পর বলল, “ভাবতাছি সামনের বিয়ের তারিখেই তোদের বিয়েটা দিয়ে দিবো।” বাবা মা কেন যে ছেলে মেয়েদের পিছনে পড়ে।
এরপর ঠিক ২ সপ্তাহ পরে ঠিক সময় আমার আর সঞ্চিতার বিয়ে হয়ে যায়। এর মাঝে আমি প্রিয়ার সাথে কথা বলার অনেক চেষ্টা করি। কিন্তু প্রিয়া তখন রনি নামের এক ছেলের প্রেমে পাগল। যাক গে, বিয়েটা খুব ভাল ভাবেই কেটে ছিল।
আজ আমার বাসায় বৌ-ভাতের আয়োজন করা হয়েছে। আর সঞ্চিতাকে পার্লার থেকে বিউট কুইন সাজিয়ে এনে একটা চেয়ারে বসানো হয়েছে। আর ওর পাশের চেয়ারটায় আমাকে। সবাই আমাদের দেখতে এসে গিফট দিয়ে খাবার খেতে চলে যাচ্ছে। আমার পাশে বসা সঞ্চিতার মোবাইল টা হঠাৎ বেজে উঠলো। ওর কথা শুনে মনে হলো ওর ভাই ফোন দিয়েছিল। একটু পর আমাদের সামনে থেকে মানুষ হালকা হওয়ার পর সঞ্চিতা বলল…
— ওই শোনেন, কিছু দরকারি কথা ছিল?
— বলেন?
— প্রথম আপনাকে তুমি করে বলছি কিছু মনে কইরো না। এখন থেকে তো তুমি আমারই সম্পত্তি।তাই না গো।
— এতো ফাস্ট হইও না, যা বলবে বলো।
— আসলে আমার বড় ভাই ফোন দিছিল। ভাইয়া নাকি ওর জি এফকে নিয়ে আসছে।
— ও সেটা তো ভালো কথা।
— কিন্তু একটু পর আমাদের বাসার লোকও তো আসবে। এটাই তো সমস্যা।
— তাতে কি হলো? তোমার ভাইকে বলবে সব সত্যি বলে দিতে। এতে অন্তত তোমার ভাইয়ের বিয়েটাও হয়ে যাবে।
— আসলে সেটাই তো প্রবলেম। আমাদের বাসায় প্রেম বিষয়টা মানে না। আর এই দিকে ভাইয়া ওর জি এফকে নিয়ে আসছে। আর এদিকে আমাদের বাসার মানুষও নাকি রওনা দিয়েছে। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
— কী??
— আমার ভাইয়ের জি এফকে বলবে এটা তোমার বোন। তাহলে আমার বাড়ির কেউ কিছু মনে করবে না। ভাববে বিয়াইনের সাথে আছে।
— ও এই ব্যাপার ঠিক আছে।
এর প্রায় ২০ মিনিট পর যেতে না যেতেই সঞ্চিতার ভাই একটা মেয়েকে নিয়ে আসলো আমাদের সামনে। আমি তো পুরো শকড কারন এই মেয়ে আর কেউ না, এই হলো প্রিয়া। ভাগ্যের এ কোন পরিহাস ঘটলো। এই প্রথম কোন এক্স বি এফের বিয়েতে আসলো এক্স গার্লফ্রেন্ড। আমি যতটা না শকড খেয়েছি তার চেয়ে বেশি শকড হয়েছে প্রিয়া। আর আমি সঞ্চিতার ভাইয়ের নাম রনি জানলেও এটা যে প্রিয়ার সেই নতুন বয়ফ্রেন্ড সত্যি জানা ছিল না। সকল ঘোর কাটিয়ে সঞ্চিতা বলল…
— রাজ, আমার ভাইকে তো চিনো আর এই হলো প্রিয়া আমার ভাইয়ের জি এফ।
— হুমম আমারও…
— কী??
— না কিছু না। কেমন আছো রনি ভাই? আর এটাই যে আপনার জি এফ আগে বলবেন না।
— কেমনে বলবো দাদা? আপনি তো বিয়ের আগে আমার সাথে কোন কন্টাক্ট করেন নি। আর তাছাড়া মাত্র ২ সপ্তাহ আগে প্রিয়া আমার প্রপোজ একসেপ্ট করছে। ( রনি)
— হুমম সাবধান।
প্রিয়া আমার দিকে শান্ত হয়ে তাকিয়ে আছে যেন আমি ওরে কিছু বলে বসবো। তাই আমিও বললাম…
— ভাল আছো প্রিয়া।
— হুমম বেশ।
আমি আসলে হাসবো নাকি কাঁদবো সেটাই ভাবছি। আমার নাম তো গ্রিনিস বুকে উঠার প্রয়োজন। ভুল বশত হলেও গার্লফ্রেন্ড আসছে তার বয়ফ্রেন্ডের বিয়েতে। বিয়েতে বললে ভুল হবে, আসলে বৌভাতে। প্রিয়া বার বার আমার দিকে মাথা নিচু করে তাকাচ্ছে। যেখানে আমার পাশে ওর বসার কথা ছিল সেখানে সে আজ দাওয়াত খেতে আসছে। আর আমি বুঝতে পারছি না সঞ্চিতাকে সবটা জানাবো কি না?
কিছুক্ষণের মাঝে সঞ্চিতার বাসার লোকেরাও চলে আসলো। একে একে সবাই আমাদের সাথে ছবি তুলছে। তখন আনন্দের মধ্যে আমি রনি আর প্রিয়াকে বললাম আমাদের সাথে ছবি তুলতে। আর তখনই সঞ্চিতার মা বলে উঠলো…
— রাজ বাবা এই মেয়েটি কে?
— ও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় নি তো। এটা আমার সম্পর্কান্তর বোন।
— মানে? সম্পর্কান্তর আবার কি?
— সম্পর্কের পরিবর্তনে বোন হয়েছে। আগে ছিল এক সম্পর্ক আর এখন এক সম্পর্ক।
— কবে হলো এই বোন?
— ২ সপ্তাহ আগে বোনের সনদ পেয়েছে। আর আজ আপনাদের সামনে লাইসেন্স পেল।
— মানে কিছুই বুঝতাছি না।
— বেশি বুঝতে গেলে কেঁচো খুড়তে সাপ বের হয়ে যাবে। সব শেষে বলে দেই এই মেয়ের নাম প্রিয়া আর ও আপনার ছেলের জি এফ।
আমার কথা শেষ না হতেই সবাই রনির দিকে তাকালো আর সঞ্চিতা তো আমার দিকে রেগে আগুন। প্রিয়া আমায় বাঁশ দিছে তাই আমিও রিটার্ন দিলাম। এবার বসে বসে মজা নাও।
যদি রনির এখন বাঁশ খাওয়ার সময় কিন্তু আমার বাসায় বলে সবাই রাগটা হজম করে নিয়েছে। তার মানে বাসায় গিয়ে বাঁশটা দিবে।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ছাদে হাটাহাটি করছি। কারন একটু পর আমাকে একটা ঝড়ের মোকাবিলা করতে হবে। সঞ্চিতা হলো ঝড় আর আমি তার সামনে এক টুকরো খড়কুটো আর তাছাড়া কিছুক্ষণ পর আমাদের ফুলশয্যা।
কাজিনেরা জোর পূর্বক আমাকে রুমে দিয়ে চলে গেল আর আমিও সঞ্চিতার সামনে গেলাম। ও উঠে আমায় প্রনাম করলো। তারপর বলল….
— দুপুরে এটা কি করলে?
— হা হা হা নিউটনের তৃতীয় সূত্রের প্রয়োগ করলাম। ২ সপ্তাহ আগে প্রিয়া আমায় বাঁশ দিয়েছিল। আর আজকে তোমার ভাইকে দিয়ে সেটা রিটার্ন দিয়েছি।
— মানে?
— মানে হলো প্রিয়া আমার জি এফ ছিল কিন্তু সত্যি ছিল কি না সন্ধেহ। আমি নাকি সময় দেই না,আমার মাঝে নাকি কোন ভালবাসা নেই। এইসব কথা শুনিয়ে ব্রেকআপ করে। ইচ্ছা ছিল তোমাকে ওর ব্যাপারে জানাবো না কিন্তু তোমার ভাই যে ওর বয়ফ্রেন্ড রনি সেটা জানতাম না। তাই বাঁশটা একটু দিয়ে দিলাম।
–( সঞ্চিতা আমার দিকে তাকিয়ে সাপের মত ফুসছে)
— এভাবে তাকিয়ে থেকো না। ভয় লাগে তো, আর তোমার রাগের প্রমিস আমাদের মাঝে কখনো কিছু হয় নি।
— কথা গুলো কি বিয়ের আগে বলা যেতো না।
— কেন বললে কি বিয়ে করতে না?
— করতাম তবে বিয়ের আগের ২ সপ্তাহ তোমাকে বুঝিয়ে দিতাম প্রেম কি?
— তাহলে এখন বুঝাও না।
— হুম আগামী ২ সপ্তাহ তুমি সোফায় ঘুমাবে।
— মানে?
— এটা হলো আমার থেকে কথা লুকানোর পরিনতি।যাও এখন ঘুমিয়ে পড়ো। আর কাল থেকে তোমার খবর আছে।
আমার হাতে বালিশটা ধরিয়ে দিলো। কোন কুলক্ষণে যে অতীতটা বলতে গেছিলাম। ধুর আর কখনো কিছু শেয়ারই করবো না। না হয় আমি আনরোমান্টিক,তাই বলে শেষ পর্যন্ত সোফায়। যাক গে, তারাতারি রনির বাসায় গিয়ে সরি বলে রনির সাথে প্রিয়ার বিয়েটা পাকা করে দিতে হবে নয়ত সঞ্চিতা যেই মেয়ে। আমাকে রিয়েকশনের উপর রিয়েকশন দিবো।