রঙ্গিন ভালবাসা

রঙ্গিন ভালবাসা

আমি মিহির দিকে আরও একবার তাকালাম।মেয়েটার চোখটা এখনও বেশ লাল হয়ে ফুলে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটা প্রায় অনেক্ষন কেঁদেছে।

আমি মিহির পাশে বসে ওর হাতটা ধরতেই মেয়েটা এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো।মিহির কান্নায় আমার ভেতরটাও কেমন যেন কেঁদে উঠলো।আসলে কাছের মানুষের থেকে কষ্ট পেলে যা হয় আরকি।আমি মিহির চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম, কি হয়েছে?

অফিস ছুটি হয়েছে এই দু দিন আগে।তাই বাসায় বসে বেশ আরাম আয়েশেই দিন কাটাচ্ছিলাম।
আজ সন্ধায় যখনি একটু বাইরে বের হতে যাব তখনি আফজাল সাহেবের ফোন এসে হাজির।এসময় আফজাল সাহেবের ফোন দেখে আমি একটু অবাকই হলাম।তাছাড়া উনি আমাকে তেমন ফোন দেয় না।এর আগে কবে ফোন দিয়েছে সেটাও মনে নেই।

তুমি একটু আমাদের বাসায় আসবে?

ফোনটা ধরে আমি সালাম দিতেই এক মহিলা কণ্ঠে কথাটি ভেসে উঠলো।তারমানে ফোনটা আফজাল সাহেব দেননি।দিয়েছেন ওনার স্ত্রী রাহেলা বেগম।
আমি কিছু বলার আগেই উনি আবারও বললেন,
-বাবা একটু আসবে আমাদের বাসায়?
ওনার কথায় কেমন যেন নম্রতা ছিল।এভাবে ওনার কথা এর আগে আমি শুনিনি।আমি বললাম,
-হ্যা,কিন্তু কিছু হয়েছে কি?
আমার কথায় রাহেলা বেগম একটু চুপ থেকে বললেন,
-আসলে মিহি কেমন যেন করছে।
-মিহি,কি হইছে ওর?
রাহেলা বেগম যেটুকু বললেন এটুকুতে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম সমস্যাটা কোথায়
আর কেনই বা মিহি কান্না করছে।
আমি রাহেলা বেগমকে আসছি বলে ফোনটা কেটে দিলাম।

মিহি,আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড,আবার হবু স্ত্রী।আসলে আমাদের বিয়েটা ঠিক হয়েছে এই মাস খানেক হবে।ঈদের দু দিন পরেই বিয়ে।
মিহির সাথে আমার সম্পর্কটা প্রায় তিন বছর হবে।
তবে মিহির বাবা আফজাল সাহেব আমাদের এ সম্পর্ক মনে মনে মেনে না নিলেও মেয়ের জেদের কাছে উনি হেরে গেছেন।যার ফলে আমার আর মিহির প্রতি ওনার বিন্দুমাত্র ভালবাসা দেখতে পাইনি।বিয়েতে রাজিও হয়েছেন মিহির চাপেই।
তবে মিহির মা আমাদের একটু বেশীই ভালবাসেন।কিন্তু ওই বুড়োটার জন্যে খুব একটা কাছে ভিড়তে পারেন না।

আমি আর কিছু না ভেবে মিহিদের বাসার উদ্দেশ্য বের হলাম।হেটে যেতে প্রায় আধা ঘন্টা সময় লাগবে কিন্তু আমার হাতে এত সময় নেই।তাই রিক্সাতেই চেপে বসলাম।

কলিংবেল দিতেই রাহেলা বেগম এসে দড়জা খুলে দিলেন।আমি সালাম দিয়ে হাতে রাখা জিনিসগুলা ওনার দিকে এগিয়ে দিতেই উনি বললেন,
-ভেতরে আসো বাবা।
আমি কিছু না বলে ভেতরে ঢুকতেই দেখি আফজাল সাহেব ড্রয়িংরুমে সোফায় বেশ আয়েশ করেই বসে আছেন।তবে মুখটা বেশ গম্ভীর।
আমি ওনাকে সালাম দিতেই ওনার গম্ভীর মুখটা কেমন যেন আরও একটু গম্ভীর হয়ে গেলো।আমি আর কিছু না ভেবে মিহির রুমের দিকে যেতেই রাহেলা বেগম বললেন,
-অনেক্ষন হলো দড়জা আটকিয়েছে,কত বার ডাকলাম কিন্তু খুলছেই না।
আমি কিছু না বলে মিহির দড়জার সামনে গিয়ে মেয়েটাকে দুবার ডাক দিতেই দড়জা খুলে দিল।
আমি মিহির দিকে তাকাতেই মেয়েটা আমাকে ভেতরে নিয়ে আবার ঠিক আগের মতই দড়জা আটকিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।মিহির এমন কান্ডে আমি একটু লজ্জাই পেলাম।বাইরে ওনারা কি ভাববে এখন।

আমি মিহিকে আবারও বললাম,
-কি হয়েছে?
মিহি এবার কান্না থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা আমাদের বিয়েটা ঈদের আগে হলো না কেন?
-কেন,আর তো মাত্র কয়েকটা দিন।
-আমি আর এখানে থাকতে পারছি না,কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।
মিহির কথায় আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।ওকে বুকে জড়িয়ে নিতেই মেয়েটা বললো,
-আগে ঈদের আগের দিন আব্বু আমার জন্যে মেহেদী নিয়ে আসতো,কিন্তু এবার আমি বলার পরেও আনেনি।
আমি মিহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,
-হয়তো উনি ভুলে গেছেন।
-না,ইচ্ছে করেই আনেনি।
আমি এবার পকেট থেকে মেহেদীর প্যাকেটটা বের করে মিহির হাতে দিয়ে বললাম,
-এই নাও তোমার মেহেদী।
-কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে?
-তোমার আম্মু আমাকে সব বলেছে।
আমার কথায় মিহি আর কিছু না বলে আমাকে বসিয়ে রেখে ফ্রেশ হয়ে এসে বললো,
-নাও,এখন দিয়ে দাও।
মিহির কথায় আমি একটু অবাকই হলাম।বলে কি মেয়েটা।আমি মেহেদী দেবো কিভাবে।দিতে পারলে তো দেবো।
আমি মিহির দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আমি দিতে পারিনা তো।
-যেরকম পারো সেরকম ই দাও।
-শুধু শুধু হাতটা নষ্ট করবে কেন,তারচেয়ে বরং ভাল করেই দিও।
মিহি আমার কথায় এবার বেশ রাগি চোখেই বললো,
-দিতে বলছি দিবা।যেমনই হোক।আমি তোমার হাতেই মেহেদী পড়বো।
আমি মিহিকে আর কিছু বললাম না।মেয়েটা যেটা বলবে সেটাই করতে হবে।

আমি মিহির হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছি আর মেয়েটা সেই তখন থেকেই হাসছে।আসলে হাতে একটা তেলাপোকা ছেড়ে দিলেও এর চেয়ে ভাল ডিজাইন হতো।
আর আমার মেহেদী দেওয়া দেখেই মিহির হাসি যেন থামছেই না।এই কিছুক্ষন আগে কান্নায় ভেঙে পড়া মেয়েটা এখন হাসছে।কেমন যেন শান্তি শান্তি লাগছে।হাসলে মেয়েটাকে বেশ লাগে।

মেহেদী দেওয়া শেষে যখনি বের হতে যাব তখনি মিহির কথা মনে পড়লো।মেয়েটা মেহেদী হাতে রাতে খাবে কিভাবে।হয়তো না খেয়েই থাকবে।

আমি মিহিকে খায়িয়ে দিচ্ছি আর মেয়েটা বাচ্চা মেয়েদের মত খাচ্ছে।তবে ওর চোখটা কেমন যেন আবার ভিজে উঠেছে।আমি খাওয়া শেষে উঠতেই মেয়েটা এসে মেহেদী দেওয়া হাতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো।এদিকে আমার শার্টটা একদম রঙিন হয়ে গেলো।
তবে ভালই লাগছে।দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয় তবে দাগই ভাল।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত