–ওই একটা দাও না!
–কি দিব..??
–ওই যে ওইটা!
–ওইটা আবার কোনটা..??
–আরে বাবা ওইটা!
–সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি কোনটা!
–একটা উম্মাহহহ!
–কিহ…??
–বললাম একটা উম্মাহহ দাও।
–ঝাড়ুর বাড়ি দিব..??
–মানে কি হুহ..??
–তুমি যেইটা দিতে বললা সেটাই তো বললাম আমি।
–থাক বুঝেছি।লাগবে না আমার
–এইতো লক্ষি ছেলের মত কথা।
–একটা দিনও তুমি দাও না
–এইগুলা এত দিতে হয় না।
–তোমার মাথা…!!
–আচ্ছা শুনো আব্বু বাসায় চলে আসছে। আমি এখন যাচ্ছি। তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
–আচ্ছা শুনো…..
–হুম জলদি বল।এখন হাতে মোবাইল দেখলে
আব্বু বকা দিবে।
–আই লাভ ইউ
–হুম শুনেছি।এবার যাচ্ছি আমি।
–আচ্ছা যাও।শুভরাত্রি
–শুভরাত্রি।
নিলা,আমার স্বপ্নের রাজ্যের একমাত্র রানী। আমার স্বপ্নের ভুবনে একমাত্র তাকে নিয়েই বিচরণ আমার।খুব বেশিদিন হয় নি আমাদের রিলেশন হয়েছে।এইতো আজকে ১০ দিন গিয়ে কাল ১১ দিনে পড়বে।রিলেশন হয়েছে আজ ১০ দিন কিন্তু ফ্রেন্ডশিপটা সেই ক্লাস টেন থেকে। তার থেকেই একে অন্যের কাছাকাছি আসা।
নিলার একটা অভ্যাস আছে।আমি যখন আই লাভ ইউ বলব তখন সে কখনও আই লাভ ইউ টু বলবে না। সে বলবে ‘”হুম শুনেছি”।আবার যদি কখনও মনে চায় বলতে তখন নিজ ইচ্ছাতেই আমাকে বলবে।
এইতো সেদিন,যখন ফোনে কল দিলাম তখন গুনে গুনে ১০ বার আমাকে লাভ ইউ বলেছে।
আসলে ও একটু এমনই।নিলাকে যখন মাঝে মধ্যে বলি আমাকে ডেইলি এই কথাটা বলো না কেন তখন
সে আমাকে একটাই উত্তর দেয়।অন্য সবার মত আমি মনের ভাব অত প্রকাশ করতে পারি না গো…!!
আমিও আর কিছু বলি না।বুঝে নিই।
পরেরদিন সকালে….
–ঘুম ভাঙল জনাবের..??
–এখনও শুয়ে আছি।
–ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়েছ..??
–নাহ তো।কেন..??
–কয়টা বাজে এখন..??
–মাত্র ৮:৫৩।
–এতবেলা করে কেউ ঘুমায়..??
–কেউ না ঘুমালেও আমি ঘুমাই।
–এখন তোমার কাজ কি জানো..??
–কি…??
–বিছানা থেকে উঠবা তারপর ফ্রেশ হয়ে নিজের বিছানা গুছাবা।
–আম্মু করবে পরে।
–সবকিছু আম্মুর উপর ছেড়ে দিলে হয় না। এই সামান্য কাজগুলো নিজের করতে হয়।
–পারি না তো।
–পারতে হবে।বিছানা গুছিয়ে আমাকে ছবি দিবা।
–আচ্ছা দিব।
–তোমার বিছানার অবস্থা দেখলে আমার মনে হয় আমি একটা পাগলা গারদে আছি।
–তাই..??
–জ্বী তাই।এখানেই বালিশ এখানেই কাঁথা এখানেই সবকিছু।
–ভালোই তো লাগে আমার।সবকিছু হাতের নাগালেই।
–ছিহহহ….!! এমন অগোছালো থাকো কেন তুমি..??
–কারণ আমার এই অগোছালো জীবনটাকে তুমি গুছিয়ে দিবে।তাই এমন করে থাকি।
–হয়েছে আর কথা বলতে হবে না।এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
–আচ্ছা যাচ্ছি। আর শোনো!
–কি..??
–১০ টায় বাড়ির পাশের ওই খেলার মাঠটায় আসবা।
–আচ্ছা আসব।
–লাভ ইউ
–এই,কথাটা কে বলল..??
–কেউ না (ভেঙ্গানির ইমো দিয়ে)
–হিহিহি।
–যাচ্ছি আমি।টাইম মত চলে এসো।
–আচ্ছা।লাভ ইউ।
আমাকে যেমন শাসন করবে ঠিক তেমনি আমাকে খুব ভালো ও বাসবে। আমার আম্মুর থেকে কোনো অংশে কম শাসন করে না আমাকে। এইটা করি কেন,এর সাথে চলি কেন,রাত করে বাসায় ফিরি কেন,সন্ধ্যার আগে বাসায় থাকবা ইত্যাদি ইত্যাদি…!!
১০:২৬ এ খেলার মাঠে গেলাম।গিয়ে দেখি নিলা বসে আছে।
–স্যরি!
–কয়টা বাজে এখন..??
–১০:২৬
–কয়টায় আসার কথা ছিল…??
–১০ টায়।
–এখন বাজে ১০:২৬। তারমানে ২৬ মিনিট লেট।
–স্যরি স্যরি আর হবে না।
–২৬ বার কানে ধরে উঠবস কর এইবার।
–না মানে এই পাবলিক প্লেসে…??ইজ্জতের ফালুদা বানায় দিবা..??
–হ্যাঁ পরে সেই ফালুদা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বিক্রি করব…!!
–আমার কি দোষ…!! সকাল বেলা প্রকৃতির ডাকে সাড়া না দিয়ে আমি কোথাও যেতেই পারি না।
–এই এক অজুহাত সেই প্রথম থেকেই..!!
–আচ্ছা বাবা কাল থেকে আর এমন হবে না। একদম সত্যি।
–আজকের মত ছেড়ে দিলাম।কাল থেকে যে কি করব দেখতে পাবা..!!
বেশ কিছুক্ষণ মাঠে হাটাহাটি করলাম। একদিক থেকে নিলা আমার আম্মুর খালাতো বোনের মেয়ে।
অন্যদিক থেকে আমার আব্বুর নেংটাকালের বন্ধুর মেয়ে।যার জন্য এলাকার মধ্যে দুজন একসাথে ঘুরাফেরা করলেও কেউই কিছু বলে না।
–নিলা!
–কি..??
–আশেপাশে কেউ নেই এখন।
–তো কি করতাম এখন..?? সবাইকে ডেকে আনব..??
–আরে নাহ।
–তো কি…??
— না মানে বলছিলাম……
–হারামী, কু মতলব থাকলে পিডাইয়া হাড্ডি মাংস আলাদা কইরা ফেলমু এখন (চোখ বড়বড় করে)
–ছিহহহ..!! আমি কি তেমন কিছু বলছি নাকি..??
–তো কি…??
–বলছিলাম আশেপাশে তো কেউ নেই। একটু যদি….
–কি একটু…??
–একটু যদি জড়িয়ে ধরতা…!!
–এমন পিডানী দিমু তোরে যে জীবনেও আর জরিয়ে ধরতে চাইবি না।
–এহহহহ…!! একটু জরিয়ে ধরি না হু..!!
–তোরে কি যে করতে ইচ্ছে করতেসে এখন..!”
–কেন কেন..??
–তোর তো লজ্জা নাই।এইটা পাবলিক প্লেস। তুমি কি জানো না..!!
মাথার তার মনে হয় ছিড়ে গেছে আমার! পাবলিক প্লেস আর আমি কিনা!
দুদিন পরে আব্বুর একটা কাজের জন্য নিলাদের বাসায় গেলাম।নিলার রুমটা সবার সামনে।নিলার রুম পার করেই বাকি সবার রুমে যেতে হয়।
বাসায় গিয়ে দেখি নিলা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্চে।গোসল করে এসেছে মনে হয়।
চুলগুলো ভেজা দেখা যাচ্ছে।
এই একটা সুযোগ নিলাকে একটু জরিয়ে ধরার। সুযোগে সৎ ব্যবহারটা তাহলে করেই ফেলি। আর এমন সুযোগ বারবার আসে না।আস্তে করে নিলার রুমে ঢুকে পড়লাম।নিলা বুঝতে পারল না। তারপর আস্তে আস্তে নিলার কাছাকাছি গেলাম তবে নিলার
পিছনে না।পিছনে দাঁড়ালে আয়নায় দেখা যাবে।
–নিলা….
যেই না নিলা পিছনে তাকিয়েছে অমনি নিলাকে জরিয়ে ধরে ফেললাম।২০/২৫ সেকেন্ড থাকার পর নিলা আমার পেটের মধ্যে জোরে এক চিমটি বসিয়ে দিল।আউউউ বলে চিল্লানী দিয়ে নিলাকে ছেড়ে দিলাম..!!
–তুমি এখানে কেন..?? (ভাবতেই পারে নি আমি আসব)
–আঙ্কেলের কাছে এসেছি।
–কি কাজটা করলা তুমি হুহহহ!
–ভালো একটা কাজ করেছি।আর একটু থাকতে পারলে ভাল লাগত।
–কচু..!! যাও ভাগো।
–আসো তোমাকে নিয়েই ভাগি..!!
–হপ…!!যাও আব্বুর কাছে যাও।
–একটা উম্মাহহ দেই..??
–দাঁড়াও এক মিনিট। ঝাড়ুটা নিয়ে নেই।
–ওরে বাবা পালাই আমি..!!
বলেই দৌড়। বলা তো যায় না যদি সত্যিই বারি দিয়ে দেয়…!!
–এই কিরে সেই কখন থেকে তোকে ডাকছি।
শুনতে পাচ্ছিস না…??
–হ্যাঁ…!! আমাকে ডেকেছিস…?? কখন…??
–দশ মিনিট যাবত ডেকেই যাচ্ছি আর উনি বলে কখন…!!
–ওহহহ খেয়াল করি নি।
–কি এত ভাবছিলি…??
–নাহ কিছু না।
–জলদি যা। ১১ টা বাজতে চলল। তোর বউ সেইকখন থেকে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
–ও হ্যাঁ তাই তো। আচ্ছা আমি যাচ্ছি।
আজকে আমাদের বাসর রাত।হ্যাঁ নিলার সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।অনেক কষ্টে, অনেক কিছু ম্যানেজ করে তবেই না আমি নিলাকে পেয়েছি।
অনুভূতিগুলো কিছুতেই ভাষায় প্রকাশ করার মত না।
যাই এবার বাসর ঘরে যাই। মেয়েটা আমার জন্য অনেকক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছে।