( গল্পতে যারা আছেন তাদের নাম আর পরিচয় তা দিয়ে নেই। গল্পের নায়ক জোজো। নায়িকার নাম জেরিন। নায়কের বাবার নাম লতিফ মিয়া এবং মায়ের নাম আমেনা ও বোনের নাম রাবিয়া। তার বন্ধুদের নাম রনি, রাজু, আকাশ, ও গল্পে একটি মুচি আছে তার নাম জালাল।)
এখন গল্পে ফেরা যাক।
জোজো: মা কিছু টাকা লাগবে।
মা: টাকা নাই।
জোজো: আমি কি বেশি চেয়েছি নাকি। মাএ দুই হাজার টাকা।
মা : বললাম তো টাকা নাই। মাসের শেষের দিক এই মুহুর তে টাকা নাই।
জোজো: লাগবে না। আমি চাইলে টাকা নাই না।
রাবিয়া : দেখতো জোজো কেমন লাগছে আমাকে।
জোজো: রাখ তোর আলতু ফালতু কথা।
রাবিয়া: মা ও মা দেখতো ভাইয়া কি বলছে। আমাকে নাকি পেত্নীর মতো লাগছে। ( কাদতে কাদতে)
মা: জোজো কি বলছিস তোর বোনকে
জোজো: ওকেই জিগ্গাস করো। ( বলে চলে গেল)
জোজো: ভাই গাড়ি দেখে চালাতে পারেন না।
জেরিন: আরে জোজো। তুমি এখানে কেন?
জোজো: এমনি। (ঘাম মুছতে মুছতে)
জেরিন: ওওওও
জোজো : আমি আসি।
জেরিন : না তোমার সমস্যা কি।
জোজো: কি,, কি কিসে কিসের সমস্যা।( থতলাতে থতলাতে)
জেরিন: তুমি প্রতিদিন কলেজে আমার দিকে চেয়ে থাকো আবার এখন বাসার সামনেও।
জোজো: ক ক কলে
জেরিন: কলেজ বন্ধ
জোজো: হুম। তোমার বাসা কোনটা।
জেরিন: এইটা।
জোজো: কোথায় যাচ্ছো?
জেরিন : আমি ফুফুর বাসায় যাচ্ছি।
জোজো: কেন?
জেরিন: আমার ফুফাত ভাইয়া আজকে আমেরিকায় চলে যাবে। তাই দেখা করতে যাচ্ছি। কেন কি বলবে?
জোজো: কাজিন তো আপন বড় ভাইয়ের মতোই।
জেরিন: হ্যা। কিছু বলবে?
জোজো: আসলে আমি তোমাকে পছন্দ করি।
জেরিন: আমি আসি। পরে কথা হবে। বলে চলে গেল
জোজো: অনেক খুশি। বলতে পেরে।
জোজো আর তার বন্ধুরা দোকানে চা খাচ্ছে। এমন সময় জেরিন সেখানে গিয়ে জোজোকে ডাক দিলো।
জোজো: হ্যা বলো।
জেরিন: আমিও তোমাকে পছন্দ করি।
জোজো কিছু না বলে শুধু ঘামছে।
জেরিন : আসি।
জোজো: হ্যা।
বন্ধুরা : কি মামু ট্রিট দিবা কবে।
জোজো: দিব।
বন্ধুরা: কবে।
জোজো: জেরিনের সাথে কতা বলে দিব।
এই দিকে জোজোর বাবা একটি জুতা তিন বছর ধরে ব্যবহার করছে। আজকে জোজোর বাবার জুতাটা আবার ছিড়ে গেছে।
সকাল বেলায় খাওয়ার সময়।
জোজো: মা টাকা দাও।
মা: এত টাকা নাই।
জোজো: মানে। আমি এখন বড় হয়ে গেছি। আমার বন্ধুদের সাথে চলতে হয়।
মা: এমন বন্ধুদের সাথে চলো কেন।
বাবা : আমি একটু বাজারে গেলাম।
মা: কেন। অফিস নেই।
বাবা: না নেই। জুতাটা ছিড়ে গেছে। দিখে মুচির কাছ থেকে সেরে নিয়ে আসি।
মা: একই জুতা আর কত পড়বে। জুতাটা তো অনেক দিন আগেই মিয়াদ শেষ হয়ে গেছে। একটা নতুন জুতা কিনে নাও।
বাবা: কিনবো কিনবো।
মা : দাড়াও আমি আসি।
মা: এই নাও আড়াই হাজার টাকা। অনেক দিন ধরে সংসার থেকে জমিয়ে ছিলাম। এখন একটা নতুন জুতা কিনে নাও।
জোজো: ওওও।আমি বললে টাকা নাই।
বাবা: কেন তোর টাকা লাগবে?
জোজো: না থাক।
বাবা : কেন। তুই একন বড় হয়েচিস তোর তো টাকা লাগবেই। আমেনা টাকাটা জোজোকে দিয়ে দাও।
মা: ছেলেকে এত রাই দিও না।
বাবা: আমি সামনে মাসের টাকা দিয়ে জুতা কিনে নিব।
জোজো: টাকা দাও।
মা: দর।
রাবিয়া: ভাইয়া তোর একটা ছবি আকি। নরবা না কিন্তু।
জোজো : হুম।
জোজো: দেখি কি একেছিস।
রাবিয়া: নাও।
জোজো: কি একেছিস। এর থেকে তো ওয়ানের ছেলেমেয়েরা ভালো করে আকে। দুর???
রাবিয়া: মা ও মা দেখ জোজো ভালো না।( কাদতে কাদতে)
মা: জোজো
রাতে জোজো জেরিনকে ফোন করল।
জোজো: কি করছ।
জেরিন: এইতো বই পড়ছি।
জোজো: যাওয়ার সময় নামবারটা দিলানা কেন?
জেরিন: আমি জানি তুমি ঠিক আমার নামবার জোগার করে নিবে। তাই দেই নাই
জোজো: তাই।
জেরিন: হুম। আচ্ছা রাখি। পড়তে হবে। বাই
জোজো: হুম বাই। গুড নাইট।
জেরিন: হুম। গুড নাইট।
পরের দিন সকালে
মুচি: স্যার আর কত। নতুন জুতা কিনা লন।
লতিফ মিয়া: কিনে নিব। এখন একটু ঠিক করে দাও।
পরের দিন নদীর পাড়ে।
জেরিন: আচ্ছা জোজো বলোতো মানুষ কেন একে অপরকে ভালোবাসে।
জোজো: কেন আবার। ভালোবাসে। সেটা তো বলতে পারবো না।
জেরিন: আচ্ছা আমি তোমাকে কেন লাভ করি। সেটা জানবা না
জোজো: হুম বলো( হাসতে হাসতে)
জেরিন: কারন তুমি সবার থেকে আলাদা। আর তুমি যখন কথা বলো তখন তোমাকে কেন জানি বাচ্চাদের মতো লাগে। আর তাই আমি তোমাকে লাব করি।
জোজো: তাই ( হাসতে হাসতে)
জেরিন: তুমি আমাকে কখনো মিথ্যা কথা বলো না। বললে আমি কষ্ট পাব।
জোজো: হুম।
জেরিন: চলো।
জোজো : কোথায়?
জেরিন: তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় যাব।
জোজো: হম। চলো।
জোজো: আমাকে এখানে নামিয়ে দাও।
জেরিন: কেন?
জোজো: এমনি??
জেরিন: দেখ আংক্কেল।
জোজো: কই?
জেরিন: মুচির দোকানে।
জোজো: না ওনি আমার বাবা নন।
জেরিন: কি বলছো।ওনি তোমার বাবা নন।
জোজো: না।
জেরিন: ঠিক আছে। যাও।
জোজো নিমে চলে গেলো।
মুচি: স্যার কালকে না টিক করে দিলাম।
বাবা: কালকে তো আরেকটি ঠিক করে দিছো। এটি আরেকটা।
মুচি: স্যার বলি কি। আমার াছে একটা পুরান জুতা আছে। নতুনের মতো দেখতে। আপনি চাইলে তিনশত টাকা দিয়ে নিয়ে পারেন।
বাবা: টিক আছে দেন।
রাতে বেলায়
জোজো: কি করছো
জেরিন: ভালোই হয়েছে পোন দিয়েছো। না হলে আমি দিতাম।
জোজো: কেন?
জেরিন: আসলে আমি এই রিলেশন রাখতে চাচ্ছি না।
জোজো: মানে কি
জেরিন: তুমি আমাকে আর ডিসটাব করো না। ( বলে কেটে দিলো)
জোজো: আবার ফোন দিলো
জেরিন: আমি জানি। তুমি আমাকে আবার ফোন দিবা।
জোজো : আমার দোসটা কি?
হেরিন: তোমার কোন দোস নেই। এক কথায় বলতে তোমাকে আমার এই মুহুরতে সোজ্জো হচ্ছে না। তাই তোমার যদি কোন সম্মান থেকে থাকে। আমাকে আর আমাকে বিরক্ত করবা না।
পরের দিন
আকাশ: ডোস আমার মতে জেরিন এই রকম না।
জোজো: প্লিস ডোস।ওর সাথে আমি অনেক যোগাযোগ করতে চেয়েছি বাট কোন রেসপন্স পাইনি। তুই যেমন করেই হোক কথা বলাইয়া দে।
আকাশ: আমি দেখছি।
জোজো: দেখবি কি। তুই জানিস আমি যখন তখন পাগল হয়ে যেতে পারি।
আকাশ: পাগল হবা কি। তুমি তো অলরেডি পাগল হইয়াই গেছো।
জোজো: দেখ আমি কিন্তু মরেও যেতে পারি।
আকাশ: দেখ ফালতু কথা না বলে। বাড়ি চলে যা।
জোজো: ডোস????
আকাশ: যা।
পরের দিন নদীর পাড়ে””
জোজো: আমার দোস কি?
জেরিন: লজ্জা করে না তোমার। তোমাকে আমি কালকে এইখানে বসিয়ে বলেছি। আমাকে মিথ্যা বলো না। আর তুমি কি করলে আমার সামনে তুমি তোমার বাবাকে চিনতে পারলে না। কেন তিনি একটা ছোট চাকরি করেন বলে। তোমাদের জন্য সে আজ পর্যন্ত একটা নতুন জুতাও কিনতে পারলো না। কি দোস ওনার তোমাকে মানুষের মতো মানুষ বানিয়েছে বলে।
জোজো: সরি!!
জেরিন: লজ্জা করে না তোমার। তুমি আমাকে সরি বলছো। সরি যদি বলতে হয় তোমার বাবাকে বলো। আর হ্যা আমার সাথে আর যোগাযোগ করবা না। ( বলে চলে গেলো)
জোজো সেখানে কাদতে লাগলো।
পরের দিন কলেজে””
জোজো: আমাকে কিছু করতে হবে। বাবা একা সংসার চালাতে পারছে না।
বন্ধরা: কি করবি
জোজো: তোরা বল।
বন্ধুরা: ঠিক আছে। চল
কিছুক্ষন পর
আংকেল আমি এই জুতাটা নেই।( জোজো)
মুচি: তুমি এটা দিয়ে কি করবে। এটাতো ছেড়া জুতা।
জোজো: এটা আমার দরকার
মুচি: নিবেন যখন নেন। কিন্তু কিছু টাকা লাগবে নিতে।
জোজো: এই ধরেন টাকা।
মুচি : ঠিক আছে।
তারপর জোজো জুতাটা নিয়ে পিন্ট করে জুতার দোকান দিলো। এবং দোকানের নাম দিলো ” বাবার জুতা”।
তারপর সে এই রকম চারটি দোকান দিলো। জোজো একা একটি এবং আর তিনটি দোকান তার বন্ধুরা দেখা শুনা করতে লাগলো। আর হ্যা দোকানের কথা বললাম সেগুলা ভ্যানের উপর দোকান। রাস্তায় রাস্তায় বিক্রি করা শুরু করলো।
জোজো এখন অনেক পালটে গেছে দেখে জেরিন তাকে আবার ভালোবাসলো।
একদিন জোজোর বোনের পেট বেথ্যা শুরু করল। তাকে হাসপাতালে নিলে ডাক্তার বলে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু জোজো বাবা এই মুহুরতে এতগুলা টাকা পাবে কোথায়।
রাতের বেলা”
বাবা : আমি এখন কি করব আমিনা। এতগুলা টাকা আমি পাব কোথায়।
মা: তুমি ককি বলছো এইসব। টাকা অভাবে আমার মেয়েটা যদি মারা যায়। তাহলে আমিও বিষ খেয়ে মারা যাব।
এই সব কথা গুলা জোজো আরাল থেকে শুনলো। তখন সে কিছু টাকা তার বাবার হাতে দিয়ে বলে। বাবা তুমি বোনের চিকিৎসা করো।
বাবা: তুই এত গলা টাকা কোথায় পেলি।
জোজো: পরে বলবো
বাবা: যে টাকার কথা আমাকে বলা যাবে না। আমি সে টাকা নিবো না। দরকার পড়লে আমি আমার কিডনি বেচে চিকিৎসা করবো।
জোজো: মা বাবাকে বুঝাও।
বাবা: তুই আমার সামনে থেকে চলে যা।
জোজো: বাবা
বাবা: যা
জোজো চলে গেলো।
পরের দিন।
জোজো: তুমি যদি আমাকে ওই রকম ভাবে সেদিন না বলতে তাহলে আমি আজ এই খানে আসতাম না।
জেরিন: মেয়েদের এই টাই করা উচিত।
জোজো: চলো।
জেরিন: হুম
পরের দিন সকালে
জেরিন; আংকেল আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
জোজোর বাবা: তুমি কে আর ি বলতে চাও
জেরিন: জোজো
বাবা: কি হয়েছে জোজোর?
জেরিন : আসলে এতগুলা টাকা জোজো কোথায় পেল জানবেন না
বাবা : মানে?
জেরিন: চলোন আংকেল।
জেরিন জোজোর বাবাকে নিয়ে গেলো জোজোর কাছে।
জোজোর বাবা গাড়ি থেকে নেমে চমকে গেলো। কারন জোজোর ভ্যানের জুতা বিক্রি করছে।
জোজো: বাবা এটা আমার দোকান। এই রকম চারটি দোকান আমার আছে। আর তুমমি জানতে চেয়ে ছিলে না এতটাকা কোথায় পেলাম। এখান থেকে কষ্ট করে রোজগার করেছি। আর এই দেখ তোমার জুতার ছবি দিয়ে দোকান খুলেছি।( কাদতে কাদতে জোজো বললো)
বাবা: আমার ছেলে অনেক বড় হয়েছে। বলে কেদে দিলো।
জোজো: দেখো দোকানের নাম দিয়েছে বাবার জুতা।
বাবা: আজ আমি সার্থ কারন আমার ছেলে মানুষের মতো মানু্ষ হয়েছে।
জোজো: দোয়া করো বাবা আমার জন্য।
বাবা: জোজো আর তোকে একটা চুমু খাই।( বলে আবার কেদে দিলো)
জোজোও কাদত কাদতে বলল আমার বাবার জুতা।
এই দিকে জেরিনোও জীবনে এই প্রথম বাবা ছেলের ভালোবাসা দেখে কেদে দিল।