অনুষ্কার সাথে ফোনে কথা বলছিলো আদিত্য৷ কলিংবেলের শব্দ শুনে আদিত্য বললো
তুমি রাখো পরে কথা বলছি৷ কেউ এসেছে৷
ওকে বাই
আদিত্য দরজা খুলে দেখলো ইয়া বড় ঘোমটা দেয়া এক মহিলা৷
কি ব্যাপার কাকে চান আপনি?
এইডা আদিত্য স্যারের বাসা?
হ্যাঁ এটা আদিত্যের বাসা কিন্তু তার নামের শেষে স্যার নেই৷ তো আপনি কে?
আম্নের কি রান্ধনের মানু লাগবে? মোরে একজনে পাডাইছে৷
ও আচ্ছা৷ তা এমন ঘোমটা দেয়া কেন?
মোর স্বোয়ামী কইছে৷ মানুডা মইর্রা গ্যাছে হেইলাইগ্যা তো হ্যার কথা অমান্য হরতারি না৷
তা এমন করে রান্না করতে পারবেন তো?
হ পারুম৷
কত টাকা নিবেন মাসে?
আর কি কি কাম হরা লাগবে?
আর কোন কাজ নেই৷ কাপড় ধোয়া আর ঘর গুছানোর লোক আছে৷
তাইলে ৩ হাজার দিলেই হইবো৷
আচ্ছা৷ আপনি কখন আসতে পারবেন?
বেইন্নাকাল আর সন্ধ্যায় আইয়্যা রাইন্ধা দিমুহানে৷
দু’বার আসার দরকার নেই৷ একবার আসলেই হবে৷
মুই তো আম্নের ধারে ডাবল টাহা চাই নাই৷
আচ্ছা কাল থেকে আসেন৷
অহন চা খাইবেন? এক কাপ বানাইয়্যা দিমু?
না৷ দরকার নেই৷ আপনি এখন আসতে পারেন৷
দেই এক কাপ বানাইয়্যা?
আচ্ছা দ্যান তাহলে৷ রান্নাঘর ঐ দিকে৷
দিতাছি৷ আম্নে খালি মোরে পাঁচ মিনিট সময় দ্যান
বলেই রান্নাঘরে চলে গেলো কাজের মেয়েটি৷
আদিত্য ভাবছে
“যাক ভালোই৷ কাজের প্রতি মন আছে৷ আমি একটু অনুষ্কাকে ফোন দেই৷”
ফোন বেজে গেলো অনুষ্কা ধরলো না৷ আদিত্য চায়ের অপেক্ষা করছে৷ কিছুক্ষণ পর চা দিলো কাজের মেয়েটি৷ আদিত্য চা মুখে দিয়ে দেখলো চিনি কম৷
কি ব্যাপার চিনি এতো কম দিছেন কেনো?
চিনি স্বাস্থ্যের লাইগা ভালা না৷ কাইল লাল চিনি আইন্যা রাইখেন৷
আদিত্য অবাক হয়ে চা পান করে নিলো৷ কাপ ধুয়ে রেখে মেয়েটি চলে গেলো৷
অনুষ্কাকে আবার ফোন করলো
হ্যাঁ৷ বলো৷ কে এসেছিলো?
কাজের বুয়া৷ বলেছিলাম না রান্নার লোক লাগবে৷ এসেছিলো৷ কনফার্ম করে নিয়েছি৷
নাম কি? কোথায় থাকে? কত টাকায় ঠিক করেছো?
তিন হাজার কিন্তু নাম ঠিকানা তো জানা হয় নি৷
তা জানবা কেন? বলছিলাম তাড়াতাড়ি বিয়ে করো৷ তা উনি করবে না৷ কোন রাজ্যের কাজ করবা কে জানে? এখন যদি এই মেয়ে চুরি করে পালায়? বয়স কত মেয়েটার?
২৫ কি ২৬
বিবাহিতা?
হুম৷ স্বামী মারা গেছে৷
এ মেয়ে বাদ৷ অন্য কাউকে ঠিক করো৷
না গো৷ এ মেয়ে অনেক স্বাস্থ্যসচেতন৷
কাজের বুয়ারা সবসময় তেল দিয়ে সব তরকারি ডুবিয়ে রাখে৷ এরা আবার স্বাস্থ্য সচেতন?
আজ আমাকে বলছে….
আমার শুনে কাজ নেই৷ রাখছি বাই৷ আর শুনো বিয়ের ডেট ফাইনাল করে তারপর ফোন করবা৷ এরকম অল্পবয়সি মেয়েদের বিশ্বাস নেই৷
এই শোনো…. হ্যালো হ্যালো
ধ্যাৎ লাইনটা কেটে দিলো??
পরেরদিন খুব সকালে বুয়া হাজির৷ ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললো আদিত্য
ওহ্ আপনি? এতো সকালে?
নাস্তা বানান লাগবো না? আম্নে যান ঘুমান৷ মুই নাস্তা বানাইয়্যা ডাক দিমুহানে৷ আর কাইল থিকা মোরে এউক্কা চাবি দিয়া দিয়েন৷ মুই দরজা খুইলা ঢুকমুহানে৷ আম্নের আর উডা লাগবো না৷
আদিত্য ঘুমাতে চলে গেলো৷ ঘরদোর গুছিয়ে সকালের নাস্তা ও দুপুরের রান্না সেরে ফেললো মেয়েটি৷ তারপর আদিত্যকে ডাকলো৷ আদিত্য টেবিলে গিয়ে দেখলো নাস্তা সাজানো৷ দেখলেই মনে হয় না কোন কাজের মেয়ের কাজ এগুলো৷
আপনি এতোসব কেন করেছেন?
আম্নের লাইগ্যা৷
আমার একার পিছনে এতো সময় নষ্ট করলে অন্য বাসায় কাজ কখন করবেন? ভালো কথা আপনার নাম কি?
মুই তো আর কোন বাসায় কাম হরি না৷ নাম জরিনা৷
মানে? এক বাসার কাজে আপনার মাস চলে যায়?
না মানে অহনও আর কোন বাসা পাই নাই৷
ও আচ্ছা৷
ফ্লাক্সে চা থুইছি৷ খাইয়্যা লইয়েন৷
হুম৷
আর সব থালা বাসন থুইয়্যা দিয়েন৷ মুই সন্ধ্যাকালে আইয়্যা ধুইয়্যা দিমু৷ মুই অহন যাই৷
হুম৷
জরিনা যেতেই আদিত্য ভাবছে
“মেয়েটাকে ঠিক কাজের মেয়ে মনে হয় না৷”
নাস্তা খেয়ে অফিসে চলে গেল৷
এভাবেই মাসখানেক চলে গেলো৷ কাজের মেয়ের অতিরিক্ত যত্নের অত্যাচারে আদিত্যের প্রাণ উষ্ঠাগত৷ সকালে উঠে নাস্তা, সাস্থ্যসম্মত কম তেল দেয়া খাবার, স্বাদের চেয়ে মানের দিকে খেয়াল বেশি৷ আদিত্য এসব আর টলারেট করতে পারছে না আবার মেয়েটিকেও তাড়াতে পারছে না৷ মেয়েটি মনে হয় জেঁকে বসে আছে৷ অনুষ্কাও প্রতিদিন ঝগড়া বাধাচ্ছে৷ আদিত্যের মানসিক অবস্থা খারাপ৷ নাহ এবার বিয়ে করতেই হবে৷ একমাত্র অনুষ্কাই পারবে জরিনাকে তাড়াতে৷ আদিত্যের বাসায় একদিন ওর এক বন্ধু ও তার বউ বেড়াতে এসেছে৷
জরিনা রান্নাঘরে ছিলো৷ একটা জরুরী ফোন আসাতে কথা বলছিলো আর ঠিক তখনই আদিত্যের বন্ধুর বউ রান্নাঘরে ঢুকলো৷ কথা শুনে সে অবাক৷ জরিনা ইংরেজীতে কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলো৷
এই মেয়ে কে তুমি? মতলব কি তোমার?
জরিনা ফিরে তাকালো৷ বুঝলো এখন আর কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই৷ শুধু বললো
আজ বিকেল ৫টায়_____ রেষ্টুরেন্টে আসবেন৷ ওখানে সব বলবো৷ কিন্তু এখন কাউকে কিছু বলবেন না দয়া করে৷
বলেই নিজের কাজে লেগে গেলো জরিনা৷
বিকেলে রেষ্টুরেন্টে আদিত্যের বন্ধুর বউ আর জরিনা৷
আপনি কে? আপনি তো জরিনা নন৷
আমিই জরিনা৷ তবে এটা আমার আসল পরিচয় নয়৷ এই দেখুন আমার ভিজিটিং কার্ড৷
মাই গড৷ আপনি ভার্সিটির লেকচারার!!! তাহলে কাজের লোকের বেশে কেন?
আদিত্যের সাথে আমার সম্পর্ক কয়েক বছরের৷ কিন্তু কেন যে বিয়ে করতে চাইছে না সেটাই বুঝতেছি না৷ আর তাই আমার এ পন্থা৷ কাজের লোক হয়ে ওকে জ্বালাতে চাই৷
হা হা৷ এটা কেমন পদ্ধতি?
ও তো আমাকে তাড়াতে চাইছে কিন্তু আমি জরিনা তো নাছোড়বান্দা৷ এতো সহজে আমাকে তাড়ানো যাবে না৷
যা হোক ভালোই করছেন৷ সন্ধ্যায় তো আবার যেতে হবে রান্না করতে৷
হুম৷
খেয়ে দুজন বের হলো৷
সন্ধ্যায় চিনি ছাড়া চা আর টোস্টবিস্কুট দিলো৷
স্যার খাইয়্যা লন৷
না৷ আমি এসব খাবো না৷ আপনি দয়া করে কাল থেকে আর আসবেন না৷
কি কন স্যার৷ মুই তো আমুই৷
আপনি এতো বেহায়া ক্যান? আমাকে একটু শান্তি দ্যান৷
বলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো আদিত্য৷
বাইরে গিয়ে অনুষ্কাকে ফোন করলো
কি হয়েছে বলো
আমাকে বাঁচাও৷ এ বুয়া আমাকে মেরে ফেলবে৷ এমনভাবে আমাকে খাওয়ায় মনে হয় যেনো আমার বউ৷
বাহ্ ভালোই তো৷ কাজের মেয়েকে এখন বউ বানাও
তুমি একটু এসে তাড়িয়ে দাও না?
তোমার সমস্যা তুমি মিটাও৷ আর আমাকে ডাকতে হলে বিয়ে করে তারপর ডাকবা
শালার বিয়ে!! এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে বিয়ে করছি দাড়াও৷ আমি বাবাকে ফোন করছি৷
ফোন রেখে দিলো আদিত্য৷
বাড়িতে অনুষ্কার কথা আগেই জানতো৷ জাঁকজমক না করেই বিয়েটা সেরে ফেললো৷ মজার বিষয় হলো বিয়ের দিন থেকে আর জরিনাকে দেখা যাচ্ছে না৷
কি ব্যাপার অনুষ্কা, জরিনা যে আর আসছে না?
ক্যান তুমি জরিনার প্রেমে পড়েছো নাকি?
গিয়েছে৷ বেঁচেছি আমি৷
অাসুক৷ আসলে আমি ঠ্যাং খোড়া করে দিবো৷ আমার স্বামীর দিকে নজর? আচ্ছা আমি আজ পূজাদের বাসায় থাকবো৷ তুমি আজ একটু কষ্ট করে একা থেকো৷
আচ্ছা সমস্যা নেই৷
অনেক রাতে বাসায় ফিরলো আদিত্য৷ রুমে ঢুকে লাইট অন করতেই দেখলো জরিনা আদিত্যের বিছানায় শুয়ে আছে৷
এই জরিনা!! আপনি এখানে কেন? উঠুন বের হোন রুম থেকে৷
ক্যান গো সাব? আইজ রাইতটা আম্নে মোর লগে থাহেন৷ ভাবিসাব তো বাসায় নেই কিচ্ছু জানবে না৷
হায় হায় কি বলে?
আপনি আমার মা৷ আমি আপনার পা ধরছি আপনি চলে যান৷
আহারে আম্নে নাকি পুরুষ মানু৷ সমস্যা কোনহানে? মুই কালা? লাইট বন্ধ হরলে কালা ধলা ব্যাবাক হমান
না৷ আপনি থাকুন আমি যাই৷
জরিনা গিয়ে ভিতর থেকে তালা দিয়ে আদিত্যের থেকে চাবি নিয়ে গেল৷
আপনি এমন করতে পারেন না৷ আমার সম্মান নিয়ে আপনি ছিনিমিনি খেলতে পারেন না৷
আপনার বউ আর আমার মইধ্যে কোন পার্থক্য নাই৷ আহেন কাছে আহেন৷ একটু প্রেম করি ভালোবাসা দেই৷
ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে জরিনা৷
আদিত্য বাইন মাছের মতো দেয়ালের সাথে লেপ্টে মোড়াচ্ছে৷ জরিনা যেই ধরতে আসবে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো৷ বাইরে থেকে ডাকছে জরিনা কিন্তু দরজা খুললো না আদিত্য৷
সকালে দরজা খুলে বেরুতেই দেখে অনুষ্কা বিছানায় ঘুমাচ্ছে৷ একবার ভাবলো জরিনাই হয়তো অনুষ্কার পোশাক পড়ে আছে৷ তারপর ভালো করে দেখে বুঝলো এটা অনুষ্কা
অনু ও অনু উঠো না?
হুম৷
উঠো না? জরিনা কোথায়?
অনুষ্কা ধরফর করে উঠে বললো
জরিনাকে খুজছো কেন?
মানে কাল রাতে……
কাল রাতে কি?
সব খুলে বললো আদিত্য
আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনা৷ শেষ পর্যন্ত তুমি অই কাজের মেয়ের সাথে রাত কাটালে? এও আমার কপালে লেখা ছিলো?
সোনা বউ বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করি নাই৷ আমি সারারাত বাথরুমে ছিলাম বউ৷ আমি আমার ইজ্জত, সতিত্ব রক্ষা করেছি৷ আমার সতিত্ব কেউ নিতে পারে নি৷
মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো অনুষ্কা৷
বউ তোমার পায়ে পড়ি
বলে পা ধরতে যেতেই অনুষ্কা বললো
আমি জানি তুমি অন্য মেয়েতে আসক্ত নও৷ আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম৷ তবে তুমি এতোটা ভালো সেটা জানতাম না৷ এখন জানলাম৷ আসলে জরিনা আর কেউ নয় আমিই জরিনা সেজে ছিলাম৷ ক্ষমা করো
কি? এতোদিন আমাকে তুমি জ্বালাইছো?
হ গো সাব৷ কি হরমু কন আম্নে তো বিয়া হরতে চান নাই হ্যারফান্নে এইয়্যা হরছি৷
তুমি আমাকে এমন বোকা বানাতে পারলে?
হুম৷ বউয়ের কাছেই তো হয়েছো
আমার টাকা ফেরত দাও
কিসের টাকা?
এতোদিন আমার থেকে তিনহাজার করে টাকা নিয়েছো আর কি কি চুরি করেছো বলো?
চুন্নিটাই তো তোমার কাছে ধরা দিয়েছে আর কি চাও বলো?
হুম৷ আর কিছু লাগবে না৷💜💜💘
উফফ, লাগেতো….💜💜💜