ফিরে পাওয়া

ফিরে পাওয়া

রাত কয়টা জানি না। সম্ভবত গভীর রাত হবে। সময় দেখার জন্য কোন কিছু সাথে নেই। এই গভীর রাতে একা হাটছি শহরের নীরব রাস্তা দিয়ে। এটা এক ধরনের অভ্যাস। এখন প্রতিটা রাত এই রকম একা একা হাটি, কখনও বা মধ্য রাত কখনও বা রাতের শেষ পর্যন্ত। গভীর রাতে নীরব রাস্তা দিয়ে হাটতে খুব ভালো লাগে। এক সময় এই অভ্যাসটা ছিল না। এই অভ্যাসটা হয়েছে প্রায় এক বছর এর মতো হবে। এক জনের জন্য এই অভ্যাসটা হয়েছে। নিজের কষ্ট গুলো রাতের নীরবতার মাঝে ছড়িয়ে দিতে খুব ভালো লাগে। মনে হয় কষ্ট গুলো একটু কমেছে। আমার কষ্ট গুলো বিভিন্ন জনিসের সাথে শেয়ার করি। কখন রাতের আকাশে চাঁদের সাথে শেয়ার করি, আবার কখনও রাতের নীরব তারকা গুলোর সাথে শেয়ার করি। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির পানির সাথেও শেয়ার করি আমার কষ্ট গুলো।

ল্যাম্পপোস্টের নিচে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছি। মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন মেয়েলি কন্ঠে বলল ‘ এই SM একটু দাঁড়াও’। এটা শুনে থমকে দাঁড়ালাম আমি। এই নামটা শুধু একজনি ডাকত। কিন্তু সে মানুষটা তো এখন আর নেই, আমাকে ছেড়ে চলে গেছে প্রায় এক বছর আগে। মানুষটিকে আমি খুব ভালোবাসতাম এমনকি এখনও বাসি। কিন্তু সেই মেয়েটি আমাকে ভালোবাসে নি। শুধু আমার সাথে কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করেছে। কিন্তু সেই মানুষটি এখন আবার ফিরে আসল কেন?

আজ থেকে কয়েকবছর আগের কথা। আমি আর সানজিদা ছিলাম খুব ভালো একজন বন্ধু। তার সাথে পরিচয় হয় কলেজে। কলেজের প্রথম দিনেই তার সাথে আমার পরিচয় হয়। কলেজের প্রথম দিনে ক্লাসে গেলাম এই কলেজে আমার কোন বন্ধু নেই। সব বন্ধুরা অন্য কলেজে ভর্তি হয়েছে, কিন্তু আব্বু আম্মুর জন্য আমাকে এই কলেজে ভর্তি হতে হলো। নীরব হয়ে ক্লাস করছিলাম। অবশ্য প্রথম দিনে স্যার কোন কিছু পড়ান না, কিছু সময় লেকচার দিয়ে চলে যান। আমি মন দিয়ে স্যার এর লেকচার শুনছি। এমন সময় পাশ থেকে একটা মেয়ে আমাকে বলল,

– এই তোমার নাম কী…?

আমি মেয়েটির দিকে তাকালাম। দেখি মেয়েটির মুখটা নেকাব দিয়ে ঢাকা, সে জন্য তার মুখটি দেখতে পারছি না কিন্তু তার চোখ দুটি দেখতে পারছি অসাধারণ সুন্দর তার চোখ দুটি। আমি মনে হয় এমন সুন্দর চোখ প্রথম দেখলাম।

– জ্বী এস এম শাহাদত হোসেন। আপনার..?(আমি)

– আমার নাম সানজিদা। আর শুন আমি তোমার ক্লাসমেট সো তুমি করে বলবা, আর তোমার নামটা বেশ বড় আমি তোমাকে SM বলে ডাকব কেমন। (মেয়েটি)

– জ্বী আচ্ছা…।(আমি)

সেদিন মেয়েটির সাথে অনেক কথা হয়। কথার মাঝখানে মেয়েটি আমার ফেসবুক আইডি নিয়ে নিল। আমিও দিয়ে দিলাম। সেদিন কলেজ শেষ করে বাসাই চলে আসলাম।

এরপর থেকে সানজিদার সাথে সবসময় কথা হতো। এক সময় আমাদের এই পরিচয়টা ভালো বন্ধুত্বে রুপ নেই। এই বন্ধুত্বের সম্পর্কটা বেশী দিন স্থায়ি হল না। আমি এক সময় সানজিদার চোখ দুটি প্রেমে পড়ে যায়। জানি না সানজিদা আমাকে ভালোবাসে কী না। তবে ওর চোখের দিকে তাকালে আমি একটি লেখা দেখতে পারি সেই লেখাটা হলো ভালোবাসি। তবে কাকে ভালোবাসে সেটা লেখা নেই। তাই আমি জানি না। আমি একদিন সানজিদাকে বললাম,
– সানজিদা তোমাকে একটা কথা বলবো, জানি না কথাটা তুমি কী ভাবে নিবে। তবে কথাটা আমাকে বলতেই হবে না বলে থাকতে পারছি না। তোমার চোখ দুটি যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই সেই চোখ দুটির প্রেমে পড়ে যায়, কিন্তু সেটা বুঝতে একটু দেরী হয়েছে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি আমার তোমার চোখদুটির প্রেমে তো পড়ছি সাথে সাথে তোমার মনটারও প্রেমে পড়েছি, সানজিদা আমি তোমাকে ভালোবাসি।

ভেবেছিলাম সানজিদা আমাকে ভালোবাসবে না, কিন্তু সেদিন সানজিদা আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার ভালোবাসাটা গ্রহণ করে নিল। সেই দিন থেকেই আমাদের বন্ধুত্বটা ভালোবাসা নামক অনুভূতি গুলোতে রুপ নেই। শুরু হয় আমাদের নতুন ভালোবাসাময় জীবন। কিন্তু এই জীবনটাও বেশি সময় স্থায়ী হলো না। কথায় আছে না পৃথিবীর কোন জিনিস স্থায়ী না।

আমাদের সম্পর্কের প্রায় দুই বছর পর সানজিদা আমাকে ছেড়ে দিয়ে অন্য আরেকটা ছেলের সাথে চলে যায়। ও যেদিন কথাগুলো আমাকে বলল সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ভালোবাসা হারানোর কষ্টটা কিন্তু অন্য রকম। সেদিন আমার চোখ দিয়ে শুধু জল গড়িয়ে পড়েছিল। আমি শুধু সানজিদার কথাগুলো শুনেছিলাম, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছি।

সেদিন থেকেই শুরু হয় আমার কষ্টময় জীবন। অবশ্য কষ্টগুলো এখন কিছুটা ভুলতে শুরু করেছি। কিন্তু এই নামটা শুনার পর আবার কষ্ট গুলো নতুন ভাবে ফিরে আসল। আমি পিছন ফিরে তাকালাম। সানজিদা আমার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আরও কিছুটা সামনে গিয়ে বললাম,

– কী ব্যাপার এখানে কেন এসেছ..?(আমি)
– প্লীজ আমাকে মাপ করে দাও….(সানজিদা)
– মাপ তো সেদিনই করে দিয়েছি যেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গেছ এখন আবার কেন আসছ..?(আমি)
– আমি আবার তোমার জীবনে ফিরে আসতে চাই…।(সানজিদা)

কথাটা শুনে আমি সানজিদার দিকে তাকালাম। দেখি ওর চোখদুটি অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে। কিন্তু আমার কিছু করার নেই।

– দুঃখিত আমি আর তোমার জীবনে যেতে চাই না… আমাকে যার জন্য ছেড়ে গেলে তার জীবনে যাও আমার এই কষ্টময় নোংরা জীবনে তুমি আর এস না..।(আমি)

– আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে কষ্ট দিয়ে। আমি বুঝতে পারি নি কার ভালোবাসা কতটা সত্যি। তোমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর আমার বুঝতে পেরেছি তুমিই আমার সত্যি কারের ভালোবাসা। আমি তখন শুধু তোমাকেই মিস করেছে, যেখানে যায় সেখানেই শুধু তোমার কথা মনে পড়ে। তাই আমি আজ ওকে ছেড়ে দিয়ে তোমার কাছে চলে এসেছি। প্লীজ আমাকে আর একটিবার সুযোগ দাও..।(সানজিদা)

– এটা হবার নয়। আমি হয়তো এখনও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তোমার জন্য এখন আর সেই আগের অনুভূতি গুলো তৈরি হয় না, তোমাকে দেখার জন্য মনটা এখন চটপট করে না। সো তুমি আর আমার এই অনুভূতি হীন জীবনে এসো না..।(আমি)

সানজিদা নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে এখন জল গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এই চোখের জল আমাকে আর নরম করতে পারবে না। আমি আর দাঁড়িয়ে না থেকে উল্টা দিকে হাটা ধরলাম। কিছুদূর যেতেই সানজিদা দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলতে লাগল,

– আমি আর কখনও যাবো না তোমাকে ছেড়ে প্লীজ আমাকে একটিবার সুযোগ দাও। আমি আর কখনও তোমাকে কষ্ট দিব না। আর আমি তোমার অনুভূতিহীন সেই হৃদয়টাই চাই। প্লীজ আমাকে ফিরে দিও না। তোমাকে ছাড়া আমি শুন্য হয়ে যাব।

ও এভাবে জড়িয়ে ধরা দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না। ওর স্পর্শ পেয়ে মুহূর্তের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করছে। সত্যি ভালোবাসার স্পর্শের কোন তুলনা হয় না।

ভালোবাসার ছোঁয়া দিয়ে আমিও ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কিছু কিছু ভালোবাসা আছে যা কখনও হারায় না। বরং দিন দিন তা আরো শক্তিশালী হয়। এই রকম কিছু কিছু গল্পের হ্যাপি এন্ডিং হলে ক্ষতি কী..??

********************************************সমাপ্ত***************************************

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত