ফেইসবুক আইডির সেই মেয়েটি

ফেইসবুক আইডির সেই মেয়েটি

রাত ১২.০৬..
ফেসবুক চালাচ্ছি। অতঃপর একটি আইডি থেকে এসএমএস আসলো। আইডিটা ছিলো একটা মেয়ের।
আমি অপরিচিত কোন মেয়ের সাথে সাধারনত চ্যাটিং করি না। কারন একটাই, ফেইক আইডি হতে পারে।
যেভাবে ফেইক আইডির সংখ্যা বেড়েছে তাতে কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা আসলেই বুঝা মুশকিল।

তারপরেও এসএমএস টা অন করলাম।
-হাই?(মেয়েটি)
-হাই।(আমি)
-কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
-হ্যাঁ, ভালোই আছি।আপনি মনে হয় একজন লেখক?
-কেন?
-না এমনি, আপনার লেখা অনেক গল্প আমার নিউজ ফিডে আসো তো তাই।
-বলতে পারেন খুব ছোটখাটো, আমি ফেসবুকে একেবারে নতুন রাইটার। তবে অনেক আগ থেকে লেখালেখি করি।
-তাই বুঝি।
-হুম।
-আপনার বাড়ি মনে হয় রংপুর?
-কেন বলুন তো?
-না এমনি, আসলে আমার বাড়ি গাইবান্ধা।
-ওহ। আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলুন তো।
-কী?
-আপনি কি সত্যি মেয়ে?
-কেন বলুন তো? আপনার কি সন্দেহ হয়?

-এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এখন অনেক ফেসবুক হিজড়া বের হয়েছে তো। তাই বুঝা যায় না কে সত্যিকার মেয়ে আর কে হিজড়া।

-ঠিক আছে আপনার কথা।

এভাবেই মাঝে মাঝে কথা হয় মেয়েটির সাথে। বেশির ভাগ সময়ে রাত্রিবেলা ফেসবুক আইডি ওপেন করতো মেয়েটি।

ওপেন করে আমাকে অনলাইনে পেলে অবশ্যই আমাকে নক করতো। এভাবে দিন কাটতে থাকে। একদিন আমার নাম্বারটা নিয়ে নিজেই ফোন দিলো। কথা হয়েছিলো অনেকক্ষণ। আমি জানতে পারলাম মেয়েটির নাম মিতু।
ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। তিন ভাই বোনের মধ্যে সে মধ্যম। বাবা মা সবাই আছে। মেয়েটির কন্ঠ খুবই সুন্দর। কখনো তার ছবি পর্যন্ত দেখি নি। এভাবেই মাঝে মাঝে মিতু আমাকে ফোন দিতো। তবে আমিও তাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি। এভাবেই কাটতে থাকে এক একটি দিন।

একদিন হঠাৎ অসময়ে সে আমাকে ফোন দিলো। ফোনটা রিসিভ করলাম,

-হ্যালো।(আমি)
-কেমন আছেন?
-আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
-হুম, ভালোই আছি।
-আজ হঠাৎ অসময়ে ফোন দিলেন?
-কেন অসময়ে ফোন দিতে কি মানা? যদি মানা করেন তাহলে আর দিবো না।
-ঠিক তা নয়। আসলে এই সময়ে কখনো ফোন দেন নি তো তাই।
-আসলে আমি রুংপুরএসেছি তো।
-রংপুর!
-হুম, এখানে আমার খালার বাসা। তাই বেড়াতে এসেছি।
-রংপুরের কোথায়?
-জুম্মাপাড়া।
-ওহ।
-আমি চাই আজ আপনার সাথে দেখা করবো।
-আজ?
-হুম।
-সরি, কলেজ যেতে হবে। আজ হবে না।
-প্লিজ ১টা ঘন্টার জন্য।

অতঃপর রাজি হয়ে গেলাম। কখনো যে মেয়েকে দেখি নি, তাকে আজ দেখবো। কেমন যেন এক্সাইটেড আমি। নির্দিষ্ট সময় এমন স্থান বেঁধে দিলো সে। অচেনা এই মেয়েটির সাথে দেখা করবো বলে অর্ধেক ক্লাস করেই বাড়িতে চলে এসেছি। প্যান্ট আর পাঞ্জাবী পরলাম। আসলে এই পোশাকটা আমার খুবই প্রিয়। অতঃপর চলে আসলাম নির্দিষ্ট স্থানে ঠিক সময়মত। কিন্তু মিতু এখনো আসে নি।

কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর ওর নাম্বার থেকে ফোন আসলো।

-আপনি কোথায়?(আমি)
-এই তো গেটে।
-আমি গেটের বামদিকে একটা গাছের নিচে বসে আছি। প্যান্ট আর হলুদ রংয়ের পাঞ্জাবী পরা।
-আচ্ছা। আমি আপনাকে দেখেছি।

দেখলাম আমার দিকে একটা মেয়ে আসছে। বলতে বলতে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

-আপনি রাইয়ান?
-হুম, তাহলে আপনি মিতু?
-ঠিক ধরেছেন।
-বসেন।

মিতু দেখতে যেমন ভেবেছিলাম,তার চেয়েও অনেক সুন্দর সে। অনেক কথা হলো মিতুর সাথে। জানলাম অনেক অজানা তথ্য । অতঃপর ঘন্টাখানে বসে গল্প করার পর দুজনে হাঁটতে শুরু করলাম। মনে মনে ভাবলাম, মেয়েটা অনেক দূর থেকে এসেছে। একটু কিছু না খাওয়ালে কেমন হয়। তাই ওকে নিয়ে হোটেলে ঢুকলাম। মোটামুটি পর্যাপ্ত পরিমান খাবার খাওয়ালাম ওকে।

যখন হোটেল থেকে বের হলাম, তখন মিতু আমাকে একটা গিফট বক্স আমার হাতে দিলো। আমি সেটি অনিচ্ছা থাকা সত্বেও গ্রহন করলাম। আর মনে মনে ভাবলাম, আমাকে সে মেয়ে হয়ে গিফট দিলো,অথচ আমি ছেলে হয়ে তাকে কিছুই দিতে পারলাম না?

ঠিক করলাম, কিছু একটা কিনে দেই ওকে এবং দামী ঘড়ি গিফট করলাম। গিফট পেয়ে খুব খুশি হলো সে।

আমরা মার্কেটের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো এবং ড্রেস পছন্দ করতে লাগলো। একটা পছন্দ হলে তার দাম জানতে চাইলো।। বলা হলো, এটার দাম ৩৫০০ টাকা। তখন সে আমার দিকে তাকালো,

-আপনার কাছে দুহাজার টাকা ধার হবে?
-হবে। (সরল মনে)
-চিন্তা করিয়েন না। বাড়িতে ফিরে আপনাকে বিকাশ করবো।
-সমস্যা নেই।

সরল মনে ২০০০ বের করে মিতুর হাতে দিলাম। ড্রেসটা সে কিনে ফেললো। অতঃপর আমি ওকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে

ফিরে আসলাম। এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল কিন্তু মিতুর কোন খবর পাচ্ছিলাম না। তাই আমিই ওকে ফোন দিলাম।

কিন্তু ওর নাম্বারটা বন্ধ পেলাম। ফেসবুকে ডুকে ওর আইডি সার্চ দিলাম কিন্তু পেলাম না। ওর দেয়া গিফট বক্সটা খুললাম। কিন্তু একি! এতে কিছুই নেই।শুধু খালি বক্স!

মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। যার আশংকা করেছি জীবনে শেষমেশ তাই ঘটলো।

******************************************(সমাপ্ত)************************************

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত