ভাই, সাদিয়া বলছে রক্ত দিয়ে প্রেমপত্র না লিখলে সে নাকি এক্সেপ্ট করবেনা। আমার চুল্কাইতে গিয়ে ছুলে গেলেও কান্দা আসে। আর রক্ত তো আমি দেখতেই পারিনা, এখন আমার কী প্রেম করা হবেনা? টুকু একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল।আমি এখন ভাবে আছি, সেই ভাবে। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম- টুকু সমস্যা কিন্তু বড়সড় কিন্তু সমাধান আমি বের করে দিবই। আমার প্রচন্ড খিদে লেগেছে একটা কাচ্চি দিতে বল, তোর খিদে লাগলে তুইও নে একটা। টুকু ওয়েটারকে ডেকে একটা কাচ্চির অর্ডার করল।
টুকু এদের কাচ্চিটা কিন্তু অস্থির, দেখ আলুটা কত্ত সুন্দর, তোর ঐ সাদিয়ার চোখের মত মায়াবী লাগছে আলুটাকে। টুকু কপাল কুঁচকে বলল- ভাই সাদিয়ারে টাইনেন না প্লিজ, আমার খারাপ লাগে। আচ্ছা বলব না, এখন শোন। পোল্ট্রি মুরগীর রক্তটা কেমন যেন পাতলা পাতলা টাইপের, এই রক্ত দিয়ে লিখলে ধরা পড়ে যাবার চান্স থাকে। পাঙ্গাশ মাছের রক্তটা একদম মানুষের রক্তের মতন। তুই ডিমওয়ালা পাঙ্গাশ মাছ কিনবি বড় সাইজ দেখে। টুকু খানিকটা আমার দিকে ঝুকে এসে বলল- ভাই ডিমওয়ালা বড় সাইজের পাঙ্গাশ কেন! সেভেন আপের বোতলটা মুখ থেকে নামিয়ে বললাম- রক্ত তোর ডিম আমার। কাল সকালে মাছ কিনে নিয়ে দিয়ে আছিস, আমি মেছে গেলাম।
পাঙ্গাশ মাছের রক্ত দিয়ে টুকুকে একখান প্রেমপত্র লিখে দিয়ে পাঙ্গাশ মাছের ডিমভাজি দিয়ে দুই প্লেট ভাত খেয়ে
ক্লাসে এসে বসেছি। কুত্তামরা গরমে উপর নিচের সব কাপড়চোপড় ভিজে একাকার, ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় মুখ ছোট হা করে আস্তে আস্তে ফুঁ দিয়ে নিজেকে ঠান্ডা করছি। কী ব্যাপার! মুখ বড় হা করে ফুঁ দিলে গরম বাতাস বের হচ্ছে কেন! আবার মুখ ছোট হা করে ফুঁ দিলে ঠান্ডা বাতাস বের হচ্ছে কেন! স্যারকে জিজ্ঞেস করতে হবে। স্যার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আজ যদি তার পড়া না পারি তাহলে আজ কান ধরে উঠবস করাবেন। ক্যারাম খেলতে খেলতে স্যারের পড়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম, রেট কাভার দিতে গিয়ে স্যারের পড়ার কথা মনে পড়াতে ভাল ছাত্র হিসেবে রেট কাভার না দিয়েই মেছে চলে আসি। পড়তে বসে দেখি কিসব আউলফাউল জিনিস লেখা! স্যার যেন আজকে ক্লাস না নেয়- তাহলে ফকিরকে দশটাকা দিব, এই মানত করেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
স্যার রোল কল করার আগে দেখলেন আগের পৃষ্ঠা হাওয়া! নতুন করে নাম লিখলেন তবে সেখানে আমার রোল আসেনি, ১২৭ রোল পর্যন্ত লেখার পরেই খাতা শেষ। এই নিয়ে আমার কোন দুঃখ নেই। অবশেষে স্যার পড়া ধরতে আমার বেঞ্চের কাছে আসলেন, স্যারকে প্রশ্ন করার সুযোগ না দিয়েই জিজ্ঞেস করলাম – স্যার আমি একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছিনা, একটু বুঝিয়ে দিবেন? স্যার চশমার নিচ দিয়ে তাকিয়ে বিরক্তমাখা গলায় বললেন- বল কি বুঝিস নি। আচ্ছা স্যার, আমরা যখন মুখ ছোট করে হা দেয় তখন ঠান্ডা বাতাস বের হয়,আবার আমরা যখন মুখ বড় করে হা দেয় তখন গরম বাতাস বের হয়। এটা কেন হয় বুঝলাম না। ক্লাসের সবাই আমার আর স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে, ক্লাস জুড়ে থমথমে পরিবেশ। স্যার হাসতে হাসতে বললেন- ও এই ব্যাপার।
শোন, জুল থমসন নিতী অনুসারে উচ্চচাপ এলাকা থেকে কোন গ্যাস সরু ছিদ্রপথে নিম্নচাপ এলাকায় বেরিয়ে আসলে তার তাপমাত্রা হ্রাস পায়। তাই মুখ ছোট করে ফুঁ দিলে বের হয়ে আসা বাতাস ঠান্ডা হয়ে যায়, আর মুখ বড় করে ফুঁ দিলে গরম বাতাস বের হয় এই নিতীর কারনেই। একই কারনে পারফিউম থেকে বের হওয়া গ্যাসও ঠান্ডা অনুভূত হয়। স্যার এবার বিজয়ের হাসি দিয়ে আবার আমার কাছে আসলেন পড়া ধরতে, যখন ই স্যার পড়া ধরতে যাবেন তখন বললাম – স্যার আরেকটা জিনিস তো মাথায় ঢুকছেনা। স্যার রাগে গজগজ করতে করতে বললেন- কী বল।
আচ্ছা স্যার, আপনি বললেন উচ্চচাপ এলাকা থেকে কোন গ্যাস সরু ছিদ্রপথে নিম্নচাপ এলাকায় বেরিয়ে আসলে তার তাপমাত্র হ্রাস পায় আর এই কারনেই নাকি মুখ ছোট হা করে ফুঁ দিলে ঠান্ডা বাতাস বের হয় কিন্তু তাহলে তো পাদের তাপমাত্রা কম হওয়ার কথা ছিল অথচ পাদের স্বাভাবিক তাপমাত্রা তো ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এটা তো তাইলে জুল থমসন নিতীর সাথে মিলল না।
বেয়াদপ, তুই এটা পাদাপাদির ক্লাস পাইছিস! বের হ আমার ক্লাস থেকে, এক্ষুণি বের হ যা। চুপচাপ বের হয়ে আসলাম, ফকির খুঁজে বের করতে হবে। দশ টাকা দেয়া যাবেনা, পাঁচ টাকা দিব। স্যার তো ক্লাসে ঠিকই এসেছেন কিন্তু আমার কান ধরতে হয়নি এই যা। স্যার ক্লাসে না আসলে পুরো দশ টাকাই দিতাম। টুকুকে একটা ফোন করা জরুরি,ওর প্রেমটা হয়ে গেলে আজ কাচ্চি দু প্লেট মেরে দিব।