ছোটখাটো একটা ছাতা মাথার উপর। আগের ছাতাটা কত ভাল ছিল। আব্বুর ছাতাটা। খুব সহজে ২-৩ জন থাকা যেত। আর এখন এই পিচ্চি ছাতায় ভিজে শেষ গালিব। ছোট ছাতা ব্যবহার না করলে নাকি স্মার্ট হওয়া যায় না। তাই একটা ছোট ছাতা কিনেছে কাল। এই বৃষ্টির মধ্যে চোখে sun glass. এটাকে এখন rain glass বলে মনে হচ্ছে। খুব বিরক্ত লাগছে চোখে এটা পরে থাকতে। চশমা ! ওহ কি বিরক্তিকর একটা জিনিস। কিন্তু কিছু করার নেই, স্মার্ট হতে হলে sun glass টাকে rain glass বানিয়ে হলেও পরতে হবে। প্রিয়তিকে খুব ভালবাসে গালিব। আর মেয়েটার জন্য একটু স্মার্ট হতেই হবে। সম্পর্ক নয়ত টিকবে না, বলে দিয়েছে প্রিয়তি। বড় ছাতাটা দেখে সেদিন কি চিল্লাচিল্লি না করল প্রিয়তি। তাই ছোট ছাতা কেনা। অবশ্য ঠিকই বলছে । প্রিয়তি কত স্মার্ট অত সুন্দর। ও যদি একটা পাগল পাগল টাইপ , আনস্মার্ট ছেলের সাথে ঘুরে কেমন লাগে না। গালিব এক জামা দিয়েই অনায়েসে সপ্তাহ পার করে দিতে পারে। কিন্তু এখন আর তা করলে হয় না।
– তোমার কি এই একটাই জামা? – না, তা হবে কেন? – তাহলে এই ময়লা জামা পরে প্রতিদিন আসো কি ব্যাপার? – খুব আলসেমি লাগে জামা বের করতে। – জামা কি সব সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখছ নাকি? যে বের করতে আলসেমি লাগে। – আরে না। কি বল। এই যুগে সিন্দুক পাব কই? ঘুছিয়ে রেখে দিছি মাথার কাছে। প্রিয়তি বাম ভ্রু উঁচু করে তাকাল গালিবের দিকে। প্রিয়তিকে এই অবস্থায় দেখতে অসাধারণ লাগে। গালিবও একটু বাম ভ্রুটা উঁচু করার চেষ্টা করল।খুব অদ্ভুত লাগছে দেখতে।
– এই এই চোখ এমন করছ কেন তুমি? – একটু তোমার মত করার চেষ্টা করছি। – আণ্ডা। চোরের মত লাগতেছে তোমাকে। – এসব কি কথা। তোমাকে না কি সুন্দর লাগে। – আমাকে লাগবেই। আমি তোমার মত ময়লা জামা পরে ঘুরি নাকি। তুমি কি নোংরা!! – জামা পরলে পুরনো হয়ে যাবে না? তাই এটা নষ্ট হবে আগে তারপর অন্যটা পরবো।
একটু পাশে এসে গালিব হাত ধরতে যাচ্ছিল প্রিয়তির। দূরে সরে গিয়ে প্রিয়তি বলল- একদম ধরবা না আমাকে ময়লা জামা পরে। কি জঘন্য। ভাবা যায় তুমি নতুন জামা তুলে রেখে এই পচা ময়লা জামা পরে আমার সাথে দেখা করতে আসছ। তুমি এমন কেন? একটু স্মার্ট হতে পার না? আসলেই তো গালিব এমন কেন? একটু স্মার্ট হতে পারে না? আজ স্মার্ট হয়ে আসছে গালিব। মাথার চুল গুলো উপরের দিকে স্পাইক করে এসেছে হেয়ার জেল দিয়ে।
– তুমি কি এভাবেই চুল আঁচড়াবে? – কিভাবে? – এই মদন মদন ভাবে। – কই? ভালই তো এটা। সবাই ভদ্র বলে চুল দেখে আমার। একদিন কি হল জানো, এক লোক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে। বসে করলেও হত। খুব মেজাজ খারাপ হল। আমি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম হাতে আমড়ার আচার নিয়ে। এই দুর্গন্ধে। খাওয়া যায় বল? কি আর করা। আসতে করে দিলাম এক লাথি ব্যাটাকে পিছন থেকে। লোক তো তারাতারি করে ঠিকঠাক হয়ে পিছন ফিরে তাকাল। কে এই কাজ করল দেখার জন্য। আমার চেহারা দেখে তার মনে হয়নি যে আমি এই কাজ করেছি। বুঝ না, চেহারায় তো আমার innocent ভাব। উনি আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি দেখেছি কিনা এই কাজ কে করেছে। আমি দুর্গন্ধের মধ্যে আচার খেতে খেতে বললাম, না তো আংকেল। তবে এক ছেলেকে দৌড়ে যেতে দেখলাম। আংকেল তো খুব আক্ষেপ নিয়ে স্থান ত্যাগ করলেন। শান্তি মতন পরিবেশও নষ্ট করতে পারলেন না। হাহা। – এই চুপ। কি সব কথা বলতেছ। এর সাথে চুলের কি সম্পর্ক? – আছে। আমার চুল দেখেই উনি বুঝলেন যে এই অপকর্ম আমাকে দিয়ে করা সম্ভব না। – তুমি কি হেয়ার স্টাইল চেঞ্জ করবা কি করবা না বল। – না করলে হয় না? – না হয় না। আমার এই মদনের সাথে ঘুরতে অস্বস্তি লাগে। তুমি হেয়ার স্টাইল চেঞ্জ করে আসবা পরের দিন। একটু স্মার্ট হও না প্লিজ। আমার ভাল লাগে তোমাকে। – আচ্ছা। গালিব চুপ করে কথাটা বলল। প্রিয়তি হয়ত খুব রেগে গেছে।
আজ তাই চুলের স্টাইল চেঞ্জ করে যাচ্ছে গালিব।চোখে sun glass বা rain glass . হাতে ছোট ছাতা। ভিজে শরীর শেষ। নতুন জামা ভিজে একাকার। ময়লা জামা পরে যাচ্ছে না আজ।সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হবে যে। সাদিয়া কখন থেকে অপেক্ষা করছে। অনিক মোবাইল এ কল করছে না। মেসেজও না। ফেসবুকেও নেই। আজ দেখা হচ্ছে দুজনের প্রথম বারের মতন। একটু সাজগোজ করে এসেছে আজ সাদিয়া। কখনও সাজে না। কিন্তু অনিক এর সাথে দেখা করতে আসছে না সাজলেই নয়। আসার আগে সাদিয়ার ছোট বোনটা ওকে দেখে হা করে তাকিয়ে ছিল। – আপু তোকে না পরীর মত লাগছে।
শুনে একটু লজ্জাই পেয়েছিল সাদিয়া। কেউ এভাবে সুন্দর বললে খুব লজ্জা লাগে। শাড়ি পড়েছে একটা নীল রঙের। নাকে ছোট্ট পাথর বসানো একটা নাক ফুল। কপালে ছোট্ট একটা নীল টিপ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সত্যি নিজেকে অনেক সুন্দর লাগছিল। ধ্যাৎ কি একটা ছবি দেখাল অনিককে। আজকে একটা ছবি তুলে ওকে দেখালে কত ভাল হত। এভাবে কখনও সাজেনি সাদিয়া। সাজগোজ করা একদম পছন্দ না সাদিয়ার। শুধু অনিকের জন্যই করা। ভালবাসার মানুষের জন্য মাঝে মাঝে কিছু কিছু করতে হয়। হ্যাঁ, ভালবাসার মানুষ। একটু লাজুক প্রকৃতির মেয়ে সাদিয়া। ফেসবুকে পরিচয় অনিকের সাথে। হুটহাট করে যে কারও রিকুয়েস্ট এসেপ্ট করত না সাদিয়া।
পরিচিত ছাড়া অন্য কেউ ফ্রেন্ডলিস্ট এ ছিল না। অনিক রিকুয়েস্ট পাঠানোর পর থেকেই মেসেজ করতে থাকে সাদিয়াকে এসেপ্ট করার জন্য। আকুতি মিনতি কিংবা কাকুতি শুনে মন কিছুটা নরম হওয়াতে , অপরিচিত অনিককে ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা দেয় সাদিয়া। অপরিচিত কারও সাথে বড্ড বেশিই কথা বলা হত। দিন রাত সারাক্ষণ ২ জনের চ্যাট হত। ভাললাগা মন্দলাগা বিনিময় করতে করতে কখন যেন আবেগ অনুভূতিগুলোও বিনিময় হয়ে গেল। বোঝার সাধ্য দুজনের কারই ছিল না। ঘুম থেকে উঠার আগে মেসেজ চেক,রাতে ঘুমে টলে টলে ভুল ভাল বানানে মেসেজ দেওয়া। কখনও সারারাত জাগা। একদিন অনিক বলল, তোমাকে খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। – হুম কর। – যদি সারাজীবন করতে চাই? – হ্যাঁ, করবে। – পাশে থাকবে? – থাকব।
এমন অনেক কথাই হয়। সাদিয়ারও মনে হল অনেক দিনের পর অনেক বেশি বিশ্বাস করার মত কাউকে পেয়েছে। যার জন্য আবেগ কাজ করে। কখনও দেরি হলে মেসেজ দিতে কষ্ট কাজ করে। সাদিয়াকে একদিন অনিক বলল- তোমার কথা শুনতে বড্ড বেশি ইচ্ছা করে। কথা বলবে আমার সাথে? তারপর অনিক নিজের নাম্বারটা দিয়ে বলে, জোর করব না।যদি কখনও ইচ্ছা করে। বিশ্বাস করতে পার। মনে হয় আমার সাথে কথা বললে বিরক্ত লাগবে না। তাহলে ফোন দিও।
এতদিন ধরে তোমার সাথে ফেসবুকে চ্যাট করি । খুব শুনতে করে তোমার কথা। তাই বললাম। আমাকে খারাপ ভেবো না আবার।আমি সব মেয়ের নাম্বার চেয়ে বেরাই না। আমি এটা নিয়ে আর কিছু বলব না। যদি ইচ্ছা করে তো কথা হল। না ইচ্ছা করলে এই জিনিস নিয়ে আর কখনও কথাও বলব না। এই মেসেজটা দেখার পর সাদিয়ার ভিতরে কেমন যেন করে উঠেছিল। খুব বেশি দোটানায় পরে গিয়েছিল কল করবে কি করবে না। ২ দিন খুব অস্বস্তিতে থাকার পর সাদিয়ার মনে হল , না ছেলেটা তো খারাপ না।
কথা বলা যায়। আর বিশ্বাস তো অবশ্যই করে ওকে। কয়েকবার নাম্বারটা ডায়েল করেও কেটে দিল সাদিয়া। কেমন যেন লজ্জা লাগছিল কথা বলতে। কারও সাথে যে কথা বলে না তা না। কিন্তু অনিকের সাথে কথা বলতে লজ্জা লাগছে কেন বুঝল না। অবশেষে কল করল। অনিক ধরেই বলল, কে সাদিয়া? একটু অবাক হল সাদিয়া। কোন কথা বলার আগেই বুঝল কি করে সাদিয়া ফোন দিয়েছে। কারণটা এখনও জানে না সাদিয়া। তবে অনিক বলে, ভালবাসার মানুষের নিঃশ্বাস এর শব্দ শুনলেই বুঝা যায়। যদিও তখন ভালবাসার সম্পর্ক ছিল না দুজনের। কথা হত মোবাইল এ। অনেক বেশিই। ফেসবুকের চেয়ে এখন মোবাইল এ কথা বলাটাই বেশি গুরুত্ব পেত। সারাদিন মোবাইল এ কথা বলত। কি বলত না বলত। এত কি বলত? সময় এত তারাতারি কি করে যেত বোঝা খুব কঠিন ছিল। কথা বলতে বলতে দুজন খুব বেশি দুর্বল হয়ে পরল দুজনের প্রতি। সব বাদ দিয়ে দুজনের মনে সারাক্ষণই দুজনের ভাবনা। অনিক এর মাঝে কয়েকবার বলল, তোমাকে দেখতে ইচ্ছা করে। – আমি সুন্দর না। দেখে কি করবে? – যে এত সুন্দর করে যে কথা বলে ,সে সুন্দর না হয়ে পারে নাকি? – আমি আসলেই সুন্দর না। দেখ না ফেসবুকে কোন পিকচার দেই না। – আচ্ছা তুমি সুন্দর না হও। আমি তোমাকে দেখব। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে। প্লিজ আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করবে না?
এমন করে অনেক দিন আবদার করেছে। সাদিয়া কখনই নিজের ছবি দেখায় নি। মুখে না বলুক। দুজনই বুঝতে পারত দুজন দুজনকে ভালবাসে। সারাদিন সময় দিচ্ছে। ভালবাসা না থাকার কথাই না। অনিক মাঝে মাঝে বড্ড বেশি বাচ্চা ছেলের মত করত, মোবাইল করেই কান্নাকাটি করত। আর বলত, আমাকে ভুলে যাবে না কিন্তু কখনও। আরে পাগল সাদিয়াও তো পারবে না ভুলে থাকতে। কান্নাকাটির কি আছে?
ভালবাসার কথা যেদিন অনিক বলল, সেদিন সাদিয়া একদমই চুপ হয়ে গিয়েছিল। গম্ভির হয়ে বলেছিল, আমাকে ভালবাসার কিছু নেই। – না থাকুক। আমি ভালবাসি। কেন বাসি ওটা আমার ব্যাপার। আমাকে বাসা না বাসা তোমার ব্যাপার। না বাসলে কষ্ট পাব, বাসলে আমি আরও ভালবাসব। সোজা সাপটা কথা অনিকের। না করতে পারেনি সেদিন সাদিয়া। কতক্ষণ পর কান্নাকাটি শুরু করে দেয় অনিক। কেন বাসবে না ভাল। ও কি এতই খারাপ। তাই হ্যাঁ বলেই দিল সাদিয়া। আর সাদিয়া যে বাসে না তা তো না। সাদিয়াও ভালবাসে।
হৃদয়ের এক কোণে লুকিয়ে রাখা ভালবাসা অনিক এর জন্যই শুধু সায় দিয়েছিল। জীবনে সব কিছু, দুঃখ , সুখ ,আনন্দ, যার সাথে ভাগ করে নিয়েছে তাকে ভাল না বাসার কিছু নেই। অনিক যদি সাদিয়াকে না দেখে অন্ধের মত ভালবাসতে পারে। সাদিয়া কেন পারবে না এই ছেলেটার পবিত্র ভালবাসা টাকে সায় দিতে। সেদিন রাতে সাদিয়া ফোন দিয়ে বলল অনিককে। – অনিক, আজ আমরা সারারাত কথা বলি? – হ্যাঁ, কেন বলব না। তোমার কথা আমার শুনতে অনেক ভাল লাগে। – আজ আমি সারারাত কাঁদবো। তুমি শুনবে। – এই কাঁদবে কেন? কি হইছে? – কিছু হয় নি। শুনবে না কান্না আমার? অনিক শুনবে তুমি বল?
বলেই নীরবে কাঁদতে লাগল সাদিয়া।অনিক কয়েকবার জিজ্ঞাসা করল কেন কাঁদছে। কোন উত্তর দিল না। অনিক চুপচাপ কান্নার শব্দ শুনে গেল। কান্না শেষে সাদিয়া অনিককে বলল- অনিক, আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি। আমার জীবনটা শুধু কষ্টেই কেটেছে সবসময়। আমি তোমার মত এত কাছে কখনও কাউকে পাই নি। এত ভালবাসাও না। আমার পাশে থাকবে না তুমি সবসময়? – থাকব। কেদনা তো আর। পাগলি, কাঁদো কেন? তুমি আমাকে ছেড়ে না গেলে আমিও কখনও যাব না। – promise কর। – আমাকে তুমি বিশ্বাস কর না? promise কেন করতে হবে? – করি তো। – তাহলে? আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছেড়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। সাদিয়া একটা কথা বলব? – বল। – রাখবে কিন্তু? না করতে পারবে না। – আচ্ছা।
– আমি তোমাকে দেখতে চাই।কতদিন তোমার ছবি দেখতে চাইলাম দিলে না। চল না আমরা কাল দেখা করি। ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল সাদিয়া। আচ্ছা কাল বিকেলে আমরা দেখা করব। – সত্যি তো? – হ্যাঁ।
রাতেই একটা ছবি মেসেজ করে পাঠিয়ে দিয়েছিল সাদিয়া।আর এখন অপেক্ষা করছে অনিকের জন্য দাঁড়িয়ে। সত্যি সুন্দর লাগছে তো দেখতে? নাকি ছোট বোনটা মিথ্যা বলল। মোবাইল টা বের করে তার স্ক্রিনে নিজের চেহারাটা আর একবার দেখল সাদিয়া। আজ চোখে কাজলও দিয়েছে। সত্যি সুন্দর লাগছে তো। নিজেকে এত সুন্দর লাগে নি কখনও। শুধু গায়ের রঙটা একটু কালো। মোবাইল স্ক্রিনে চেহারা দেখতে দেখতেই হঠাৎ আলো জ্বলে উঠল। অনিক মেসেজ করেছে। খুব স্বস্তি লাগছে। নিশ্চয় লিখে পাঠিয়েছে ওর আসতে আর বেশি সময় লাগবে না। মেসেজটা ওপেন করল সাদিয়া। মেসেজ এ লেখা- আমি জানি আমার কাজটা করা ঠিক হচ্ছে না। তবুও কঠিন হলেও সত্য যে আমি আমার জীবনে সবসময় একটা পরীকে চেয়েছি ভালবাসার মানুষ হিসেবে।
আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম ঠিক আছে। তোমার কথা শুনে, একটানা কথা বলতে বলতে আমি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। আমার কল্পনাতে আমি তোমার একটা ছবি একেছিলাম। সেই তোমাকে আমি ভালবেসেছিলাম। কাল তোমার ছবি দেখার পর আমার ভাবনা সব বদলে গেছে। নিজের সাথে অনেক বেশি যুদ্ধ করেছি। বুঝানর চেষ্টা করেছি, তুমি অনেক ভাল মেয়ে , তোমাকে ভালবাসি আমি। কিন্তু আমি পারিনি। আমি আজ হয়ত তোমাকে মেনে নিলাম, কিন্তু ২ দিন পরই আবার তোমাকে আমার অসহ্য লাগবে। তোমার ছবি দেখে তোমাকে আমার পছন্দ হয় নি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। এতদিন তোমার সাথে ভালবাসার কথা বলার জন্য আমি সরি। তুমি চাইলে আমরা ভাল বন্ধু হয়ে থাকতে পারি। মাফ করে দিও আমাকে।
আমার কাছে আমার ভালবাসার মানুষকে দেখতে সুন্দর হতে হবে। আর তুমি যদি কষ্ট পেয়ে থাকো তার জন্য তুমিই দায়ি। তুমি আমাকে আগেই ছবি দেখালে তোমার আমাদের সম্পর্কটা এত দূর আসত না। হাতটা কাপছে সাদিয়ার মেসেজটা পড়ার পর। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। কালো পানি।
চোখের কাজলের সাথে মিশে কালো পানি পরছে। হয়ত কাঁদছে কেউ বুঝতে পারবে না। সাদিয়া নিজেই তো কালো। কালো মানুষের কালো চোখের পানি কে দেখতে যাবে? কাজল লেপটে চোখ ভরে যাচ্ছে। এতদিন কিসের পিছনে ঘুরেছে সাদিয়া এখন ভেবে পাচ্ছে না। বৃষ্টি শুরু হয়েছে । তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টির ভিতর কাঁদছে সাদিয়া। কেউ দেখতে পাচ্ছে না সাদিয়া কাঁদছে। যেই কান্না কেউ বুঝে না সেই কান্না কারও দেখে লাভ নেই। ———- কাদায় কেডস জুতা জোড়া একেবারে শেষ। বৃষ্টির দিন । একটা স্যান্ডেল পরে চলে আসবে। না, কি সব কেডস পরে আসতে হবে স্মার্ট হবার জন্য।
জিন্স এর প্যান্টটা পায়ের কাছ দিয়ে ভিজে গেছে অনেক খানি। পিছন দিক দিয়ে কাদার ছিটেও আছে। জিন্স ফোল্ড করা যাবে না। প্রিয়তির মানা আছে। জিন্স ফোল্ড করলে নাকি কামলা কামলা লাগে। আরে কামলা কি জিন্স পরে কাজ করে? ওরা তো লুঙ্গি পরে। কে বুঝাবে কাকে। শরীরে কড়া বডি স্প্রে দিয়ে এসেছে আজ গালিব। কেমন বমি আসছে গন্ধে নিজেরই। আজ নিশ্চয় প্রিয়তি কোন ভুল ধরতে পারবে না। আনস্মার্ট বলতে পারবে না।
এই বৃষ্টির মধ্যেও প্রিয়তি এসে দাঁড়িয়ে আসে। মাথায় ছাতা। একটা ড্রেস পরা। হালকা গোলাপি কালারের। সালওয়ার কামিজ না তাই নাম জানেনা ড্রেসটার গালিব। সামনে এসে ছাতা মাথায় দাঁড়াল গালিব। আজ স্মার্ট হয়ে এসেছে তাই মনটা অনেক খুশি গালিবের। যতগুলো সম্ভব দাঁত বের করে হাসি দিল গালিব। প্রিয়তি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে গালিবের দিকে। মনে মনে খুব খুশি গালিব। একটু একটু লজ্জাও করছে। কিভাবে দেখছে মেয়েটা। – এসবের মানে কি? তুমি এমন সং সেজে আসছ কেন? – কেন কি হইছে? – এই বৃষ্টির মধ্যে চোখে ঐটা কি লাগিয়ে রাখছ। খোল ঐটা। গালিব rain glass বা sun glass টা খুলে হাতে নিল।
– জুতার কি অবস্থা কাদা দিয়ে। প্যান্টে কাদা। চুল বানিয়ে আসছ সজারুর মতন। you are just looking like a joker. গালিবের হাসি মাখা মুখটা মলিন হয়ে গেল। ও বলল- তুমিই না বলছ স্মার্ট হতে। আমি কি করব? আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি যেভাবে বলছ আমি তো সেভাবেই চলছি। – এই তোমার স্মার্টনেস? – হ্যাঁ, আর কিভাবে হব? – ও unbearable. তোমার সাথে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। একটা মানুষ এত বিরক্তিকর হয় কি করে। যাও আমার সামনে থেকে তুমি যাও। যেদিন স্মার্ট হতে পারবা সেদিন আমার সামনে আসবা।
– আমি এখন তাহলে স্মার্ট না? – আমার মাথা। এমন একটা সং এর সাথে আমি ঘুরতে পারব না।থাকতে পারব না। আমি তোমাকে সময় দিচ্ছি, তুমি স্মার্ট হবা তারপর আমার সাথে দেখা করবা। আমার সামনে থেকে যাও তো তুমি। – এমন করছ কেন তুমি? – ওকে। তুমি যাবা না? আমিই যাচ্ছি। যদি পার নিজেকে পরিবর্তন কইর। এমন থাকলে কোন মেয়েই জুটবে না কপালে। প্রিয়তি চলে যাচ্ছে ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টি ভেঙ্গে। গালিব তাকিয়ে দেখছে। ফিরিয়ে আনার সাধ্য নেই ওর।
কষ্ট হচ্ছে হয়ত। বুঝতে পারছে না। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। এত কিছু করল তাও মনের মত হতে পারল না গালিব। কষ্ট ভুলে থাকার জন্য কিছু করতে হবে। কিছুই মাথায় আসছে না। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে গালিব। ছাতাটা ফেলে দিয়েছে। ঐ ছোট্ট ছাতার কোন দরকার নেই। এর চেয়ে বাবার ছাতা অনেক ভাল। চুল গুলো এলোমেলো করে ফেলল। জুতা খুলে হাতে নিয়ে জিন্সটা ফোল্ড করল। ভাল লাগছে এখন হাঁটতে। হঠাৎ মাথায় আসল আচ্ছা এখন এই পার্কের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করলে কেমন হয়? বৃষ্টির মধ্যে কেউ খেয়াল করবে না। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গালিব। প্রিয়তি হারানোর কষ্ট খুব সহজেই চলে যাচ্ছে যতই আনস্মার্ট নোংরা করছে।
তার জন্য কষ্ট পাওয়া যায় যে কষ্ট বুঝে। সাদিয়া এতক্ষণ শুধু শুধু কাঁদল। অনিক কখনও ভালবাসেনি সাদিয়াকে। পুরটাই মোহ ছিল। পার্কে কিছু বাচ্চা ছেলে কাদা নিয়ে ছোরাছোরি করছে। সাদিয়া ওদের সাথে গিয়ে যোগ দিল। কাদা ছোরাছোরি করছে ওদের সাথে। ওদের খেলা এক ছেলে জুতা হাতে নিয়ে দেখছে। সাদিয়া তার কাছে গিয়ে ওর জুতা জোড়া দিয়ে বলল- আপনি কি আমার জুতা জোড়া একটু ধরবেন? আপনার হাতে তো জুতাই আছে। আমি ওদের সাথে একটু খেলি।
গালিব প্রিয়তির হাত থেকে জুতা জোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। খেলা দেখছে। কাদা দিয়ে। কিছু বাচ্চা ছেলে আর এক মেয়ের। মেয়েটার চোখের কাজল লেপটে আছে। ঠোঁটে হাসি। গালিবও দাঁড়িয়ে হাসছে। কি পাগল মেয়েটা।
আর সাদিয়া গালিবকে দেখে হাসছে, জুতা জোড়া নিয়ে কেমন মদনের মত দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা। যারা ভালবাসা বুঝে না। যাদের কাছে মন না , ভালবাসার মাপকাঠি অন্য কিছু। তাদের জন্য কষ্ট পেয়ে লাভ নেই। বরং এটা ভেবে নিলেই হয়, ঐ মানুষটার ভালবাসা মোহের উপর। মোহ কেটে গেলে ভালবাসা কেটে যাবে। তার সাথে থাকার থেকে দূরে থাকা ভাল। এর চেয়ে পাগলি হয়ে কাদায় খেলা, আর মদন হয়ে জুতা নিয়ে দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে থাকা ভাল। প্রিয়তি , অনিক ভালবাসা যেখানে খুঁজেছে ভালবাসা সেখানে না। ভালবাসা অন্য কোথাও।