:-মিমো আমি একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি..আসতে দেরি হবে(আমি)
:-আমিও যাবো..এখানে আসার পর থেকেই বন্দি হয়ে আছি।আমাকেও নিয়ে চলো(মিমো)
:-না তোমার যাওয়ার দরকার নাই..তুমি আমার সাথে গেলে নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু মনে হয়..
:-আমি কি খুব বেশি সুন্দর?
:-সুন্দর না হলে..সবাই তাকিয়ে থাকে কেনো?
:-তাই বলে কি আমাকে বাসাতেই বন্দি থাকবো?আজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যেতেই হবে..
:-নিয়ে যেতে পারি..তবে তুমি এখন যে অবস্থায় আছো এই ভাবেই যেতে হবে..আর একটু বড় ঘোমটা দিতে হবে
:-আজব..এমন অপরিষ্কার অবস্থায় বাইরে যাওয়া যায়?
:-না গেলে বাসাতেই থাকো..
:-আচ্ছা এভাবেই যাবো।মুখটা ধুয়ে আসি?
:-না..
:-মুখটা ঘেমে আছেতো..
:-ঠিক আছে যাও..
এতক্ষনে নিশ্চয় বুঝে গেছেন এতক্ষন আমাদের স্বামী.স্ত্রীর মধ্যে কথা হচ্ছিলো..আমি চয়ন আর আমার বৌ হচ্ছে মিমো..আমি চাকরির সুবাদে বউ নিয়ে শহরে থাকি..গ্রামে মা আর বাবা থাকে।আমরা মোটামুটি সমৃদ্ধশালী..কিন্তু মিমোর পরিবার গরীর..
আজ থেকে ৬মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়েটা হয়েছে আমাদের।বিয়ের আগে মিমোকে দেখিনি..মা বাবা পছন্দ করে রেখেছিলো..আমি মিমো প্রথম দেখি বিয়ের মন্ডপে..
মিমোকে দেখে বাবা মায়ের উপর প্রচুর রাগ হয়েছিলো আমার..আমার সাথে এত সুন্দর মেয়েকে কিভাবে মানায়?কোথাই ও আর কোথাই আমি।ভেবেছিলাম এত সুন্দর মেয়ে নিশ্চয় গোটা দশেক বয়ফেন্ড আছে।তাই মা বাবাকে অনেক বকা দিয়েছিলাম।তারা প্রতিউত্তরে একটা কথাই বলেছিলো..মিমোরা অনেক গরিব..তাই মিমোর বাবা আমাদের বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।মেয়েও ভালো তোরও বিয়ের বয়স হয়েছে।তাই আমরা রাজি হয়েছি…
বিয়ের পরেই বুঝতে পেরেছি মা বাবা আমার জন্য ভালো মেয়েকেই নির্বাচন করেছেন।কারন মিমো সুন্দরী হলেও ওর ভিতরে কোন অহংকার নাই।যথেষ্ট ভদ্র।কিন্তু সমস্যা একটাই মিমোকে নিয়ে কোথাও বের হলে সবাই কেমন অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে থাকে..মিমোকে কোথাও নিয়ে গেলে আমার হাত ধরে রাখে..আর সবাই বুঝতে পারে এরা স্বামী স্ত্রী।হয়ত ভাবে কালো ভুতের সাথে এমন সাদা বউ কি করে।এসব ভেবেই মিমোকে সাথে নিয়ে কোথাও যেতে আমার অসস্থি লাগে।তাই দরকার ছাড়া ওকে কোথাও নিয়ে যাইনা..তবে আজ ৩মাস মিমো বাসা থেকেই বের হয়নি।তাই আজ ওকে নিয়ে যেতে রাজি হলাম…
:-এই যে ভাবুক মহাশয় যাবেনা?
:-ওহ,হ্যা চলো..আর ঘোমটা টেনে দাও
:-আচ্ছা..এবার হয়েছে?
:-হ্যা..পারফেক্ট
অতঃপর মিমোকে নিয়ে আশপাশে একটু ঘুরলাম..অনেক সময় ঘুরলাম।তবে আজ কোন সমস্যার সম্মুখিন হইনি..কারন মিমো আজকে সেজে বের হয়নি।তাছাড়া ঘোমটা দেওয়া..
:-ফুচকা খেতে নিয়ে যাবে?(মিমো)
:-হ্যা চলো..
মিমো নিয়ে একটা ফুচকার দোকানে গিয়ে দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করলাম।অর্ডার করার সময়।ফুচকাওয়ালা আমাদের একবার ভালো করে দেখে নিলো..
যাহোক দুজনে বসে ফুচকা খাচ্ছিলাম..পাশ থেকে একটা ছেলে বলে উঠলো..
:-আজকাল সুন্দরী মেয়ে টাকাওয়ালা ছেলে দেখলেই তাদের গলায় ঝুলে পড়ে।ছেলে কালো ভুত হলেও সমস্যা নাই কারন ছেলের টাকা আছে।
মিমো খুব বুদ্ধিমতি তাই কথাটির কোন প্রতিক্রিয়া করেনি..কিন্তু আমি হটমেজাজি।আমি রাগ সামলাতে পারিনি।ছেলেটার কাছে গিয়েই দিয়েছি একটা থাপ্পর।ব্যাস সাথে সাথেই এলোপাতাড়ি মার।পাবলিক প্লেসে বলে সবাই এসে ছেলেটাকে শান্ত করলো..ছেলেটার হাতে রিং থাকার কারনে আমার মুখে কয়েক জায়গা কেটে গেছে..
বাড়িতে এসে মিমো আমার কাটা স্থান ড্রেসিং করে..ঔষধ লাগাতে লাগাতে বললো..
:-তখন ছেলেটাকে মারার কি দরকার ছিলো?
:-তোমাকে ইঙ্গিত করে ওমন কথা বললো কেনো?
:-বলেছে আমাকে।কই আমিতো কিছু বলিনি।তাহলে তুমি মারলে কেনো?
:-আমার বউকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলে আমি তাকে ছেড়ে দিবো নাকি?
:-একদম না..আমাকে খুব ভালোবাসো তাইনা?
:-বৌকে ভালবাসবো নাতো কাকে ভালো বাসবো?
:-তাইতো..আমার জন্য বাবুটা কত ব্যাথা পেলো।আমি আর কখনো দরকার ছাড়া বাইরে যাবোনা..
:-কেনো যাবেনা?এখন থেকে প্রতিদিন তোমাকে ঘুরতে যাবো।যে যা বলার বলবে
:-কেউ খারাপ কথা বললে তোমার কষ্ট হবেনা?
:-তখন একটু মারামারি করবো..তাহলে আবার তোমার আদর পাবো
:-শয়তান একটা
:-শয়তানি
খুনশুটি করেই আমাদের সংসার ভালোই চলছিলো।এর মধ্যেই একদিন মিমো আমাকে।আমাদের পরিবারে অনাগত অতিথির আগমনি বার্তা দিলো।খুব খুশি হয়েছিলাম..
দেখতে দেখতে আজ মিমোর ডেলিভারি দিন চলে আসলো তাই মিমোকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি।মিমো অপারেশন থিয়াটারে।আর আমি,মা আর শাশুড়ি বাইরে অপেক্ষা করছি..আর বলছি
:-ঈশ্বর আমাদের সন্তান যেনো তার মায়ের মতো নয়।আমার মত সুন্দর হয়
:-শয়তান চুপ করে বস..(মা মাথায় চড় দিয়ে বললো)
কিছুক্ষন পর অপারেশন থিয়েটার থেকে নার্স বেরিয়ে আসলো..
:-আপনাদের জন্য সুখবর আছে..(নার্স)
:-হ্যা বলুন
:-আপনার মেয়ে হয়েছে..
:-দেখতে কেমন হয়েছে?
:-আপনার স্ত্রীর মতোই সুন্দর..আর
:-আর কি?
:-আর একটা ছেলেও হয়েছে..
:-আবার ছেলে কোথা থেকে আসলো?
:-আরে মিয়া আপনার স্ত্রী জমজ সন্তান প্রসব করেছে
:-ছেলে নিশ্চয় আমার মতো সুন্থর?
:-ধুর মিয়া..ছেলেটা মা মেয়ের থেকেও সুন্দর।আপনার স্ত্রীর সুস্থ আছে।একটু পরে বেড়ে দেওয়া হবে..
এবার আমি কপাল চাপড়াতে থাকলাম..এবার মনেহয় আমাকেই ঘরে থাকতে হবে।এত গুলা কিউটের ডিব্বাদের আমাকে মানাবেনা…
কিছুক্ষন পর মিমোকে আর কিউট আর কিউটি কে বেড়ে দেওয়া হলো..
:-এরা দুইটাই তোমার সন্তান..
:-আমার মানে কি?তোমারও সন্তান
:-তাহলে একটাকেও আমার মতো দেখতে হলোনা কেনো?
:-ঈশ্বর জানেন..
:-হুম…
আমি ভাবছি যখন তিনটা কিউটের ডিব্বা নিয়ে বের হবো তখন আমার অবস্থা কি হবে?তিনটা শেতাঙ্গের মাঝে একটা কৃষ্ণাঙ্গ…