ম্যাজিস্ট্রেট বান্ধবী যখন বৌ

ম্যাজিস্ট্রেট বান্ধবী যখন বৌ

প্রতিদিনের মতো আজও বিকালে আড্ডা দিতে আসলাম।প্রতিদিন আমি,নিলয়,মেঘ এই তিন বন্ধুতে মিলে আড্ডা দিই।আজ শুধু মেঘ বসে আছে।

:-ওই মেঘ।নিলয় কোথাই?(আমি)
:-আজ নিপার বিয়ে তাই আসেনি।নিলয় বিয়ের কাজে ব্যাস্ত আছে(মেঘ)
:-নিপার বিয়ে?কোন নিপা?
:-আরে আমাদের কলেজের নিপা।আমাদের সাথে পড়ে
:-কি বলিস?নিপাতো অনেক ভালো ছাত্রী।ওর বিয়ে দিচ্ছে কেনো?
:-জানিনা রে
:-নিপার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি তো
:-সেটাই
:-চল আমার সাথে
:-কোথাই?
:-নিপাদের বাড়িতে।বিয়েটা আটকাতে হবে

:-থাকনা দোস্ত।এতক্ষনে বিয়ের আয়োজন শেষ।কিছুক্ষন পরে বরও চলে আসবে।এখন যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দিই।তাহলে ওরা সবাই কষ্ট পাবে।তাছাড়া তুইতো জানিস আমাদের সমাজে একবার মেয়েদের বিয়ে ভেঙ্গে আর আর কেউ বিয়ে করতে চাইনা

:-ওরে আমার জ্ঞানী ব্যাক্তি।এত কিছু জানো অথচ এটা জানোনা ১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া আইনবিরোধি।এখন চলো আমার সাথে

:-পুলিশ নিয়ে যাবি?
:-নাহ।দেখি আমরাই চেষ্টা করে
:-আচ্ছা চল তবে..

অতঃপর দুই বন্ধু মিলে রওনা হলাম নিপাদের বাড়িতে..
নিপাদের বাড়ি যেতে যেতে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলি।আমি চয়ন।ইন্টার ২য় বর্ষে পড়ি।পারিবারিক অবস্থা মোটামুটি স্বচ্চল।নিলয়,মেঘ,আর নিপা আমার ফ্রেন্ড।নিলয় আর নিপার বাড়ি পাশাপাশি।নিপা আমাদের ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ছাত্রি।দেখতেও ভালো।নিপাকে আমি প্রথম থেকেই পছন্দ করি।

:-ওই নিলয় এদিকে আয়(আমি)
:-আরে মামা তোরা?কি মনে করে?(নিলয়)
:-সেইটা পরে জানতে পারবি।আগে নিপার বাবার কাছে নিয়ে চল
:-কেনো?
:-বললাম না পরে জানতে পারবি।আগে নিয়ে চল

অতঃপর নিলয় আমাকে নিপার বাবার কাছে নিয়ে আসলো..

:-কাকু ও হলো চয়ন।আমরা একসাথেই পড়ি।ও তোমার সাথে কথা বলতে চাই(নিলয়)
:-হ্যা বলো

আমি নিলয় আর মেঘকে ইশারা করলাম চলে যেতে।ওরা চলে গেলো..

:-আংকেল নিপাকে হঠাৎ করেই বিয়ে দিচ্ছেন কেনো?
:-আমি এত খরচ চালাতে পারছিনা।তাছাড়া ভালো সম্মন্ধ পেয়েছি।তাই বিয়েটা দিয়ে দিচ্ছি
:-কিন্তু আংকেল নিপা পড়াশোনাতে অনেক ভালো।ওর সামনে এখন অনেক ভালো একটা ভবিযৎ রয়েছে
:-মাইয়া মানুযের আবার পড়ালেখা।মাইয়া মানুযের ভবিযৎ শ্বশুর বাড়ি।অযথা প্যাচাল না করে যাও
:-আংকেল এই বিয়েটা হবেনা
:-বিয়ে হবেনা মানে?
:-আংকেল নিপার এখনো ১৮বছর হয়নি।তাই এখন আপনি নিপাকে বিয়ে দিতে পারবেন না
:-আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিবোই।দেখি কে আটকাই আমাকে

:-দেখুন আংকেল আমি চাইলে পুলিশে কেস করতে পারতাম।কিন্তু আমি আপনাদের মানসম্মানের কথা ভেবে সেটা করিনি।যদি আপনি বিয়েটা বন্ধ না করেন তবে আমি পুলিশে খবর দিবো…

:-দেখো বাবা।আমি সামান্য টাকা আয় করি।এতটুকু দিয়ে আমাদের চলেনা।এখন যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দিই।তবে এই মেয়ের খরচ চালাতে পারবনা

:-দেখুন আংকেল আপনাকে এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা।নিপার যাবতীয় খরচ আমিই দিবো
:-সেইটা নাহয় ঠিক আছে।কিন্তু এখন বিয়েটা ভেঙ্গে যায়।পরে আমার মেয়েটাকে কেউ বিয়ে করতে চাইবেনা

:-নিপার বিয়ের জন্য আমি আপনাকে পাত্র খুজে দিবো।আর যদি কেউ না বিয়ে করতে চাই..তবে আমিই বিয়ে করবো

:-কিন্তু..
:-আংকেল আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন।দরকার হলে নিলয়ের কাছ থেকে আমার সম্পর্কে জেনে নিয়েন..
:-আমার বিশ্বাসটাকে কখনো ভেঙ্গনা বাবা
:-ভরসা রাখতে পারেন

এতক্ষন যে ঘটনা শুনছিলেন তা আজ থেকে ১২বছর আগের।সেদিন নিপার বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ার পর নিপার যাবতীয় খরচ আমিই দিতাম..

বাড়ি থেকে কিছু নিতাম আর আমি টিউশনি করিয়ে টাকা দিতাম নিপাকে।নিপার বিয়েটা আমার কারনে ভেঙ্গে গেছিলো নিপা এটা জানতো।এজন্য নিপা আমাকে ঘৃনা করতো।কারন বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে নিপাকে অনেক কথা শুনতো।আমি নিপাকে অনার্স পর্যন্ত খরচ দিয়ে চলে এসেছিলাম গ্রামের বাড়িতে।কারন হঠাৎ করেই বাবা মারা যাওয়াতে আর্থিক দিক খারাপ হয়ে পড়ে।তাই অনার্স ফাইনাল দিয়েই মাকে নিয়ে চলে এসেছি।এখন গ্রামের ক্ষেতে কাজ করি।কারন অনার্স সার্টিফিকেট নিতে শহরে যায়নি..যদি কখনো নিপার বাবার সামনে পড়ে যাই।কারন তার বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছি আমি।তবে শুনেছি নিপা এবার ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে।এসব ভাবতে ভাবতেই বাড়ির সামনে চলে এসেছি।বাড়ির সামনে একটা কালো গাড়ি দাড়ি আছে।আমি কৌতুহল নিয়ে ঘরে ঢুকতে যাবো তখনি দেখতে পেলাম নিপা বাইরে আসছে..

:-কি মিঃদয়ার সাগর।চিনতে পেরেছেন?(নিপা)
:-হ্যা পেরেছি।কেমন আছো?
:-ভালো।শুনো আগামীকাল আমার এংগেইমেন্ট।আন্টিকে নিয়ে চলে আসবা।
:-কাজ আছে আমার যাওয়া সম্ভব হবেনা।মাকে পাঠিয়ে দিবো
:-না গেলে।পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবো।
:-না থাক যাবো

কথা শেষ করেই নিপা গাড়িতে উঠে চলে গেলো..
পরেরদিন মাকে নিয়ে নিপাদের বাড়িতে আসলাম।বাড়িটা আগের মতো টিনের নয়।এখন ৪তলা বিল্ডিং।এখানে বড় মাপের লোকদের আগমন।তাই মাকে নিয়ে পিছনে দাড়িয়ে ছিলাম।নিপা আমাদের দেখতে পেয়ে আমাদের কাছে আসলো তারপর আমাদের নিয়ে স্টেজে গেলো এবং সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো..

:-সবাই শুনুন..ও হলো চয়ন।অনেক আগে থেকেই আমাকে ভালোবাসে।আমিও ভালোবাসি।আগামি মাসে আমরা বিয়ে করছি

:-নিপা এসব কি বলছো?
:-ঠিকই বলছি
:-নিপা মাথা ঠিক আছে তোর?কি বলছিস এসব?এই ছেলেকে বিয়ে করবি তুই?(নিপার বাবা)
:-কেনো কি সমস্যা?
:-তোর সাথে এই ছেলেকে মানায় না
:-বাবা এই ছেলেটার জন্যই আমি আমি এখানে
:-হ্যা..সেজন্য ওর যত টাকা খরচ হয়েছে সেইটা দিয়ে দে..আর আমি তোর জন্য ভালো পাত্র দেখে রেখেছি
:-হ্যা বাবা খরচ দিয়ে দিবো..তবে তোমাদের।আমাকে ইন্টার পর্যন্ত পড়াতে যত খরচ হয়েছে সবটাই তোমাদের দিয়ে দিবো..কারন আমার বাবা মা আর তোমাদের মেয়ে আজ থেকে ১২ বছর আগে মারা গেছে।যখন থেকে এই ছেলেটা আমার দায়িত্ব নিয়েছে।এই ছেলেটা তার ভার ভালোবাসার জন্য সব বিসর্জন দিয়েছে।তাই এখন ওর ভালোবাসা ওর সাথেই থাকবে।কোন স্বার্থপরদের কাছে নয়..

নিপা আমাকে আর মাকে নিয়ে ওর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলো..এবং আমাকে বিয়ে করলো..আমিও পেয়ে গেলাম আমার ভালোবাসা+ম্যাজিস্ট্রেট বৌ.

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত