বন্ধুত্ব তারপর

বন্ধুত্ব তারপর

:-তুই এখানে বসে আছিস আর আমি তোকে সারা কলেজ খুজে বেড়াচ্ছি।(জারা)
:-আমাকে খুজার কী দরকার আছে।তোর কত নতুন নতুন ফ্রেন্ড আছে তাদের নিয়ে থাকলেইতো পারিস।(আমি)
:-এভাবে কথা বলছিস কেনো?
:-তো কিভাবে কথা বলবো।
:-বাদ দে।সকালে খেয়েছিস?
:-ওইযে তোকে রাকিব ডাকছ যা কথা বল গিয়ে।

(একটু দুরে দাঁড়িয়ে রাকিব জারাকে ডাকছে।রাকিব আমার ক্লাসমেট তবে ও অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাএ।আমি হুসাইন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।জারা আর আমি একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি।জারার সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ ছোটবেলা থেকে।জারার আম্মু আর আমার আম্মু বান্ধবী সেই সুবাধে জারাদের বাসায় আমাদের চলাচল আর আমাদের বাসায় জারাদের চলাচল)

:-তুই একটু বস আমি কথা বলে আসছি।
:-তোকে কী আমি ধরে রেখেছি।আমার থেকে তোর কাছ রাকিবই এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
:-ওই চুপ করবি তুই।সবার সাথে সবার তুলনা হয়না।
:-তুলনা করলেই হয়।
:-ধুর ঝগড়া করতে ভালো লাগছেনা।আমি গেলাম।

জারা আমার পাশ থেকে ওঠে চলে গেলো।জারাকে ওঠে যেতে দেখে খুব খারাপ লাগলো।ভেবেছিলাম আমাকে রেগে থাকতে দেখে জারা রাকিবের সাথে কথা বলতে যাবেনা কিন্তু হলো তার উল্টো।হয়তো আমার থেকে জারার কাছে রাকিব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। চোখে পানি টলমল করছে।খুব কষ্ট পেয়েছি।প্রিয় মানুষের কাছে অবহেলা পেলে সবারই কষ্ট লাগে।জারাকে কয়েকদিন আগে রাকিব প্রপোজ করেছে।জারা হ্যা অথবা না কোনটাই বলেনি ওয়েটিং এ রেখেছে।এটা নিয়ে প্রতিদিন জারার সাথে আমার ঝগড়া হয়।কেনো জারা তখনি না বলে দিলোনা?কেনো ওয়েটিং এ রাখলো।আমার একটাই কথা জারা যেনো রাকিবকে না বলে দেয়।কিন্তু জারা বলেনি।উল্টো কলেজে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা রাকিবের সাথে বসে কথা বলে।জারার সাথে আমি অন্য কোন ছেলেকে ভাবতে পারিনা।সেই ছোটবেলা থেকে জারাকে আমি আগলে রেখেছি।হ্যা জারাকে আমি ভালোবাসি।অনেক বেশি ভালোবাসি।তবে কোনদিন বলা হয়ে ওঠেছি বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে।অনেক আকার ইঙ্গিতে জারাকে বুঝাতে চেয়েছি কিন্তু ও বোঝেনি।হয়তোবা বুঝেও না বুঝার ভান করেছে।

বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালাম।কলেজে আর থাকা যাবেনা।কলেজে থাকলে জারার সাথে রাকিবকে দেখতে হবে যা সহ্য করতে পারবোনা আমি।প্রিয় মানুষের পাশে অন্য ছেলেকে দেখলে সবারই খারাপ লাগে।
জারা আর রাকিব ফুসকার দোকানে বসে আছে।ওদের সামনে এসে দাঁড়ালাম।

:-জারা তোর সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।(আমি)
:-বল।(জারা)
:-এখানে না।অন্যকোথাও চল।
:-তাহলে পরে বলিস।
:-না আমি এখনি বলবো।তুই চল আমার সাথে।
:-দেখছিস না এখন ব্যস্ত আছি।
:-তুই যাবি কিনা তাই বল?

:-আরে তুই এত জোরাজুরি করছিস কেনো।জারা যখন বলছে যাবেনা তখন এত টানাটানি করছিস কেনো।(রাকিব)

:-তুই আমাদের মাঝে কথা বলবিনা।(আমি)
:-বললে কী করবি তুই?
:-দেখ রাকিব চুপ থাক নাহলে খুব খারাপ হবে।

কথা কাটাকাটি করতে করতে একপর্যায়ে রাকিবের সাথে আমার হাতাহাতি হলো।জারাসহ আরো কয়েকজন মিলে আমাদের আলাদা করলো। জারা এসে ঠাস করে আমার গালে চড় বসিয়ে দিলো।খুব অবাক হয়েছি জারার এমন ব্যবহারে।যেই ছেলেটাকে ঠিকমত চেনেও না তার জন্য আমার গায়ে হাত তুললো ও?এতদিনের বন্ধুত্বের এই দাম ওর কাছে?

:-আজ থেকে কোনদিন আমার সামনে আসবিনা।চলে যা এখান থেকে।(জারা)
আমি আর কিছু বলিনি।চুপচাপ মাথা নিচু করে কলেজ থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসলাম।বলতে পারতাম অনেক কিছু।জারাকে উল্টো চড় মেরে প্রতিবাদ করতে পারতাম কিন্তু করিনি।কারণ খুব ভালোবাসি ওকে।ওর গায়ে একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবোনা আমি।ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই আম্মুর সামনে পড়লাম।

:-কিরে তোর গালে কী হয়েছে?লাল হয়েছে কেনো?(আম্মু)
:-কিছু হয়নি। (আমি)
:-কিছু হয়নি বললেই হলো?কে থাপ্পর মেরেছে গালে?
(আম্মুর কথা শুনে আব্বুও এগিয়ে এলো।)
:-বললামতো কিছু হয়নি।খেলার সময় বল লেগেছে।
:-বল লাগার দাগ কখনো এমন হয়না।দুই গালে ৫ আঙ্গুল বসে আছে আর ও বলছে বল লেগেছে।(আব্বু)
:-এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত উওেজিত হওয়ার কী আছে।

:-কী আছে মানে?আমার ছেলেকে চড় মারে এতবড় সাহস কার হয়েছে সেটা দেখতে চাই।একবার নাম বল হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।

:-আব্বু কী শুরু করলে।বললামতো আমার কিছু হয়নি।
:-আগে বল কে মেরেছে?
:-জারা।

আমার শুনে আব্বু আম্মু দুজনেই খুব অবাক হয়েছ বুঝলাম।কারণ জারা আর আমি কতটা ভালো ফ্রেন্ড আমার আর জারার ফ্যামিলির সবাই জানে।

:-জারা কেনো মেরেছে তোকে?(আম্মু)
:-বাদ দাও।ভালো লাগছেনা।(আমি)
:-আমি জারাকে ফোন করে জিঙ্গেস করছি কী হয়েছে।
:-আম্মু প্লিজ এটা নিয়ে আর কিছু আমি চাইনা।
:-কী হবে না হবে আমি দেখছি।
:-আম্মু এটা নিয়ে যদি আর কোন বাড়াবাড়ি করো তাহলে আমি বাসা থেকে চলে যাবো।

এতটুকু বলে নিজের রুমে চলে এলাম।আব্বু আম্মু আমাকে খুব ভালোবাসে।আমার গায়ে একটা ফুলের টোকাও তারা সহ্য করতে পারেনা।কোনদিন আমার গায়ে হাত তোলা দুরের কথা একটা বকাও দেয়নি।
রাত ১টা বাজে।

ফোন হাতে বসে আছি সেই সন্ধা থেকে।ভেবেছিলাম জারা সব ভুলে আমাকে ফোন করবে কিন্তু করেনি।হয়তো সত্যিই আমার সাথে আর কথা বলতে চাইনা।

অনেক হয়েছে আর না।যে আমাকে চাইনা তার সামনে আর কোনদিন যাবোনা।আমার সব ভালো লাগার অনুভুতিগুলো জারা মেরে ফেলেছে।জারার কেয়ারিং দেখে মনে হতো ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমার ধারণ ভুল ছিলো যা আজ বাস্তবে পরিণত হলো।জারার জন্য কী করিনি আমি।সবসময় একসাথে থাকবো বলে পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেয়েও ভর্তি হয়নি।জারার সাথে একই কলেজে ভর্তি হয়েছি আর আজ সেই জারাই আমার গায়ে হাত তুললো।সত্যিই মানুষ খুব অদ্ভুদ।আজ আপনি যার জন্য নিজের জীবনটা পর্যন্ত বাজি রাখছেন একদিন সেই মানুষটাই আপনাকে লাথি মারবে যার প্রমাণ আজ হাতে হাতে পেলাম।

ফেসবুকের কথা মনে হতেই এক টুকরো আশা জাগলো মনের ভিতর এই ভেবে যে জারা হয়তো সরি লিখে আমাকে একগাদা মেসেজ দিয়েছে ফেসবুকে।তাড়াতাড়

ি ফোনের ডাটা অন করে ফেবুতে ঢুকলাম। এখানেও শুন্য।জারার কোন মেসেজ আসেনি বরং জারা আমাকে ব্লক করেছে।খুব হাসি পেলো।অতি কষ্টে নাকি মানুষের হাসি পায় আমার বেলায়ও তাই হলো।কোন মহাজ্ঞানী ব্যক্তি যেনো বলেছিলো কারো উপর বেশি নির্ভরশীল হয়োনা তাহলে পরবর্তীতে পস্তাতে হবে।আমার ক্ষেএেও তাই হবে।কারণ আমি এতদিন সবকিছুতে জারার উপর নির্ভরশীল ছিলাম।খুব জানতে ইচ্ছা করছে জারা কেনো এমনটা করলো আমার সাথে?খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
জারাকে শেষ বারের মত ফোন দিলাম।কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিচিভ হলো।

:-এতরাতে ফোন করেছেন কেনো?(জারা)
:-প্রথমেই আপনি? গুড।(আমি)
:-অপরিচিত মানুষকে আপনি নয়তো কী বলবো?

:-না ঠিক আছে।আজ যা করলেন তার জন্য একদিন খুব আফসোস করবেন।কিন্তু সেদিন কিছু করার থাকবেনা চোখের পানি ফেলা ছাড়া।

:-ফোন রাখ তুই।আর কোনদিন ফোন দিবিনা আমাকে।
:-ঠিক আছে।আল্লাহ হাফেজ।

ফোন রেখে দিলাম।জারার কথা শুনে খুব অবাক হলাম।মাএ কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই আমার সাথে কথা বলার ধরণ পাল্টে গেলো।আমি খুব ভালো পারি কারো উপর অভিমান করে কথা না বলে থাকতে।জারার বেলায়ও পারবো।
সারারাত ঘুমাতে পারলাম না।রাতেই সিন্ধান্ত নিলাম নানুদের বাসায় চলে যাবো।বাসায় থাকলে কোন না কোন ভাবে জারার সামনে পড়তেই হবে।আমি জারার সামনে আর যেতে চাইনা। আমাকে ছাড়া যদি ও ভালো থাকে থাকুক।প্রিয় মানুষটার সুখেই আমি সুখি।

সকালে ঘুম থেকে ওঠে রেডি হয়ে রওনা হলাম নানুদের বাসার উদ্দেশ্য।

আজ ৫দিন হলো নানুদের বাসায় এসেছি।এই ৫দিনে জারা আমাকে একবার করেনি আমিও করিনি।জারাকে খুব মিস করি এখন।শুনেছিলাম লাইফের প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারেনা।তাই হয়তো জারাকেও আমি কোনদিন ভুলতে পারতে পারবোনা।আমার ভালোবাসা ছিলো এক তরফা।এক তফরা ভালোবাসা একটু বেশিই কষ্ট দেয়।জারার চলে যাওয়া আমাকে অনেক পাল্টে দিয়েছে।এখন আর ঘন্টার পর ঘন্টা কারো জন্য অপেক্ষা করিনা।সকালে কারো মিষ্টি কন্ঠে আর ঘুম ভাঙ্গেনা।আর অনুভুতিগুলোকে নিকোটিনের ধোয়ায় উড়ানোর চেষ্টা করি।রাতে এখন আর ঘুম আসেনা।চোখ বুজলেই জারার মায়াবী মুখটা ভেসে ওঠে।মাঝে মাঝে জারার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যায়।একটা মানুষকে ভুলা কোন ব্যাপার না কিন্তু তার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো কখনো ভুলা যায়না।জারার সাথে জরিয়ে আছে আমার হাজার স্মৃতি।

আমার সব ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটালো ফোন কল।ফোনটা হাতে নিয়ে রিচিভ করলাম

:-কিরে কেমন আছিস?(শিপন)
:-এইতো দোস ভালো।তোর কী খবর?(আমি)
:-ভালো।বাসায় ফিরবি কবে?

:-জানি নারে।বাসায় যেতে ইচ্ছা করেনা।বাসায় গেলেই জারার সামনে পড়তে হবে।আমি কোনদিন জারার সামনে যেতে চাইনা।

:-বুঝলাম। কিন্তু কতদিন ওর থেকে পালিয়ে বেড়াবি?
:-যতদিন সম্ভব হয়।জারা কী কলেজে আসে?
:-হ্যা আসে।নতুন নতুন ফ্রেন্ড হয়েছে ওর।কলেজে বেশিরভাগ সময় রাকিবের সাথেই থাকে।
:-ভালো।
:-শালার মেয়েরা সব স্বার্থপর।ছোটবেলা থেকে তুই যাকে আগলে রেখেছিস সেই তোর বুকে ছুড়ি বসালো।
:-সব মেয়েই স্বার্থপর এ কথা ভুল।কিছু কিছু মেয়ের কারণে আমরা পুরো মেয়ে জাতিকে খারাপ ভাবি আবার কিছু

কিছু ছেলের কারণে আমরা পুরো পুরুষ জাতিকে খারাপ ভাবি কিন্তু এটা ভুলে যায় খারাপ মানুষের মাঝে ভালো মানুষও থাকে।

:-তা ঠিক।এখন রাখিরে কলেজে যেতে হবে।
:-যা।ঠিকমত ক্লাস করিস।আমি বাসায় গেলে সব নোট করে নেবো তোর কাছ থেকে।
:-আচ্ছা।

ফোনটা রেখে দিলাম।শিপন বেষ্ট ফ্রেন্ড।শিপন জানে আমি জারাকে ভালোবাসি।জারা শিপন আর আমি তিনজন খুব ভালো ফ্রেন্ড।ভালো ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে কারণ জারা এখন আর আমাকে ফ্রেন্ড ভাবেনা।শিপনের সাথেও নাকি কথা বলেনা।শিপনের সাথে জারা কেনো কথা বলেনা সেটা আমার অজানা।আমার সাথে নাহয় ঝামেলা হয়েছে কিন্তু শিপনের সাথে কোন ঝামেলা হয়নি তবুও শিপনের সাথে কথা বলেনা।এতদিনের বন্ধুব খুব অল্প সময়েই ভুলে গেলো।

২ঘন্টা পর।

রুমে বসে মামাতো ভাইয়ের সাথে টিভি দেখেছি এমন সময় শিপনের ফোন

:-হুসাইন তুই তাড়াতাড়ি সদর হাসপাতালে আয়।(শিপন)
:-কেনো কী হয়েছে?(আমি)
:-জারা এক্সিডেন্ট করেছে।
:-তুই থাক আমি এখনি রওনা দিচ্ছি।

ফোন রেখে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিলাম।রেডি হয়ে নানুদের রুমে আসলাম।

:-নানু আমি চলে যাচ্ছি।(আমি)
:-এই দুপুরবেলা কোথায় বের হচ্ছিস?আর তুইতো বললি অনেকদিন থাকবি।(নানী)
:-বলেছিলাম কিন্তু এখন চলে যাবো।জারা এক্সিডেন্ট করেছে।
:-তাহলে তাড়াতাড়ি যা।গিয়ে ফোন করিস।
:-আচ্ছা।

নানুদের বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।জারাকে এই বাসার সবাই চেনে।আমার ছোট মামার বিয়েতে জারা এসেছিলো।
আমাকে যে জারার কাছে যেতেই হবে।যতই ওর সাথে আমার রাগারাগি হোক ভালোবাসিতো।আমাদের মনটা খুব বেহায়া।প্রিয় মানুষটা যতই অবেহেলা করুক তার বিপদের কথা শুনলে ঠিকই সবার আগে ছুটে যায়।ভালোবাসার মানুষের বিপদে পড়ার কথা শুনে কখনো ঘরে বসে থাকা যায়না।আমরা যতই চেষ্টা করি না যাওয়ার কিন্তু মনটা ঠিকই ছুটে যাবে।

বাস স্টান্ডে এসে অনেকক্ষণ বসে থাকার পর বাস পেলাম।আজ যেনো সব কিছুই স্লো চলছে। মনে হচ্ছে ঘড়ির কাটা থমকে আছে।

আজ যেনো পথ ফুরাতে চাচ্ছেনা।৫ঘন্টার পথ আজ আমার কাছে মনে হচ্ছে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিচ্ছি।মনে হচ্ছে পথেট দুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে।বারবার শিপনকে ফোন দিয়ে জিঙ্গেস করছি জারার অবস্থার কথা।শিপন বলছে তেমন বেশি কিছু হয়নি তবুও আমার মন মানছেনা।জারা বাসের সাথে এক্সিডেন্ট করেছে।বাসা থেকে রিক্সায় করে কলেজে যাচ্ছিলো তখন পিছন থেকে একটা বাস ধাক্কা দেয়।আমাদের দেশে বর্তমানে বাসে চলাচল খুব ঝুঁকিপুর্ণ।প্রতিদিন খবরের কাগজে দেখা যায় ৫থেকে ১০জনের মৃত্যুর খবর।সঠিক কোন বিচার নেই এসব বাস চালকদের।একজনকে মেরে ফেলে ঠিকই স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে সব চালকেরা।যাইহোক এসব নিয়ে বেশি কথা বললে সমস্যা হতে পারে।কথা না বলাই ঠিক।

হাতপাতলে পৌঁছে দেখি আমার আব্বু আম্মুও এসেছে।জারার আব্বু আম্মু সহ আরো অনেকে এসেছে।রাকিবও এসেছে।রাকিবকে সহ্য হচ্ছেনা আমার।ইচ্ছা করছে গিয়ে গলা টিপে মেরে ফেলি।ওকে এখান থেকে তাড়াতে হবে।শিপনকে সাইডে ডেকে নিয়ে প্লান বানালাম।শিপন প্লানটা প্রয়োগ করলো।প্লানটা কাজে লেগেছে।রাকিব ভয়ে

হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলো।প্লানটা ছিলো*শিপন কথায় কথায় রাকিবকে বলবে জারাকে শেষ ফোন করেছিলো যে তার বিরুদ্ধে জারার বাবা মা মামলা করবে।কারণ যেই লোকটা ফোন করেছিলো তার জন্য জারা এক্সিডেন্ট করেছে।তাছাড়া জারার বাঁচার সম্ভবনা খুব কম।জারা যদি মরে যায় তাহলে মামলাটা আরো জোরদার হবে**
ব্যস এতেই কাজ হয়ে গেছে।শালা লুচ্ছা হুট করে জারার জীবনে এসে আমাকে জারার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছে আজ ওকে আমি সরিয়ে দিলাম।হি হি হি হি।একটা ভিলেন মার্কা বিজয়ের হাসি দিলাম আমি।সত্যিটা হলো জারা এখন বিপদ মুক্ত।আমি জানি কিন্তু রাকিব এটা জানেনা।

২ঘন্টা জারার জ্ঞান ফিরলো।জ্ঞান ফেরার ২০ মিনিট পর সবাইকে কেবিনে ঢুকতে দোওয়া হলো।আমি সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি যেনো জারা আমাকে দেখতে না পায়।জারা সবার সাথে কথা বলছে।আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানালাম জারা বিপদমুক্ত হওয়াতে।আমরা মানুষেরা যত কিছুই করি না কেনো আল্লাহ যদি না চায় তাহলে কোন মানুষই বিপদমুক্ত হতে পারবেনা।

:-হুসাইন এদিকে আয়।(জারা)
খুব অবাক হলাম জারার মুখে আমার নামটা শুনে।আমি সবার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি।জারার দেখতে পাওয়ার কথা না।ও দেখলো কিভাবে আমাকে?আমি জারার কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।

:-বস এখানে।(জারা)
:-তুই আমাকে দেখলি কিভাবে?আমিতো সবার পিছনে ছিলাম।(আমি)
:-আমি জানতাম তুই এসেছিস।
:-এত কনফিডেন্স?

:-হুম।জানিস এক্সিডেন্ট এর পর জ্ঞান হারানোর আগে শুধু তোর কথা মনে হচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো তোর সাথে আমি খুব অন্যায় করেছি।তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময়টুকুও পেলাম না।মনে হচ্ছিলো আমি আর বাঁচবোনা।

:-ওই চুপ।মরার কথা বলবিনা।
:-আমাকে ক্ষমা করে দে।আর কোনদিন তোর সাথে এমন করবোনা।
:-ধুর বোকা। আমি কিছু মনে করিনি।যদি তোর উপর রাগ করে থাকতাম তাহলে কী আজ এখানে আসতাম বল?
:-হুম।

৫দিন পর

জারা এখন সুস্থ।আমি,জারা আর শিপন বসে আছি।জারা আমাদের ডেকে নিয়ে পার্কে এসেছে।জানিনা কেনো এখানে ডেকে আনলো ।আমাদের হারানো বন্ধুত্ব আবার ফিরে পেয়েছি।

:-শিপন তুই একটু ওদিক থেকে ঘুরে আয়।হুসাইনের সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।(জারা)

:-কিরে ব্যাপার কী?আজ শাড়ি পড়ে কলেজে আসলি তার উপর আমাকে দুরে পাঠিয়ে গোপনে কথা বলবি!সামথিং সামথিং নাকি?(শিপন)

:-ওই তুই যাবি

:-যাচ্ছি যাচ্ছি।বেষ্ট অফ লাক।তবে পার্টি কিন্তু দিতে হবে।
শিপন চলে গেলো।আমি একটা কথাও বলিনি শুধু জারার দিকে তাকিয়ে আছি।জারাকে এই প্রথম শাড়িতে দেখছি।খুব সুন্দর লাগছে ওকে।চোখ ফেরাতে পারছিনা।মাঝে মাঝে জারাও তাকাচ্ছে।আমার চোখে চোখ পড়তেই জারা চোখ নামিয়ে নিচ্ছে।বাঙালি মেয়েদের শাড়ি পড়লে খুব সুন্দর লাগে।শাড়িতেই সব সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তাদের।

:-সত্যি করে একটা কথা বলবি।(জারা)
আমি চোখ সরিয়ে নিলাম জারার দিক থেকে।

:-হুম বলবো।(আমি)
:-আমাকে ক্ষমা করেছিস?
:-আবার সেই কথা।
:-করেছিস কিনা তাই বল?
:-করেছি।
:-সত্যি?
:-হুম সত্যি।

:-তোর সাথে সেদিন কেনো ওইরকম ব্যবহার করেছিলাম নিজেও জানিনা।আমার এই কয়দিন কী যে হয়েছিলো ঠিক বুঝে ওঠতে পারছিলাম না।তোকে কেনো জানি বিরক্ত লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো তোর সাথে আমি আর থাকতে পারবোনা।হঠাৎ রাকিব আমাকে প্রপোজ করলো।ওর প্রস্তাবে কেনো জানি রাজি হয়ে গেলাম।তোর কথা তখন একবারো ভাবিনি।ভাবিনি তোকে ছাড়া আমার এক মুহুর্ত চলবেনা।তখন না বুঝলেও আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম তুই আমার মনে কতটা জায়গা দখল করে আছিস।যেদিন এক্সিডেন্ট হলো সেদিন রাকিবের সাথে সবকিছু শেষ করতে যাচ্ছিলাম।ভেবেছিলাম রাকিবের সাথে সবকিছু শেষ করার পর তোর কাছে গিয়ে সবকিছুর জন্য ক্ষমা চাইবো।প্রয়োজন হলে তোর পায়ে পড়বো কিন্তু তার আগেই এমন ঘটনা ঘটলো।

:-বুঝলাম।
:-কী বুঝলি?
:-আমি যা করেছি ঠিক করেছি।
:-কী ঠিক করেছিস?
:-সেদিন রাকিবকে হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে।
:-মানে?

:-শোন তাহলে। আমি সেদিন হাসপাতালে আসার পর রাকিবকে দেখতে পায়।ওকে কেনো জানি সহ্য হচ্ছিলো।তাই আমি আর শিপন মিলে একটা প্লান করি।**শিপন কথায় কথায় রাকিবকে বলবে যে জারাকে শেষ ফোন করেছিলো যে তার বিরুদ্ধে জারার বাবা মা মামলা করবে।কারণ যেই লোকটা ফোন করেছিলো তার জন্য জারা এক্সিডেন্ট করেছে।তাছাড়া জারার বাঁচার সম্ভবনা খুব কম।জারা যদি মরে যায় তাহলে মামলাটা আরো জোরদার হবে**

:-হি হি হি হি হি হি।বেচারা আসলেই খুব বোকা।
জারা হাসছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছি।জারার হাসিটা খুব সুন্দর।হাসলে গালে টোল পরে জারার যা ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।

:-ওই কী দেখিস এভাবে?(জারা)
:-পরী দেখি।(আমি)
:-এই ভর দুপুরে পরী পেলি কোথায়?
:-এইতো আমার সামনে বসে আছে।
:-পাম দেওয়া হচ্ছে না।আমি জানি আমি পেত্নী।
:-হ পেত্নী তুই।
:-একটা কথা জিঙ্গেস করি?
:-হুম
:-আমাকে ভালোবাসিস?
:-না।তোকে জাষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি এর বেশি কিছু না। তোর আর আমার মাঝে কিছু সম্ভব না।(একটু কষ্ট দেওয়ার জন্য)
:-সত্যিই ভালোবাসিস না?(ছলছল চোখে)
:-আগে আমার একটা প্রশ্নের উওর দে।

বন্ধুত্ব তারপর—-?শুন্যস্থানে কী হবে।সঠিক উওর দিতে পারলে তোর উওর পেয়ে যাবি।

:-বিয়ে।
:-হি হি হি হি।তুইতো খুব ফাষ্ট।আমি ভেবেছিলাম জাষ্ট ভালোবাসার কথা বলবি।
:-উওর সঠিক কিনা তাই বল আগে?
:-কিছুটা সঠিক।
:-ওই কিছুটা কী হু কিছুটা কী।(কথাগুলো বলতে বলতে জারা আমাকে কিল ঘুসি দিতে শুরু করলো।)
:-ব্যথা লাগছেতো।
:-লাগুক তাতে আমার কী।
:-তাইতো আমি ব্যথা পেলে তাতে কার কী।
:-বাব্বা আমার হবু বরটা দেখছি অভিমানও করতে পারে।
:-আমি কারো বর না।
:-আমি বর বলিনি।হবু বর বলেছি।আর এখন থেকে আমরা তুমি করে বলবো।
:-পারবোনা আমি।তুই করেই বলবো।
:-কী বললি আবার বল?(রাগি দৃষ্টিতে)
:-ঠিক আছে তুমি করেই বলবো।
:-গুড বয়।
:-আর আমি কী বলবো?(শিপন)
:-ওই তুই এত তাড়াতাড়ি চলে আসলি কেনো?(জারা)
:-তোরা বসে বসে প্রেম করবি আর আমি একা একা বসে থাকবো তা হবেনা।
:-দাড়া দেখাচ্ছি মজা।

জারা বসে থেকে ওঠে দাঁড়ালো তারপর শিপনকে তাড়া করলো।শিপন ছুটছে জারা ওর পিছু ছুটছে ধরার জন্য আর আমি বসে বসে ওদের কান্ড দেখছি আর হাসছি।আমার মত পার্কে বসে থাকা অনেকেই দেখছে।
শুরু হলো আমার আর জারার ভালোবাসার গল্প

********************************************সমাপ্ত*****************************************

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত