সুখের সংসার

সুখের সংসার

প্রথমে বলে নেই আমি প্রান্ত পড়ালেখা শেষ করে ভালো একটা জব করছি। আব্বু-আম্মু-ভাইয়া-ভাবী-বোন সবাই বাড়িতে থাকে। আর আমার কিউট একটা ভাতিজা আছে খুব দুষ্টু। আব্বু, ভাইয়া তাদের বিজনেস নিয়ে বিজি। আমাকে বললেন, জয়েন করতে। কিন্তু আমি করিনি, আরে বাবা একটু বাইরে জব টব করি, অনেক কিছু জানা যাবে। তাই আমি ঢাকায় থাকি। অনেক দিন বাড়ি যাইনি, তাই আজ ৫ দিনের ছুটি নিয়ে গেলাম বাড়িতে। সবাই আমাকে দেখে অনেক খুশি। ভাতিজা এসেই ছোট আব্বু বলেই কোলে উঠলো। সবার সাথে আড্ডা দিলাম অনেক সময়। তারপর ভাবী বললো- যাও ফ্রেশ হয়ে নাও, সবাই একসাথে খাবো দুপুরে। তারপর আব্বু-ভাইয়া অফিস থেকে ফিরলেন আমি আসায়। সবাই মিলে কথা বলছে আমাকে নিয়ে বিয়ে দিবে। আমি বললাম- এখন বিয়ে টিয়ে করতে পারবো না।

 

তারপর বিকেলে বাসায় বসে টিভি দেখছি তখন কলিং বেলের আওয়াজ, উফ খেলাটা ও দেখা যাবে না নাকি। ভাবী ভাবী ডাকলাম কিন্তু ভাবীর খবর নাই দরজা খুললাম নিজে খুলে দেখি একটা মেয়ে।

আমিঃ- জি কি চাই?

মেয়েঃ- আমি মিষ্টি।

আমিঃ- মিষ্টি তো আমি কি করবো?

মেয়েঃ- আমি মিমের ফ্রেন্ড (মিম আমার ছোট বোন এবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছে)

আমিঃ- ও আচ্ছা ভিতরে আসুন।

মেয়েঃ- আপনি কি এই বাড়িতে কাজ করেন?

আমিঃ- ওর কথা শুনে মেজাজ খুব খারাপ হলো (নিজের বাড়িতে আমি কামলা! বাহ বাহ ভালো) জি না আমি এই বাড়ির ২য় ছেলে, মিমের ছোট ভাই।

মেয়েঃ- (জিহবায় কামর দিয়ে) ও সরি ভাইয়া আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আগে অনেক বার এসেছি আপনাকে দেখতে পায়নি তাই।

আমিঃ- ঠিক আছে। আসলে আমি ঢাকায় চাকরি করি মাঝে মাঝে বাসায় আসি তাই।

মেয়েঃ- ও। আমি মিষ্টি মিমের ফ্রেন্ড।

আমিঃ- আমি প্রান্ত মিমের ভাই।

মিষ্টিঃ- ও ভাইয়া মিম কোথায়?

আমিঃ- ও রুমে আছে যাও।

মিষ্টিঃ- ওকে ভাইয়া।

 

মেয়েটা দেখতে এতো সুন্দর না আবার খারাপ ও না, খুব মায়া ভরা একটা চেহারা। দেখলেই প্রেমে পরার মতো। ঠিক আমারও তাই হলো। প্রেমে পরলাম মেয়েটার। রাতে মিমের রুমে গেলাম

আমিঃ- মিম আসবো?

মিমঃ- আরে ভাইয়া তুই কবে থেকে ভদ্র হলি রুমে আসতে পার্মিশন নিচ্ছিস।

আমিঃ- ওই কি বললি? (ওর চুলে টান দিয়ে)

মিমঃ- আহা ভাইয়া ছাড় লাগছেতো।

আমিঃ- আচ্ছা ছাড়লাম এখন বল তোর ফ্রেন্ড মিষ্টি দেখতে কেমন?

মিমঃ- কেমন মানে?

আমিঃ- আরে তোর ফ্রেন্ড মিষ্টিকে আমার অনেক পছন্দ হইছে। আরে বিয়ে করবো আর তুই সেটা আম্মু-আব্বু-ভাইয়া কে বলবি।

মিমঃ- কি বললি ভাইয়া?

আমিঃ- কানে কম শুনস আবার বলা লাগবো?

মিমঃ- না ঠিক আছে আমি বলবো কিন্তু আমি কি পাবো?

আমিঃ- তুই যা চাইবি তাই দিবো?

মিমঃ- আচ্ছা আমাকে একটা ল্যাপটপ দিতে হবে রাজী?

আমিঃ- ওকে দিবো কিন্তু আমার কাজ করে দিতে হবে?

মিমঃ- কাজ হয়ে যাবে।

আমিঃ- আচ্ছা।

মিমঃ- এইতো আমার লক্ষী ভাইয়া।

আমিঃ- আর পাম দেওয়া লাগবো না!

মিমঃ- মিষ্টি শুন দোস্ত তর সাথে কিছু কথা ছিলো?

মিষ্টিঃ- আচ্ছা কি বল?

মিমঃ- আমার ছোট ভাইয়া তোকে পছন্দ করেছে সেদিন দেখে।

মিষ্টিঃ- তো আমি কি করবো?

মিমঃ- ভাইয়া তোকে বিয়ে করতে চায়?

মিষ্টিঃ- ও আচ্ছা। আমিতো এখন বিয়ে করবো না।

মিমঃ- প্লিজ দেখ ভাইয়া অনেক ভালো। আমি মনে করি তোকে সুখে রাখবে।

মিষ্টিঃ- আর ভাইয়া কে নিয়ে পাম দেওয়া লাগবে না।

মিমঃ- সিরিয়াসলি দোস্ত।

মিষ্টিঃ- আচ্ছা তোর আম্মু-আব্বু কে আমাদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাতে বল। যদি ওরা রাজি থাকে তাহলে আমি তর হাদারাম ভাইটার দায়িত্ব নিতে পারি।

মিমঃ- ঐ তুই কি বললি আমার ভাই কে?

মিষ্টিঃ- কিছু না দোস্ত মজা করলাম।

মিমঃ- আচ্ছা আজ বাসায় যাই ভাবী।

মিষ্টিঃ- বিয়ে হতে না হতেই ভাবী হয়ে গেলাম ফাজিল একটা। আচ্ছা যা বাই।

 

মিমঃ- ছোট ভাইয়া ভাইয়া তুই কই।

আমিঃ- কি হয়েছে বল?

মিমঃ- কাজতো হয়ে গেছে?

ভাবীঃ- কি কাজ হয়ছে দেবরনি?

মিমঃ- ভাইয়া ভাবীতো সব শুনে ফেললো?

আমিঃ- আরে ভাবী কিছু না।

ভাবীঃ- আমাকে সব খুলে বলো নাইলে তোদের খবর আছে। তারপর ভাবী কে সব খুলে বললাম।

ভাবীঃ- কি দেবর টা আমার তলে তলে এতো দুর।

আমিঃ- হুম। ভাবী একটু হেল্প করনা প্লিজ লক্ষ্মী ভাবী আমার।

ভাবীঃ- আচ্ছা আমি আম্মু-আব্বু কে বলতেছি যেনো তাড়াতাড়ি তোমাকে বৌয়ের খাচায় ভরে দেওয়া হৌক।

আমিঃ- এইতো আমার লক্ষি ভাবী উম্মাহ,

ভাবীঃ- এই শয়তান কি করলি এইটা।

মিমঃ- হয়ছে হয়ছে এখন সব হয়ে গেলো।

আমিঃ- ভাবী রাতে খাওয়ার সময় আব্বু-আম্মু-ভাইয়া কে বলে দিয়ো।

ভাবীঃ- আচ্ছা দিবো।

 

রাতে সবাই খাওয়ার টেবিলে বসে আছি। এমন সময় ভাবী বললো,,,আম্মা-আব্বা আমাদের প্রান্ত তো বিয়ে করতে রাজী।

আম্মুঃ- ও তাই নাকি প্রান্ত?

আমিঃ- হুম আম্মু।

আম্মুঃ- আচ্ছা তোর কোনো পছন্দ আছে?

সেখান শোনার পর আমার আমার বোন আর ভাবী সব বলে দিলো। তারপর এসব শুনে লজ্জা পেয়ে খাওয়া শেষ করে ঊঠে আসলাম।

 

তার কয়েকদিন পর আম্মু-আব্বু-ভাইয়া বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মিষ্টিদের বাড়িতে গেলো সবাই শুধু আমি পরে।

 

বিকেলে ভাবী আর মিম আমার রুমে আসলো

ভাবীঃ- কি কর দেবরজি ?

আমিঃ- দেখছো তো কি করি ভাবী।

মিমঃ- ভাইয়া তোর বিয়েতো ঠিক হয়ে গেলো।

আমিঃ- তাই নাকি।

ভাবীঃ- হুম দেবরজি।

উফ মনে মনে আমি শুনে খুব খুশি হলাম।

 

তার কয়েকদিন পর আজ আমার আর মিষ্টির বিয়ে হলো। আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে বসে আছি আর আমার ভাতিজা আমার কোলে বসে আছে। আর সবাই এক এক করে ছবি তুলছে। এমন সময় মিম আমার কানে কানে বলছে ভাইয়া বিয়েতো হয়ে গেলো আজ কালকে যেন আমার ল্যাপটপ পেয়ে যাই নাইলে খবর আসে। মিষ্টিঃ- ঐ মিম তুই একটা ল্যাপটপ এর কারনে তুই আমাকে তোর হাদারাম ভাইয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিলি। আমি একটু মিষ্টির দিকে থাকালাম সে মুচকি হাসছে।

আমিঃ- আচ্ছা যা কাল তোর ল্যাপটপ পেয়ে যাবি।

মিমঃ- এইতো আমার লক্ষ্মী ভাইয়া।

মিষ্টিঃ- তোর খবর আছে কিন্তু মিম এখন ভাগ।

 

বিয়ের সব যামেলা শেষ করে ঢুকলাম বাসর ঘরে। গিয়ে দেখি আমার বৌটা ইয়া বড় ঘুমটা দিয়ে তিনি বেডে বসে আছেন। আমাকে দেখে বেড থেকে নেমে বললো-

বৌঃ- পা টা দেখি।

আমিঃ- কেনো পা দিয়ে কি করবে?

বৌঃ- আরে বাবা সালাম করবো।

আমিঃ- ও আচ্ছা এই নাও।

(বৌ আমাকে সালাম করলো)

আমিঃ- বললাম বেছে থাকো মা সারাজীবন বরকে নিয়ে।

বৌঃ- এই তুমি কি বললা (আস্তে বলায় শুন্তে পায়নি যাক বাবা বাচা গেলো)

আমিঃ- এখন আমি বেডে ঘুমাতে পারি?

বৌঃ- এই তুমি এতো আনরোমান্টিক কেন?

আমিঃ- কিভাবে?

বৌঃ- এই এতো সুন্দর বাসর ঘরে কেউ ঘুমায়?

আমিঃ- তো কি করবো তোমার সাথে ফুটবল খেলবো এখন?

বৌঃ- উফ তুমি না একটা শয়তান।

আমিঃ- তুমি শয়তানের বৌ। হাহাহা

বৌঃ- আজ আমরা সারারাত গল্প করবো।

আমিঃ- এই না না আমি রাত জাগতে পারিনা কালকে সারাদিন গল্প করবো এখন ঘুমাই। (দেখলাম বৌটা আমার রাগ করলো)

তারপর উনি শুরু করলেন গল্প, সব সময় ওনার কথা শুনতে-চলতে হবে, ওনাকে অনেক অনেক ভালোবাসতে হবে, অফিস ছুটির দিনে ওনাকে নিয়ে ফুসকা খাওয়াতে হবে, আর রান্না করার সময় ওনাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখতে, আর ওনার একটা কিউট মেয়ে দরকার সেটা দিতে হবে। আরো অনেক কিছু বললো।

আমিঃ- এতো কিছু ?

বৌঃ- হুম না করলে পা ভেঙ্গে দিব।

আমিঃ- হুম আচ্ছা।

বৌঃ- এই আমি এখন ঘুমাবো।

আমিঃ- আচ্ছা ঘুমাও (মনে মনে বললাম শান্তি পেলাম)

বৌঃ- আমি বালিশে ঘুমাবো না তোমার বুকে সুয়ে থাকবো।

আমিঃ- আচ্ছা বাবা ঘুমাও।

(আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে শুয়ে পরলো পাগলিটা -মনে মনে বললাম আমার বৌটা এতো রোমান্টিক কেরে)

মিষ্টি আমার বুকে সুয়ে আছে আর আমি মেয়েটা কে মন ভরে দেখছি কি মায়াবী চেহারা তার। আমিও ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।

 

শুরু হলো আমাদের নতুন জীবন। কয়েকদিন পর ছুটি শেষ হয়ে যায় তাই আম্মু-আব্বু বলেন আমার সাথে মিষ্টিকেও নিতে। তাই নিয়ে চলে আসলাম।

 

আমাকে ঠিক সময় অফিস থেকে আসতে হবে ওনার নাকি একা একা ভালো লাগে না। তাই ঠিক সময় আসি। সকালে ঘুমাতে দেয়না পাগলিটা তুলে বলে চলো আমি রান্না করবো আর তুমি পিছন থেকে জরিয়ে ধরে রাখতে হবে। এটা সকাল এবং রাতের রোল। পাগলি একটা। কেটে গেলো ২ বছর। হঠাৎ একদিন রাতে মিষ্টি বলে আমার কানে কানে যে, আমি নাকি বাবা হতে চলেছি। আমি সেকি খুশি যা বলে বুঝাতে পারবনা। তারপর থেকে ওকে কোনো কাজ করতে দেইনা। সব কাজ আমি করি অর দেখাশোনাসহ। হঠাৎ একদিন সে বলে অর নাকি পেটে ব্যথা করছে আমি ওরে হসপিটালে নিয়ে যাই বাড়িতে খবর দেই আব্বু-আম্মু-ভাবী -ভাইয়া-মিম সবাই চলে আসে। এর একটু পর ডাক্তার বলে- আমার একটা মেয়ে হয়েছে। তখন আমি এবং সবাই খুব খুশি হয়েছে, আমাদের আশা পুর্ন হয়েছে। ডাক্তার মিষ্টি কেমন আছে? উনি বললেন মা মেয়ে দুজন সুস্ত আছে। তারপর আমি যাই, ভিতরে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দেই। আমার মেয়েটা হয়েছে ঠিক ওর আম্মুর মতন।

তারপর মিষ্টি কে নিয়ে আমরা বাসায় চলে আসি। আর আমাদের মেয়ের নাম রাখা হয় অর্পিতা। সেটা আমার বৌ ঠিক করে রেখে দিয়েছে। মা মেয়ে সারাদিন আমার পিছনে লেগে থাকে।

 

এখন আমার পাশে ২ টা ময়না ঘুমিয়ে। একটা আমার বৌ আরেকটা আমার মামুনি। এভাবেই সুখের সংসারে ভাসতে থাকি।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত