অন্য রকম বাসর

অন্য রকম বাসর

সম্পূর্ণ রাস্তা মৌ গাড়িতে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে। কান্না করাটাই স্বাভাবিক। প্রদীপকে সে যত ভালোবেসেই বিয়ে করুক না কেন মা বাবাকে ছেড়ে নতুন বাড়িতে উঠার কষ্টটা শুধু মেয়েরাই বুঝে।প্রদীপ কয়েকবার গাড়িতে শক্ত করে হাত ধরে কানে কানে বলল ” এই পাগলি কান্না করো কেন? আমি আছি না? ”

এই বলার সাথে সাথে মৌ কান্না আরো বেড়ে যায়।

ওতটুকু রাস্তায় আসতে আসতে মৌ বাবা দুইবার ফোন করে খোঁজ নিলেন।

এত বছর ধরে লালন করা মেয়েটাকে আরেকজনের হাতে তুলে দেওয়ার মত সামাজিক প্রতিবন্ধকতা না থাকলে বোধহয় কোন বাবাই তার মেয়েকে বিয়ে দিতেন না।

বাবার ফোন পেয়ে মেয়ে কান্না থামায়। যেন চাবি দেওয়া ডল পুতুল সে। চাবি দিলেই কাঁদে … আবার চাবি বন্ধ করে দিলেই কান্না বন্ধ।

পুরোটা রাস্তা এসবই করেছে। গাড়িতে যারা ছিলেন তারা অনেক চেষ্টা করেছে মৌ একটু হাসানোর। হেসেছেও কিন্তু পরক্ষনেই আবার চোখে পানি।

গাড়ি থেকে নামার পর রায়হান (প্রদীপের বন্ধু)

মৌকে বলল

-আরে ভাবী হায় হায় আপনের মেকাপ তো সব শেষ … এখনো অনেক ফটোসেশন বাকি তো। ইয়া আল্লাহ করসেন কি?

মৌ চোখ বড়বড় করে প্রদীপ বলল

-শুনো।
প্রদীপ মৌ এর মুখের সামনে কান বাড়িয়ে বলল
-কি?
খুব আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বলল
-আমার মাশকারা কি লেপটায়া গেছে?
অনেক কষ্টে প্রদীপ হাসি পেটে চেপে রেখে বলল

-না কিছুই হয় নাই মাশকারার.. আশে পাশে সব মেয়ের মধ্যে এখনো তোমাকেই বেশি সুন্দর লাগছে।
ভ্রু কুচকে মৌ বলল

-মিথ্যা বলার অভ্যাসটা কবে ছাড়বা?

-ছেড়ে দিসি তো। তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে বাকিদের জিজ্ঞেস কর। প্রদীপের মা সিড়ি বেয়ে নিচে নামলেন। পায়ের ব্যাথার কারণে তিনি বিয়ের অনুষ্ঠানে যান নি। বৌ কে বরণ করার জন্য প্রদীপের বোনই যথেষ্ঠ ছিলো কিন্ত তার ছেলের বৌকে সে ই বরণ করবে এইটা তার এক কথা।

আলতায় পা ডুবিয়ে মৌর হাতে

ফুল দিয়ে ঘরে ঢোকানো হলো।

সবাই অপরিচিত।
প্রদীপ আর তার পরিবার ছাড়া বাকী কাউকেই সে ভালো মত চিনে না।
কয়েকটা বন্ধুকে চিনে অবশ্য।

কিন্তু অন্যান্য দিনে মৌ এর চঞ্চলতা দেখে আশে পাশের মানুষ বিরক্ত হয়ে যেত। আজ তার ব্যাতিক্রম … আজ সে

মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ঘর ভর্তি মেহমান। আত্মীয় স্বজন ,পাড়া প্রতিবেশি ,বন্ধু বান্ধব।
কত মানুষ চারপাশে। ছবি তুলছে সবাই যে যার মত। বৌএর সাথে

মৌকে দেখে একটু ক্লান্তই মনে হচ্ছিলো..।
এটা প্রদীপের বোন (সুবর্না) খেয়াল করলেন।

কিন্তু বেপরোয়া মানুষজন এসব ততক্ষন বুঝে না যতক্ষণ এদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে না দেখানো হয়।
তাই সুবর্না একটু রাগ হয়েই বলল

-অনেক হইসে সবার বৌ দেখা। যান সবাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে যান। কাল আবার রিসিপশন প্রোগ্রাম। মৌকে একটু বিশ্রাম করতে দেন আপনারা।

সুবর্নার কথা শুনে সবাই ঘড়ি দেখে এমন একটা ভান করলো যে তারা বুঝতেই পারে নাই ঘড়িতে যে তখন রাত ১২.১৭ বাজে।

এবং কিছুক্ষণ পর একে একে সবাই চলে গেলো।
প্রদীপের বোন মৌকে বসার ঘর থেকে তার ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরটা কাঁচা ফুলে সাজানো।
প্রদীপ জানতো মৌ এর কাঁচাফুল অনেক বেশিই পছন্দ।
তিনি বললেন
-দুইজনই একটু ফ্রেশ হউ। হয়ে রাতে খেয়ে নেও। তুমি তো কিছুই খাও নাই।
-না আপু সমস্যা নাই।
-ঐটা আমি বুঝবো তুমি ফ্রেশ হউ আগে।
বাথরুমে কোথায় কি আছে সব দেখিয়ে সুবর্না চলে গেলো।
মৌ শুনতে পাচ্ছে তার শ্বাশুড়ী প্রদীপকে বলছে

-তুইও যা। ফ্রেশ হ। তোরে তো চোরের মত লাগতাসে। কত রাইত ধরে ঘুমাস না। যাহ …প্রদীপ বিরক্ত ভঙ্গীতে চলছে

-আম্মা তুমিও না? বৌ এর সামনেও চোর চুট্টা বলবা?
-হুম বলব। যা রুমে যা … দেখ বৌ এর কিছু লাগবে কিনা।
-আমারে আর তুমি ওর সামনে ধমকাবা না। আমার লজ্জা লাগে।

প্রদীপ রুমে গেলো।
মৌ বারান্দায় দাড়িয়ে কান্না করছে।
-এই কি হইসে?
মৌ ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলছে
-না কিছুনা।
-ক্ষিদা লাগছে?
-না।
-তাহলে?
-কিচ্ছু না।

-যাও একটা গোসল দেও। শান্তি লাগবে। আমাদের অনেক কাজ বাকী আছে। দেরি কইরো না।

-কি কাজ?
-এত কথা কেন বলে আমার বৌটা?
-তাহলে কথা বলব না?
প্রদীপ ধাক্কায়া মৌকে বাথরুমে ঢুকালো।

-তুমি বেশি কইরা মাথায় শ্যাম্পু দিও তো। পার্লারের সব স্প্রে তোমার মাথায়। এই ঘ্রাণে আমার কেমন যেন লাগে।

-কেমন লাগে?

-উফফফ মৌ সময় নষ্ট করতেছো। যাও বলতাছি।
মৌ টাওয়াল শ্যাম্পু নিয়ে গোসলে গেলো।
শাওয়ার ছাড়ার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রদীপের কাছে আজকে এই আওয়াজটাও অনেক রোমান্টিক মনে হচ্ছে।
মুহুর্তে সব মেকআপ পানির সাথে ধুয়ে গেলো।
গোসল করে আসার পর সুতি শাড়ি পড়া মৌকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে।
চারিদিকের পরিবেশ মাতাল করা।
মৌ এর শরীরের ঘ্রাণ , তার স্নিগ্ধতা , কাঁচা ফুলের ঘ্রাণ আর বেলকুনির হালকা বাতাস।
প্রদীপ হা করে তাকায়া আছে।
-কি দেখো?
-না কিছুনা।
-কি কিছুনা?
চোখ অন্য দিকে সড়িয়ে বলল
-এখন তাকানো যাবে না। সারারাতে অনেক কাজ বাকী।
-কি কাজ?
-আবার কথা বলছো? এরপর আর একটা প্রশ্ন করলে কিন্তু আমি তোমাকে …
-কি আমাকে?
-আল্লাহ তুমি এত প্রশ্ন কেন করো জান?

চুল মুছো। আর এদিক আসো শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দেই। তুমি এরপর দরজা খুলে বাইরে যাউ। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

একদম ছোট বাচ্চার মতন মৌ শাড়ির কুঁচি উঁচু করে ধরে আছে। প্রদীপ ধরে ধরে তা ঠিক করছে।

কি সুন্দর দৃশ্য!!

শাড়ি ঠিক করার পর প্রদীপ মৌ এর কাছে গিয়ে বলল

-আজ কিন্তু আমাদের বাসর রাত। অনেক কাজ আছে।
-ধুর! ফালতু … যাও সরো।

ধাক্কা দিয়ে মৌ প্রদীপকে সড়িয়ে দিলো।

-হাহাহা আরে এখনি সরায়া দেও কেন? আচ্ছা যাও তাড়াতাড়ি খাওয়া সারো। অনেক কাজ বাকী আছে।
-তুমি না এত্ত খারাপ যা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নাই।

মৌ দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

প্রদীপের মা বসে আছেন। সুবর্না মৌকে বলছে

– শুনো তোমার দুলাভাই এর খুব মাথা ধরছে। সে ঘুমিয়ে গেছে। তোমাকে বলছে তুমি যেন কিছু মনে না করো।
-আর পুতুল কই আপা?

-ও গত দুই তিন দিন ধরে জেগে ছিলো। আজকে গা টা একটু গরম গরম লাগছে। ওকে আমি ঔষধ খাইয়ে ঘুম পারিয়েছি।

আমরা সবাই কম বেশি খাইসি। তুমিই খাউ নাই। খেয়ে নেও অল্প করে।

মৌ পুতুলের সামনে গিয়ে গায়ে হাত দিয়ে দেখলো গা টা আসলেও হালকা গরম। জ্বর এসেছে। পুতুল প্রদীপের একমাত্র ভাগ্নী।

প্রদীপ ফ্রেশ হয়ে এসে সেও পুতুলের জ্বর মাপলো থার্মোমিটার দিয়ে।

মৌকে খাওয়ার জন্য তার শ্বাশুড়ী ডাকছে।

-বৌ আসো আসো খায়া নেও। অনেক রাত হইসে তো।
-মা সায়েম কই?

-আরে সে আজকে বহুত ব্যস্ত। তার বড় ভাইয়ের বিয়ে না তো মনে হয় বিয়ে তারই হইসে … ওর এক বন্ধুর বাসায় থাকবে আজকে।

-ওহ আচ্ছা। আর বাকীরা?
-সবাই ঘুমাইসে… তুমি খাও তো মা।
-আমার তো ক্ষুধা নাই।
প্রদীপ এইবার জোরে করে এক ধমক দিলো।
-মৌ এক্ষনি টেবিলে বসো।
মৌ নিচের দিকে তাকিয়ে টেবিলে বসলো।

সুবর্না খাবার বেরে দিচ্ছে। মৌ নিচের দিক তাকিয়ে খাচ্ছে.. প্রদীপ কানে কানে এসে বলছে ” তোমাকে না বললাম চুল মুছতে? পুরা শাড়ি চুলের পানিতে ভিজে গেছে ”

মৌ খুব আস্তে ফিসফিস করে বলল

-স্যরি।প্রদীপের মা পাশ থেকে বলছে
-আজকে যদি তোমার শ্বশুর বাইচা থাকতো…
এই বলেই কান্না শুরু করল।
সুবর্না আবার ধমক দিয়ে উঠলো
-আম্মা তুমি এমন কেন? কথায় কথায় কাইন্দো না।
ঝারি শুনে চোখ মুছে প্রদীপের মা চুপ করে বসে রইলেন।
খাওয়ার সময় সবাই চুপ হয়ে গেলো।
মৌ এর খাওয়া শেষ … হাত ধোয়ার সময়প্রদীপের মা বলছে
-যাও এখন দুইজনই ঘুমাও।
প্রদীপ মাঝ দিয়ে বলল
-আম্মা আমরা একটু বাইরে যাবো……
মৌ প্রদীপের কথা শুনে বেকুবদের মত তাকিয়ে আছে।
প্রদীপেরর মা বললেন
-এখন? এত রাতে?
-মা সমস্যা নাই।
-কি সমস্যা নাই? যাবি কই?

-আম্মা সোহান আর আমার বাকি বন্ধুরা এতক্ষন ধরে নিচে দাড়িয়ে ছিলো। সোহানের গাড়ি দিয়ে আমরা একটু ঘুরবো।

-এত রাতে তাই বলে? বৌ অনেক ক্লান্ত। তুই যা। ও ঘুমাইবো।
-আম্মা ওকে নিয়েই যাবো।

-এতগুলা পোলার মাঝেখানে নতুন বৌ একা মেয়ে মানুষ যাবে। কেউ শুনলে কি বলবে?

-সবাই উঠার আগে আমরা চলে আসবো। আর আমরা দুই গাড়ি মিলিয়ে যাচ্ছি। দুই বন্ধুর বৌ প্রদীপের মা একটু মুখ বাঁকা করে সুবর্না কে বললেন

-তুই কি বলিস?

-মা আমি কি বলব? মৌ প্রদীপের বৌ। ও নিশ্চয়ই এমন কিছু করবে না যেইটাতে সমস্যা হবে। মৌ তুমি কি বলো?
মৌ বেসিনের সামনে দাড়িয়ে আছে এখনো।

খুব বোকার মত চেহারা বানিয়ে উত্তর দিলো

-আপনারা যা ভালো বুঝেন।
প্রদীপের মা বলল
-তাড়াতাড়ি আইসা পড়িস। বাসার মেহমান যাতে টের না পায়। আর বেশি দূরে যাইস না।
প্রদীপ হেসে দিলো
-জ্বী আম্মা।
-বৌ যাও… মাথার চুলগুলি বান্ধো।
মৌ ঘোমটা সরিয়ে ভিজা চুল কোনরকমে খোপা করলো।
একটু পর বের হয়ে গেলো। নব বিবাহিত দম্পতি।
নিচে সবাই দাড়িয়ে আছে।
মৌকে দেখে সবাই খুব দুষ্টামি শুরু করলো… সোহান বলল

-কি ভাবী দিলাম তো বাসর রাত মাটি কইরা।

মৌ আজকে খুব লজ্জা পাচ্ছে। তার কাছে আজ সব প্রশ্নের সোজা সাপটা উত্তর হল “মুচকি হাসি”..

সবাই মিলে গাড়ি নিয়ে রওনা হলো … নিশব্দ ঢাকায় গাড়িতে গান বাজছে। সবাই বেশ খুশি। চারদিকে সবাই ঘুমাচ্ছে। নিয়নের আলো ছাড়া সবই যেন ঘুমের রাজ্যে খুব ব্যস্ত।

মৌএর খুব ভালো লাগছে।

এসি অফ করে গাড়ির গ্লাস খুলে দেওয়া মাত্র তার সব চুল ওড়া শুরু করলো। আর প্রদীপ একটু পর পর বিভিন্ন অযুহাত দিয়ে তার কানে কানে কথা বলত।

প্রদীপের বন্ধুরা দুষ্টামি করে বলে উঠে
-দেইখা ফেলসি কিন্তু টোনাটুনির রোমান্স।প্রদীপ প্রতি উত্তরে বলল
-লিগেল বৌয়ের সাথে রোমান্স করা সুন্নত। হাহাহাহা …
গাড়ি গিয়ে থামানো হলো

একটা ব্রিজের উপর। পিছনের গাড়ি থেকে নামানো হলো এক ফুচকা আলাকে। যাকে তারা আগে থেকেই ভাড়া করে রেখেছিলো আর সে তাদের সাথেই ছিলো।

মৌ এসব দেখে রীতিমতো বেক্কল হয়ে গেলো।

-এসব কি প্রদীপ বলল

-তোমার না ফুচকা পছন্দ? তাই উনাকে নিয়া আসছি সাথে। যত ইচ্ছা এখানে দাড়ায়া ফুচকা খাও।

-পাগল নাকি তুমি?
-হাহাহা একটু একটু।

ফুচকাওয়ালা ফুচকা বানাচ্ছে। মৌ এবং বাকিরা খাচ্ছে।

খাওয়া শেষে তারা ফাঁকা শহর টা ঘুরলো। এরপর আবার এক খোলা রাস্তায় নামানো হলো মৌকে …
মৌ জিজ্ঞেস করলো

-আবার কি?
-বাসর ঘরে বৌ কে কিছু দিতে হয় জানো না?
-জানি তো। আমরা তো বাইরে।
-আহহা এমন কোন কথা আছে যে বাসর ঘরেই দিতে হবে?
-না …
-তাহলে?
প্রদীপ পকেট থেকে বের করলো দুইটা নূপুর … সুন্দর দুইটা রূপার নূপুর …
সে মৌকে বলল
-শাড়ি একটু উঁচু করে ধরো তো।
মৌ শাড়ি উঁচু করে ধরলো আর প্রদীপ তার পায়ে নূপুর পরিয়ে দিলো।
সে কি রোমান্টিক দৃশ্য!
সবাই হাত তালি দিলো এবং তারা আবার যাত্রা শুরু করলো।
কিছুক্ষণ পর প্রদীপ মমৌকে বলল
-চোখ বন্ধ করো তোমার চোখ বাঁধবো।
-কেন?
-আবার প্রশ্ন?
-আচ্ছা স্যরি।
গাড়ির বাকি সবাই দুষ্টামি করে বলছে।
-ভাবী এইবার তোমাকে সিংহের খাচায় নেওয়া হবে।
মৌ মুচকি হেসে বলল
-আচ্ছা।
এরপর যখন গাড়ি থামলো মৌএর প্রথম প্রশ্ন ছিলো
-আমরা কই আসলাম?
প্রদীপ কানের কাছে গিয়ে বলল
-ভয়ের কিছু নাই। আমি আছি না?
মৌ কে গাড়ি থেকে ধরে ধরে নামিয়ে কোলে তুলে নিলো প্রদীপ।
-আয় হায় কি করো? ফালায়া দিবা তো।

-আরে ফালাবো না। তোমার চোখ বাঁধা। হাটতে পারতা না। তাই কোলে নিতে হবে। আর এখন একটা আওয়াজও করবা না বললাম।

-ওকে আমি চুপ।

প্রদীপ মৌকে কোলে করে নেওয়ার সময় মৌ এর মনে হচ্ছিলো সে কোন সিড়ি বেয়ে উঠছে। সামনে তার বন্ধুরা।
পিছনে প্রদীপ তার কোলে মৌ।

-আমরা কই যাই।
-চুপ! একদম চুপ।
-সরি সরি।

একটা দরজায় টোকার আওয়াজ পাওয়া গেলো। খুব পরিচিত আওয়াজ এটা মৌ এর কাছে।
দরজা খোলা মাত্র মৌর মা বলে উঠলেন।

-তোমরা এত রাতে? কোন সমস্যা হয় নি তো?

প্রদীপের বন্ধুদের সরিয়ে প্রদীপ মৌকে নিয়ে সামনে এগিয়ে আসলো।
মৌএর শরীর তখন সম্পূর্ণ ঠান্ডা। প্রদীপ তাকে তার বাসায় নিয়ে এসেছে।

সে চোখের কাপড় সরিয়ে কোল থেকে নেমে মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো। মৌএর কান্নার আওয়াজ পেয়ের বাবা ভিতর থেকে দৌড়ে আসলেন।

সবাই এতটা সারপ্রাইজ মৌকে দেখে।

মৌএর বাবা মৌকে দেখে খুশিতে কান্না শুরু করলেন। এই বাসায়ও কেউ এখনো ঘুমায় নি , যে ঘরের মেয়ের বিয়ে হয় সেদিন ঐ বাবা মায়ের ঘুম একরকম উধাও হয়ে যায়।

এইসব ভেবেই প্রদীপ মৌকে এখানে নিয়ে এসেছে।

সবশেষে সবাই ঘরে ঢুকে। বাবার বুকে কান্না করা মৌ আড়চোখে প্রদীপের দিকে তাকিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ইশারা দিয়ে বলে

-থ্যাঙ্কু ……

প্রদীপ হাসছে।

পুরোটা নিশব্দ বাসা হঠাৎ করে জীবন্ত হয়ে উঠলো। রাত ৩ টার সময় মৌএর মা সবার জন্য নাস্তা পানির ব্যবস্থা করছে।

মৌ খুব খুশি।

সে মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করছে। প্রদীপ আর প্রদীপের বন্ধুরা খাওয়া দাওয়া করে নিলো। ঘড়িতে তখন ৪.৩০ টা বাজে। একটু পরই আযান দিবে।প্রদীপ মমৌকে কানে কানে গিয়ে বলল

-বাসায় যাবা?
আবার কান্না শুরু করবা না তো?
মৌ খুব লাজুক চেহারা নিয়ে বলল
-রাত তো শেষ … বাসর রাত।

-যেই রাতে তোমার মন খারাপ থাকবে সেই রাত আমার জন্য অভিশপ্ত রাত। মন খারাপ নিয়ে মেয়েদের ঘুমাতে নাই। জানোনা?

-না তো জানিনা।
-তাহলে আজ জেনে রাখো। কখনো মন খারাপ হলে আমাকে বলবা। মন ভালো করার চেষ্টা করবো।
মৌ প্রদীপের ঘাড়ে হাত রেখে বলল
-চলো বাসায় যাই। মা অপেক্ষা করছে।
-চলো।

মৌএর বাসার সবাইকে মৌ হাসি মুখে বিদায় দিয়ে রওনা হলো। প্রদীপ আর মৌকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে ওদের বন্ধুরা চলে গেলো।

সবাই ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে চাবি দিয়ে গেইট খুলে নব বিবাহিত দম্পতি প্রবেশ করলো বাসর ঘরে। দুইজনই ক্লান্ত। দুইজনই সুখী। দুইজনই নতুন এক বাসর রাতের জন্ম দিলো। একটু ঘুমাতে হবে। আজ রাতেই যে আবার রিসিপশনের অনুষ্ঠান …

গুটি সুটি করে একজন আরেকজনের বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলো এক অদ্ভূত বৈধতার শান্তিতে।
বেঁচে থাকুক ভালোবাসা শুরু থেকে শেষটাতে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত