সকাল বেলায় অামি অার অামার স্ত্রী মুক্তা দুইজন এক সাথে বসে নাস্তা করছিলাম ।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।অামি তখন বললাম, অামি দেখছি কে এসেছে তুমি নাস্তা করো, মুক্তা কোনো কথা না বলে নাস্তা করতে লাগলো । অামি নাস্তা করা রেখে উঠে দরজা খুলে দেখলাম একটা ছেলে দাঁড়িয়ে অাছে ।
তার হাতে একটা খাম।
অামাকে দেখে ছেলেটা খামটা অামর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় । অামি খামটা হাতে নিয়ে দরজা বন্ধ করে নাস্তার টেবিলে এসে বসি ।
তখন মুক্তা জিজ্ঞেস করে , কে এসেছিলো।
অামি বললাম, একটা লোক এসে এই খাম টা দিয়ে গেলো । এরপর খামটা খুলে দেখি ভিতরে একটা চিঠি।
আমি চিঠিটা নিয়ে পড়ি । দেখি তাতে লেখা , মুক্তা তোমার আর আমার সম্পর্কের ঘটনাটা তোমার স্বামীকে যদি বলে দেই তাহলে কেমন হয় । তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কিভাবে হয় ।কখন আমরা কোথায় দেখা করি সব কিছু যদি তোমার স্বামীকে বলে দেই তাহলে কেমন হয় । ইতি তোমার পুরোনো প্রেমিক ।
চিঠিটা পড়ে আমি ধমক দিয়ে বলি , এসব কি এসবের মানে কি ।
মুক্তা ভয়ে ভয়ে বলে , কি হইছে এতো রাগলে কেনো।
আমি বললাম, কি হইছে তুমি জানো না ,তুমি বিয়ের আগে বলছিলে, তোমার সাথে কোনো ছেলের সম্পর্ক ছিলো না কিন্তু এখন এসব কি দেখছি। এই বলে চিঠিটা তার হাতে দেই । সে তখন সেটা পড়তে শুরু করে ।
চিঠিটা পড়া হলে দেখি তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে জল পরছে । সে কেঁদে কেঁদে বলল, দেখো এসব
মিথ্যা। কেউ আমাকে বদনাম করার জন্য এমন কাজ করছে ,বিশ্বাস করো আমার কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল না ।
আমি তখন রেগে গিয়ে বলি, কিভাবে তোমাকে বিশ্বাস করি’ । তুমি আমার সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছো,
আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিছো ।
সে তখন বলে, আমার কথা শুনো , আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো ।
আমি তখন বললাম, তোমার কোন কথাই শুনতে আমি চাইনা, আমি প্রমাণ পেয়েছি কোনটা সত্য কোনটা
মিথ্যা সেটার । এই বলে রাগ করে সেখান থেকে উঠে রুমে চলে আসি। আসার সময় তার দিকে তাকালাম , দেখি সে এখনো কেঁদে চলেছে ।
রুমে এসে আমি হাসতে হাসতে শেষ,আজ নিজেকে ভালো একজন অভিনেতা মনে হচ্ছে । মুক্তার সামনে ভালোই অভিনয় করলাম , সে বুঝতে পারে নাই সব কিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো।
অাসলে চিঠিতে যা লেখা ছিলো সব মিথ্যে।
অার এই মিথ্যে কাজটা অামার নিজের করা ।
গত রাতে সে অামাকে কথায় কথায় বললো , আমি নাকি মানুষকে কষ্ট দিতে জানি না । মানুষকে কাঁদাতে পারি না । আসলে আমি চাই সবাই জেনো সুখে থাকে
আমি চাইনা আমার কারনে কেউ কষ্ট পাক । আমি হাজার কষ্ট পেলেও সবাই যেন সুখে থাকে এটাই চাই ।
আমি কিন্তু ইচ্ছে করলে মানুষকে কষ্ট দিতে পারি ।
মানুষকে কাঁদতে পারি । এটা ওকে বুঝানোর জন্য মিথ্যে এই নাটকটা করি । গত রাতেই সে যখন বলছিলো এরপরে আমি আমাদের বাড়ির পাশের এক ছোট ভাই কে ফোন করে বলি একটা চিঠি লেখে সকালে আমাকে দিয়ে যেতে । কি কি লিখবে সেটাও বলে দেই, আমি নিজে লিখি নাই কারণ আমার হাতের লেখা সে বুঝতে পারবে । তাই ছোট ভাইকে দিয়ে লেখালাম যাতে সে বুঝতে না পারে এটা অামারি করা কাজ । আর নাস্তা করার সময় সে ছোট ভাইটা এসে চিঠি টা দিয়ে গেছে ।
এরপরে আমি একটা চিরকুট লিখলাম।
সবকিছুই সাজানো মিথ্যে একটা নাটক ছিলো ।
কেনোই বা তার সাথে এমন কাজ করলাম সব কিছু
লেখে চিরকুট টা নাস্তা করার টেবিলের উপর রেখে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম । আমি জানি সে টেবিল পরিষ্কার করতে আসবে , তখন সে চিরকুটটা পাবে আর সত্যিটা জানতে পারবে । সত্যিটা চিরকুটে লিখে দিলাম কারন সামনা সামনেই যদি বলতে যাই সবকিছু সাজানো একটা নাটক ছিলো । তাকে শুধু কষ্ট
দেয়ার জন্যই এমন কাজ করেছি। তাহলে সে আমার বারটা বাজাবে ।
এখন চিরকুটে লিখে দিলাম সত্যিটা জানার পর রাগ উঠলে আমাকে যেন কিছু না করতে পারে । চিরকুট পড়ার পর যখন তার রাগ কমবে তখন গিয়ে বাসায় আসবো ।
দুপুরে ভয়ে ভয়ে বাসায় এলাম ,এসে দেখি
সে টেবিল পরিষ্কার করে নাই , অামি চিরকুট টা যেভাবে টেবিলের ওপর রেখে গেলাম ঠিক তেমনি অাছে ।
তার মানে সে চিরকুট টা দেখে নাই , সত্যিটা এখনো জানতে পারেনাই । এরপরে আমি রুমে আসলাম
তার নাম ধরে দুবার ডাক দিলাম , কিন্তু তার কোনো সারাশব্দ পেলাম না । তখনি আমার নজর গেল বিছানার উপর , দেখি সকালের চিঠিটা বিছানার ওপর
পড়া , সাথে একটা চিরকুট ।
অামি চিরকুট টা হাতে নিয়ে সেটা পড়তে লাগলাম। সেটাতে দেখি লেখা।
প্রিয় স্বামী সকালের চিঠিটার সম্পকে তোমাকে কিছু বলতে চাই, পাঁচ বছর আগের ঘটনা , আমি যখন কলেজে পড়তাম ,তখন একটা ছেলের সাথে অামার সম্পর্ক ছিলো । ওর সাথে আমার সম্পর্ক ছিল দুই মাস, এর পরেই আমরা ব্রেকাপ করি । আমাদের সম্পর্কটা
তেমন ঘনিষ্ঠ ছিল না । আর ব্রেকপের কিছুদিন পর
আমি সবকিছু ভুলে যাই। তাই তোমার সাথে যখন আমার বিয়ের কথাবার্তা হয় , যখন তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে । কোন ছেলের সাথে আমার সম্পর্ক আছে কিনা , তখন আমি না বলি । তোমাকে না বলি শুধু এই কারণেই আমি সবকিছু ভুলে গেছিলাম।
নতুন করে আবার সবকিছু মনে করতে চাইনি বলে ।
কিন্তু এতো বছর পর আবার আমার অতীত সামনে এসে দাঁড়াবে তা আমি কখনও কল্পনাও করি নাই ।
হতে পারে অামার অতিত তোমার কাছে সাধারন ব্যাপার। কিন্তু এখন অামি কিভাবে তোমাকে মুখ দেখাবো , তোমার চোখে চোখ রাখবো । প্রতিটা মূহতে মনে হবে অামি তোমাকে ধোকা দিচ্ছি, এই অনূভুতি নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকবো । না তা অামি কখনো পারবো না, তাই চিরদিনের জন্য তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আর কখনো আমার এই মুখ তোমাকে দেখাবো না । ভালো থেকো তুমি অার পারলে অামাকে ক্ষমা করে দিও । ইতি তোমার স্ত্রী মুক্তা ।
চিরকুট টা পড়ে পাগলের মতো তাকে ডাকতে
লাগলাম । একে একে সব রুমে রান্নাঘরে সব জায়গায় তাকে খুঁজতে লাগলাম । কিন্তু তাকে পেলাম না , তার মোবাইলে কল দিলাম, দেখি তার মোবাইল বন্ধ ।
তারপর এক এক করে তার মা বাবা বন্ধু বান্ধব সকল আত্মীয় স্বজনকে কল করলাম । সে কোথাও নেই ,
কেউ তার সম্পকে কিছুই জানে না। আমার মধ্যে একটা ভয় কাজ করা শুরু করল , তাকে হারানোর ভয় ।
এসব আমার কারনে হলো ফাজলামি করতে গিয়ে
বড় একটা ভুল করে ফেললাম । সবকিছুর জন্য আমি নিজেই দায়ী । আমার কারণেই আমি আমার স্ত্রীকে
চিরদিনের জন্য হারাতে বসলাম।
অামার হঠাৎ মনে পড়লে সব জায়গায় তো দেখলাম
কিন্তু ছাদে দেখা হয়নি । তাড়াহুড়া করে ছাদে উঠে গিয়ে দেখি , ছাদের এক কোনায় সে দাঁড়িয়ে আছে ,। আমাকে দেখে সে হাসতে লাগল ।আর আমি ওকে দেখে কেঁদে ফেললাম । তার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম ।
তারপর বললাম, এসব কি এসবের মানে কি , তুমি জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি , এমন কাজ করা তোমার মোটেও ঠিক হয়নি ।
তখন সে বলে, আচ্ছা আর তুমি যে আমার সাথে করছো সেই কাজটা কি ঠিক ছিল ।
তখন আমি বলি , না , সেটাও ঠিক ছিলো না ,
তারজন্য সরি । আচ্ছা তুমি সত্যি টা জানলে কি করে ।
তখন সে অামার চোখের জলের ফোটা গুলো তার শাড়ীর অাঁচল দিয়ে মুচে অামাকে জরিয়ে ধরে
বললো ।
তুমি টেবিলের উপর যে চিরকুট টা রেখে গিয়েছিলে সেটা পড়ে , তখন আমার এত রাগ এসেছিলো তোমাকে
হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলতাম । এরপর যখন রাগ কমলো তখন প্ল্যান করলাম , তুমি যে ভাবে আমাকে কষ্ট দিয়েছো , আমাকে কাঁদিয়েছো , তেমনি আমিও তোমাকে কষ্ট দিবো তোমাকে কাঁদাবো । এরপর তোমার চিরকুটটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম যেমন করে তুমি রেখে গেছো ঠিক তেমনি । তারপর আমি মিথ্যে একটা চিরকুট লিখলাম , সেটা বিছানার উপর রেখে ছাদে এসে লুকিয়ে থাকলাম । আমি জানতাম তুমি আমাকে না দেখতে পেয়ে আমাকে পাগলের মত খুঁজবে ।
আমি তখন বললাম , তার মানে আমি কষ্ট দিয়েছি তার প্রতিশোধ নিলে ।
তখন সে বলে , ঠিক তাই তার প্রতিশোধ নিলাম ।
আচ্ছা তুমি কি করে ভাবতে পারলে আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাব । আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না ।
তুমি যদি আমাকে যেতে বল আমাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেও তারপরও আমি যাব না । মরার পরও তোমার পিছু আমি ছারবো না , পেত্নী হয়ে তোমার পাশে থাকবো , তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত আমি থাকতে পারবো না । কারন অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় ।
তখন আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম।
আমিও তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না,
কারন আমিও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ।