একটু অন্যরকম প্রপোজ

একটু অন্যরকম প্রপোজ

প্রিয়ন্তির সামনে হাতে গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু মেয়ের রিয়েকশন দেখে মনে হচ্ছে এমন করে প্রপোজ করে মহা অন্যায় করছি। আরে সবাইকে তো এভাবেই প্রপোজ করতে দেখি তাই আমি করলে কি দোষ?

আসলে প্রিয়ন্তির সাথে আমার বিয়ে ঠিক হইছে তবে ওর সাথে দেখা করার পর ও বলল, ” যতখন নাকি ওর মন মত ওরে প্রপোজ করতে না পারবো, ততখন ও রাজি হবে না। ”

তাই আমিও আজ অফিসে না গিয়ে প্রিয়ন্তিকে প্রপোজ করতে চলে আসছি। আর এখন ওর সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে প্রপোজ করলাম কিন্তু ওর যেন কোন হুশ নেই। হঠাৎ প্রিয়ন্তির ডাকে বাস্তবে ফিরলাম….

— এই যে মি. রাজ উঠে দাড়াও।
— হুমম। এবার রাজি তো।

— এমন ফালতু প্রপোজ আমি কলেজ লাইফে অনেক পাইছি। আমি তোমাকে বলছি আমার মনের মত প্রপোজ করতে। আর তুমি সেই ৯০’শতকের প্রপোজ করলে বাহ্।

— আমি তো জীবনে কাউকে প্রপোজ করি তাহলে কি করে বুঝবো যে ভিন্ন রকম প্রপোজ কেমন হয়?
— কি?? এখনো কাউকে প্রপোজ করো নি। হা হা হা খুব মজা পেলাম। আচ্ছা তাহলে এখন থেকে ভাবো ভিন্ন কিছু করার। আর সময় মাত্র ১ সপ্তাহ। যদি এর থেকেও সময় বেশি লাগে তাহলে বিয়ে বাদ দিয়ে দিবো।

— এটা কেমন বিচার?

— বিবাহগত বিচার ওকে। এবার তুমি তোমার বাসায় যাও আর আমি আমার বাসায় যাই। যদি নতুন প্রপোজ স্টাইল পাও তাহলেই ফোন দিবে নয়ত তোমার খবর আছে।

— ওকে।

ও একটা ভিন্নরকম লুক নিয়ে পিছনে ফিরে হাটতেঁ শুরু করলো। এই মেয়েটারে আমি কখনো বুঝতে পারি নি। ও আর আমি ক্লাস মেট ছিলাম। ওরে আমি অনেক আগে থেকেই ভালবাসতাম। কিন্তু কখনো বলি নি কিন্তু যখন আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান তখন সাহস করে ওরে আমি প্রপোজ করে ছিলাম। আর ওর উত্তর ছিল ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে। তাই এবার বাসায় গিয়ে মাকে সব খুলে বলি। কারন, মা আর বাবা একদিন আমায় বলেছিল যে যদি কখনো কোন মেয়েকে ভালবাসি তাহলে তাদের বলতাম। কখনো মেয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা না করতাম। তাই আমি মাকে বলি সব আর মা সব কিছু বাবাকে বলে দেয়। বাবা মা কেন জানি আমার উপর রাগ দেখায় নি বরং বলল আমি যে দিন চাকরী পাবো সেই দিন মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে। তাই আমিও ফাইনাল পরীক্ষার পর চাকরীর জন্য পরতে লাগলাম। ভাগ্য ভাল থাকায় চাকরীও পেয়ে গেলাম।

তারপর কিছুদিন আগে বাবা আর মা ওদের বাসায় যায় আর প্রিয়ন্তির বাবা মায়ের সাথে কথা বলে। তারপর আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করে কিন্তু বাধা দেয় প্রিয়ন্তি। ও বলে আমার সাথে কথা বলতে চায়। তারপর আমাদের আলাদা ভাবে কথা বলার জন্য সময় দেওয়া হয়। আমাদের মাঝে কথা গুলো ছিল ঠিক এমন….

— রাজ আমি আর তুমি ৪ বছর ধরে একই ক্লাসে ছিলাম কিন্তু তুমি আমায় কখনো কিছু বলো নি কেন?
— বললে কি হতো?
— কি হতো মানে? আমরা এক অপরকে ভাল করে চিনতে পারতাম আর জানতে পারতাম।
— হুমম আমাদের মাঝে তো কথা হতোই।
— হুমম হাই হ্যালো, কেমন আছো? এটাই ছিল
— তো কি হয়েছে? বিয়ের পর কথা বলে নিবো?
— আমি এই বিয়েতে রাজি না।
— কেন?

— কারন তুমি আমায় কখনো প্রপোজ করো নি। যদি শুধু বাবা মায়ের পছন্দে বিয়েটা হতো তাহলে এটা কোন ব্যাপার ছিল না কিন্তু তুমি আমায় গত ৪ বছর আগে থেকে ভালবেসে আসছো আর প্রপোজ করো নি, সেটা আমি মানতে পারছি না।

— ওকে, এবার বলো তোমাকে প্রপোজ করলেই তুমি বিয়ে করবে তো।
— হুমম ভেবে দেখবো তবে প্রপোজটা সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের হতে হবে। এমন প্রপোজ হতে হবে যা আগে কখনো কোন ছেলে বা মেয়েরা ভাবেও নি।
— আমারে কি প্রপোজ বিজ্ঞানী মনে হয় যে নতুন প্রপোজ আবিষ্কার করবো।
— না পারলে বিয়ে বাদ।

— ওকে করবো। যেহেতু ৪ বছর টানা ভালবাসলাম। তারপর তোমায় পাওয়ার জন্য বাসায় সব জানালাম এবং অনেক তারাতারি একটা চাকরীর ব্যবস্থা করলাম।

— হইছে জ্ঞান গুলো বাদ দাও। আগে প্রপোজ করো।
— ওকে।

এরপর আজ ওরে দেখা করতে বলছিলাম প্রপোজ করবো বলে কিন্তু গোলাপ দিয়ে তো আই লাভ ইউ বললাম কিন্তু ও তো ফুলটা নিলো না। বরং এক সপ্তাহের সময় দিয়ে গেল। এবার আমি কি করতে পারবো।

রাতে ছাদে বসে বসে ফেসবুকে এসে গল্প পড়ছি। আর মনে মনে কিছু প্রপোজ স্টাইল খুজঁতেছি। কিন্তু গল্পের প্রপোজ স্টাইল গুলো কেমন যেন কমন কমন লাগছে। এবার কি করা যায়। ও তো আর জি এফ না যে একটা বলে দিলেই হবে। ও হলো আমার হবু ইয়ে মানে বউ। যদি ঠিক মত প্রপোজ না করতে পারি তাহলে আমার হইছে বিয়ে করা।

হঠাৎ মোবাইল টা কেপেঁ উঠলো রিং টোনের আওয়াজে। আর তাকিয়ে দেখি সেই মহারানী প্রিয়ন্তিই নিজে ফোন দিলো…

— কি ব্যাপার আজ দেখি প্রিয়ন্তি নিজেই আমায় ফোন দিলো?
— না একটা কথা বলতে ফোন দিলাম।
— কি কথা?
— আসলে ফেসবুকে মেয়েদের থেকে কি করে প্রপোজ করবে সেটা জানতে না চেয়ে পারলে নিজে কিছু ভাবো।
— কি??
— হুমম একটু আগে যে মেয়েকে বললে প্রপোজ স্টাইল জানলে বলতে, এটা আমারই ফেক আইডি। ওকে
— হুম।

বলেই ফোনটা রেখে দিলো। তার মানে আমি এতো দিন প্রিয়ন্তির এই ফেক আইডির সাথে আমি বকবক করছি। আমার তো কপাল ভাল যে আমি শুধু বন্ধুর মতই ছিলাম। নয়ত আমায় ইচ্ছা মত দিতো। তবে এটা ভাল লাগলো যে ও আমায় বলছিল আমি যেন ফোন না দেই কিন্তু সেই ও নিজেই ফোন দিলো।

এভাবে কয়েকটা দিন চলে গেল। কিন্তু কি করবো বুঝতে পারছি না।এখন তো অফিসের কাজেও মন বসছে না যদি ও সত্যি ১ সপ্তাহ পরে বিয়ে না করে দেয়। তাই আমায় কিছু একটা করতেই হবে। সেটাই যাই হোক না কেন?
কাল শুক্রবার আর আমার অফিস বন্ধ তাই প্রিয়ন্তিকে নিয়ে ঘুরতে বার হবো আর মনের কথা গুলো বুঝিয়ে বলে দিবো। যদি এবার সে না বুঝে তাহলে টা টা বায় বায়। এ কি এমন মহারানী আসছে যে ওনার জন্য আমার ভিন্ন রকম হতে হবে। পারবো না নিজেকে বদলাতে। আর ও নিজেও জানে আমি অনেক চুপচাপ তবু কেন এমন করছে? এইসব ভাবতে ভাবতে প্রিয়ন্তিকে ফোন দিলাম…

— হুমম রাজ সাহেব বলো।
— কাল সাড়াটা দিন কি আমার নামে দেওয়া যাবে?
— কি ব্যাপার প্রপোজ করবে নাকি?

— দেখা যাক না। কাল তো আমার অফিস বন্ধ তাই যদি আমাকে সাড়াটা দিন দিতে তাহলে তোমায় নিয়ে বাইক দিয়ে ঘুরতাম।

— বাব্বাহ তুমি বাইকও চালাতে পারো।
— হুমম হয়ত ভার্সিটি লাইফে আমি তোমার নজর আকর্ষন করতে পারি নি।
— ওকে যাও কালকের দিনটা তোমার নামে দিলাম।
— ওকে বায়। আর কাল সকাল ১০টা বাজে আমি তোমায় তোমার বাড়ি থেকে নিতে যাবো।
— ওকে বায়।

বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। অবশ্য বাইক চালানোটা অনেক আগে থেকেই আমি পারি। কিন্তু কখনো কারো সামনে ভাব নেই নি। কিন্তু আজ কালের পোলাপান যেইসব ভাব নেয়, তা দেখলে তো এমনি জ্ঞান চলে যায়।

সকালে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে, প্রিয়ন্তির বাড়ির উদ্দেশ্যে বার হলাম। খুব দূরে না বলেই ২০ মিনিটে চলে গেলাম। আর গতকাল রাতেই এক বন্ধুর বাইক রেডি করে রাখছিলাম। রিকশায় আসতে হয়ত ৪০ মিনিট লাগতো কিন্তু বাইক থাকায় তারাতারি চলে আসছি। ওর বাড়ির বাইরে দাড়িয়ে ওরে ফোন দিলাম। কিন্তু ও ফোন কেটেঁ দিলো, হয়ত আমায় দেখতে পাইছে। পাচঁ মিনিট ওয়েট করার পর দেখি মহারানী শাড়ি সামলাতে সামলাতে আসতেছে। জানি না কেমন লাগছে, তবে মনে হচ্ছে ওরে হাত ছাড়া করা মোটেও যাবে না।

— এই যে হ্যালো কি এতো ভাবছো?

(ওর ডাকে বাস্তবে ফিরলাম নয়ত ওরি মাঝে নিজেই হারিয়ে গেছিলাম)

— না কিছু ভাবছি না। আজকের দিনেই তোমায় শাড়ি পড়তে হলো।
— কেন খারাপ লাগছে? নাকি তুমি খুশি হও নি।

— আমি খুশি হলেও কার কি? প্রপোজ তো কখনো আমি ভাল ভাবে করতে পারবো না। আর তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাবে তাই আমার খুশিতে কি?

— হইছে এভাবে ভাও কম খাও।
— হুমম এবার উঠে বসো।

তারপর ওরে নিয়ে বাইকটা চালু করলাম। আর একটা গ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম। কারন শহরের ধুলায় ভালবাসা হয় না। যা হয় তা শুধু প্রেমই বলা যায়। প্রিয়ন্তি ওর একটা হাত আমার কাধেঁ রাখায় খুব ভাল লাগছে। আমি মাঝে আমার কাধেঁর দিকে তাকাচ্ছি। প্রিয়ন্তি এটা বুঝতে পারছে কি না বলতে পারি না। তবে আমার খুব ভাল লাগছে।

— এই যে মিস্টার ঠিক করে চালাও তো। হিরো হতে গিয়ে আবার জিরো হয়ে যেন না যাও।
— পাশে একটা মেয়ে থাকলে সব ছেলেই কোন না কোন কারনে হিরো হয়ে যায়।
— বাহ্ তা কয়জনের হিরো হলে?
— আপাতত একজনের জন্য সেই গত ৫ বছর যাবত চেষ্টা করে আসছি।
— ও তাই বুঝি।
— হুমম।

আবার কিছুটা নিরবতা। প্রায় অনেক দূরেই চলে আসছি। জায়গাটা আমার অনেক পরিচিত। যদিও তেমন একটা আসা হয় না এই দিকে। তবে প্রিয়ন্তিকে মনের কথা বলার জন্য আমার মনে হয় না এর থেকে ভাল জায়গা আর কোথাও পাওয়া যাবে।

তারপর খালি একটা মাঠ দেখে গাড়িটা থামালাম। তারপর দুইজনেই নামালাম…

— কি ব্যাপার এতো দূরে এমন জায়গায় নিয়ে আসলে কেন?
— যেন আমাদের কেউ বিরক্ত না করতে পারে।
— বাহ্ মনে হয় অনেক রোমান্টিক মুডে আছো।
— বলতে পারি না তবে থাকতেও পারি।
— ও তাহলে তে ভালই।

— প্রিয়ন্তি তোমায় কিছু কথা বলার ছিল তবে কথা গুলো খুব স্বাভাবিক শব্দ তবে সত্যিকারের ভাবে অসাধারনই বলতে পারো। আমি তোমায় ভালবাসি প্রিয়ন্তি।

— আর কিছু?
— না এইটুকুই।
— আমার কোন রকমেই অন্য রকম মনে হলো না। কারন, আমি তোমার কাছে ভিন্ন কিছু আশা করছি।
— তাহলে প্রিয়ন্তি আমার আর কিছু করার নেই।
— হুমম।

তারপর দুইজনেই চুপচাপ। কিছুখন চুপ থাকার পর আমি বললাম..

— এখানে দাড়িয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। চলো সামনে কোন দোকান থেকে কিছু খেয়ে নেই।
— ওকে।

এমন একটা গ্রামে চলে আসলাম যে এখানে একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়ির দূরত্ব অনেক। আর দোকান খুজে পাওয়াও মুশকিল।

তারপর দোকান খুজার আসায় আমরা আরো সামনে যেতে লাগলাম কিন্তু আপসোস কোন দোকান নেই।

— প্রিয়ন্তি একটু শুনো..
— হুম বলো।
— তোমার সাথে কোন ঘড়ি বা মোবাইল আছে?
— না।
— ও আচ্ছা তাহলে আমায় একটু জরিয়ে ধরো তো।
— কী বললে?
— না মানে আমায় জরিয়ে ধরে আমার পকেট থেকে আমার মোবাইলটা বের করে দেখো কয়টা বাজে।
— ওকে দেখছি। (রাগ দেখিয়ে)
— হুমম

তারপর ও আমায় জড়িয়ে ধরে মোবাইলটা বার করলো। প্রথমে ভাবলাম একটু দুষ্টামী করি কিন্তু না থাক।

— কি হলো বাজে কয়টা?
— আড়াইটা বাজে।
— আরে বলো কি? তাই তো বলি আমার পেটে এতো খিদে লাগতেছে কেন?
— হুহহ

হঠাৎ তখনই চোখে পড়লো একটা ছোট দোকান। কিন্তু বাইরে কোন মানুষ নাই। তাই সামনে গেলাম দেখতে। দোকানের সামনে যেতেই দেখি একটা বয়স্ক লোক চাদর গায়ে বসে আছে এই গরমে।

— এই যে দাদা শুনছেন…

( আমার দিকে তাকালো একটা কৌতুহলী রূপে। আর প্রিয়ন্তি হয়ত ভয় পেয়েছে তাই আমার পিছনে সরে দাড়ালো)

— এই যে দাদা শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা।
— কি দরকার?
— এখানে কি কিছু খাবার হবে?
— ( মাথা নাড়িয়ে না বলল)
— ও আচ্ছা তাহলে এখানে সামনে কোথায় একটা বাড়ি পাওয়া যাবে বলতে পারেন।
— ( আঙ্গুল দিয়ে ডান দিক ইশারা করলো)
— ওকে ধন্যবাদ।

ওনার কথা মত সামনে যেতে লাগলাম কারন খুব খুদাও লাগছে। তাছাড়া শহর থেকে মোটামোটি অনেক দূরে আছি। বাসায় যেতেও ২ ঘন্টার উপর লাগবে তাই সামনে একটা বাড়ি পেলে একটু ফ্রেশ হওয়া যেতো।

ওই লোকের দেখানো রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। কিন্তু এতো সামনে জঙ্গলের দিকে সামনে যাচ্ছি। অবশ্য প্রিয়ন্তি আমায় মানা করলেও আমি ওর কথা শুনি নি।

এখন দুপুর হলেও জায়গাটা খুব ভয়ানক লাগছে। কারন গাছের কারনে মাটিতে সূর্যের আলো আসছে না।প্রিয়ন্তি আমার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রাখছে। একটু সামনেই যেতে খেয়াল হলো একটা পুরানো বাড়ি তবে ২য় তলায় আলো জ্বলছে। মনটায় একটা শান্তি পেলাম আর সামনে যেতে লাগলাম।

— রাজ আমি যাবো না এখানে।
— কেন? তোমার আবার কি হলো?

— দেখো না কেমন জায়গাতে বাড়ি। গত কয়েক দশকে এখানে কেউ আসছে কি না সন্ধেহ। আর কেমন একটা বাজেঁ গন্ধও লাগছে।

— আরে ওই সব বাদ দাও। চলো একটু ভিতর থেকে আসি। যদি অন্য রকম মনে হয় তাহলে আমরা চলে আসবো।

— কিন্তু….
— কোন কিন্তু নেই, আগে চলো তো।

বাড়িটার পাশেই একটা পুকুর। আমরা সেই পুকুরের কিনারা ধরেই সামনে গেলাম। আর বাড়ির প্রধান দরজার কাছে এসে দরজায় আওয়াজ দিলাম।

— কেউ কি আছেন?
— (কোন উত্তর আসলো না)
— কেউ কি শুনতে পাচ্ছে?

এবারও কোন উত্তর আসলো না। বরং হালকা ভাবে দরজাটা খুলে গেল। কে খুলল সেটাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি ভিতরে ডুকতে পা বাড়ালাম তবে প্রিয়ন্তি হাতটা ধরে না করছে সামনে যেতে। কিন্তু আমি ওর কোন কথা শুনলাম না বরং ঘরে প্রবেশ করলাম। আর যদিও প্রিয়ন্তি আমায় মানা করছিল। সে নিজের রুমে আসলো আর আমার হাতটাও ছাড়লো না।

ঘরে ডুকতেই সাড়া বাড়িটা আলোতে ভরে উঠলো আর তখনই প্রধান দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল। প্রিয়ন্তিও চিৎকার মারলো। আর দরজাটাও খুলতে চেষ্টা করছে আর অনেক কথা বলছে। আমাদের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আমরা কোন অস্বাভাবিক বাড়িতে চলে আসছি। আমি প্রিয়ন্তিকে দরজা ধাক্কাতে মানা করলাম কারন এখন এই বাড়ির মালিকের ইচ্ছা ছাড়া কিছু হবে না। কিন্তু প্রিয়ন্তি যেন কেঁদে দিবে মনে হচ্ছে।তখন আমি বললাম…..

— আরে বোকা মেয়ে কি হলো?
— আমার খুব ভয় করছে।
— আমি আছি তো তোমার আছে। আমার কিছু হলেও তোমার কিছু হবে না।
— আমি ভয় পাচ্ছি তোমার যেন কিছু না হয়। আমি তোমায় হারাতে চাই না।
— হায় হায় কি বলো। তুমি তো আমায় বললে প্রপোজ না করতে পারলে আমায় বিয়ে করবে না।
— আরে গাধা এটা তো কথার কথা ছিল। একটু ভালবাসা পাওয়ার জন্য আর নিজে এখানে মরতে নিয়ে আসছে।

— ভয় পেয়ো না আর। যেহেতু তুমি আমায় ভালবাসো বলেই দিলে। আমার আর কিচ্ছু হবে। এবার চলো তো দুই তলায় যাই।

— না চলো বাইরে যাই। আমার ভয় করছে।
— আমায় ভালবাসো আর একটু বিশ্বাস রাখতে পারছো না।
–হুমম।

তারপর ও আমার হাতটা ধরলো। আর সিড়ি দিয়ে উপরে যেতে লাগলাম। হঠাৎ দেখলাম কে যেন চাদর গায়ে দিয়ে বসে আছে। প্রিয়ন্তি আমার হাতটা খুব শক্ত করে চেপেঁ ধরলো আর মাথা নাড়িয়ে মানা করছে।

— ওই কে আপনে?
— ( কোন কথা নেই)

তাই বাধ্য হয়ে আমি চাদরটা সড়িয়ে দিলাম। আর অবাক হলাম এটা দেখে যে আমরা যে রাস্তা দিয়ে আসছিলাম আর যে লোকটা আমাদের বাড়িটা দেখাই দিছিল এটা সেই বৃদ্ধ লোক।

— আপনি এখানে আসলেন কি করে?
— এটা তো আমারই বাড়ি।যাও হাত মুধ ধুয়ে আসো। আমি তোমাদের খাবার দিচ্ছি।
— আপনি কি করে জানলেন যে আমরা খাবো?
— হু হু হু ( মৃদু একটা হাসি দিলো আর সামনে থেকে চলে গেল)

অামি প্রিয়ন্তির হাতটা ধরে সামনে যেতে লাগলাম। তারপর একটা রুমে যেতেই দেখি কত্তো সাজানো বাড়ি। আর রুমটা ভাল করে দেখতে লাগলাম। তখন পাশেই দেখলাম একটা বাথরুম।

— প্রিয়ন্তি তুমি একটু বসো আমি ফ্রেশ হয়ে নেই।
— কিন্তু….
— আরে আবার কি??? আমি এই যাবো আর এই আসবো।
— ওকে।

আমি বাথরুমে চলে গেলাম আর হাত মুখে পানি দিতে দিতে প্রিয়ন্তি চিৎকার শুনতে পেলাম তাই দৌড়ে বাইরে গেলাম। দেখি সেই লোকটাকে দেখেই ও চিৎকার মারছে।

— আরে কি হলো?
— আপনাদের খাবার দিছি। খেয়ে নেন।(সেই লোকটা)
— ওকে তুমি যাও।
তারপর ও চলে গেল। আমি প্রিয়ন্তিকে খেতে বসতে বললাম। কিন্তু ও বসছে না।
— আরে তুমি খাও আমি মুখে পানিটা ভাল করে দিয়ে আসছি।
— ওকে

আমি জানি প্রিয়ন্তি আবার আমায় ডাকবে। পাগলী একটা মেয়ে। যা ভাবলাম তাই হলো।

— ওই রাজ…
— হুমম মহারানী বলো।
— এই গ্লাসের পানিতে আংটি কিসের।
— ও আংটি। দাও দেখি তো।
— এই যে।

ওর হাত থেকে আংটি টা নিয়ে আবার ওর আঙ্গুলেই পড়িয়ে দিলাম। আর তখনই উপর থেকে একটা কংকাল এসে নামলো আমাদের সামনে। প্রিয়ন্তি যেই জোরে এক চিৎকার মারলো। তবে খুব অবাক হলো কারন এতে লেখা আছে, প্রিয়ন্তি আমি তোমায় খুব ভালবাসি। ও শুধু এটা পড়ে আমার দিকে তাকালো আর আমি মাথা নাড়ালাম।ও চুপ হয়ে গেল।

— কি হলো কিছু বলবে না?
–( কোন কথা না বলেই আমায় মারতে শুরু করলো)
— আরে মারছো কেন?
— এইসব তোমার প্লেন তাই না।
— হুমম কারন তুমিই তো বললে ভিন্ন রকম প্রপোজ করতাম।
— তাই বলে, এমন করে। আরেকটু হলে তো আমি মারাই যেতাম।
— আর বলবে না এমন কথা। আমি যে তোমায় খুব ভালবাসি।
— জানি।
— ওই শুনো, সেই বৃদ্ধ লোকটার সাথে পরিচিত হবে না। এটা আমার বন্ধু রিজু।

তারপর রিজু আমাদের সামনে আসলো আর মুখের দাড়ি খুলল। ও সব কিছুতে অনেক অবাক হলো।আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,তুমি পারোও বটে।

এরপর এক সাথে তিনজন বসে খাওয়া দাওয়া করলাম। আসলে এই বাড়িটা অনেক খুজে বার করছি তবে যেহেতু এই এলাকা আমার চেনা তাই সমস্যা হয় নি। তাই সব ব্যবস্থা আগে থেকেই করে রাখছিলাম। এখন আমাদের বিদায়ের পালা।

আমি আর প্রিয়ন্তি এক বাইকে আর রিজু আরেক বাইকে উঠে যেতে লাগলাম।এই প্লেনটা আমি আর রিজু মিলেই বানাইছিলাম আর কাজও দিছে প্লেন টা।

*******************************************(সমাপ্ত)**************************************

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত