রান্নাঘর এর রানী

রান্নাঘর এর রানী

—আম্মু খেতে দাও..? পারবোনা ! তোর খাবার তুই নিজে নিয়েখা।

—আমি নিজে কেন নিয়ে খাবো। তুমি মেঘলাকে বল খাবার দেবার জন্য।

—আম্মু বল্ল আমি কেন মেঘলাকে বলতে যাবো তোর বউ তুই বল।

—আমি বল্লাম না আমি মেঘলাকে বলতে পরবোনা। যদি পার নিজে খেতে দাও আর তাও যদি না পারো তাহলে আমার ক্ষুধার্ত মূখের দিকে একটু করুনার নজরে তাকিয়ে মেঘলাকে বল আমাকে খাবার দিতে।

—এই বার মেঘলা নিজেই মূখ খুল্ল আহ্ কি যে কথা তাহার মনে হয় বিয়েটা আমি তাকে জোড় করেছি এখন তাহার সময় হয়েছে প্রতিশোদ নেবার তাই সুযোগে এর ফায়দা লুটছে।

—এই জন্য আমি আম্মুকে বলে ছিলাম এই মেঘলা নামের মেয়েকে আমি নিকাহ থুক্কু বিবাহ করিবোনা। বাঘে হরিনে এক ঘাটে পানি খেতে পারে কিন্তু সাপ আর বেজি কখনো এক সাথে থাকতে পারেনা। কিন্তু আমার আব্বু আর আম্মাজান এর কথা একটাই তাদের পছন্দ মতে বিবাহ করলে এই মেঘলাকে বিবাহ করতে হবে। কারন তাদের দেখা মেয়ের মধ্যে মেঘলা নাকি সবার চেয়ে রূপে গুনে বুদ্ধিমতীতে শ্রেষ্ঠ তাই বাদ্ধ হয়ে এই ফাজিল আর লাফাঙ্গা মেয়েকে বিয়ে করেছি সে দিন থেকে এই মেয়ে আমারে কথা কথায় সাপের মত ছোবল মারে আর আমি বেজির মত বিষ নিবারন এর জন্য গাছরা খুঁজি।

—তাহলে শোনেন আজকে মেঘলার সাথে আমার কি হয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই তার বাবার বাড়ি যাবার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে।

—আমি শুধু এই টুকুই বলেছি যে কিছু দিন আগেই তো ঘুরে আসলে আর কয়েক দিন যাক তার পর তোমাকে আমি নিজেই নিয়ে যাবো । মেঘলার একটাই কথা তাকে আজকে নিয়ে যেতে হবে আমি একটু মজা করে বলে ছিলাম যে আমি কার হুকুম এর দাস নাকি যে তুমি যা বলবে আমাকে তাই করতে হবে।

—মেঘলা বল্ল দেখি আজকে এই বাসায় তোমাকে কে সকালের নাস্তা আর দুপুরের খাবার খেতে দ্যায়।

—আমি বল্লাম কে দেবে তুমি আর আম্মু ছাড়া এই বাসায় অন্য কোন মহিলা আছে নাকি যে আমাকে খেতে দেবে।

—মেঘলা বল্ল যদি আজকে আমাকে না নিয়ে যাও তাহলে খাবার ও কপালে হবেনা। আর মনে করোনা
যে এই বাড়িতে শুধু বউ হয়ে এসেছি বউ এর মত থাকতে ।

—আমি বল্লাম তাহলে কি আপনি কাজের মেয়ের মত থাকতে এসে ছেন।

—মেঘলা বল্ল শুধু তোমার কাছে বউ এর থাকতে পারি। তবে আব্বু আম্মুর কাছে তাদের মেয়ের মতই আছি। আর আমিও কখনো তাদের আলাদা করে দেখিনি আর দেখবো ও না।

—আমি বল্লাম তোমার যেমন ইচ্ছা থাকো তবে আমাকে তোমার সাথে যেতে বলনা আর খাবার দিলে
বেশি খুশি হতাম ।

—মেঘলা বল্ল খাবার আজকে নিজেই রান্না করে খাবে।

—সব কিছুই তো শুনলেন এখন আপনারা বলেন আমি কি করবো।

— আমার প্রান প্রিয় পাঠক পাঠিকা একটু অপেক্ষা করেন আম্মু ডাকতেছে দেখি কপালে খাবার যোটে কিনা । আপনারা আবার আমাকে পেটুক মনে করিয়েন
না। আমি খুব হ্যাংলা একটা ছেলে। ওহ আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আম্মু আবার ডাক দিল যাই দেখি কি বলে ।

—হ্যা আম্মু বল্ল..?? শোন আমি তোর আব্বু আর মেঘলা আজকে মেলাদের বাসায় যাচ্ছি তুই রান্না করে খেয়ে নিস।

—আমি বল্লাম এই সবের মানে কি আম্মু বল্ল কোন মানে টানে নাই আজকে যাবো আর তিন দিন পরে আসবো । আম্মু এই কথা বলে চলে গেল রুমে।

—আমি আমাদের রুমে যেতেই মেঘলা বল্ল তুমি যদি নিয়ে যেতে তাহলে আর আজকে তোমার রান্না করে খেতে হতনা।

—আমি বল্লাম খুব ভাব মারতাছো মনেহয় আমি জীবনে কখনো নিজে রান্না করে খাইনি । আম্মু যখন নানুর বাসায় যেত তখন তুমি সাপের মতো উড়ে এসে
আমাকে রান্না করে দিয়ে যেতে ।

—মেঘলা বল্ল সাবধানে কথা বলবে ওই আমি সাপ হলে তোর সাথে এক সাথে থাকি কেমনে।
আজকের পর যদি কখনো আমাকে সাপ বলো তাহলে
তোমার অবস্থা বেগতিক করে দেবো মিস্টার ইমরান ইসলাম প্রেম ওরফে লিপজেল চোর।
—আমি আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে খাবার রুমে গিয়ে নিজেই খাবার নিয়ে খেতে শুরু করলাম।

—আম্মু খাবার রুমে এসে আমাকে বাসার চাবি দিয়ে বল্ল মাত্র তিন দিনইতো একটু ম্যনেজ করে নিস।

–আমি বল্লাম আমিও তোমাদের সাথে যাবো কি।
আম্মু বল্ল আমি কি জানি মেঘলাকে বলে দেখ।
আমি মেঘলার কথা শুনে একটু রাগি ভাব নিয়ে আর
জোড়ে শব্দ করে বল্লাম । বাসায় তিন দিন না লাগলে ৩ মাস রান্না করে খাবো তবুও কোনো নাগিনীকে অনুরোধ করবোনা।

—মেঘলা বল্ল আম্মু আপনি ওকে মানা করে দিয়েন আর যদি কখনো আমাকে নাগিনী বলে তাহলে সত্যি সত্যি কিন্তু আমি ওকে সায়েস্তা করবো ।
যেই দেখছে রান্না করা লাগবে এখন যত সব বাহানা সাথে যাবার।

—আমিও কম কিশে বল্লাম যাওতো যত্ত সব আজাইরা প্যাচাল।

—এখন বাসায় একা আছি আমার বউ মানে মেঘলা সাপ;আম্মু মানে আমার জগত জননী;আর আব্বু মানে
যে সবসময়ই বট গাছের মত আগলে রাখে তারা এই মাত্র বাসা থেকে বের হল।

—দুপুরে রান্না করে খেয়ে নিয়েছে ।
পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আপনারা আবার রাগ কইরেন না যে আপনাদের দাওয়াত দেয়া হয়নাই।

—আম্মু পৌঁছে আমাকে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে।

—এখন রাত ১২ টা বাজে আমি নিজেই মেঘলাকে ফোন দিলাম রিসিভ করেই বল্ল ফোন রাখ এখন আমি ঘুমাবো ।

—বাদ্ধ স্বামীর মত ফোন রেখে দিলাম। আমিও হারিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে।

—সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পরে আবার ঘুম। ঘুম ভাংল মেঘলার ফোনে রিসিভ করতেই
বল্ল এখনো উঠনাই যাও ওঠে নাস্তা করো ।

—আমি বল্লাম হুম যাবো হোটেল থেকে খেয়ে আসবো ফোনের ওই পাশে হোটেল এর নাম শোনা মাত্র একটা ক্লান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। আমি বল্লাম ফোন রাখা ।

—এখন বিকাল ৪টা বাজে দুপুরের রান্নাটা নিজেই করে ছিলাম সাথে রাতের টাও। এর মধ্যেই মেঘলার আম্মুর ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই বল্ল বাবা তুমি রাতে আমাদের এই খানে চলে এসো আমি তাকে অনেক করে বুজালাম যে আমি আসতে পারবোনা তার কথা একটাই রাতে যেন আমাকে তার বাসায় পায় । আমি বল্লাম ঠিক আছে আম্মু আসবো।

—এখন বাজে রাত ৮ আমি বাগেরহাট দড়াটানা ব্রিজের উপর আছি মানে বাইক থামালাম ফোন এসেছে পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখি মেঘলার ফোন রিসিভ করতেই বল্ল কোথায় আছো।

—আমি বল্লাম দড়াটানা ব্রিজে আছি । মেঘলা বল্ল ঠিক আছে সাবধানে আসো।

—এখন আমি মেঘলাদের বাসার বসার রুমে আছি
মেঘলা একবার এসেছিল কিন্তু কোথায় যে গেল খুজেই পাচ্ছিনা একেতো অনেক রাত হয়েছে তার উপর আবার খুদা আর ঘুম দুটই চেপে এসেছে।

—মেঘলার চাচাতো ভাই এর ডাক ভাইয়া খেতে আসেন। আমি বল্লাম তুমি যাও আমি আসতেছি….।

—আমি একটু পরেই চলে গেলাম খাবার খেতে ।মেঘলার আম্মু মানে শাশুড়ি মা বল্ল বাবা তুমি চেয়ারে বসো। আমি বাদ্ধ ছেলের মত খেতে বসে গেলাম।
তবে টেবিলে আরো অনেকেই ছিল।

—কিন্তু মেলার কোন খোঁজ খবর নেই । হটাত দেখলাম মেঘলা খাবার এর প্লেট হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে ঢুকলো।

— মেলার আম্মু মেঘলাকে বল্ল তোর অভ্যাস আর গেলনা। আমি মেঘলার দিকে তাকাতেই একটা চোখ টিপুনি দিল । আপনারাই বলেন এই মেয়ের সাহস কত একে তো ধারে কাছে আসবেনা দূর থেকে ফায়দা লুটবে।

–‘মেঘলার আম্মু বল্ল মেঘলা ইমরান এর প্লেটে খাবার তুলে দে মেঘলা সবার সামনেই বল্ল নিজের টা নিজে নিলেইতো পারে । উনি এখনো কচি খোকা নাকি যে খাবার তুলে দিতে হবে।

—এই বার মূখ খল্ল মেঘলার ছোট আম্মু মানে ছোট চাচি মেঘলাকে বল্ল বিয়ে হলে মেয়েদের অনেক কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে হয়। আর তুইতো দেখছি ইমরান এর সাথে উল্টা পাল্টা কথা বলতেছি।

—মেঘলা বল্ল ছোট আম্মু আমি চাই সবর সাথে মিলে মিশে থাকতে সবার সাথে মিলে মিশে থাকলেও শুধু পারিনা তার সাথে থাকতে । সে শুধু আমার সাথে রাগারাগি করে। মেঘলার চাচি বল্ল এইটাই হল সত্যি কারের ভালবাসা । মেঘলা বল্ল ভালবাসা না ছাই যদি আমাকে ভালই বাসতে তাহলে গ

সে গত দিন আমাদের সাথে আসতো কিন্তু সে কি করলো নিজে রান্না করে খাবে উনিতো মস্ত বর কুকার হয়ে গেছে ।

—মেঘলার বক বকানি শুন্তে শুন্তে আমার খাবার খাওয়া শেষ মেঘলার আম্মু বল্ল মেঘলার চুপচাপ ইমরান কে নিয়ে তোর রুমে যা আর যদি কখনো শুনি তুই রান্না নিয়ে কথা বলেছিস তাহলে সেই দিন বুঝবি আমি তোর কেমন মা । স্বামী কে সন্মান করতে সেখ।

—মেঘলা বল্ল সন্মান তো আমি করি তবে রান্না নিয়ে তার সাথে আমার একটা কোন্দল আছে সে যদি রান্না করে আমাকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে তার সাথে কখনো উল্টা পাল্টা কিছু করবোনা।

—মেঘলার চাচাতো ভাই বল্ল আপু তাহলে একটা কাজ কর দুলাভাই কেমন রান্না করে কালকেই এর একটা পরীক্ষা হয়ে যাক। মেঘলা বল্ল তুই ঠিক বলেছিস তবে রান্না করা হল মেয়েদের এক প্রকার ধর্ম তাই এই কাজ ছেলেরা যতই করতে চাক মেয়েদের সাথে কখনো পেরে উঠবেনা।

—আম্মু বল্ল মেঘলা তুই ইমরান কে নিয়ে রুমে যা। মেঘলা বল্ল চল রুমে যাই আমি চলে গেলাম রুমে ।
রুমে ঢুকতেই সেই একই কথা তাকে রান্না করে যদি হারাতে পারি তাহলে আমি যা বলবো সে তাই করবে তবে আমি কার কাছ থেকে কোন সাহায্য নিতে পারবোনা।

—মেঘলাকে বল্লাম ঠিক আছে রান্না টা না হয় বাসায় গিয়ে করবো । মেঘলা বল্ল না কালকেই করবে আর এই বাসাতে বসেই করবে।

—আমি বল্লাম তুমি কি চাও যে আমি সবার সামনে হেরে যাই । মেঘলা বল্ল রান্না করার আগেই হেরে যাবার কথা হা হা হা। যে কাজ করতে না পরবে তা নিয়ে কখনো প্রতিযোগীতা করোনা।

—আমি বল্লাম মেঘলা এখন ঘুমাও অনেক ক্লান্ত লাগছে সকালে এই বিষয়ে আমরা কথা বলবো শত হোক আমরা আমরাই তো। মেঘলা বল্ল ঠিক আছে ঘুমিয়ে পরেন তবে কালকে রান্না আপনাকে করতেই হবে । যদি না করেন তাহলে বাসার সবার কাছে আমি হেরে যাব।

—বুজতে আর বাকি নেই এই মেয়ে আমাকে ভালভাবে ফাঁসিয়েছে তাই রান্না মনেহয়
আমাকে করতেই হবে ।

—খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে আবার যখন ঘুমাতে গেলাম তখন থেকেই আবার শুরু হলো রান্না এর আলোচনা এক পর্যায়ে অন-ইচ্ছা সত্যেও বলে দিলাম যে রান্না করবো ।

—দেখলাম মোঘলা অনেক খুশি বুজতে পারলাম যে তার খুশির একটাই কারণ যে সে আমাকে দিয়ে রান্না করাবে।

—ঘুম আর হলনা হল শুধু প্রেমের আলাপন আপনারা আবার প্রেম মানে ওই প্রেম মনে করিয়েন না এইটা রান্না নামক প্রেম এর আলাপন।

—কিছু সময় পরে মেঘলা বেড থেকে উঠে চলে গেল।

—তার কিছু সময় পরে মেঘলা এসে বল্ল তারাতাড়ি উঠো সবাই নাস্তা করতে বসে গেছে। নাস্তা করে আব্বু আর ছোট আব্বুর সাথে বাজারে যাবে।

—আমি বল্লাম পাগলী নাকি তুমি আমি যাবো শশুড় দের সাথে বাজার করতে ।

—মেঘলা বল্ল অবশ্যই যাবে আমি বলছি তাই যাবে।

—নাস্তা করে আমি তাদের সাথে বাজারে গেলাম তাদের এত এত বাজার দেখে একবার জিজ্ঞেস করতে চেয়ে ছিলাম যে এত বাজার দিয়ে কি হবে পরক্ষণেই চিন্তা করলাম বাসায় গিয়ে মেঘলাকে জিজ্ঞেস করবো।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ বাসায় গিয়ে মেঘলাকে জিজ্ঞেস করতেই আমার মাথায় যেন ঘরের ছাদ ভেঙে পড়ার অবস্থা আজকে মেঘলার চাচাতো ভাইয়ের জন্মদিন তাই এত সব আয়োজন।

—কিন্তু ফাজিল মেয়েটা আমাকে কিছুই জানালোনা
শত হোক আমি তার দুলাভাই আমার কাছ থেকে সে জন্মদিন উপলক্ষে দামিকিছু পেতেই পারে।

—মেঘলাকে বল্লাম ছোটর জন্য কিছু কিনেছো
মেঘলা বল্ল তুমি চিন্তা করোনা আমি তার জন্য আগেই কিনেছি।

—মেঘলা বল্ল ধন্যবাদ তোমাকে, এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আর তোমাকে যেমন ভেবেছিলাম তার থেকে তুমি অনেকটা ভাল।

—আমি বল্লাম তুমি আমাকে নিয়ে মনে মনেও ভাব কত সৌভাগ্য বান আমি।

—মেঘলা বল্ল বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু চুপ চাপ চল রান্নটা করে ফেল।

—আমি বল্লাম একটা কাজ করি তুমি কিছু রান্না কর আর আমি কিছু করি তাহলে সময় কম লাগবে আর আমাদের কষ্ট ও কমবে।

—মেঘলা বল্ল ঠিক আছে তাই হবে ।

—কপাল আমার মাঝে মাঝে আম্মুর বাবুর্চি ছিলাম তাতে একটা আলাদা শান্তি ছিল। কিন্তু আজকে আমাকে এই মেঘলার জন্য এই বাসার সবার বাবুর্চি হতে হল।

—তবে আমার শাশুড়ি মা আমাকে অনেক বারই বারন করেছিল তবে মেঘলার জন্য শেষ অব্দি আর বারন টা মেনে নিতে পারিনাই বাদ্ধ হয়ে চল্লাম রান্না

ঘরে । যত সব কাটা কাটি ছিল সবটাই মেঘলা নিজেই করলো তবে রান্নটা শেষ অব্দি আমাকেই করতে হবে ।

—তবে পাঠক দের একটা কথা বলবলে রাখি আল্লাহর রহমতে রান্না আমি মোটামুটি করতে পারি তাই আপনারা মনের ভুলেও চিন্তা করবেন না যে আমি হেরে যাবো।

—এর মধ্যে মেঘলা একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেল্ল কাটা কাটি করতে গিয়ে নিজের হাতের আঙুল ও কেটে ফেলছে তাই বাদ্ধ হয়ে তার ভাগের রান্নটা ও আমি করলাম । আপনার আবার আমাকে পেশাদার কুক মনে কইরেন না।

—রান্না করা শেষ তবে সমস্যা একটাই মেঘলার হাত অনেক টাই কেটেছে ।এখন তাকে নিয়ে ছুটতে হবে ডাক্তার এর কাছে।

—মেঘলা চলো ডাক্তার এর কাছে যাবে…??আরে ডাক্তার এর কাছে যাওয়া লাগবেনা আম্মু মুভ মলম লাগিয়ে দিয়েছে। যাও তুমি গোসল করে আসো।

—আমি বল্লাম মেঘলা খুব বেশি কেটেছে ।

মেঘলা আমার ঘামে ভেজা শরীর আর ক্লান্ত মূখের দিকে তাকিযে বল্ল আজকে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেল্লাম তাইনা আমি বল্লাম আরে না কি এমন আর করলাম সামান্য রান্নাইতো করকরলাম।

—মেঘলা বল্ল আমি ভাল করেই জানি এটা সামান্য না
অসামান্য ছিল।

—একটা কথা না বলে আর পারছিনা আসলেই রান্না করা একটা ঝামেলার কাজ ।

—আপনার আম্মু হোক ;বোন হোক;বা বউ হোক তারা যখন রান্না করে তাদের একটাই চিন্তা থাকে যে তারা যে রান্না টা করছে তা যেন খাবার উপযোগী হয় ।
তবে অনেক সময় দেখা যায় রান্নায় সামান্য সমস্যা হলেই আমরা তাদের সাথে অনৈতিক আচরন করি ।

—আল্লাহর কসম লাগে একবার ওই মা বোন অথবা বউ এর স্থানে নিজেকে বসিয়ে চিন্তা করবেন যে ওই রান্না যদি আপনার হাতের হত তাহলে আপনার কেমন লাগতো । তারা কখনো চায়না রান্নটা খারাপ হোক।

–গল্পের মাঝে হয়তো অন্য কিছু আলোচনা করে ফেলেছি তাই আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

—আমি গোসল সেরে আসতেই মেঘলা বল্ল এত সময় লাগে চলো সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে এক সাথে খাবে বলে।

—টেবিলে বসতেই আম্মু মানে মেঘলার আম্মু সবাইকে খাবার পরিবেশন করে দিল সবাই খেতে শুরু করলেও
মেঘলার আর খাওয়া হচ্ছিল না খাবে কি ভাবে হাত তো কেটেছে আর চামিচ ও ধরতে পারেনা ।

–বাদ্ধ হয়ে হোক আর ভালবেসে হোক মেঘলাকে বল্লাম তুমি চাইলে আমার সাথে আমার প্লেটে এমন কি আমার হাতে খেতে পারো । শুনেছি স্বামী-স্ত্রী এক সাথে খাবার খেলে তাদের মধ্য প্রেম ভালবাসা বৃদ্ধি পায় আমার কথা শুনে সবাই এক নজর দেখে নিল।

—মেঘলা বল্ল আমিও তাই চেয়ে ছিলাম তবে সঙ্কোচ কাটিয়ে বলতে পারিনাই। তার পর আমি আর মেঘলা এক সাথেই খাবার খেলাম।

—খাবার খেয়ে সবাই অনেক প্রশংসা করলো তবে আমি মনে করি সবার প্রশংসা এর চাইতে মেঘলার মধ্যে যে অনন্দ আমি দেখেছি তার কোন জুড়ি নেই।

—আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বল্লাম রান্নাটা যতই আমি করিনা কেন এর সবটাই তো মেঘলার জন্য।

—হয়তো আজকে প্রথম আমার রান্না খেয়েছেন তাই আপনাদের কাছে ভাল লেগেছে।

—সবাই বল্ল হ্যা প্রথম হলেও রান্নটা সত্যি খুব ভালো হয়েছে। মেঘলা দের বাসার সবাই বল্ল সত্যি আমাদের মেয়ে পারেও বটে ভালোবেসে হোক আর ইমোশনাল হয়ে হোক শেষ অব্দি ওর কাঙ্খিত বিষয় টা ও হাসিল করে নিলোই।

—মেঘলা বল্ল চল রুমে যাই। মেঘলার সাথে রুমে গেলাম গিয়ে বল্লাম দেখিতে কতটা কেটেছে মেঘলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বল্ল যতটা না খত হয়েছে আমার হাতে তার চেয়ে বেশি খত হত আমার এই হৃদয়ে যদি আজকে আল্লাহ রহমতে তোমার রান্নটা ভাল না হতো । তবে বিশ্বাস কর আমি কখনো চাইনি তুমি হেরে যাওয়া আমি চেয়েছি আমার স্বামী জিতুক আর আল্লাহ আমার প্রার্থনা কবুল করেছে। তাই আজকে আমি অনেক খুশি আর আমি তোমার শালিদের সাথে বাজি লাগিয়ে তোমাকে দিয়ে রান্নাটা করিয়েছি ।

—মেঘলা বল্ল এখন ঘুমাও রাতে তো আবার ছোটর
জন্মদিন এর অনুষ্ঠান আছে ।

—ঘুম ভেঙ্গে গেল আছর এর আজান শুনে আমি উঠতে যাবো তখনি মেঘলা বল্ল আর একটু সময় থাকো তার পর উঠো আমি বল্লাম তুমি সত্যি একটা পাগলী আজান হয়েছে তা তুমি শুন্তে পাওনি মেঘলা বল্ল সরি আমি শুন্তে পাইনি।

—দুজনেই একসাথে উঠে ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলাম ।

—এখন আমারা যাচ্ছি ডাক্তার এর কাছে। আমি বাইকে চালাচ্ছি আর পিছন থেকে একটা মেয়ে আমাকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।

আপনাদের হয়তো বুজতে বাকিনাই এই মেয়ে কোন সাধারন মেয়ে না এই মেয়ে আমার আব্বু আম্মুর পছন্দ করা মেয়ে আর আমার বিবাহিতা বউ।

সত্যি বলতে ভালবাসা তখনি পূর্ণতা পায় যখন দুটি মনের মিলন হয়।

—মেঘলাকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

—মেঘলা যাদের সাথে বাজি লাগিয়ে আমাকে দিয়ে রান্নাটা করিয়েছে তাদের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল তারা আমার করা রান্না না খেয়েই আমার গুনগান

শুরু করেছে তাও আবার মেঘলার কথায় আর আমিও বা কম কিসে তাদের সাথে একটু আড্ডা দিলাম। তবে টপিক একটাই বউ হতে হবে রান্নাঘর এর রাণী।

☆আপনাদের অনেকর মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে রান্না যদি আমি নিজেই করলাম তাহলে গল্পের নাম কেন রান্নাঘর এর রাণী দিলাম ।

আমরা সবসময় একটা কথা বলে থাকি আমার এই  অগোছালো জীবনকে গোছাতে এমন একজন কে চাই যে আমার জীবন টাকে গোছাবে।

আর মেয়েরা বলে যে তারা শুধু নিজেরাই সাঝেনো ভালবাসার রং দিয়ে রং হীন অগোছালো একটা  ছেলের জীবনকে রঙ্গিন করে তুলে।

■তাহলে এই বার আপনারাই বলেন আপনার বাসার মেয়ে লোকরা কেন রান্নাঘর এর রাণী হবেনা। যেখানে মেয়েরা আপনার আমার জন্য রান্না করে  এমন কি আপনাকে আমাকে রান্নার অনুপ্রেরণা  দিয়ে থাকে।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত