এস.এস.সির টেস্ট পরিক্ষা ক’দিন বাদেই।তাই সন্ধ্যার পর সহজেই বাসা থেকে বেরুতে পারতাম না।কারফিউ টাইপ সিচুয়েশন।মাকে বললাম,”আম্মু সাহাদদের বাসায় যাচ্ছি, আমার একটা বই ওর কাছে,নিয়ে আসি।”
–
-তাড়াতাড়ি আসবি।দেখিস,পথে আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ না দেখিস!
-আচ্ছা!
–
ওদিকে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে লুকিয়ে আসিফের কাছ থেকে কেনা চায়না ব্রান্ডের চার’শ টাকার মোবাইলটাতে একের পর এক কল দিচ্ছিল মাহা।
–
আজ আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ।প্ল্যানটা হুট করেই হয়েছে।ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি সবে দুইমাস পেরিয়েছে।সকালের দিকটায় হুট করেই ও বলল আজ আমাদের বাড়ির দিকে আসো,তোমাকে দেখব।মোবাইল ইউজ করি বাসার কেউ জানেনা,তাই রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি জেগে জেগে ও’টাতে চার্জ দিতাম আর ওর সাথে মেসেজ করতাম।প্রেমের তিনটা ধাপের মধ্যে মানসিক দিক দিয়ে এটাই সবচেয়ে উপভোগ্য সময়।সবকিছুই স্বপ্ন মনে হয়।এই যেন নিত্য পৃথিবীর অনিত্য মহাঘোর!
–
যাইহোক,রাত জাগাতে আমার বেশ ঘুম পাচ্ছিল।মাহাকে বললাম,সকালটা ঘুমাবো।বিকেল নয়তো সন্ধায় আসছি তোমাদের বাসায়।
–
আম্মুর কাছ থেকে বেরিয়েই ওর কল রিসিভ করলাম।
-এ্যাই,এতক্ষণ কোন ঘোড়ার ঘাস কাটছিলা যে,কল রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগল?
-আরেহ,ঘোড়া-টোড়া না,পাশে আম্মু ছিল তাই রিসিভ করতে পারিনি।
-হুম,যাইহোক, বিকেল আর নাই,তুমি মাগরিবের নামাজটা পড়ে এসো,ভাইয়ারা,আর আম্মু-আব্বু কেউ নেই,তুমি আমাদের বাড়ির পেছনের পুকুর ঘাটটায় বসিও,ভয় পেওনা যেন,আমার আসতে লেইটও হতে পারে।
-আচ্ছাহ!
-দাও,এইবার একটা আদর দাও।
–
আমি আলতো করে চুমু খেলাম মোবাইলের মাউথ স্পিকার বরাবর।
–
নামাজ পড়ে বেরিয়েছি।পাগুলো যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে অজানা উৎকণ্ঠায়।অকারণে গলা ধরে আসছিল।নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি মারাত্মকভাবে।তারপরও যেন পারছিনা।
–
ভয়ে ভয়ে পুকুর ঘাটটায় গিয়ে বসলাম।মিনিট পাঁচেক পরেই হাল্কা অন্ধকার গলিয়ে ছায়ামূর্তি সমেত সে এগিয়ে এলো আমার সামনে।কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি যেন পাথর!মুখ দিয়ে তো নয়ই,শরীরের অসংখ্য লোমকূপ বেয়েও কোন কিচ্ছু বেরুচ্ছেনা।চিন্তা করছিলাম কিসে আমি স্তব্ধ?
–
গত শুক্রবারের বয়ানে, মওলানা সাহেব হুর নিয়ে বলেছিলেন,হুর শব্দটি একটা চরিত্রকে বিশেষিত করে যে চরিত্রের ডাগর এবং বড় সুন্দর দুটি চোখ আছে, ঘন কালো ভ্রু বা চোখের পাতা এবং যার শরীরের রঙ হবে উজ্জ্বল সাদা।
সিদ্ধান্তে আসলাম,মাহার মাঝে আমি হুর দেখেছি,ডাগরডাগর চোখজোড়া এই হাল্কা অন্ধকারেও কেমন যেন স্পষ্ট লাগছিল,আর গায়ের রংটাও যেন আলো ছড়াচ্ছিল।
–
মিনিট খানেক দুজন দুজনের দিকে বাকরুদ্ধ চেয়ে থাকলাম।হঠাৎ ও বলে উঠল,কি দেখ?
আমি বললাম, না,কিছু না।
ও বলল, আসো ঘাটে বসি। তোমার চশমা কই?
-বিকেল ঘুম থেকে উঠে চশমা পাইনি,বাসায় ইলেক্ট্রিসিটিও ছিল না,তাই চশমা না পেয়েই চলে আসলাম।
–
আমি এগিয়ে ঘাটের একপাশ চেপে বসলাম।মাহার জন্য ঘাটের বড় একটা অংশ খালি রাখলাম।সে ওখানে বসল না।বসল,আমার দিকটায় একটু চেপে।আমার অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল,জীবনে এই প্রথম রক্তের সম্পর্কহীন কোন নারীর উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করছিলাম।দুজন নিশব্দে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।শরৎকাল চলছে,উজ্জ্বল জ্যোৎস্না ফোটে রাতের অন্ধকার জুড়ে বসতেই।মাথার উপরের জারুলগাছগুলোর ডাল গলে ছড়ানো-ছিটানো আলো আসছিল,আমাদের গায়ে।আলোর একটি সরু রেখা তার কপাল বরাবর পড়ল।সেখানটায় একটা লাল রঙা টিপ দেখা যাচ্ছে।রাতের প্রকৃতি পুরোটাই সাদাকালো,কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমি তার লাল টিপ দেখলাম।উত্তেজিত অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক নানা অদ্ভুত আচরণ করে,আমারো হয়তো তেমনি হয়েছিল।যে মেয়েটার সাথে মোবাইল ফোনে কথার খই ফোটাতাম,তার সামনেই আমি নিজেকে বোবা,জড় পদার্থ হিসেবে আবিষ্কার করলাম।মাহারও হয়তো ওইরকম ফিলিংসই হচ্ছিল,আমার মতো সেও চুপ।
–
নিরবতা আমি ভাঙালাম না,সে’ই ভাঙাল।
-কি,চুপ করে আছ কেন?
-কি বলব?
-চুপ করে থাকার জন্যিই কি এখানে এসেছ?
-কই,আমি তো আসব বলিনি-তুমিই তো আসতে বলেছ?
-তো,এখন কি চলে যাবা?
-জানিনা।
–
আবারো দুজন নিরব।সে বসেছিল আমার ডান পাশে।কিছুক্ষণ পর হুট করেই মাহা আমার ডান হাতটায় তার বাঁ হাত রাখল।অজানা উত্তেজনায় আমি শিউরে উঠলাম।আমি তার হাতটা সরাতে চেষ্টা করলাম,নিজের হাতের উপর থেকে।যত সরাতে চাচ্ছিলাম,সে ততো চেপে ধরছিল।বাকরুদ্ধ আমি কিছুই করতে পারছিলাম না।
–
ও হাত ছেড়ে দিল।
-ফারাজ,সবাই মনে হয় বাসায় চলে এসেছে।শুনলাম,কেউ যেন আমাকে ডাকছে।
আমি বললাম,কই,আমি তো শুনিনি?
মাহা বলল,তুমি বসো। আমি দেখে আসি।
দশ মিনিট পেরিয়ে গেল।ও ফিরে আসছেনা দেখে আমার উৎকণ্ঠা বাড়ছিল।আরো কিছু সময় সে ফিরে এলো একটা শাড়ি পড়ে।সতেরো বছরের আমার,তার সেই রুপের মাহাত্ম্য ধরার ক্ষমতা ছিলনা।আমি শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
–
মাহা- শাড়িটা আম্মুর।সবুজ রঙের। একদিন তুমি বলছিলানা,তোমার মামার বিয়েতে সবুজ শাড়ি পড়া কোন মেয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলা? তাই আমি এটা পড়েছি।তাকাও?আমাকে দেখ?তোমার ফেভারিট লাল কালারে লিপ্সটিকও লাগিয়েছি ঠোঁটে।আমাকে কেমন লাগছে বলো?
আমি একটি শব্দই উচ্চারণ করলাম,’ভালো’।
–
এখন বুঝি,এই একটিমাত্র শব্দে পাহাড়সম সৌন্দর্য আমি বর্ণনা করেছিলাম সেদিন।
–
সূর্য তাঁতে, জ্যোৎস্না কি তাঁতে?সেদিন আমার মনে হয়েছিল জ্যোৎস্নাও তেঁতেছে।স্পষ্ট দুজন দুজনকে দেখছিলাম।উজ্জ্বল জ্যোৎস্নাতে দুজন ছোট্ট সুপুরি বাগান জুড়ে হাঁটছিলাম।
–
একটা গাছের গোড়ায় বসলাম আমরা।মাঝ বয়সী গৃহিনীর মতো মাহা নিজের শাড়ি সামলিয়ে আমার গা ঘেঁষে বসল।এইবার আমি তার শরীরের উষ্ণতাও অনুভব করলাম।
–
কিছুক্ষণ চলল,গত হওয়া কিছু সুন্দর দিনের স্মৃতিচারণ।তারপর দুজন আরো কাছে আসলাম।একসময় সে আমাকে জড়িয়ে ধরল গভীর আবেশে।আমার হাতজোড়া ঝুলছে।আমি তাকে ধরে নেই।সে ছোট্ট করে বলল,”লাভ ইউ ফারাজ”
পাঁচ সেকেন্ড মতো চললো সেই পর্ব।
–
আমার চোখবেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল।এই জলের উৎপত্তি কিসে,তা আমার জানা নেই।তারপরও গলগল করে জল গড়িয়ে পড়ছিল আমার চোখজোড়া থেকে।কোথথেকে যেন বেলী ফুলের ঘ্রাণ আসছিল,সাথে মৃদু বাতাশ,উজ্জ্বল জ্যোৎস্না।আমার মনে হলো প্রকৃতিই যেন উদযাপন করছে,আমাদের এই প্রেমপবিত্রতা।সেদিন পূর্ণিমারাত ছিল।
–
মাহা তো ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে সাত বছর আগেই পৃথিবী ছেড়েছে।আমি এখনো ছাড়তে পারিনি উজ্জ্বল জ্যোৎস্না, মৃদু বাতাশ,বেলী ফুলের ঘ্রান।যদিও ঘ্রাণটা এখনকিছুটা ফিকে হয়েছে।প্রতি পূর্ণিমাতেই আমি মাহার অপেক্ষায় থাকি,হয়তো কোন এক রাতে সে ফিরে আসবে,আর গভীর আবেশে জড়িয়ে ধরে বলবে,” লাভ ইউ ফারাজ”
–
-তাড়াতাড়ি আসবি।দেখিস,পথে আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ না দেখিস!
-আচ্ছা!
–
ওদিকে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে লুকিয়ে আসিফের কাছ থেকে কেনা চায়না ব্রান্ডের চার’শ টাকার মোবাইলটাতে একের পর এক কল দিচ্ছিল মাহা।
–
আজ আমাদের প্রথম সাক্ষাৎ।প্ল্যানটা হুট করেই হয়েছে।ওর সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছি সবে দুইমাস পেরিয়েছে।সকালের দিকটায় হুট করেই ও বলল আজ আমাদের বাড়ির দিকে আসো,তোমাকে দেখব।মোবাইল ইউজ করি বাসার কেউ জানেনা,তাই রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আমি জেগে জেগে ও’টাতে চার্জ দিতাম আর ওর সাথে মেসেজ করতাম।প্রেমের তিনটা ধাপের মধ্যে মানসিক দিক দিয়ে এটাই সবচেয়ে উপভোগ্য সময়।সবকিছুই স্বপ্ন মনে হয়।এই যেন নিত্য পৃথিবীর অনিত্য মহাঘোর!
–
যাইহোক,রাত জাগাতে আমার বেশ ঘুম পাচ্ছিল।মাহাকে বললাম,সকালটা ঘুমাবো।বিকেল নয়তো সন্ধায় আসছি তোমাদের বাসায়।
–
আম্মুর কাছ থেকে বেরিয়েই ওর কল রিসিভ করলাম।
-এ্যাই,এতক্ষণ কোন ঘোড়ার ঘাস কাটছিলা যে,কল রিসিভ করতে এতক্ষণ লাগল?
-আরেহ,ঘোড়া-টোড়া না,পাশে আম্মু ছিল তাই রিসিভ করতে পারিনি।
-হুম,যাইহোক, বিকেল আর নাই,তুমি মাগরিবের নামাজটা পড়ে এসো,ভাইয়ারা,আর আম্মু-আব্বু কেউ নেই,তুমি আমাদের বাড়ির পেছনের পুকুর ঘাটটায় বসিও,ভয় পেওনা যেন,আমার আসতে লেইটও হতে পারে।
-আচ্ছাহ!
-দাও,এইবার একটা আদর দাও।
–
আমি আলতো করে চুমু খেলাম মোবাইলের মাউথ স্পিকার বরাবর।
–
নামাজ পড়ে বেরিয়েছি।পাগুলো যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে অজানা উৎকণ্ঠায়।অকারণে গলা ধরে আসছিল।নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি মারাত্মকভাবে।তারপরও যেন পারছিনা।
–
ভয়ে ভয়ে পুকুর ঘাটটায় গিয়ে বসলাম।মিনিট পাঁচেক পরেই হাল্কা অন্ধকার গলিয়ে ছায়ামূর্তি সমেত সে এগিয়ে এলো আমার সামনে।কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি যেন পাথর!মুখ দিয়ে তো নয়ই,শরীরের অসংখ্য লোমকূপ বেয়েও কোন কিচ্ছু বেরুচ্ছেনা।চিন্তা করছিলাম কিসে আমি স্তব্ধ?
–
গত শুক্রবারের বয়ানে, মওলানা সাহেব হুর নিয়ে বলেছিলেন,হুর শব্দটি একটা চরিত্রকে বিশেষিত করে যে চরিত্রের ডাগর এবং বড় সুন্দর দুটি চোখ আছে, ঘন কালো ভ্রু বা চোখের পাতা এবং যার শরীরের রঙ হবে উজ্জ্বল সাদা।
সিদ্ধান্তে আসলাম,মাহার মাঝে আমি হুর দেখেছি,ডাগরডাগর চোখজোড়া এই হাল্কা অন্ধকারেও কেমন যেন স্পষ্ট লাগছিল,আর গায়ের রংটাও যেন আলো ছড়াচ্ছিল।
–
মিনিট খানেক দুজন দুজনের দিকে বাকরুদ্ধ চেয়ে থাকলাম।হঠাৎ ও বলে উঠল,কি দেখ?
আমি বললাম, না,কিছু না।
ও বলল, আসো ঘাটে বসি। তোমার চশমা কই?
-বিকেল ঘুম থেকে উঠে চশমা পাইনি,বাসায় ইলেক্ট্রিসিটিও ছিল না,তাই চশমা না পেয়েই চলে আসলাম।
–
আমি এগিয়ে ঘাটের একপাশ চেপে বসলাম।মাহার জন্য ঘাটের বড় একটা অংশ খালি রাখলাম।সে ওখানে বসল না।বসল,আমার দিকটায় একটু চেপে।আমার অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল,জীবনে এই প্রথম রক্তের সম্পর্কহীন কোন নারীর উষ্ণ নিশ্বাস অনুভব করছিলাম।দুজন নিশব্দে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।শরৎকাল চলছে,উজ্জ্বল জ্যোৎস্না ফোটে রাতের অন্ধকার জুড়ে বসতেই।মাথার উপরের জারুলগাছগুলোর ডাল গলে ছড়ানো-ছিটানো আলো আসছিল,আমাদের গায়ে।আলোর একটি সরু রেখা তার কপাল বরাবর পড়ল।সেখানটায় একটা লাল রঙা টিপ দেখা যাচ্ছে।রাতের প্রকৃতি পুরোটাই সাদাকালো,কিন্তু অদ্ভুতভাবে আমি তার লাল টিপ দেখলাম।উত্তেজিত অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক নানা অদ্ভুত আচরণ করে,আমারো হয়তো তেমনি হয়েছিল।যে মেয়েটার সাথে মোবাইল ফোনে কথার খই ফোটাতাম,তার সামনেই আমি নিজেকে বোবা,জড় পদার্থ হিসেবে আবিষ্কার করলাম।মাহারও হয়তো ওইরকম ফিলিংসই হচ্ছিল,আমার মতো সেও চুপ।
–
নিরবতা আমি ভাঙালাম না,সে’ই ভাঙাল।
-কি,চুপ করে আছ কেন?
-কি বলব?
-চুপ করে থাকার জন্যিই কি এখানে এসেছ?
-কই,আমি তো আসব বলিনি-তুমিই তো আসতে বলেছ?
-তো,এখন কি চলে যাবা?
-জানিনা।
–
আবারো দুজন নিরব।সে বসেছিল আমার ডান পাশে।কিছুক্ষণ পর হুট করেই মাহা আমার ডান হাতটায় তার বাঁ হাত রাখল।অজানা উত্তেজনায় আমি শিউরে উঠলাম।আমি তার হাতটা সরাতে চেষ্টা করলাম,নিজের হাতের উপর থেকে।যত সরাতে চাচ্ছিলাম,সে ততো চেপে ধরছিল।বাকরুদ্ধ আমি কিছুই করতে পারছিলাম না।
–
ও হাত ছেড়ে দিল।
-ফারাজ,সবাই মনে হয় বাসায় চলে এসেছে।শুনলাম,কেউ যেন আমাকে ডাকছে।
আমি বললাম,কই,আমি তো শুনিনি?
মাহা বলল,তুমি বসো। আমি দেখে আসি।
দশ মিনিট পেরিয়ে গেল।ও ফিরে আসছেনা দেখে আমার উৎকণ্ঠা বাড়ছিল।আরো কিছু সময় সে ফিরে এলো একটা শাড়ি পড়ে।সতেরো বছরের আমার,তার সেই রুপের মাহাত্ম্য ধরার ক্ষমতা ছিলনা।আমি শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
–
মাহা- শাড়িটা আম্মুর।সবুজ রঙের। একদিন তুমি বলছিলানা,তোমার মামার বিয়েতে সবুজ শাড়ি পড়া কোন মেয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলা? তাই আমি এটা পড়েছি।তাকাও?আমাকে দেখ?তোমার ফেভারিট লাল কালারে লিপ্সটিকও লাগিয়েছি ঠোঁটে।আমাকে কেমন লাগছে বলো?
আমি একটি শব্দই উচ্চারণ করলাম,’ভালো’।
–
এখন বুঝি,এই একটিমাত্র শব্দে পাহাড়সম সৌন্দর্য আমি বর্ণনা করেছিলাম সেদিন।
–
সূর্য তাঁতে, জ্যোৎস্না কি তাঁতে?সেদিন আমার মনে হয়েছিল জ্যোৎস্নাও তেঁতেছে।স্পষ্ট দুজন দুজনকে দেখছিলাম।উজ্জ্বল জ্যোৎস্নাতে দুজন ছোট্ট সুপুরি বাগান জুড়ে হাঁটছিলাম।
–
একটা গাছের গোড়ায় বসলাম আমরা।মাঝ বয়সী গৃহিনীর মতো মাহা নিজের শাড়ি সামলিয়ে আমার গা ঘেঁষে বসল।এইবার আমি তার শরীরের উষ্ণতাও অনুভব করলাম।
–
কিছুক্ষণ চলল,গত হওয়া কিছু সুন্দর দিনের স্মৃতিচারণ।তারপর দুজন আরো কাছে আসলাম।একসময় সে আমাকে জড়িয়ে ধরল গভীর আবেশে।আমার হাতজোড়া ঝুলছে।আমি তাকে ধরে নেই।সে ছোট্ট করে বলল,”লাভ ইউ ফারাজ”
পাঁচ সেকেন্ড মতো চললো সেই পর্ব।
–
আমার চোখবেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল।এই জলের উৎপত্তি কিসে,তা আমার জানা নেই।তারপরও গলগল করে জল গড়িয়ে পড়ছিল আমার চোখজোড়া থেকে।কোথথেকে যেন বেলী ফুলের ঘ্রাণ আসছিল,সাথে মৃদু বাতাশ,উজ্জ্বল জ্যোৎস্না।আমার মনে হলো প্রকৃতিই যেন উদযাপন করছে,আমাদের এই প্রেমপবিত্রতা।সেদিন পূর্ণিমারাত ছিল।
–
মাহা তো ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে সাত বছর আগেই পৃথিবী ছেড়েছে।আমি এখনো ছাড়তে পারিনি উজ্জ্বল জ্যোৎস্না, মৃদু বাতাশ,বেলী ফুলের ঘ্রান।যদিও ঘ্রাণটা এখনকিছুটা ফিকে হয়েছে।প্রতি পূর্ণিমাতেই আমি মাহার অপেক্ষায় থাকি,হয়তো কোন এক রাতে সে ফিরে আসবে,আর গভীর আবেশে জড়িয়ে ধরে বলবে,” লাভ ইউ ফারাজ”
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক