–অনি অনি অনি
–কি হলো? এতো ডাকছো কেনো?
–আচ্ছা তোমার নাম কি?
–তোমাকে কি এমনি এমনি গাঁধা বলি? নাম ধরেই ডাকলে, অথচ নাম জিজ্ঞেস করছো।
–কথা বলতে ইচ্ছে করছে তো।
–সারাদিনই তো বলো, তবু মন ভরে না?
–না। একটু এদিকে আসবে?
–এখন না, হাতে অনেক কাজ।
–আরে আরে, শুনো, যাব বাবা।
.
আমাদের পরিচয় টাই তো দেওয়া হলো না।
আমি সিহাব, সল্প বেতনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি।
আর এতোক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম সে হলো আমার মিষ্টি বউ অনি।
৬ মাস আগে পারিবারিক ভাবেই আমাদের বিয়েটা হয়।
কিন্তু চাকরির সুবাদে পরিবার ছেড়ে অনেক দুরে থাকতে হয়।
সুখে দুঃখে দুজনের দিনগুলো ভালোই চলছে।
আজ ছুটির দিন, তাই আমার প্রধান কাজ হলো অনি কে বিরক্ত করা।
তাহলে কাজে লেগে পড়ি।
.
–অনি
–তুমি রান্না ঘরে কেনো? বের হও।
–গেলে কিন্তু আর আসবো না।
–ঠিক আছে, ওখানে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকো।
–না, আমি তোমার সাথে কথা বলবো।
–এখন কোন কথা না, একটু পর টেবিলে নাস্তা দিবো, ওখানে যতো খুশি বলিও। কাজের সময় কোন কথা না।
–ধুর থাকবোই না।
–আরে কই যাও?
–চলে যাচ্ছি, তোমায় আর বিরক্ত করবো না। করো কাজ।
–এই যেওনা,শুনো, সিহাব, কথা বলবো আসো।
.
চুপচাপ ভাব নিয়ে রুমে চলে আসি।
জানি একটু পর এসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে,
কিছুক্ষন পর….
–সিহাব
–কি হইছে?
–রাগ করছো?
–কেনো? রাগ করার মতো কি আর মানুষ নাই? যে তোমার উপরই রাগ করতে হবে। বিরক্ত করোনা তো যাও।
–(কেঁদে দিলো) এমন করে বলোনা প্লিজ? অনেক কষ্ট লাগে, আমি তোমাকে বিরক্ত করছি?
–হুম, যাও।
–আর কখনো এমন করবো না, তুমি যা বলবে তাই করবো। তবু এমন করো না প্লিজ।
–উফ, যাও তো।
–(হঠ্যাৎ জড়িয়ে ধরে কাদতে থাকে) আর কখনো এমন করবো না, আমায় ক্ষমা করে দাও।
–(একটু বেশি করে ফেলছি, যার কারনে কেঁদেই দিলো) এই পাগলি কাদছো কেনো?
–(জড়িয়ে ধরে কাঁদতেই থাকে)
–এই পাগলি, আমিতো দুষ্টুমি করছিলাম।
–কিহ? তারমানে আমাকে শুধু শুধু কাদালে। যাও তোমার সাথে কথা নাই।
–এহ, বললেই হলো?
–হুম হলো, (উঠে চলে গেলো)
.
মেয়েটা আমায় খুব ভালোবাসে।
একটু রাগ করলে রাগ ভাঙাতে যা তা করতে পারে।
নাস্তার টেবিলে গিয়ে দেখি বসে আছে।
আমাকে দেখে নিজের নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে গিয়ে দরজা ধুম।
মানে যাকে বলে মুখের উপর দরজা বন্ধ।
সত্যিটা বলে তো ভুল করে ফেললাম।
নাস্তা তো নিয়ে গেছে, তাহলে সমস্যা নাই।
টেবিলে গিয়ে চুপচাপ নাস্তাটা সেরে ফেলি।
কিন্তু অনেক্ষন হয়ে যাওয়ার পরও বউয়ের খবর নাই।
.
–অনি
–(চুপ)
–অনিইইইই
–ওই গাঁধা, চেঁচাচ্ছ কেনো?
–বাহিরে আসো না বউ।
–না আসবো না।
–সরি অনি, প্লিজ বাহিরে আসো।
–না আসবোনা। নিজের কাজে মন দাও।
–রান্না করবে না?
–না, দরকার হলে নিজে রান্না করে খাও।
–আচ্ছা।
.
রান্না ঘরে এসে ২০ মিনিট বসে বসে ভাবলাম রান্না কিভাবে করে।
কিন্তু আমিতো রান্নাই করতে পারি না।
তাই এসে বসে বসে টিভি দেখি।
দুপুর হয়ে গেলো, কিন্তু বউ রুম থেকে বের হলো না।
আসলেই কি রাগ করলো?
ইস, কোন দুঃখে যে সত্যিটা বলতে গেলাম।
এখন রাগ ভাঙাবো কি করে?
–দরজায়(টুক টুক টুক)
–কে?
–এই বাড়িতে তোমার জামাই ছাড়াতো আর কেউ থাকে না।
–কি চাই?
–বাহিরে আসো।
–না।
–সত্যিতো?
–হুম
–এখন যদি আমার কিছু একটা হয় তবুও না? (বলতে দেরি,দরজা খুলতে দেরি হলো না)
–কি বললা তুমি?
–বাহিরে আসছো কেনো?
–কি বলছিলা? আবার বলোতো।
–(বললেই এখন আমার গলা টিপে ধরবে) কিছু বলিনি তো।
–একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো।
–কষ্ট করে তোমাকে মারতে হবে না, আমি ছাদে যাচ্ছি মরতে।
–না, (জড়িয়ে ধরলো) এসব কি বলছো তুমি? তোমার কিছু হলে আমি বাচবো কি করে?
–কেনো? তুমিতো আমাকে বেশ আছো।
–তুমি আসলেই একটা গাঁধা, আমি যে রাগ করছি সেটা বুঝোনা? তুমি খুব খারাপ। একটুও আমার রাগ ভাঙাতে আসো নি।
–একটা সত্যি কথা বলি?
–হুম
–যখন আমার উপর রাগ করে কথা বলো না, তখন খুব কষ্ট লাগে, কিভাবে রাগ ভাঙাবো আমার মাথায় আসে না।
–সত্যিই তুমি একটা গাঁধা, কিন্তু এই গাঁধাটাকে এত্তোগুলা ভালোবাসি।
–আমিও এত্তোগুলা ভালোবাসি।
–খাবে চলো।
–রান্নাতো করোনি।
–আমি তোমার মতো গাঁধা না, আগেই রান্না করে ফ্রিজে রেখে দিছি?
–জামাইকে কেউ গাঁধা বলে?
–আমি বলি, চলো।
.
দুজনে একসাথে খাবার খাই।
সারা বিকাল দুজন গল্প-গুজব করে কাটাই।
আস্তে আস্তে রাত হয়ে যাই।
দুজন একসাথে বসে বসে টিভি দেখি।
আমার টিভি দেখার স্টাইল টাই অন্যরকম।
অনির কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখি।
.
–অনি
–বলো
–তুমি কি সিগারেট খাও?
–কিহ? আমি একটা মেয়ে, এটাতো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করবো।
–ও, করো।
–তুমি এতো বোকা বোকা কথা বলো কেনো? আমিতো জানিই তুমি সিগারেট খাও না।
–একটা পাপ্পি দিবা?
–এখন কিচ্ছু না, অনেক রাত হয়েছে, খাবে এসো।
–পরে হলেও দিতে হবে কিন্তু।
–আচ্ছা দিবো, এখন আসো।
–আচ্ছা চলো।
দুজন একসাথে খাই, খাওয়া শেষ করে ঘুমাতে চলে যাই।
প্রায় ১৫ মিনিট পর অনি আসে।
.
–এতোক্ষন লাগে?
–সবকিছু গুছিয়ে তারপরই তো আসতে হলো।
–জানো না? তোমাকে ছাড়া যে আমার ঘুম আসে না।
–হইছে, আর ঢং দেখাতে হবে না। যাও শুয়ে পড়ো, এতো পায়চারি করতে হবে না।
–হুম তুমিও আসো।
–পাগল একটা। তোমার এই পাগলামি গুলো আমাকে খুব টানে।
খুব ভালোবাসি আমার পাগল টাকে।
–এহ, আমি যেনো বাসি না? আমিও বাসি, খুব।
–হু জানি, শুয়ে পড়ো না এবার, এসো।
–হুম
(————-)
–আজ আমি খুব কষ্ট পাইছি। এমন মিথ্যে রাগ কেনো দেখালে?
–সরি
–না লাগবে না সরি।
–সরি তো।
–হু
–অনি
–বলো
–আই লাভ ইউ
–আই লাভ ইউ টু
–তোমার এতো রাগ কেন?
–জানিনা।
–পাগলি
–খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো।
–আচ্ছা ঘুমাও।
–আরো এদিকে আসো।
–কেনো?
–আসতে বললাম না।
–আসছি তো। শুধু রাগ দেখায়।
–(শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো) এবার তুমি জড়াই ধরো।
–তুমি ধরছো না, আমার ধরা লাগবে না।
–৩ পর্যন্ত গুনবো। ১……..২……..
–ধরছি ধরছি,
–এবার ঘুমাও
–জড়াই না ধরলে তোমার ঘুম আসে না কেনো?
–জানিনা।
–আমি যখন থাকবো না, তখন কি করবা?
–না না না, এসব কেনো বলো তুমি? তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। কেনো বলো এগুলা? আমি মরেই যাবো।(আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা মেয়েদের মতো কাঁদতে থাকে)
–এই পাগলি, তোমাকে ছেড়ে আমি কোথায় যাবো? ঘুমাও(মাথায় হাত বুলিয়ে দেই)
.
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকে।
খুব মায়াবী লাগছিলো, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকি। আস্তে করে ওর কপালে একটা পাপ্পি দিয়ে দেই।
আর ওমনি চোখ মেলে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।
একটা মুচকি হাসি দিয়ে জোরে একটা পাপ্পি দেয়।
আবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে।
আস্ত পাগল একটা মেয়ে।
আমি জড়িয়ে না ধরলে নাকি ওর ঘুম আসে আসে না।
শক্ত করে বউটাকে জড়িয়ে ধরি।
বউটা হঠ্যাৎ কেঁদে ওঠে।
–কি হলো অনি?
–আমাকে কতটা ভালোবাসো সিহাব?
–এত্তোটা ভালোবাসি।
–না ভালোবাসো না। অনেকক্ষণ হলো আমার ঘুম আসছে না, তুমি ঘুম পাড়াই দিছো?
–ভালোবাসি তো।
–আমাকে ঘুম পাড়াই দাও, আর হ্যা, এভাবে বুকে আগলে রাখবা।
–ও এই ব্যাপার? ঠিক আছে, আমি চুলে বিনি কেটে দিচ্ছি, তুমি ঘুমাও।–আচ্ছা।
.
আস্তে আস্তে ওর চুলে বিনি কেটে দেই।
অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে।
বাচ্চা মেয়েদের মতো গুজো হয়ে শুয়ে আছে।
আমার মতে আমার মতো সুখি মানুষ পৃথিবীতে আর দুজন নাই।
অনেক ভালোবাসি অনি কে।
সারাজীবন ও আমার পাশে থাকলে আর কিচ্ছু চাই না আমার।
অনি ই আমার সব।
এই ছুটির দিনে যখন বউটারে সময় দেই, ও যে কতোটা খুশি হয় বলে বুঝাতে পারবো না।
বউটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে যাই বুঝতেই পারি নি।
অনেক ভালোবাসি বউটাকে।