উল্টাপাল্টা

উল্টাপাল্টা

” কই তুমি? ”
” দুই ঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখে এখন বলো কই তুমি? ”
” আরেকটু অপেক্ষা করো। আমি হালকা কাপড়চোপড় খেয়ে ভাত গায়ে দিয়ে রওনা দিচ্ছি। ”
বলেই আনিকা ফোন কেটে দিলো। মেয়ে ভালো শুধু মাথায় কিঞ্চিৎ সমস্যা। কিছুক্ষণ একা একা বসে বাদাম খাওয়ার পর আবার ওর ফোন।
” কই তুমি? আমার কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। ”
” রাগ করো না প্লীজ। দেখো না মাথায় প্রচুর জ্যাম সেজন্য রাস্তা ব্যাথা হয়ে গেছে। ”
” ধুর, আমার সময়ের কোনো দাম নাই তোমার কাছে? ”
” আছে তো, আচ্ছা তুমি এখন কী করছো? ”
” বাদাম খাই আর গল্প লিখছি ”
” আচ্ছা তাহলে গল্পগুলো খেয়ে বাদাম টা পোস্ট করে দাও। এরই মধ্যে আমি পৌঁছে যাবো। ”
বলে আবার ফোন টা রেখে দিলো। তারপর আর বেশিক্ষণ দেরি হলো না। ও আমার পাশে এসে বসলো। আমি সরে গেলাম। ও মুখ গোমরা করে আমার সামনে গিয়ে।
” রাগ করছো? তুমি বললে আমি উঠবস ধরে কান করতে পারি। ”
” আগে বলো তুমি কী আমাকে মানুষ মনে করো না? ”
” আল্লাহ্ চেঁচাচ্ছ কেনো? শুনো না, হঠাৎ আমাদের বাড়িতে দেরি এলো সেজন্য মেহমান হয়ে গেলো আমার। এই দেখো এমন ধরছি আর কানে হবে না পরবর্তীতে। ”
ওর কথা শুনে আর রাগ করে থাকতে পারলাম না।
” এখন আমাকে টাকা দাও। প্রতি ঘণ্টার মূল্য এক হাজার টাকা। তুমি আমাকে আড়াই ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছো। ”
” কী বলো এসব? কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা নেই। এক হাজার টাকা আছে ভাবছি একটা থ্রী-পিচ কিনবো তোমাকে নিয়ে আজকে। ”
” দিবা কী না বলো? নাহলে কিন্তু আমি গেলাম। ”
” এই দাঁড়াও না। তুমিই তো আমার সবচেয়ে বড় থ্রী-পিচ। এই নাও, একটাই এক হাজার টাকার নোট। ফিরে যাওয়ার ভাড়া টা তুমি দিয়ো। ”
আমি ওর থেকে অনেক টাকা নিয়েছি। এবং কবে কোনদিন কত টাকা নিয়েছি তা হিসাব ও করে রেখেছি। টাকা হাতে নিয়ে বললাম।
” কী বললা তুমি? আমি থ্রী-পিচ? ”
” আল্লাহ আমি যে কী বলতে কী বলে ফেলি। বলতে চাচ্ছি থ্রী-পিচ আমার সব। তুমি আমার কিচ্ছু না। ”
” আনিকা! ”
” আবার কিছু বলে ফেললাম না কী? ”
” আমি তোমার কিচ্ছু না? ”
আনিকা এবার চুপ করে বসে থাকলো। কারণ ও জানে যা বলবে তার উল্টো হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ পরে বললো।
” দেখো না খালি আবোলতাবোল থেকে মুখ বেরিয়ে যাচ্ছে! ”
আমি হো হো করে না হেসে পারলাম না। ওকে আমার এজন্যই এতো ভালো লাগে। আমার যতই মন খারাপ থাকুক ওর সাথে কথা বললেই ভালো হয়ে যায়। আমি এবার প্রেমিক হয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও অবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
শ্যামলা মেয়েদের চোখে মাত্রাতিরিক্ত মায়া থাকে। আনিকার চোখে চোখ পরলেই আমি সেই মায়ায় বারবার হারিয়ে যাই। ও আমার চোখ থেকে ওর চাহনি সরিয়ে নিলো। মনে হলো অভিমান করেছে মেয়ে টা। আমি পরম আদুরে কণ্ঠে ডাক দিলাম।
” অ্যাই আনিকা। ”
আনিকা জবাব দিলো না।
” জানো আনিকা তুমি অভিমান করলে তোমাকে লাল টমেটোর মতো লাগে? টমেটো আমার সবচেয়ে প্রিয় জানো তো? ”
” আর পিছলা কথা বলতে হবে না। তুমি আজকে আমাকে অনেক ঝারি দিছো। ”
” ঝারি দিছি না? আচ্ছা আমি আর কোনোদিন তোমাকে ঝারি দিবো না। তুমি তো আমাকে চেনো ই। যা একবার বলি তা আর করি না। খুব মন চাইলে কাউকে ঝারি দিবো। তা ও তোমাকে না। এবার লক্ষ্মী মেয়ের মতো হাসো একটু? ”
আনিকা হাসার বদলে কান্না আরম্ভ করে দিলো। আমি ও ওকে আর কিছু বলছি না। কাঁদুক, কাঁদলে যে ওকে ঝকঝকে ঝর্নাধারার টকটকে সুন্দরী লাগে। অনেকক্ষণ কেঁদে ফেলেছে, তবে আমার ওর কান্না সিক্ত চেহারা টা দেখে মন ভরছে না।
তবু ও মনে হলো মেয়েটাকে থামানো দরকার।
” আনিকা, কান্না করছো কেনো? ”
” তুমি বললা কেনো অন্য কাউকে ঝারি দিবা? ”
” তোমাকে দিলে তো তুমি রাগ করো তাই বললাম। ”
আনিকা এবার উঠে চলে যেতে চাইলো। আমি ওর হাত দুটো ধরে বললাম।
” আচ্ছা দুঃখিত ম্যাম। আমি শুধু আপনাকেই ঝারি দিবো, আপনাকেই পিটাবো। আর আপনাকেই ভালোবাসবো। ”
আনিকা এবার কান্না থামালো। ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখতে পেলাম। চোখের জল ঠোঁট বেয়ে মাটিতে পরাতে ঠোঁট টা লাল হয়ে গেলো আরো বেশি। এমনিতেই হালকা লিপস্টিক দিয়ে এসেছে।
” আচ্ছা আনিকা তুমি মেঘলা আকাশের মানে বুঝো? দেখো আকাশ টা কত মেঘলা। মেঘলা আকাশের মানে হলো আজকে তুমি আর আমি কোনো অজানা নীলের দেশে হারিয়ে যাবো। যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না। তোমাকে আমি রোজ জ্বালাতন করবো। তোমার চেহারায় থাকবে বিরক্তির ছাপ কিন্তু মনে মনে বলবে পাগল টা আমাকে কত্ত ভালোবাসে! ”
আনিকা ভেংচি দিলো।
” রোমান্টিকতা নিয়ে তোমার মুখ থেকে এখন টাকা বের হচ্ছে না? ”
” ওহ আমি টাকা পেলেই এসব বলি না? তাছাড়া বলি না? ”
” না, না আমি তা বলি নাই। ”
” চুপ করো তুমি তাই বলছো মাত্র। তুমি জানো তোমার থেকে আমি মোট কত টাকা নিয়েছি? ছাপ্পান্ন হাজার টাকা। আমি সব হিসাব করে রেখেছি। আমি জানি তুমি একদিন আমাকে খোঁটা দিবা। সেজন্যই হিসাব করে রেখেছিলাম। ”
এটুকু বলে পকেট থেকে একটা খাম বের করে বললাম।
” আগের পঞ্চান্ন হাজার টাকা ছিলো আর মাত্র নিলাম এক হাজার। আর এই খামে পুরো ছাপ্পান্ন হাজার টাকা আছে। তোমার জন্যই এনেছিলাম। আর খাম টা বাড়িতে গিয়েই খুলিয়ো। এখানে অনেক বাজে লোক আছে। দেখিয়ো তারপর ও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটু ও কমবে না। ”
আনিকা মাথায় হাত দিলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না আরম্ভ করে দিলো।
” তুমি কী বললা মাত্র? আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তুমি বললা না? তোমার ভূত বলে নাই তো? তুমি আমাকে এই মনে করো না? তুমি সব টাকা হিসাব করে রাখলা কেনো? একদিন পরিশোধ করে দেয়ার জন্য? তোমার সাথে কী আমার পরিশোধের সম্পর্ক? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমাকে আত্মার আত্মীয় ভাবো। কিন্তু তুমি আজকে টাকা নিয়ে এসেছো? ছিঃ, আজকের দিন টার আগে আমার মরণ হলো না কেনো? ”
বলে ও আমার হাত থেকে খাম টা নিয়ে সামনের পুকুরে ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। মেয়ে টা একটু বেশিই করে, আর আবেগী। বাড়িতে নিয়ে খাম টা খুলে দেখলে কী হতো? কত কষ্ট আর ভালোবাসা মাখিয়ে চিঠি টা লিখেছিলাম…!
আজকে ওর কাছে আর যাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি খুব বেশি গরম হয়ে গিয়েছে। রাতে ফোন দিচ্ছি বারবার, ও ধরছে না। না ধরার ই কথা। অবশেষে ওর ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম।
” আনিকা জানো, আজকে না আমি আরেক টা আনিকা পেয়েছি। কিন্তু তোমার সাথে ওর পার্থক্য হলো ও বলেছে কখনো আমাকে টাকার খোঁটা দিবে না। ”
এরকম জ্বালাময়ী বার্তার উত্তর না দিয়ে পারবে না আনিকা। আমি জানি।
” বিশ্বাস করো না আমি ওভাবে বলি নাই। জানো আমি না বিছানা করতে করতে কান্না ভিজিয়ে ফেলেছি! ”
” কালকে কিন্তু টাকা টা নিয়ে যাবে। নাহয় আমিই গিয়ে দিয়ে আসবো কেমন? ”
” অ্যাই না, একদম না। আমাকে এভাবে মেরে ফেলো না। ”
” না, খোঁটা দেয়া মেয়ের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। ”
” এভাবে বলো না। দেখো আমি কিন্তু তাহলে আজকেই আত্মহত্যা খেয়ে বিষ করে ফেলবো। ”
আমি এপাশে হাসছি। কোনো উত্তর দিচ্ছি না। ও বারবার বার্তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। এর মাঝে মা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে হাজির। আনিকাকে উত্তর দিলাম।
” দাঁড়াও মাথা টা খেয়ে পানি টা ঠাণ্ডা করে নেই, তারপর কথা বলছি। ”
গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে আনিকার উত্তর।
” আমায় ভ্যাঙ্গাচ্ছো না? “

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত