অয়ন মা বাবার একমাত্র ছেলে, ঢাবিতে চান্স পেয়েছে তাই খালার বাসায় উঠেছে । খালার ছেলে নেই মেয়ে আছে একটা আসার সময় শুনে এসেছে, মেয়েটা যে কলেজে উঠেছে সেটা জানেনা সে । সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত অয়ন তাই প্রেম নামক শব্দটা তার আশেপাশে আসেনি কিন্তু নীরাকে দেখে তার চোখে যেন দুনিয়ার সব চাইতে গুরুত্ব পূর্ণ জিনিসটা যে প্রেম সেটা মনে পরে গেল মানে লাভ এট ফার্স্ট সাইট যাকে বলে। ভার্সিটি তে প্রথম পড়া শোনা তাই একটু কমিয়ে দিল অয়ন। সারাদিন খালার বাসায় বসে থাকে নীরাকে দেখার আশায়। এদিকে নীরার কোন বিকার নেই কলেজে আসছে যাচ্ছে দেখা হলে কথাবার্তা বল এই টাইপ এভাবে প্রায় তিন মাস কেটে গেল নীরা কথাবার্তা সামান্য বাড়ালেও অয়ন সাহস পাচ্ছেনা তাকে কিছু বলার পাছে যদি খালাকে বলে দেই তাহলে সব শেষ । একদিন ভাগ্য সু প্রসন্য হল তার, নীরার সাথে কি একটা কাজে থাকে বাইরে যেতে বলে খালা। এক রিকশাতে পাশাপাশি সে আর নীরা, ভাবতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠল অয়নের আসলে সে অপেক্ষা করতে করতে এতই অস্থির হয়ে উঠেছিল যে ছোট এই জিনিসটা ও থাকে আনন্দ দিচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সে রিকশাতে মূর্তি হয়ে শব্দটি মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। অবশেষে নীরাই মুখ খুলল। -অয়ন ভাই, কি ব্যাপার আপনি এমন জবুথবু হয়ে আছেন কেন?
-না, এমনি!!
– শরীর খারাপ?? বাসায় চলে যাবেন??
-না না শরীর খারাপ হতে যাবে কেন? (এবার ঠিক হয়ে বসল সে পাছে না আবার নীরা সত্যি সত্যি তার শরীর খারাপ মনে করে) – তাহলে নিশ্চয় মন খারাপ আপনার!!!
-হুমম, তা বলা যাই। -মানে, আপনার সত্যিই মন খারাপ!!! আমি জানি!!!!
-আসলে নীরা আমার একটা কথা বলার ছিল!! -কাকে???
-না, মানে!! কাউকে না!!
-আচ্ছা আপনি যে একটা ভীতুর ডিম সেটা আপনি জানেন??
-না, মানে তোমাকে আমার একটা কথা বলার ছিল!!!!
-বলতে হবে না আমি জানি!!!!!!!! নীরার ফর্সা মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে উঠছিল, অয়ন আর কোন কথা বাড়ায় নি আস্তে করে নীরার হাত ধরল সে। সামান্য কেঁপে উঠল নীরা, চোখ দিয়ে পানি পরছিল তার……………………. .. নীরার বাবার অফিসে বসে আছে অয়ন। কি কারনে জানি তিনি ডেকে পাঠিয়েছেন অয়নকে। অয়নের চোখে এখন খালি আগামীর চিন্তা, নীরাকে নিয়ে নীরা ভার্সিটি ভর্তি হবে এবা সে পাশ করে ভাল জব করবে নীরাকে নিয়ে সুন্দর আগামি গড়বে…………।।
-অয়ন, বাবা তোমার জন্য একটা চাকরির খবর এনেছি আমি। বেতন ভাল , থাকার জন্য বাসা দেবে তোমাকে তোমার পড়া শোনার ও কোন অসুবিধা হবে না, বাবা তোমাকে একটা কথা বলব???
-জি, বলেন খালু!!
-ক্যারিয়ার সবার আগে, বাকিটা পরে জীবন এখনো অনেক বাকি।
-জি, খালু আমি চাকরিটা করব। -কালকে থেকে জয়েন ডেট।
-আচ্ছা, আমি কালকে থেকে যাব। খালুর কথার ইঙ্গিতটা ধরে ফেলেছে অয়ন তাই চাকরিটা করবে বলে দিয়েছে সে । উনি যা করছেন হয়তবা ভালর জন্য করেছেন এটা ভেবে সে বেরিয়ে পরল। আজকেই কাপড় চোপর গুছিয়ে খালার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে সে নীরা কাঁদছে তার রুমে একা একা, অয়ন এসেছিল কাপড় চোপড় ,বই পত্র নিয়ে যেতে ওর রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গিয়েছিল সে তারপর সব শুনে পাথর, যতক্ষন অয়ন ছিল সে অয়নের দিকে তাকিয়ে ছিল সে যেন আর দেখবেনা তাকে। অয়ন চলে যেতেই মার কাছে গেল সে – মা অয়ন ভাই চলে গেল কেন?
-সে একটা চাকরি পেয়েছে, তোর বাবা চাকরিটা ধরিয়ে দিয়েছেন।
-চাকরিটা কি উনার খুব দরকার ছিল???
-সেটা তোর বাবা ভাল জানেন!! আমার কাছে এসব বলতে আসবি না, তোর বাবার থেকে জিজ্ঞেস করে নিস। মেয়ের সাথে এই প্রথম রাগ দেখালেন তিনি। নীরার মনটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। রুমে কাঁদতে কাঁদতে পুরনো দিন গুলোর কথা মনে পরে গেল তার । অয়ন ভার্সিটি থেকে কখন আসবে সে অপেক্ষায় থাকত সে কখনো বের হত একসাথে এইখানে ওইখানে বেড়াতে যাওয়া খুন বড্ড মনে পরছে তার । অয়নের সাথে যেদিন প্রথম রিকশায় করে গিয়ে ছিল সেদিন রাতে ছাদে একসাথে বসে ছিল দুজনে । নীরা আর অয়ন ছাদে বসে ছিল একটু দূর করে পাছে খালা এসে পরেন এই ভেবে, নীরার কাছে চাঁদের আলোয় অয়নকে যেন কোন মায়াময় যুবকের মত লাগছিল যাকে সে হাজার বছর ধরে খুজেছিল। কেন জানি লাগছিল তার জন্যই অয়নের ঢাকা আসা তাদের পরিছয় যেন কোন অমোঘ নিয়মে বাঁধা ছিল। অয়নকে তার অবশ্য প্রথম দেখাতেই ভাল লাগেনি কেমন যেন বোকা বোকা টাইপ কিন্তু দেখতে দেখতে সে কেমন করে যেন সপ্নের রাজপুত্র হয়ে যাই তার কাছে। যাকে সে আপন করে পাবেই অয়নটার হাবভাবে বেশ বুঝা যেত তাকে সে পাগলের মত ভালবাসে কিন্তু নীরা পাত্তা না দেওয়ার ভাণ করত আসলে ওকে খুঁচিয়ে বের করতে চেয়েছিল সে কিন্তু বেচারা ভীতুর ডিমটা সেটা কখনই পারবেনা বলে একদিন মাকে বলে সে অয়ন ভাইকে নিয়ে বের হয় মা খুশি মনেই অয়নকে ডেকে দিয়েছিল। আবার ডুকরে কাদতেঁ লাগল সে………………।।
বাবা কয়েকদিন ধরে ফোন করছেন বারবার বলছেন একটা ভাল দেখে স্যট বানাতে অফিসের ব্যস্ততায় একদম সময় করতে পারছে না। আজকে ফোন করার পর সে বাবাকে বলতেই বাবা বললেন সময় নেই চারদিন পর নীরার এঙ্গেজমেন্ট তুই থাকবি। বলেই বাবা কেটে দিলেন! অয়নের মাথায় যেন বজ্রপাত হল । চার বছর ধরে যার জন্য এত পরিশ্রম করছে চারদিন পর তার এঙ্গেজমেন্ট!!!!!!! এখন আর কিছুই করার নেই!!!!! নিয়তি তাকে নিয়ে এত বড় একটা খেলা খেলবে সে তা বুঝতেই পারেনি। সব হারানোর শোক থাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল , কিন্তু মনকে শক্ত করল সে ভাবল আমার কিছুই করার নেই আর আজ আমি এক পরাজিত ……… নীরাদের বাসায় তার আগের রুমটাতে বসে আছে সে, তার মা বাবা আসবেন এটা তারা আগে জানাননি। যাইহোক মেহমান নেই তেমন একটা , আর মনে হয় বর আসেনি এখনো মাথা ধরেছে বলতেই খালা তার আগের রুমে গিয়ে শুতে বলল। এসে শুইনি সে বসে আছে আর বিষাদের সমুদ্রে সাতার কাটছে কতক্ষন ছিল বলতে পারবেনা শুধু দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলল যা দেখল তার মাথায় আরেকবার বজ্রপাত হল, নীরা সামনে দাঁড়ানো। নীরার চোখে বিস্ময় সে টের পাওয়ার আগেই দেখে নীরা তার বুকে । এই মেয়ে করে কি? তার মান ইজ্জত আজ ধুলোয় মিটবে। বিহিত করতে হবে থাকে একটা -নীরা!!!! কি ব্যাপার?? তুমি এখানে কেন???
-কেন?? আমার আসতে মানা আছে নাকি (কান্না আর আনন্দ মিশ্রিত কন্ঠ নীরার) খটকা লাগল অয়নের
-খালা,খালু আছেন আমার বাবা মা ও দেখলে কেলেংকারি হয়ে যাবে !!!!!!!!!
-মা পাঠিয়েছেন আমাকে এখানে!!!!! -কেন?????
-বললেন, যা তোর বর আগে অয়ন যে রুমে থাকত সে রুমে আছে…। অয়ন এবার বুক থেকে তুলে নিয়ে চোখের সামনে দাড়া করাল নীরাকে , যেন আকাশ থেকে পরি নেমে এসেছে। বিয়ের সাজে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে
-এগুলো আমার জন্য সাজোনি তুমি???? ( দুস্টুমি হাসি অয়নের মুখে)
-না, আমার বরের জন্য সেজেছিলাম। কোন ভীতুর ডিমের জন্য না।(নীরার চোখে কপট রাগ)
-তাহলে আমি দেখব না তোমাকে!! (অন্যদিকে ফিরে গেল অয়ন)
-না দেখলে আমার বয়েই গেছে ( হাসিটা কোন মতে চাপাল নীরা)