ঘুরে ফিরে আবার বছরে শেষে চলে এলো ফাল্গুনের আগমন। ফাল্গুন মাস বসন্ত ঋতুকে নিয়ে আসে অঢেল সৌন্দর্য আর কীর্তি সঙ্গে নিয়ে। আসলেই গত ফাল্গুনে লেখা রায়হানের গল্পটা শুধু গল্পই ছিলো কিন্তু তার বেশীরভাগ কল্পকাহিনী আজ সত্য হয়েছে। আহা কি করে? ভাবতেই অনুভূতি সাড়া দিয়ে উঠে। তবে সেই ফাল্গুন ছিলো অব্যক্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এই ফাল্গুনের ভালোবাসা ব্যক্ত ভালোবাসার গল্প। রায়হান বলেই ফেলেছে প্রিয়াকে। হুম, আর “না বলতে পারা” ভালোবাসার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারেনি।
বিশ্বরোড অপেক্ষায় আছে প্রিয়া আজ রায়হানের দেড়ি হয়ে গেলো। গতবছর প্রিয়াকে নিয়ে লেখা রায়হানের গল্পে প্রিয়া দেড়ি করে এসেছিলো। আজ তার উল্টো। পিছন থেকে প্রিয়াকে ভয় পাইয়ে দিয়ে বললো,
— চলেন, যাওয়া যাক।
— এতো দেড়ি করে আসলে?
— একটু কাজ ছিলো।
— ওহ!
তারপর রিক্সা করে লালবাগের উদ্দেশ্যে যাত্রা। রিক্সায় দুজন বসে। প্রিয়ার মুখের ভাষা রায়হান পড়ার চেষ্টা করছে। কিছু একটা রায়হানের দৃষ্টি কেড়ে নিলো। হ্যা, সেটা প্রিয়ার মুচকি হাসি। এই হাসি যেনো রায়হানের অন্যতম ভালো লাগা। রায়হান বললো,
— এই হাসিটাই আমার তোমাকে বেশি ভালো লাগার কারণ। লেগে থাকুক এই হাসি তোমার বাঁকা ঠোটের সীমানায়।
কথাটা শুনতেই যেন প্রিয়ার হাসি আরো বেড়ে গেলো। রায়হানের প্রতিটা কথা বরাবরই ভালো লাগার মতো। প্রিয়ার এই কথাগুলো শুনতেই ভালো লাগে। আবার রায়হান বলে উঠলো,
— আচ্ছা তোমার এই ড্রেসের কালারের নামইতো “মিষ্টি” কালার।
— হুঁ। কেনো?
— কারণটা আমি জানতাম এই রঙটা তুমি আজ পরে আসবে। বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি আগে থেকে জানতাম? পরে বলছি, হুম?
— আচ্ছা।
প্রিয়া শান্ত স্বভাবের, রায়হানের মতো চঞ্চল না তাই রায়হানের বিপরীত বৈশিষ্ট প্রিয়ার। তার মুখ থেকে কথা খুব কম বের হয়। হুড তোলা রিক্সায় ভাঙা রাস্তায় ঝাকুনিতে দুজনে দুজনের কাছাকাছি সরে আসছে। বাহুতে বাহু ঘেষে অনুভূতির স্রোতে দুজনের মুখে অস্পষ্ট মিটিমিটি হাসি। প্রিয়া বলে উঠলো, আপনার না কতো কথা জমে আছে, কোথায়, কিছুতো বলছেন না?
রায়হান বললো, আচ্ছা একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, আমার লেখা গল্পটার সাথে আজকে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। সে গল্পের নায়িকা প্রিয়া, নায়ক রায়হান তারা দুজন এভাবে করে রিক্সায় যায় আর গল্পেও তারা লালবাগই যাচ্ছিলো।
প্রিয়া উত্তর দিলো না। তবে তার মুচকি হাসিটা প্রকাশ করে দিচ্ছে অনেককিছু। রিক্সা গিয়ে থামলো লালবাগ কেল্লার গেটের সম্মুখে। তারপর টিকিট কেটে ভিতরে যাওয়া। দুপুরের কড়া রোদে হাঁটছে ভিতরে। বসার জায়গা না পেয়ে পরি বিবিরর মাজারের সামনে বসার মতো ঢালু জায়গায় বসে পরলো। রায়হান বলে উঠলো,
— আচ্ছা গল্পে সেদিন আকাশ মেঘলা ছিলো। আজ অনেক রোদ। আর সেদিন আমরা দাড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু এখানে উল্টোটা।
— হুঁ।
— প্রিয়া কিছু বলছো না যে?
— তুমি বলো।
— আমিতো অনেক কিছুই বলে ফেললাম, এবার না হয় তুমি বলো।
— কাউকে না কাউকে তো বলতেই হবে। তুমিই বলো আমি শুনি তারপর আমি বলবো।
— আচ্ছা, তুমি যে এই কালারের ড্রেসটা পরে আসতা আমি তা জানতাম। কি! বিশ্বাস হচ্ছে না? দাড়াও….
তারপর রায়হান তার পকেট থেকে ১ টি কাগজ বের করে প্রিয়ার হাতে দিলো। কাগজটিতে এভাবে লেখা,
“প্রিয়া আজ তুমি মিষ্টি রঙের পোষাক পরিধান করবে।”
প্রিয়া একটু চমকে গেলো তবে মজা পেয়েছো। সে জানতে চাইলো, কিভাবে জানতে?
রায়হান বললো, আমি সব জানি। হাহাহাহা, আসলে আমি একটা ট্রিক ব্যবহার করেছি, আমি এমন সাতটি কাগজ সাত জায়গায় রেখেছি। এখন তুমি যদি কালো রঙের পোষাক পরে আসতে তাহলে মানিব্যাগ থেকে কাগজটা বের করতাম।
প্রিয়া আবারও মুচকি হাসি দিলো। রায়হান আর প্রিয়া এক নাগারে দুইঘন্টা বসে গল্প করেই কাটিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রিয়া এর মাঝে সময় গুনছে। তার বাসায় সমস্যা হবে দেরি হলে এমন অজুহাতে দুজনই আর বেশি সময় অতিবাহিত করতে পারলো না। বের হয়ে আসার সময় রায়হান প্রিয়ার ছোট হাতটি তার মুঠোতে করে নিলো। তারপর পাশের রেষ্টুরেন্টে দুজন গিয়ে বসলো। রেষ্টুরেন্টের পরিবেশটা অনেকটা রোমান্টিক ছিলো। আতিফ আসলামের নিরব গানগুলো চলছে। আর চারপাশে অনেকটা অন্ধুকার শুধু টেবিলের উপর একটা ল্যাম্প ঝুলছে তার অস্পষ্ট আলো এসে পরছে টেবিলে। প্রিয়া টেবিলের একপাশে রায়হান তার বিপরীতে। প্রিয়া চোখে আর টানা বাকা ঠোটে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো তার ঠোটের মুচকি হাসটা সে অনুভব করছে। রায়হান তার আসন থেকে উঠে প্রিয়ার পাশে বসলো। এর ভিতর খাবার অর্ডার দেয়া হয়ে গেছে। প্রিয়া তোমার জন্য একটাকিছু অপেক্ষা করছে আমার ব্যাগে, বলেই রায়হান তার ব্যাগ থেকে একটা নিজের তৈরি ডিজাইন করা ৭ পরদের চিরকুট। এক এক করে খুলছে প্রিয়া। শেষ পরদের গিয়ে প্রিয়া তার কাঙ্ক্ষিত মেসেজটা পেয়ে গেলো যেখানে লেখা ছিলো ইংরেজি বর্ণে, I তারপর একটা লাভ এর ইমোজি তারপর U।
প্রিয়ার বদনে আনন্দের ছায়া। রায়হান এখনো তৃপ্ততা অনুভব করছেনা। সে বললো, প্রিয়া তোমার হাতটা দিবে? খানিক পরেই তার বিশ্বাসের হাতটা রায়হানের হাতে দিলো। রায়হান বললো, প্রিয়া তোমাকে কিছু বলতে চাই। কিভাবে বলবো বুঝে উঠতে পারছিনা। আমি আমার মতো করে বলছি। তারপরই এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললো, I love you. Do you love me.
প্রিয়া আবারও রায়হানের ভলো লাগার মুচকি হাসিটা দিয়ে বললো, হুম। রায়হান বললো, এতোটুকু? পুরোটা বলবে না? তারপর আবার কিছু সেকেন্ড পরেই ঠোট থেকে বেরিয়ে আসলো, I love you too.
দুজন এখন লজ্জায় দুইদিক মুখে করে হাসছে। তাদের মনে যে ব্যাকুলতা তা আরো বেড়ে গেলো।
–
খাওয়া শেষ করেই তারা রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হলো। আকাশ অনেক মেঘলা হয়ে বৃষ্টি ঝরছে। রায়হান বললো, প্রিয়া খেয়াল করেছো? গল্পের সাথে সব মিলে যাচ্ছে। চলো, গল্পের ইতিটা সত্যি করে দিই। রাস্তার পানি পারিয়ে রিক্সা করে নিলো। দুজন দুজনের দিকে লেগে বসেছে। তাদের বাহুতে বাহু স্পর্শে দুজনই অনুভব করছে চঞ্চলতা। রায়হান কিছু একটা বলতে অনেকটা ইতস্ত হচ্ছে তবুও আর না সহ্য করতে পেরে বলে দিলো, প্রিয়া তোমার হাতটা দিবে? প্রিয়ার হাতটা রায়হানের হাতের মুঠোয়। দুজন অনুভূতির স্রোতে ভাসছে। আর বৃষ্টির ফোটার দৃশ্য দেখছে। রায়হান বললো, সেই গল্পটি তাহলে সত্যি হলো। খেয়াল করছো, আজকের আবহাওয়াটাও অনেক রোমান্টিক। দুজনই নিশ্চুপ হয়ে রোমান্টিকতা অনুভব করছে। হারিয়ে গেছে দুজন অনুভূতির অন্য জগতে, সে জগতে আজকের এই বসন্তের প্রথম বৃষ্টিও তাদের বন্ধু।
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক