আমার চোখের দিকে তাকাতে তোমার বড্ড সংকোচ,
আমি নাকি সহজেই চোখের ভাষা বুঝতে পারি। অথচ
এই আমি কখনোই জানতে চাইনি কতটুকু অবিশ্বাস
ধরে রাখো তোমার ঐ চোখের গভীরে। তোমার হাতের
মুঠোফোনটা সহসা বেজে উঠলেই তুমি কেমন গুটিয়ে
যাও; ভীত সন্ত্রস্ত চোখে আমার দিকে না তাকিয়েই কলটা
কেটে দাও। অথচ এই আমি কখনোই তোমার মিসকল
চেক করিনি, বলিনি- ওপাশে কে ছিল! সেদিন তোমার
জন্মদিনে একটা লাল গোলাপের তোড়া কিনে ছবির হাটে
আসতে বলেছিলাম। রোকেয়া হলের দূরত্ব খুব বেশী দূরে
ছিলনা, এসএমএস-এ জানালে, “আসছি”। বিকেল গড়িয়ে
সন্ধ্যা হলো, তোমার মুঠোফোনটা সারাক্ষণই বন্ধ ছিল।
তোমার সাথে সেদিন আর দেখা হলোনা। শুভেচ্ছার লাল
গোলাপে আমার ফুলদানি ভরে গেল। সন্ধ্যার অনেক পরে
এসএমএস-এ জানালে, “বাবা এসেছিল””। আমার রাতের
ঘুমটা তোমার বাবাই কেড়ে নিল। অথচ এই আমি তোমাকে
মুঠোফোন বন্ধ রাখার দ্বিতীয় কোন কারণ জিজ্ঞেস করিনি।
আসলে তুমি যতই বলো, আমি কারো চোখের ভাষা পড়তে
পারিনা, মুখের কথাকেই বিশ্বাস করি। সেদিন সন্ধ্যায় এক
সুদর্শন যুবকের সাথে রিক্সায় করে হলে ফিরছিলে, আমি
তখন টিএসসির সামনে, আবছা আঁধারে সিগারেট হাতে।
তোমার মুঠোফোনটা দুপুর থেকেই বন্ধ ছিল, ডিজ্যুসের
বাড়তি সুবিধে নিতে বেশ রাতে কল করলাম তোমাকে।
ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললে- “সারাটাদিন খুব ধকল গেছে,
ডিপার্টমেন্ট থেকে স্টাডি ট্যুরে গেছিলাম- ফিরেছি সেই
রাতে। বড্ড টায়ার্ড লাগছে। এখন নয়, পরে কথা বলবো
তোমার সাথে”। অথচ আমি মুখ ফুটে বলতে পারলামনা-
তুমি কিন্তু আমার দৃষ্টির নাগালেই ছিলে। আসলে চোখের
ভাষা বলতে কিছু নেই, সবই আমার বুঝার ভুল- ভাষা
মানেই হলো বর্ণ, শব্দ আর বাক্যের সহজ সরল বিন্যাস।
দৃষ্টির সরলতায় কোন ভাষা নেই, থাকেনা। হে নিরুপমা,
তোমার চোখের দৃষ্টিতে দেখি অনিকেত সংকেত; আমি এক
নির্বোধ প্রেমিক নিভৃতে ভাষার চর্চা করি আয়নার সমুখে।