চাঁদনির বিয়ের পরের দিন থেকে কেমন জেনো এলোমেলো হয়ে গেলাম।কোন ভাবেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে পাচ্ছিলাম না।মন কেন জানি কোন বাঁধাই মানছে না।আমার কষ্টটা সেই উপলদ্ধি করতে পারবে, যে একজনকে জীবন দিয়ে ভালবেসে হারিয়ে ফেলেছে।চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ কিন্তু তাদের ভীরেও নিজেকে চিনতে কষ্ট হয় না।অনেকটা অন্ধকারে জোনাকি দেখার মতো।আমি উপরের আকাশের সাথে নিজের সন্ধি করার চেষ্টা করলাম।হয়তো পেরেছি না হলে তো মরেই যেতাম।(না না হাসবেন না আমার কথা শুনে।)গ্রামের বাড়িতে প্রায় শুনতাম আজ বল্টু কাল মন্টু বিষ খেয়ে মারা গেলো।কেউ হাসপাতালে মৃত্যু দেখে আসে।কারণ একটা প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া।তখন খূব রাগ হতাম, ভাবতাম এরা মরতে চায় কেন?মরে কি প্রমান করতে চায়?
কিন্তু যেদিন চাঁদনির বিয়ে হল সেদিন অনেক বলে বাঁচিয়ে রেখেছি নিজেকে।আজ বুঝতে পাচ্ছি, ওরা মরে কিছুই প্রমান করতে চায়নি, চেয়েছিল ভালবাসার মানুষটিকে, আর একবার পাবার।তাই ওপারে গিয়ে অপেক্ষা করার জন্য আত্মহত্যা।
ভাবলাম বিশাল আকাশের বুকে কত কি ঘুরে।দিনের আলোয় পৃথিবীকে আলোকিত করে, সন্ধ্যা হলে চাঁদ দেয় মায়াবি এক রাত উপহার।কষ্টের বাঁধ যেদিন ভেঙ্গে যায় সেদিন অশ্রু গুলো বৃষ্টি হয়ে পরে।কত রং নিয়ে যুগ যুগ ধরে নিজের কষ্ট চাপা দিয়ে আসছে।ঐ আকাশ পারলে আমি(আকাশ) পারবো না কেন?এই “কেন” এর উত্তর খুঁজতে ছেড়ে দিলাম পিতৃভূমি।এলাম এই ব্যস্ত শহরে।
ঢাকায় বেশ ভালো লাগছে।প্রতিদিন সকালে হাজার শ্রমিকের ভীরে হারিয়ে যাই, সন্ধ্যা হলে আবার খুঁজে বেড়াই নিজেকে।হারানো আর খোজার মধ্য দিয়ে কেটে গেলো তিন বছর।কত যে রাত কেঁদে কাটাতাম তার শেষ নেই, ঐ চাঁদনিকে ভেবে।শুনেছি সুখেই আছে।
হটাত একদিন চাঁদনি কল দিলো।অপরিচিত নাম্বার বলে ধরলাম।
আমিঃ হ্যালো কে?
চাঁদনিঃ কে, আকাশ না?
আমিঃ জি……আকাশ বলছি।
চাঁদনিঃ তুমি আমাকে চিনতে পারছ না?
আমিঃ (মনে হল বুকের ভিতর কেউ তীর বসিয়ে দিলও) কে, চাঁদনি?কত দিন পর?(সত্যি বলছি নিজের অজান্তে অশ্রু ভিজিয়ে দিলো গাল)
চাঁদনিঃ (একটু কান্না কান্না ভাব নিয়ে) এত সময় নিলে আমায় চিনতে?তোমার সাথে যোগাযোগ করার জন্য কত খুঁজেছি, তুমি জানো?এত দিন পর, একটু আগে তোমার নাম্বার পেলাম।
আমিঃ হাসান দিয়েছে না?
চাঁদনিঃ ভাইয়াকে কিছু বল না।আমি চুরি করে নিয়েছি।শুধু তোমার কথা শুনবো বলে।কেমন আছো তুমি?
আমিঃ যেমন থাকার কথা ছিল।তেমনি আছি?তুমি বল কেমন আছো সংসার জীবনে?
চাঁদনিঃ আমি ভালো আছি।
আমিঃ ওকে ভালো থাকো।আমি একটু ব্যস্ত।
চাঁদনিঃ তুমি আমার থেকে পালাতে চাচ্ছ?
আমিঃ অনেক বুঝেছ আর বল না আমি পরে কথা বলবো।
সাথেই কেটে দেই।কেন জানেন, তখন আমার হার্ট বিট থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।আমি কয়েক বছর ধরে মনে যে শক্ত দেয়াল গড়েছি, তা কয়েক মিনিটে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলো।অফিস থেকে বাসায় এসে ভাবছি এ কি হল আমার।আমিতো এই দিনটি চাই নি।আল্লাহ্র উপর অভিমানটা আর একটু বাড়ল।
মনে হচ্ছে নদীর তীরে বসে বছরের পর বছর ধরে যে মিথ্যে সুখের ঘর বুনেছি।যার উপর নির্ভর করে চলতে চেয়েছি আর কিছু দিন।সেই ঘরটা চাঁদনি নামক ঢেউ এসে ভেঙ্গে দিলো।যার জন্য জমানো কষ্ট, সেই যদি বলে আমার কষ্ট ভালো হবে কিসে।তাহলে কি অবস্থা হয় মনের।ভাবেন?
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না।চাঁদনির কাছে আবার হেরে গেলাম।(ভালবাসার মানুষ যতই কষ্ট দেয় না কেন তার কথা উপেক্ষা করে, এমন শক্তি প্রেমিকের মনে থাকে না।প্রিয়ার অনুপস্থিতিতে বড় বড় কথা বলা যায় কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে একটা কথা অমান্য করার ইচ্ছা থাকে না।)তাই কল দিলাম চাঁদনিকে।
চাঁদনিঃ (গভীর আগ্রহের সাথে, খুশিতে আত্মহারা হয়ে) হ্যালো আকাশ?আমি তোমার অপেক্ষা করছিলাম।
আমিঃ (পুরনো অভিমান ঝেরে সুন্দর করে) তাই।চাঁদনি সব ঠিক আছে তো?তুমি সুখি তো?
চাঁদনিঃ পাঁচ সাতটা মেয়ের থেকে ভালো আছি।কিন্তু আজ বলছি আমার খুব ইচ্ছে করে আকাশের চাঁদ হতে।আমি স্বীকার করছি একদিন আমি হতে চাই নি।আচ্ছা আকাশ তুমি আমাকে ভালোবাসো?
আমিঃ তোমাকে আমার একটা ডায়েরি দেয়া হয়নি ওটা পেলে সব প্রশ্নের উত্তর পাইতে।তুমি তো আমাকে ভালোবাসো নি, আমি বাসবো কি করে?
চাঁদনিঃ পৃথিবীতে যদি কাউকে ভালবেসে থাকি সে হলে তুমি।আজ আর বাঁধা নেই।আমার সেদিন জানা ছিল না, ওরা এসেই রেজিস্ট্রি করবে।আমি তবুও অনেক ভেবেছি কিন্তু বাবা মায়ের সম্মানের কাছে তোমার ভালোবাসা খুন হয়ে গেছে।তুমি যদি যাওয়ার সময় আমাকে বলে যেতে- চাঁদনি আমি তোমাকে ভালবাসি।তাহলে আমি বাকী জীবন তোমার অপেক্ষায় কাটিয়ে দিতাম।আমারি ভুল ছিল, সেদিন তোমাকে আমিই থাকতে বলিনি।আমার একটা ভুলের মাশুল তোমাকে সারা জীবন দিতে হবে, কত রাত কেঁদেছি এই ভেবে।
আমিঃ নিজেকে কখনো অপরাধী ভেবো না,তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।যেদিন তোমার বাড়ি কৃত্রিম আলো দিয়ে সাজানো ছিল, সেদিন তোমায় লিখেছি- চাঁদনি কাল সকালে নতুন বাড়ির দরজা খুলে শুনবে তুমি, আমি আর নেই।বিশাধ এই শূন্য ঘরে আমি না থাকলেও স্মৃতিরা থাকবে পরে।তখন একটু না হয় খুঁজো আমায়? সকাল বা দুপুর নয় বিকেলের ক্লান্ত রোদে।ভেবে নিয়ো আকাশ তোমার ছিলও তোমারি আছে।হয়তো ইহলোক ত্যাগ করলাম পরলোকে তোমায় পাবো এই আশা বুকে বাঁধলাম।
চাঁদনিঃ (চিৎকার করে বলল আকাশ থামো আমি আর পারছি না।কান্না করতে করতে বলল) তুমি কত বার বলেছ আমাকে ভালোবাসো কিন্তু সেদিন আমি বুঝতে পারিনি।তার ফল যে এত কষ্টের হবে জানা ছিল না।একটা কথা ভালো করে শোন-আমার স্বামী শুধু দেহ পেয়েছে, মন পায় নি।আমার মনে তুমি আছো, চেষ্টা করেও তোমার জায়গায় অন্য কাউকে স্থান দিতে পারিনি।পারিনি নিজে সুখি হতে, সব থেকেও কেন জানি ভিতরটা খালি খালি মনে হতো।যখন বুঝতে পেরেছি, তখন অনেক দেরি হয়েছে।তখন থেকে পাগলের মত তোমাকে খুঁজে চলেছি।কোথায় ছিলে তুমি?
আমিঃ (চাঁদনির কান্নার শব্দটা এমন আঘাত করতে লাগলো, অনেক দিনের জমানো চোখের পানি গড়িয়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে।ও তো শব্দ করে কাঁদছে আমিতো সেটাও পাচ্ছি না।শত চেষ্টা করে একটা শব্দ বের করতে পারলাম না।কেমন ভিতর টা ফেটে যাচ্ছে।কি করা বা বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছিলাম না, ভাষা হারিয়ে নির্বাক হয়ে শুধু কেঁদেই চলেছি দুজনে।)
লাইন কেটে অনেকক্ষণ ধ্যানে মগ্ন ছিলাম।এক সময় চোখের পানি শুকিয়ে গেলো।বন্ধ হল নিষ্ঠুর খেলায় বলি হওয়া দুটি মনের ভাঙ্গনের জমানো কান্না।আজ আমি ভুলে গেছি কষ্টে থাকলে কাউকে সান্ত্বনা দিতে হয়।ইচ্ছা করছে নিজের হাতে মুছে দিতে চাঁদনির ভেজা আঁখি দুটি।আমি কি, “সেই” যে একদিন চাঁদনির সুখের কথা ভেবে পালিয়ে এসেছে এত দূরে?
(আমার এমন কে আছে যে দেখাবো ক্ষত-বিক্ষত মনে কার বিচরণ? আজ একটা কথা বলি কেউ জেনো এতো ভালবেসো না।যদি ভালই বাস তাহলে তাকে হারিয়ো না।আমি চাইনা এই ব্যথা আর কেউ পাঁক।)