– প্রতিদিনের মতো আজকে বিকেলে ও বসে আছি আমাদের স্কুল মাঠে।
প্রতিদিন এখানে বসে থাকা আমার না আমাদের একটা রুটিন।
আবার সবার একটা করে উদ্দেশ্য আছে….
এই যেমন কেউ সুন্দর সুন্দর মেয়ে দেখতে আসে, আবার কেউ খেলতে আসে, কেউ আবার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে আসে প্রত্যেকের কিছু না কিছু একটা উদ্দেশ্য আছেই।
শুধু একমাত্র আমি ছাড়া, না মানে আমি ওই সবের কিছুর মধ্যেই নেই।
আমি তো শুধু হাওয়া খেতে আসি।
আর এখন তো রোজার মাস তাই সবাই অনেক ভদ্র হয়ে গেছে।
কেউ আর কোন মেয়ের দিকে তাঁকাই না, আর কোন উদ্দেশ্য ও নেই।
কিন্তুু আমার উদ্দেশ্য আটুট আছে,কারণ রোজা থেকেও হাওয়া খাওয়া যায়।
তো বসে আছি…..
– ওহহহহহহ কী যে খিদা লাগছেরে ভাই।
– ধর্য ধর ভাই আর তিন ঘন্টা।
অবস্য আমাদের এলাকার মসজিদের একটা নিয়ম ভালো, রোজার প্রতিদিন সবাই কে পেঁট ভরে বিরিয়ানি দিতে ইফতার করানো হয়।
এই রিতি আমার দাদার আমল থেকে চলে আসছে।
এলাকার ত্রিশ জন মানুষ সেখানে আংশগ্রহণ করে.. যে যেইটা পারে যেটা দিয়েই সবাইকে ইফতার করানো হয়।
ইফতারের সময় জায়গা হয় না, আর তারাবীর টাইমে মানুৃষ খুঁজে পাওয়া যায় না হি হি।
সরি সরি আবেগে তো গল্প থেকে বাহির হয়ে গেছিলাম।
– মাঠের সাইটে একটা বট গাছ আছে তার নিচে বসে আছি…।
এমন সময় একটা পিচ্চি এসে বলল।
– ভাইয়া আপনার নাম কী সাহরিয়া।
– হুমমমমমম… কেনো।
– আপনাকে ঐ নদীর পারে একটা আপু যেতে বললো।
বলেই দৌড়।
– পিচ্চি কী বলে গেলো তাই ভাবছি আমার তো কোন কালেই কোন মেয়ের সাথে কোন প্রকার লেনদেন নেই, এই মেয়েটা আবার কে।
এক মনে যেতে চাচ্ছি না, আবার এক মনে বলছে…
আরে যানা কেমন মেয়ে দেখে আয়।
– এই রোজার সময় ও এই লুইচ্চা মনটা আর ভালো হলো না।
দূর মনের ভিতরে খুতখুতানি না
রেখে যেয়ে দেখে আসি কোন বান্দি
আবার আমাকে ডাকলো।
নদীর পারে হাঁটছি তো হাঁটছিই কোন
মেয়ের তো দেখা নাই।
– তা হলে কী পিচ্চিটা আমাকে বোকা বানালো,
হালার পুত পিচ্চি তোরে এখন কাছে
পাইলেই না লাত্তি দিয়ে পানিতে
ফেলে দিতাম।
এমনি তো খিদা লাগছে কখন যে আযান দিবে।
এমন সময় একটা মেয়ের ডাক।
– এই যে এইদিকে আসুন।
– এদিক ওদিক তাঁকিয়ে দেখি
মেয়েটা একাই দাঁড়িয়ে আছে,
কাছে গেলাম এই নাইন, টেন এ পরে।
– আপনিই কী আমাকে ডাকছেন।
– হুমমমমমমম।
– কেনো।
– আচ্ছা রোজা আছে।
– না মানে হ্যা….।
– এমন করছেন কেন নাই বললেই হয়।
– কেমন মেয়েরে ভাই, এমন একটা
প্রশ্ন করবে ভাবতেই পারি নাই।
– কী ভাবছেন।
– ভাবছি ইউ তো আমার থেকে
ছোট হবা তাই তুমি করে বলি কেমন।
– হুমমমমম।
– তো ক্যান আমারে ডাকছো
শুনি।
– আমি আপনাকে ভালবাসি।
– আমি তো রিতিমতো অবাক,
ঐ পিচ্চি তুমি আমাকে চেনো হুমমমম।
– চিনি বলেই তো ভালোবাসি,
আর আমি পিচ্চি না ঠিক আছে,
আমি ক্লাস টেন এ পরি।
– যা ভাবছি তাই।
– ঐ কী ভাবছেন শুনি।
– তুমি একটা পিচ্চি।
– মোটে ও না আমি আপনার মাত্র
দুই বছরের ছোটো।
– আচ্ছা আপু আমাকে উপর থেকে
যেমন লাগে আমি মোটে ও তেমন না।
তুমি বাসাই যাও কেমন।
– আগে বলেন আমাকে ভালোবাসেন।
– ওহহহহ আল্লাহ্ কী যে করি আমি,
ওকে পড়ে বললো এখন তো যাও।
– ঠিক আছে পড়ে বলবেন কিন্তুু ।
এ কোন জ্বালাই পড়লাম রে ভাই,
আমার দুইটা খেঁজুর কিনে খাওয়ার
সামর্থ্য নাই, আর আমি করমু
কী না প্রেম।
আযানের অপেক্ষা করছি কারণ
আযান ছাড়া তো আর মসজিদে
খাইতে দিবে না তাই।
আমার মতো গরীবের অনেক
কিছু ত্যাগ করতে হয়, এমন
ভালোবাসা আমাদের জন্য না।
দুইদিন পর রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসছি,
এমন সময়।
– সাহরিয়া….।
– আহারে আবার সেই পিচ্চি মেয়েটা,
দেখে মনে হচ্ছিলো ভালোই বড়লোকের মেয়ে… দূর তাতে
আমার কী।
– হুমমমমমম বলো কী বলবা।
– আমি কী বলবো তুমি বলো আমাকে ভালোবাসো।
– মিছেমিছি ফোনটা বের করলাম,
হ্যালো আব্বা,, হ্যা হ্যা আমি
ওখানেই আছি ঠিক আছে আমি আসতেছি।
– এখন টাটা কেমন আমার আব্বা ফোন দিছে, পরে কথা হবে বাই।
ওহহহহ বাঁচলাম এই মেয়ে যে ক্যান যে আমার পিছে পড়ে আছে আল্লাহ যানে।
ওর পিছনেই কিন্তুু অনেক পোলা ঘুরে
আমি সিওর… কারণ মেয়েটা অনেক
সুইট।
আর পাঁচদিন পড়ে ঈদ….
– আব্বাই আমাকে আটশো টাকা
দিয়ে বললো যা যা দরকার কিনে
নিস।
– কেউ এই ঈদে আটশো টাকা মার্কেট
করার জন্য নিবে না আমি জানি,
সবার একটা প্যান্টের দাম মিনিমাম
১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা।
তবে আমি আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে
জানি, এই আটশো টাকাই আমার
কাছে অনেক।
আমার কাছে ছিলো আরো দুইশো
টাকা এই মোট ১০০০ টাকা নিয়ে
পরেদিন মার্কেটে গেলাম,
আমি মার্কেটে যাই ঠিক আছে তবে
ফেরার পথে ফুটপাত এর দোকান
গুলো থেকে জিনিস কিনে আনি।
সেদিন ও কোন বাতিক্রম হলো না
কারণ মার্কেটে আমার ১০০০ টাকা
দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
যা যা দরকার সব জিনিস কিনে
নিয়ে হাঁসি মুখে রাস্তা দিয়ে আসছি,
অল্পের মধ্যেই অনেক সুখ আমি সেটা
জানি।
সামনেই আবার সেই মেয়েটা…
– ঐ সাহরিয়া দাঁড়াও।
– হুমমমম।
– আজকে বলতেই হবে হুমমমম।
– ওকে… তো এখানে কী করছো।
– শপিং করতে আসছিলাস।
– ও হয়েছে শপিং।
– না কিছু টাকা শর্ট ছিলো।
ঐ তুমি এখানে কেনো।
– আমি মার্কেট করলাম।
– কই দেখি দেখি।
– না থাক…. আচ্ছা আমি গেলাম।
– আজকে না শুনে আমি তোমাকে
ছাঁড়ছি না হুমমমমমমমম।
– ওকে… তোমার সকল শপিং এর
ব্যাগ গুলো নিয়ে ঐ সাইটে চলো।
– কেনো।
– এমনি কথা আছে।
– ওকে।
– দেখি মেয়েতো পুরো শপিং মল তুলে
নিয়ে এসেছে।
আসলে ভাই গরিবের মার্কেট আর ওদের মতো বড়লোকের শপিং।
– ঐ চলো নিয়ে এসেছি।
– এবার এই ব্রেঞ্চ এর উপরে রাখো।
– হুমমমমমম।
– আচ্ছা তোমার নাম কী।
– তুবা।
– দেখো তুবা আমি আর তুমি অনেক
আলাদা আমার আর তোমার ভালোবাসা কেউ মানবে না, এটা
নিছক একটা তোমার একটা আবেগ,
আমার সম্পর্কে জানলে তুমি আর আমার আশেপাশে ও আসবা না।
– ওকে কী জানবো আর শুনি।
– ঠিক আছে এখানে কত টাকার
তোমার শপিং আছে।
– বেশি না দশ হাজার টাকার।
– ওহহহহহ, এখানে তুমি খুঁশি ।
– আরে না এখন ও জুতো কেনা
হয় নাই।
– কত লাগবে।
– এই ধরো এক হাজার…. কিন্তুু কেনো।
– আর আমার এখানে কত টাকার
জিনিস আছে জানো,
তুমার জুতো কেনার টাকা দিয়ে
আমি প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, জুতো
সব কিনে নিয়ে আসলাম জানো আর
সাথে একটা ঘড়ি ও আছে।
এই দেখো।
পার্থক্যটা কই জানো তুমি দশ হাজার
টাকার জিনিস নিয়ে ও খুঁশি নও আর
আমি এক হাজার টাকার মধ্যেই সব
কিনে অনেক খুঁশি।
আমি তোমাকে কোন মুখে ভালোবাসি বলবো বলো,
যেখানে তোমাকে খুঁশি রাখতেই পারবো না।
তোমার প্রতিদিনের চলকেট খাওয়ার টাকা দিয়ে আমার একমাস চলে যায়, এই দেখো এই শার্টটার দাম
৩০০ টাকা, আর প্যান্টটা দেখছো
এটা ৩৮০ টাকা আর এই গেঞ্জি ১২০ টাকা, আর ঘড়ি জুতো তে ৩০০ ..
তুমি আমার সাথে একটা দিন ও
থাকতে পারবে না জানো।
তুমি যদি দশ হাজার পেয়ে ও খুঁশি না
হও আর আমি তো তোমাকে ৫ হাজার দিতে পারবো না কেমনে
আমার সাথে থাকবা বলো আমাই।
– দেখলাম তুবা কিছু বললো না,
শুধু আমার দিকে চেয়ে আছে।
আমি আর কিছু না বলে আমার ব্যাগ
তিনটা নিয়ে চলে আসলাম।
ঈদের আর দুইদিন বাঁকী, এই তিনদিন পিচ্চি মেয়েটার সাথে দেখা
হয় নাই।
যাই হোক আর আমার কাছে আসবে না আমি সিওর।
আগের মতোই আবার ঐ স্কুল
মাঠে বসে আছি….
দূর থেকে দেখলাম ঐ সেই তুবা পিচ্চিটা আমার দিকেই আসছে।
কী বলবে আল্লাহ্ জানে…
মনে হয় সরি বলবে।
ওমা তাঁর হাতে দেখি অনেক কয়টা
ব্যাগ।
কাছে এসেই বললো।
– সাহরিয়া নদীর পারে চলো
তোমার সাথে কথা আছে।
– কী কথা এখানেই বলো।
– না ওখানো চলো।
– কী আর করার ঠিক আছে।
– আচ্ছা বলো কী বললা।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– ওহহহহহহহহ…. আচ্ছা তুমি
কী সাইকো হুমম।।
– হ্যা আমি সাইকো, আমার মাথাই
সমস্যা আছে, তাই তো আগের সব কিছু ফেরত দিয়ে আসছি…
তুমি একাই এক হাজার টাকা দিয়ে
সব কিনতে পারো না আমি ও পারি।
এই যে দেখো জামা জুতো সব কিনছি দুই হাজার টাকা দিয়ে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি সাহরিয়া
সত্যি ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি মরেই যাবো জানো।
– হা হা হা..কাঁদছো ক্যান আজব তো.. তুমি না সত্যি একটা
পাগলি হুমমমমম।
– আগে বলো ভালোবাসো।
– আচ্ছা ঈদের পর বলি।
– আমি সত্যি সত্যি পানি তে ঝাপ দিবো হুমমমমমম।
– আচ্ছা যাও তোমার কথাই
হইলো।
– কী কথা।
– ঐ যে ভালোবাসি।
– এটা কেমন কথা।
– কেমন আবার তুমি না বললা।
– ঐ ভালো করে বলো না ভালবাসি।
– আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– সত্যি তো।
– হুমমমমমমম।
– এটা তোমার।
– কী এটা।
– পাঞ্জাবী …..।
– কার জন্য।
– তোমার জন্য।
– দেখি।
– এই নাও।
– এটা কতো দিয়ে কিনছো সত্যি
বলবা।
– ৫০০ টাকা।
– মিথ্যা বলো ক্যান এটা আমি দেখছি এটার দাম ২৫০০ টাকা।
– তো কী হয়েছে।
– না এটা আমি নিতে পারবো না, কারণ এটা আমার হজম হবে না,
তার থেকে বরং এটা আমাদের এলাকার টং দোকানদার রফিক ভাইয়ের ছেলে কে দিবো,
ওর না একটা কিছু ও নাই কলেজে
পড়ে, আমার তো সামর্থ্য নাই তুমি
যদি বলো তাহলে দিতে পারি।
না হলে নিয়ে যাও।
– আরে বোকা দিবা তো কী হয়েছে।
– আচ্ছা ওকে।
একটা কথা বলবো।
– হুমমমম বলো।
– একটা পাপ্পি দিবা।
– ওকে বসো এখানে।
– ঐ এই সব কী।
– তোমার মতো তো আর আমি না
যে রোজা থাকবো না।
এক সাথে ইফতার করবো তার পরে পাপ্পি।
– তুমি না সত্যি একটা পাগলি
জানো।
– হুমমমমমমম তোমার পাগলি,
সাহরিয়া এর তুবা পাগলি বুঝলা।
– ওকে ওকে আযান দিছে হা করো।
– কী দিচ্ছো…।
– খেজুর।
– তুমি খাও।
– ও আমার হাতে খাবা না তো,
ঠিক আছে সরি।
– আরে বোকা দূর খালি উল্টা বোঝ কেন, দাও খাচ্ছি।
– তুমি রোজা আছো তাইতো খাইয়ে
দিছি পাগলি।
– হুমমমমমমম পাগল।
– আচ্ছা পিচ্চি এবার পাপ্পি দিবা।
– হুমমমমম।
– তুমি না অনেক কিউট হি হি হি।
আসল ভালোবাসা গুলো হয়তো এমনি হয় তাই না……।