– এই সাহরিয়া এখানে বসে বসে
কী করিস.. (নিধি)।
– কিছু নারে এমনি বসে আছি
ভালো লাগছিলো না তো তাই।
– তোর কী হইছে বলতো।
– না কিছু না এমনি… তোর আবির
ভালো আছে।
– হুমমমমমমম।
– আচ্ছা আমি গেলাম কেমন।
– আবার কই যাবি।
– বাসাই একটু কাজ ছিল.. আচ্ছা
থাক, ওই তো আবির ভাই আসছে
আমি গেলাম।
– বাসাই চলে আসছিলাম…
আর ভাবছি যারে এত্ত ভালবাসি
তারে বলতেই পারলাম না যে
ভালোবাসি।
এর আগেই অন্য কেউ এসে তারে
নিয়ে চলে গেল….
আসলে ভালবাসি কথাটা লুকিয়ে
রাখতে নেই।
বলতেই পারলাম না যে নিধি
তোকে অনেক ভালোবাসিরে
অনেক।।
দুই মাস পূর্বে……..
– ওহহহহ মামা একটু তাড়াতাড়ি
যান… এমনিতেই অনেক লেট
হয়ে গেছে।
কলেজের গেট এ এসেই রিক্সা ওয়ালা মামাকে ভাড়াটা দিয়েই
ক্লাসের দিকে দৌড়।
এমনিতো এত্ত লেট, তাঁর মধ্যে
আবার খিটখিটে স্যারটার
ক্লাস.. কী বলে যে অপমান করে
আল্লাহ্ যানে ।।
সিড়ি দিয়ে এক প্রকার দৌড়ে
উঠতেছি।
ক্লাসের সামনে যেতেই অপর দিক
থেকে আসা একটা মেয়ের সাথে
সজোরে ধাক্কা….
স্যার সহ সবাই হা করে দেখছে
আমরা এমন ভাবে পড়ে আছি…
মেয়েটার দিকে তাঁকাতেই বুঝলাম
সে ও আমার মতোই লেট করে এসেছে…
আর হেব্বি রেগে আছে মনে হয় আমাকে খেয়ে ফেলবে….।
ক্লাসের সামনে জন্য বেঁচে গেছি..
ক্লাসে ঢুকলাম…
স্যার সেদিন কিছুই বলে নাই।
ক্লাস শেষ করে বাহিরে দাঁড়াই দাঁড়াই
রিবিক্স কিউব মিলাইতেছি…
এমন সময় পিছন থেকে একটা টার
অনুভব করলাম,
কেউ শার্টটা ধরে টান দিলো।
– পিছনে তাঁকাতেই দেখি,,,
সেই মেয়টা।
– ঐ আপনার চোখ কই থাকে
হুমমমম, ওমন বাঁদরের মতো লাফাইতে লাফাইতে কেউ ক্লাসে
আসে,
আপনাকে এখন ধরে ইচ্ছে মতো
মাইর দেওয়া পারলে ঠিক হয়,
মিনিমাম ভদ্রতা ও জানেন না
দেখছি….. সরি
তো বলতে পারেন।
– শেষ…..
– কী শেষ।
– এই যে আপনার লেকচার…
কথা গুলো তো আমি ও বলতে
পাড়তাম তাই না,
কারণ আমি ভদ্র তাই বলি নাই।
– কীইই তার মানে বলতে চাচ্ছেন
আমি অভদ্র।
– হুমমমম… তা নয়তো কী হুমমমম
এক হাতে কোনদিন তালি বাজে না।
– আপনার সাথে কথা বলাই আমার
ভুল।
– আচ্ছা… আমি সাহরিয়া…।
– তো।
– যেহেতু একই সাথে পড়ি তাই
নাম জানা দরকার,
এই ধরেন আপনার কোন দরকার
হলো স্যার দের, আর
আমারকে বললে চিনবো কেমনে।
– এত্ত কথা বলতে হবে না… আমার নাম নিধি।
– হুমমমম…. আর একটা কথা।
– বলেন।
– এই যে… আমরা যদি এমন আপনি
আপনি করে কথা বলি না তাহলে
সবাই ভাববে।
আমরা হবু স্বামী স্ত্রী ।
– কী কেন।
– কারণ তারাই এমন আপনি আপনি
করে কথা বলে।
– হা হা হা… তা হলে কী বলবো।
– আচ্ছা… নতুন পরিচয় তো
এখন তুমি বলাই বেটার….
কিছুদিন গেলে তুই…বুদ্ধিটা ভালো
না।
– হুমমমম… আজকে তাহলে
বাই কেমন।
– হুমমমমমম….
আর হ্যা আমি সাহরিয়া ।
– ওই এত্ত বলার কী দরকার।
– না মানে যদি মনে না থাকে
তাই।
– ওকে……
ওই হ্যালো আমি নিধি।।
– তুমি আবার কেন।
– তোমার মনে না থাকলে।
– হি হি হি ওকে।।
এভাবেই তুমি থেকে তুই…।
– ঐ কিত্তা কই তুই।
– এই টং দোকানে বসে বসে টাংকি
মারি।
– তুই খালি আমার সামনে আয়
তোরে লাত্তি দিয়ে মেরে ফেলমু।
– কেন কী হইছে।
– কিছু না…. তারাতারি বটতলা আয়।
– ওকে তুই একদম ওখানেই থাক
আমি আসতেছি।
– হুমমমম তাড়াতাড়ি আয়।
এক দৌড়ে চলে গেলাম..।
– এবার বল কী হইছে।
– আবির আমাকে প্রপোজ করছে।
– ওয়াও ভালো তো।
– আমি ও অনেক টেনসনে
আছি রে।
– কেনো… আবির তো অনেক ভালো
ছেলে… ভদ্র, কোন নেশা করে না,
বাবা অনেক টাকা আছে, দেখতে
ও ভালো।
এক কথাই আমার থেকে শত গুণ ভালো।
– দূর চুপ থাক তো, কী করবো এখন
বল।
– আমি কী জানি তুই যা ভালো
মনে করবি তাই।
– ভাবছি হ্যা বলে দিবো।
আমার ও আবির কে ভালো লাগে।
– আচ্ছা ওকে, আমি
গেলাম।
বলে চলে আসলাস…
– খুব মন খারাপ নিজের মনের
কথাটাই বলতে পড়লাম না,
নিধি আর আবিরকে এক সাথে
দেখলে বুকটা ফেঁটে যেতো।
কী করব এখন কিছুই করার নাই,
আমি এমনই হাঁসি মুখে সব
হজম করতে পারি।
সেই ক্ষমতা আমার আছে।
শুধু রাতে সব থেকে বেশি কষ্ট হতো
বালিশটা এমনিতেই ভিজে যেতো।
এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে
চোখটা জাপসা হয়ে গেছে বুঝতেই
পারিনি।
হঠাৎ আবার পিছন থেকে একটা টান
অনুভব করলাম।
পিছনে তাঁকাতেই দেখি নিধি।
– ঐ তোর কী মাথা ঠিক আছে,
কী হইছে তোর বলতো,
আমি না থাকলে কী হতো আজকে।
এমন হয়ে গেছিস কেনো বলতো।
আরে গাধা কিছু তো বলবি নাকি।
– কিছু না… আবির ডাকছে
যা।
– না তোকে বাসাই দিয়ে আসি চল।
– আরে না লাগবে না,,, আমি
একাই যেতে পারবো।
তোরা ভালো থাকিস,
আমি গেলাম।।
বলেই চলে আসলাম,
কিছুই ভালো লাগছিলো না
মনে হচ্ছিলো এখান থেকে দূরে
চলে যাবো।
সব ঠিক করলাম কালকে কলেজ
থেকে এসেই এখান থেকে চলে যাবো।
পরের দিন কলেজে গিয়ে,,
ক্লাসের একদম পাশের সিটে বসে
আছি।
একটু পরে দেখলাম নিধি আর আবির আসলো,
তাঁদের না দেখার ভান করে রইলাম।
একটু পড়ে স্যার আসলো,
ক্লাস শুরু হলো….
হঠাৎ স্যার বলে উঠলো…
আজকে ক্লাস বাদ…
আজকে বিনোদন মূলক
ক্লাস হবে ….
রাফি যাতো তোর গিটারটা নিয়ে আয়।
– ওকে স্যার…
তারপরে রাফি একটা গান গাইলো।
– এবার কে গান গাইবে…
সবার নজর আমার দিকে।
– সাহরিয়া এই দিকে এসো।
– স্যার আমি গান পারি না।
– ওকে যা পারো তাই।
– এসে এবার।
– ওকে স্যার….।
– নে মামা ফাটাই দে.. রাফি
গিটার টা দিয়ে বলল।
– স্যার আমি পারি না।
– যা পারো তাই।
এমনিতে মনটা খারাপ কোন
গান মাথাই আসছে না।
নিধির দিকে চোখটা পরতেই
সালমান সাহ্ এর সেই গানটা
মনে পড়ে গেলো।
>>><<<
তুমি আমার মনের মানুষ
মনেরি ভেঁতর…
তুমি আমার জান বন্ধু
অন্তর এর অন্তর…
কোনদিন ও কইরো না গো তুমি
বন্ধু পর….
তোমার… এত ভালোবাসা আমি
বলো কোথায় রাখি।
বুকের খাঁচাই বন্দি থেকো
ওগো অবুঝ পাখি।
তোমার প্রেমে আমি অন্ধ ফিরে যাওয়ার পথ বন্ধ,
ইচ্ছে করে জনম ধরে
করি গো আদর….।
তুমি আমার জান বন্ধু
অন্তর এর অন্তর।
কোনদিও কইরো নাগো
তুমি বন্ধু পর………….।
– হঠাৎ লক্ষ করলাম নিধির চোখ
দিয়ে পানি পড়ছে।
আমার চোখে হাত দিতেই
দেখলাম আমার চোখ ও ভেঁজা,
সমস্ত ক্লাস একদম চুপ,
স্যার ও চুপ… আমি গিটার টা
টেবিলে রেখে চলে আসলাস বাহির।
ঠিক করলাম আজকেই
চলে যাবো।
হঠাৎ পিছনে ফিরতেই দেখি
নিধি আমার দিকে আসছে।
একেবারে কাছাকাছি চলে আসলো
আমি ওর দিকে তাঁকাই আছি।
এবার কাছে এসেই জরাই ধরলো….
– ঐ পাগলি কী করছিস,
আবির কী ভাববে।
– যা ভাবে ভাবুক…
তুই আমাকে আগে বলিস নাই
কেন যে আমাকে ভালবাসি।
– তোকে কে বলল আমি তোকে
ভালবাসি।
– আমি সব বুঝি….
– আরে দূর।
– চুপ এত মিথ্যা কথা বলিস কেন,
আর লুকাই কষ্ট পাবি,
আমি আর সেটা হতে দিবো না।
– আবির আসছে।
– আসুক আমি তোকে ভালবাসি,
বুঝলি।
– তা হলে আবির এর কী হবে।
– ওকে তো এখন ও কিছুই বলিনি।
– কী….. তাহলে এতদিন।
– আমি জানতাম তুই একটা
বোকা, তুই আমাকে ভালবাসিস।
কী করিস তাই দেখছিলাম গাধা।
– আমি আজকেই তো চলে যেতাম।
– যাবিই তো কোন তো বুদ্ধি সুদ্ধি
আছে তোর মাথাই গাধা।
– আচ্ছা ওকে…. শুধু শুধু এতদিন
কষ্ট পেলাম।
– আর পাবা না, এবার চলো
ক্লাস এ সবাই বসে আছে।
এত্ত ভালো গান গাও বলো নিতো
আগে।
– দূর কই।
– চুপ এবার থেকে সব সময়
আমাকে গান শুনাবা কেমন।
– ওকে।
– চলো এবার।
এখন একটা কথাই মনে হচ্ছে…
ভালবাসি কথাটা মনের ভেতর
রাখতে নেই।
হয় ভাল কিছু হবে… আর না
হলে অযথা কষ্ট পেতে হবে না।
>>সমাপ্ত<<
>>The End<<