আইসক্রীমে সবেমাত্র একটা কামড় বসিয়েছি এমন সময় দেখি আলিয়া রাগী একটা লুক নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। গতকাল রাতে যখন মোবাইলের চার্জ শেষ হওয়ার ফলে মোবাইল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন বুঝেছিলাম কপালে শনি আছে।
তবে শনি যে এত তাড়াতাড়ি চলে আসবে তা বুঝতে পারিনি। আজ আলিয়ার সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না। কারন আজ শুক্রবার, আজকে আলিয়া বাইরে বের হয়না।
কিন্তু আমার কপালে শনি আছে বলেই হয়তো আজ আলিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল।
যাই হোক আমি আইসক্রীমে দ্বিতীয় কামড় দেওয়ার আগেই আলিয়া বড় বড় চোখদুটো নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আলিয়ার চোখদুটো দেখলে প্রতিদিনই সিরিয়াস লেভেলের ক্রাশ খাই। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।
আলিয়া আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি হাতে থাকা আধখাওয়া আইসক্রীমটা আলিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম ” আইসক্রীম খাবে আলিয়া? ”
এবার আলিয়া তার চোখদুটো আরো বড় করে আমার দিকে তাকালো। মনে হলো সে আরেকটু রেগে গেছে। আমি বাড়িয়ে দেওয়া আইসক্রীমটা আবার আমার মুখের কাছে এনে যেই আরেকটা মোক্ষম কামড় বসাতে যাবো তখনই একপ্রকার বাজপাখির মত ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে আইসক্রীমটা কেড়ে নিল আলিয়া।
তারপর আমার বদলে সে আইসক্রীমে একটা কামড় বসিয়ে বসে পড়লো আমার পাশে।
আমি এমন একটা ভাব ধরলাম যে আলিয়ার সাথে আজ দেখা হওয়ায় আমি মোটেও অবাক হয়নি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমি বেশ অবাক হয়েছি।
প্রথম যখন আলিয়ার সাথে প্রেম শুরু করেছিলাম তখন সবসময় আলিয়াকে দেখতে ইচ্ছে করতো। তখন প্রত্যেকদিন আলিয়ার সাথে দেখা করতাম। শুধুমাত্র শুক্রবার আলিয়া আমার সাথে দেখা করতো না। দেখা করার কথা বললেই সে বলতো ” আজ ছুটির দিন। চাকরীজীবীদের যেমন ছুটি দরকার তেমনি প্রেমিক প্রেমিকাদেরও ছুটি দরকার।”
ওর এই কথা শুনে শুধুই হাসতাম। আসলেই পাগলী মেয়ে একটা।
..
– কালকে রাত্রে ফোন বন্ধ ছিল কেন?
আলিয়ার এই কথায় অতীত থেকে বর্তমানে অবতরন করলাম। আলিয়ার হাতের অাইসক্রীমটা শেষ হয়ে গেছে।
– আলিয়া আরেকটা আইসক্রীম খাবে?
– তোমাকে যেই প্রশ্ন করা হয়েছে আগে সেই প্রশ্নের উত্তর দাও।
– কোন প্রশ্নের উত্তর?
– রাত্রে ফোন বন্ধ ছিল কেন?
– মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল।
– মিথ্যা কথা বলো কেন? আমার কথা শুনতে বিরক্ত লাগে তাই মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিলে তাইনা?
– তোমার কথা শুনতে আমার বিরক্ত লাগবে কেন? কি বলো পাগলের মত?
– হুম এখন তো আমাকে পাগল মনে হবেই। সারারাত জেগে থেকে কোন মেয়ের সাথে চ্যাটিং করো হুম?
– কি বলো আবোল তাবল? সারারাত জেগে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না এটা তুমি ভাল করেই জানে।
– ও তারমানে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করো?
– আজব এইটা কখন বললাম?
– বলতে হয়না, চেহারা দেখেই সব বুঝি আমি।
– ওরে আমার সবজান্তা শমসের, চেহারা দেখে কেমনে বুঝলে আমি রাত জেগেছি হুম?
– বলছি, তার আগে একটা আইসক্রীম নিয়ে আসো।
– একটা কেন? দুইটা নিয়ে আসি?
– দুইটা দিয়ে কি করবা? একটা নিয়ে আসতে বলছি নিয়ে আসো।
– আমি খাবোনা?
– এত্তো কথা বলো কিভাবে? যাও একটা আইসক্রীম নিয়ে আসবা। বেশি আনলে খবর আছে।
অতঃপর মহারানীর ইচ্ছে মোতাবেক একটা আইসক্রীম আনা হলো।
– শোনো আইসক্রীম একটা কেনো আনালাম বলতে পারো?
– নাহ পারিনা। তুমিই বলে দাও।
– এই একটা আইসক্রীম আমরা দুজনে ভাগাভাগী করে খাবো। তুমি এক কামড় আর আমি এক কামড়। এভাবে খেলে কি হবে জানো?
– কি হবে?
– আসো কানে কানে বলি।
– আশেপাশে কেউ নেই। কানে কানে বলার কি দরকার?
– কিছু কিছু কথা কানে কানে বলতে হয়।
মাথাটা আলিয়ার মুখেরে সামনে নিয়ে বললাম,
– বলো কি বলতে চাও।
আলিয়া আমার মাথাটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,
– এখন বলার মুড নেই। পরে বলবো কোন একদিন।
যাহ বাবা! এই মেয়েটা এতো আজব কেন?
– কথা ছিল আইসক্রীম দুজনে খাবো। কিন্তু তুমি তো একাই সাবাড় করে দিলে পুরোটা।
– আইসক্রীমের ভাগ দেওয়ার মুড নেই এখন। অন্য কোনদিন ভাগ পাবে।
মেয়েটা আসলেই পাগলী। কখন কি করে নিজেই জানেনা।
– আচ্ছা আলিয়া চলোনা আমরা বিয়ে করে ফেলি।
আমার কথা শুনে আলিয়া অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। ওর চোখ তখন চকচক করছে।
– সত্যিই তুমি এখনি আমাকে বিয়ে করতে চাও? চলো তাহলে কাজী অফিসে যাই।
এই কথা বলেই আলিয়া আমার হাত ধরে টানতে লাগলো। আরে আমি তো কথার কথা বললাম, আর এই মেয়ে সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে।
– আরে আলিয়া হাত ছাড়ো। এত জোরে হাত টানলে যেকোন সময় হাত ছিড়ে যেতে পারে।
– নাহ ছাড়বো না। আজ আমাকে তোমার বিয়ে করতেই হবে।
– আরে আমি তো কথাটা এমনি বললাম। আর তুমি দেখছি সিরিয়াসলি নিয়ে নিলে।
একথা শুনে আলিয়া ধপ করে আমার পাশে বসে পড়লো। ওর চোখ থেকে হঠাৎ পানি পড়তে শুরু করলো।
– আলিয়া কাঁদছো কেন?
-……………….
– এই আলিয়া কি হলো কাঁদছো কেন হঠাৎ করে?
– (কাঁদে কাঁদো কন্ঠে) তার মানে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না? তাহলে আমার সাথে প্রেম করছো কেন? আমাকে আইসক্রীম খাওয়াচ্ছো কেন?
– আরে বাবা তোমাকে আমি বিয়ে করবো না একথাটা কখন বললাম?
– একটু আগেই তো বললা।
– আরে ধূর কি বলি আর কি বোঝে। তোমাকে ছাড়া আমি কি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারি বলো?
– সত্যিই বিয়ে করবা তো?
– সত্যি সত্যি তিন সত্যি।
– তাহলে বিয়েতে আমাকে দেনমোহর হিসেবে এক ট্রাক আইসক্রীম দিতে হবে!
এক ট্রাক আইসক্রীম? মেয়েটার মাথায় কি চলে সবসময় কে জানে?
– আচ্ছা দেবো। এখন চলো বাসায় যাই।
– নাহ যাবো না এখন।
– তো কি করবে?
– তোমার কাঁধে মাথা রেখে বসে থাকবো কিছুক্ষন।
– ঠিক আছে বসে থাকো তাহলে।
..
ভালবাসি আমার আইসক্রীম পাগলীকে। ভালবাসি আমার হবু অর্ধাঙ্গিনীকে। ভালবাসি আমার আলিয়াকে।
:
———————- সমাপ্ত ———————-
গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক