হাত জোড় করে নিশির সামনে তৃতীয় বার যখন দাড়ালাম ,নিশির চেহারাটা দেখে এমন মনে হল যে পারলে ও আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে । আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই নিশি বলল
-তুমি আবার আমার সামনে এসেছ ?
-বাবু আমি কার সামনে যাবো বল ? খুব নিরীহ কন্ঠে বললাম ।
-তুমি ছাড়া আর আমার কে বল ? অন্য সময় হলে হযতো এই কথাতে কাজ হত কিন্তু আজ হল না । নিশির মুখের কাঠিন্য বিন্দু মাত্র কমলো না ।
-শোন, তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগছে না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমার কথা শুনতে হবে না । আমি আর একটা কথাও বলব না । তোমার পাশে একটু বসে থাকি?
-না ।
নিশি বেশ জোরেই চিত্কার করে উঠল । এতো জোরে যে আশেপাশের বেশ কয়েকজন ফিরে তাকালো । কেউ কেউ আবার দাঁত বের করে হাসল । আমার করুন অবস্থা দেখে যেন খুব মজা পাচ্ছে । আমার জায়গায় পড়তে তাহলে বুঝতে ।
নিশি বলল -তুমি আমার পাশে বসবে না । তোমার গায়ের গন্ধে আমার বমি চলে আসছে । তুমি দুর হও ।
আমি নিজের শরীরের কাছে নাকটা এনে গন্ধ শুকার চেষ্টা করলাম । সকালবেলা পানির অভাবে গোছল করে বের হতে পারিনি । সত্যি কি গন্ধ বের হচ্ছে ? দুতিনবার শুকে দেখলাম । কই না তো । বলল
-কই বাবু, এমন কোন গন্ধতো বের হচ্ছে না যে বমি চলে আসবে । আর সেদিন যে বডি স্প্রেটা কিনে দিলে না সেটাইতো দিয়ে এসেছি । শুকে দেখো ! এই বলে আমি নিশির দিকে এগিয়ে গেলাম । নিশি আবার চিত্কার করে উঠল ।
-তুমি আমার সাথে ঢং করছো ?
-না বাবু ঢং কেন করবো ? তুমি বললে যে ….
-চুপ ! একদম চুপ । তুমি আমার দুচোক্ষের সামনে থেকে দুর হবা । এখনই দুর হবা । আমি কোন কথা শুনতে চাই না।
নিশির চেহারা দেখে আসলেই মনে হল ও খুব রেখে গেছে । এখন ওর সামনে থেকে চলে যাওয়াই ভাল । কিন্তু এখন যদি নিশির সামনে থেকে চলে যাই হয়তো ওর রাগ আর ভাঙ্গাতেই পারবো না । আসলে নিশি আমার উপর খুব একটা বেশি রাগ করে না ।
অন্যান্য বন্ধুদের গার্লফ্রেন্ডরা তাদের কে যেমন করে জ্বালায় কথায় কথায় উঠবস করায় নিশি সেই তুলনায় অনেক ভাল । কিন্তু নিশি মিথ্যা কথা বলাটা একদম পছন্দ করে না । আর আমি ঠিক এই অপরাধ করেছি ।
ঘটনা এমন কিছু না । গতকাল সকালবেলা নিশি ফোন করে বলল
-বিকেলবেলা আমাকে একটু সময় দিতে হবে ।
আমি বললাম -না মানে ….।
-কি মানে ? সপ্তাহে ছুটির দিন একটা । তাও তোমার সময় হবে না আমার জন্য ?
-না বাবু ঐসময়ে একটা জরুরী কাজ আছে !
-কি জরুরী কাজ ?
এখন নিশিকে কিভাবে বলি যে নোভার সাথে ডেট ফিক্স করা আছে । এই কথাতো আর বলা যায় না ।
আমি বললাম -বাবু আমার এক দুঃসম্পর্কের চাচা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আছে । ওনাকে দেখতে যেতে হবে ।
-যেতেই হবে ?
-হুম ।
-আমিও যাই তোমার সাথে ?
-কি বল ? আম্মুকেও নিয়ে যেতে হবে যে বাবু !
-ও ! আচ্ছা আর কি করা!!
আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম । একটা মিথ্যা কথা বললে কত গুলো মিথ্যা বলতে হয় । আমি ভেবেছিলাম মিথ্যা বলেই আমি পার পেয়ে যাবো ! কিন্তু হায় ! আমি যদি জানতাম তাহলে ….
নোভার ট্রিট ছিল বসুন্ধরায় । বিকেল বেলা গেলাম । নোভার সাথে আড্ডার পর খানা দানা চলে এল । কেবল মাত্র চিকেনের পিচটা মুখে নিয়েছি দেখি নিশি সামনে দাড়িয়ে । আমার মনেই ছিল না যে ছুটির দিনে নিশি প্রায়ই বসুন্ধরায় আসে । মনে থাকলে এখানে আসতামই না ।
তারপর থেকে নিশির মোবাইল বন্ধ । আজ আমার বন্ধু ফোন করে বলল যে নিশি এখানে আছে । তাই দৌড়ে চলে এসেছি । আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নিশি নিজেই উঠে দাড়াল ।
-বাবু শোন প্লিজ । তুমি জানো নোভা আমার ফ্রেন্ড । ও আমাকে অনেক আগে থেকেই বলে রেখেছিল । আমার কথা শুনে নিশি ঘুরে দাড়াল ।
-ভাল কথা সময় দিয়ে রেখেছিল । তুমি আমার কাছে মিথ্যা কথা কেন বললা ? তুমি জানো আমি মিথ্যা কি পরিমান ঘৃণা করি ।
-বাবু আমি বুঝতে পারি নি । প্লিজ এই বারের মত ক্ষমা করে দাও । নিশি কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল । হাত দিয়ে কি যেন বলতে গেল । তার পর ঘুরে হাটা দিল । আমি আবার পিছু নিলাম ।
-শোন……. শোন……… প্লিজ শোন । বাবু শোন ।
নিশি আবার ঘুরে দাড়াল । আঙ্গুল তুলে বলল
-তোমাকে বলছি না পেছন পেছন আসবে না । ভাল হবে না । নিশি আবার হাটা দিল ঘুরে । যদিও বলল যে পিছনে না আসতে কিন্তু ধা গেলে কি হয় ?
-শোন প্লিজ .. আমি নিশির পিছন পিছন দৌড় দিলাম ।
ঠিক তখন কোথা থেকে মস্তান গোছের কয়েকটা ছেলে আমাকে ঘিরে ধরল । আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন আমার কলার চেপে ধরে বলল
-দিনে দুপুরে ইভটিজিং করিস ।
-এই কি করছেন ? আমি কিছু বলার চেষ্টা করলাম আর একজন আমাকে ধাক্কা দিল ডান দিক দিয়ে । কোন মতে তাল সামলে পড়ার হাত থেকে বাঁচলাম ।
-আমাদের এলাকায় মেয়েদের টিজ করিস !
-দেখুন , আপনারা যা ভাবছেন তেমন …. আমার কথা শেষ করতে পারলাম না । ছেলে গুলো আবার আমার দিকে এগিয়ে এল । কি করবো ?
ছেলেগুলো দেখে খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না । এরা প্যাদানী দেবার মনভাব নিয়েই এসেছে । আর পাকলিকও সাপোর্ট দিবে ওদের । অনেকেই আমাকে নিশির পিছনে দৌড়াতে দেখেছে ! খানিকটা ইভটিজিংয়ের মতই মনে করবে ! এখন কি করবো ? দৌড় দিবো ? কিন্তু এদের সাথে দৌড়েও তো পারবো না । তখন তো আরো বেশি প্যাদানী দিবে । ছেলেগুলো যখন খুব কাছে চলে আমি মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম তখন ….
-আপনারা কি করছেন ? কন্ঠটা নিশির । ছেলেগুলো একটু যেন থামল ।
-আপনাকে ও টিজ করছিল একটা ছেলে বলল ।
-সেটা আমায় বিষয় । এই বলে নিশি ছেলে গুলোর মাঝ থেকে আমাকে হাত ধরে নিয়ে হাটা দিল । একটা ছেলে বলে উঠল
-আজ কাল তো ভালর জামানাই নেই ! নিশি বলল
-আপনাদের বোঝা উচিত্ যে টিজ করছে আর কে করছে না । ছেলে গুলোর কাছ থেকে একটু গিয়ে নিশিকে বললাম
-যাক!! অবশেষে আসলে তুমি ! আজতো গেছিলাম !
-আকাম কুকাম করলে তো যাবাই ।
-আরে কুকাম করলাম কোথায় ? তোমার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলাম । এটা কি আকাম বল ?
-হয়েছে । এবার চুপ থাকো । যাক নিশির রাগটাতো খানিকটা শান্ত হয়েছে । বললাম
-ছেলেগুলো এসে কিন্তু একটু ভালই হল ।
-কি ? তোমার রাগটাতো একটু কমেছে ।
-ও তাই না ? যাও …. নিশি আরো কিছু বলতে গেল , আমি বলল
-প্লিজ শোনা পাখি আর রাগ করে থেকো না । আমি আর কোন দিন তোমার কাছে মিথ্যা বলব না । প্লিজ । নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু হাসল ।
-আর কখনও মিথ্যা বলবা না তো ?
-কখনও না বাবু । কোন দিনও না ।
যাক নিশিকে শান্ত করা গেল । আসলেই সিনেমা জীবনে ভিলেন দের ভূমিকা ব্যাপক ! নায়িকাদের সিমপ্যাথি পাওয়া যায় কত সহজে.। সত্যি বলতে গেলে ছেলেগুলোর জন্য নিশির রাগ পড়ে গেল । তা না হল কি করে ভাঙ্গাতাম ওর রাগ কে জানে !!
নিশি সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকল । ওকে রিক্সায় তুলে দিয়ে যখন ফেরার পথ ধরলাম । তখনই বিকেল বেলার ঐ ছেলেগুলো আমার পথ আগলে ধরল । এগোতে লাগলো আমার দিকে । যে ছেলেটা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল সে এবার সবার সামনে ।
নিশির জন্য তখন আমাকে ঠিক মত প্যাদানী দিতে পারে নি এখন তো নিশি নেই আর সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে এখন নিশ্চই প্যাদানী দেবে । ছেলেগুলো একদম আমার কাছে এসে দাড়াল । যে ছেলেটা আমাকে ধাক্কা মেরেছিল সে আমার সামনে এসে বলল
-অপু ভাই বেশি জোড়ে ধাক্কা মারি নি তো ?
-আরে না না । সমস্যা নাই ।
-না ভেবেছিলাম একটু জোরেই বোধহয় ধাক্কা মেরে দিলাম । আসলে, ক্যারেট্টারে চলে ঢুকে পরেছিলাম তো, তাই । আমি হেসে বললাম
-না না কোন সমস্যা নাই । তোমাদের জন্যই তো ওর রাগটা পানি করতে পারলাম । পকেট থেকে ৫০০ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিলাম ।
-মিষ্টি খেও । এই বলে বাড়ির দিকে হাটা দিলাম । গার্লফ্রেন্ডের রাগ ভাঙ্গাতে কত কিছু করতে হয় !!