– ঐ পেত্নী তুই গাছে কেন?
– তাতে তোর কি?
– তোর কারনে কি গাছের একটা পেয়েরাও খেতে পারব না?
– তোরে না করছে কে? মন চাইলে গাছে ওঠে পেরে খা!
– এই তোর কি কোন লজ্জ্বা নাই? অন্যের গাছের জিনিস চুরি করে খাস?
– না আমার কোন লজ্জ্বা নাই তাই চুরি করে খাই! তবে তোর মত তো বেহায়া না?
– ঐ আমি বেহায়া মানে? তোর সাথে কি বেহায়াপনা করছি বল?
– আসলে তোর লজ্জা নাই!
– লজ্জ্বা নাই মানে?
– তোরে না কইছি তুই আমার লগে কথা কইবি না! তাইলে কথা কস কেন তোর কি লজ্জ্বা আছে? আমি অনই। আর এই গেছো মেয়েটার নাম মীম। কোঁদালের মত দাঁতগুলো বের করে হাসছে। তার হাসি দেখে মনে হচ্ছে আস্ত একটা ডায়নি। বুঝলাম এই পাগলির সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। চামড়াটা গন্ডারের মত। কোন কথায় তার গায়ে ফুটে না।
সারাদিন তার কাজ হল ভার্সিটিতে যাওয়া আর বাকি সময় আমার মুণ্ডুপাত করা। ও একা না। সাথে আরও একটা বাচ্চা ডায়নি আছে। মীমেরি আপন চাচাতো বোন আমেনা পাগলি। ভাল নাম আমেনা ইসরাত। কিন্তু তার কার্যকলাপের কারনে আমেনা পাগলি নামেই পরিচিত। মীমের চেয়েও এক লাইন এগিয়ে আছে। মীম স্ক্রিপ্ট লিখে আর আমেনা পাগলি অভিনয় করে। তাদের যৌথকাজের ফলাফলে আমার অবন্থা ছেড়ে দে মা কাইন্দা বাচি। তাদের প্রতিদিনের সকালটা শুরু হয় আমার বাগানে গিয়ে ফুলের মুণ্ডুপাত করে। আর শেষ হয় আমার মুণ্ডুপাত করে।
এইতো দুইদিন আগের কথা। আমার বিয়ের কথা চলতেছে। মেয়ের মা, ছোটবোন আর ফুফু এসেছে আমাদের বাসায় আমাকে দেখতে। সকালে মীম তার আদরের বাদর বিড়ালটাকে সাথে নিয়ে আমাদের বাসায় এসেছিল। তখনি মার কাছ থেকে জেনে গেছে আজ আমায় দেখতে মেয়ে পক্ষ আসবে। আর নিজের বাসায় ফিরেই মস্তিষ্কের সব শয়তানি মিশিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখে ফেলেছে। আর আমেনাকে দিয়ে মুখস্ত করিয়ে নিয়েছে পুরো স্ক্রিপ্ট।
আমি রহিম আর ইদ্রিস চাচাকে নিয়ে তখন পুকুরে মাছের খাবার দিচ্ছি। এমন সময় মেয়ের বোন এসে আমার দাড়িয়েছে। কৌশল বিনিময় শেষে দাড়িয়ে মাছের খাবার দেয়া দেখছে। এমন সময় হঠাৎ দেখি আমেনা পাগলি পুকুরের দিকে আসছে।
প্রথমে দেখে চিনতে পারিনি। একটু কাছাকাছি আসতেই নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারতে ছিলাম না। নীল শাড়ীতে আমেনা পাগলিকে কি যে অপরুপ লাগতেছিল যেন স্বর্গ থেকে পরী নেমে এসেছে।
“পাগলির পাণে আমার স্থির দৃষ্টি” “বিধাতার স্বীয় হস্তের কি অপরুপ সৃষ্টি” “আমার বক্ষে এ কোন সুরের বীণ” “এমন মেয়ের অন্বেষনেই তো ধরে বহুদিন”
((((((((বি.দ্রঃ ছোট মেয়ে আর সদ্য বিবাহীত নারী সব পুরুষেরই আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু)))))))
হঠাৎ-ই আমেনা পাগলির হাতের ইশারায় স্বরপে ফিরলাম। মেয়ের ছোট বোনকে ইশারায় তার কাছে ডাকছে। মেয়েটি কাছে যাওয়ার পর তাদের মাঝে যে কথোপকথন হল তা শুনে আমি নির্বাক।….
– হাই আমি আমেনা ইসরাত। আপনি?
– আমি অথই।
– অনয় ভাই আপনার সম্পর্কে কি হয়?
– এখনও কিছু হয়নি, তবে হবে কনফার্ম।
– কি হবে?
– আরে অনয় ভাইয়ার সাথে আমার বড় আপুর বিয়ের কথা হচ্ছে। তাই আমরা দেখতে এসেছি। আর যতদুর এগিয়েছে তাতে আমার দুলাভাই হবে কনফার্ম।
– অনয় ভাইকে আপনার আপুর পছন্দ হয়েছে?
– হুম। শুধু আপুর না আমাদের সবারই পছন্দ অনয় ভাইকে।
– আপনার আপু কি জানে অনয় ভাই যে চোখে কম দেখে আর কানে কালা!
– মানে?
– এটা শুনেই চমকে উঠলেন! এটা কি জানেন অনয় ভাই যে বিবাহিত? আর আমি তার একমাত্র বউ!
– কি বলছেন এসব? আপনার মাথা কি ঠিক আছে? আর আপনি তো অনেক ছোট?
– বিশ্বাস হচ্ছে না? তাহলে মীম আপুকে জিজ্ঞাসা করেন। আমার বিয়ের স্বাক্ষি। ওরে আল্লাহ এখানে দেখি বড় ডায়নিও আছে। ডায়নি এসে বলির কাস্টে রাখা পাঠাকে এক কুপে দু-ভাগ করে দিল। মেয়েটি এসব শুনে দ্রুত আমাদের বাসায় ঢোকে গেল আর তার ভাবি আর মাকে নিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল। আর আমার বিয়ের অগ্রগামীতা সাপ-লুডোর সাপের মুখে পড়ে সোজা নেমে এল লেজে। এতেই বিয়ের করুন সমাধী মঞ্চায়িত হয়ে গেল।
মীম তার ডায়নি মার্কা হাসিটা বজায় রেখে আমার কাছে এসে যা শোনালো তা শোনে আমার হাত পা হীম-শীতল প্রায়। ভার্সিটির সবার সামনে তাকে ছিরু পাগলার বউ বানিয়েছিলাম এটা নাকি তার প্রতিশোধ। মীমের কথাটা শুনে কচু গাছের সাথে ফাঁসি লাগাইতে ইচ্ছে করতেছে। কেন যে তাকে বলেছিলাম ছিরু পাগলাকে আমি-ই তার নামটা বলেছি। ও প্রতিশোধ নিয়েছে। তাই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমিও এর প্রতিশোধ নিব। চরম প্রতিশোধ।