বজ্জাত বউ

বজ্জাত বউ

আপনি শাড়ি পড়তে পারেন(আমি)

-হ্যাঁ আমি টাই বাঁধতে পারি ????????।(বৌ) ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।কি প্রশ্ন করি আর কি উত্তর দেয়।উল্টা বোঝে মনে হয়।

-আপনি টাই পড়তে পারেন?(আমি)

-পান্ডার মত প্রশ্ন করেন কেন,মেয়েরা টাই পড়ে ???? ?? আরে এত তো ঠিকই বোঝে শুধু উত্তর দেয় উল্টা।রক্ষা কর আল্লাহ মাবুদ।

-বাঁচাও বাঁচাও গলায় হাত বুলাতে বুলাতে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠলাম।চারিদিকে এক পলক দেখে নিলাম।আমি বিছানায় আধা শোয়া হয়ে আছি,আর কেউ একজন দৌড়ে চলে গেল। এতক্ষণ আমি তাহলে স্বপ্ন দেখছিলাম।কিন্তু চিৎকার করলাম কেন? আমি তো রোমান্টিক স্বপ্ন দেখছিলাম। কি তাই ভাবছেন তো? ভাবার কিছু নাই, এটা আমার বউয়ের কাজ। আমার বউ আমাকে একটু ভালোবাসে,আর একটু ভালোবাসে আর অল্প একটু ভালোবাসে।এই অল্প আর একটু মিলে অনেকখানি ভালোবাসে।এত ভালোবাসে যে মাঝে মাঝে আমাকে মেরে ফেলার মত কাজ করে বসে। এই দেখুন না আমি ঘুমিয়ে ছিলাম আর ও আমার নাক চেপে ধরে ছিল। আমার হাঁটা-চলা,খাওয়া-কথা বলা,চেহারা-সুরত আল্লাহর অশেষ রহমতে কিছুই ওর ভালো লাগে না শুধু নাক ছাড়া। ভালো লাগে ভালো কথা তাই বলে চেপে ধরে আদর করতে হবে!!?? আমি তো মারাও যেতে পারি।এটা ওকে বোঝাবে কে ???????????? !!!!!।

-এই তাড়াতাড়ি উঠো,ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে এসো,অফিসে দেরি হচ্ছে কিন্ত।

-আসছি এমন একটা কাজ করে কি সুন্দর করে ডাকছে যেন কিছুই হয়নি। আমি এস.জে. রুকু।একটা সফট্ওয়ার কোম্পানীতে সফট্ওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসিবে চাকুরী করছি।যার কথা বলছি,ও রিয়া আমার বউ। এক মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে।

বিয়ের প্রথম রাত আমাদের বাসর রাত ছিলো কি না আমি জানি না। তবে আমি এটুকু জানি আমার চরিত্র “”বর”” ছিলো না,ভিডিও রেকর্ডার ছিলো।মানুষ বিয়ের ভিডিও মাঝে মাঝে ডিভিডিতে দেখে।কিন্তু আমি বাসর নামক আমার সম্মানহানী রাতের অঘটনটা প্রতিদিন দুঃস্বপ্নে দেখি। ঐ অঘটনেরই কিছু অংশ স্বপ্ন রুপে গল্পের প্রথমে ঠাই পেয়েছে। বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বউ বেডে নাই।পানির বোতলটা মেঝেতে পড়ে আছে।বুকের ভিতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। আল্লাহ আমার একটা মাত্র বউ ????????।

-সবাই চুপ চুপ।খাটের নিচে কি যেন শব্দ হচ্ছে। একি ????????!!! আপনি খাটের নিচে কি করছেন??বেরিয়ে আসুন।(ধমকের সুরে বললাম)

-ধমক দিচ্ছেন কেন?আমি আরশোলা ধরতে ঢুকেছিলাম (বউ) আমার চোখ তো কপালে????।

-সারা জীবন শুনেছি মেয়েরা আরশোলাকে ভয় আর আমার একমাত্র বউ কিনা……..

-আসলে “আরশোলা” অধ্যায়টা মনে থাকে না তো তাই ধরলাম নামগুলো মনে করার জন্য।

-ছেড়ে দিন ওটাকে।আজ আমাদের বাসর রা.. কথা শেষ না হতেই নিচ বেরিয়ে আমার দিকে আসলো।আমিও পা দু’টো এক সাথে করলাম ওর সালাম করার সুবিধার্তে। আমার সামনে এসে পাপসে পা মুছে বেডে গিয়ে বসলো।কেমন বজ্জাত মেয়ে সালামটাও করলো না। আমিও ভূমিকা,সূচনা না করে ওর কোলে মাথা রেখে শূয়ে পড়লাম।

তারপর নিজেই ওর হাত দু’টো আমার মাথায় রেখে বললাম, -বুলিয়ে দেন -পারবো না (মুখ বাঁকা করে) -মাথা বুলিয়ে না দিলে বাসর ঘরে আপনি যে খাটের নিচে ঢুকেছিলেন তা সবাই বলে দিবো।

-এই না না প্লিজ তা করবেন না। মুখটা কেমন কাচুমাচু করতে করতে হাত বুলাতে লাগলো। মিনিট তিনেক পর—- -এই ওঠেন ওঠেন -কি হলো?

-আমার পাগুলো একটু টিপে দেন।সারাদিন হলুদ মঞ্চে,বিয়ের সময়,বাসর ঘরে বসে থেকে থেকে ব্যাথা করছে। -কি?? আমি আপনার পা টিপে দিবো? -হ্যাঁ দিবেন।না দিলে ফাঁস করে দিব।

-কি ফাঁস করে দিবেন?

-ফাঁস ক………রে দি…….বো যে আপনি আপনার চাচাতো বোনকে পালিয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।

-আ…….প……..নি কেমন করে জানলেন?

-আরো কতো কিছুই জানি।(হাত দিয়ে আমার ডায়েরী বাতাস করতে করতে বললো)

-এই না না প্লিজ কাউকে কিছু বলবেন না।চাচা জানলে আমার অবস্হা কেরোসিন করবে। শেষে আপনিই বিধবা হবেন

-তাই তো বলি রিস্ক না নিয়ে পা টিপে দেন।

-অগত্যা পা টিপতে শুরু করলাম। আর উনি মিটমিট করে হাসছেন। একে বজ্জাত মেয়ে বলেছিলাম ভূল বলেছিলাম। এ অনেক বজ্জাত, আরও বজ্জাত, এত্তগুলা বজ্জাত। একটু পর দেখি ঘুমিয়ে গেছে। শেষে বাসর ঘরকে স্বামী নির্যাতনের ঘর মনে করে শুয়ে পড়লাম। এই হলো আমার কুখ্যাত বাসর রাত।

-এই কি হলো,তাড়াতাড়ি আসো নাস্তা ঠান্ডা হচ্ছে তো।

-আসছি বাবা আসছি দেখেছেন কেমন বজ্জাত মেয়ে আপনাদের সাথে একটু গল্পও করতে দিচ্ছে না। গল্প করতে করতে দেরী হয়ে গেয়ে তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে অফিসে গেলাম। তবে যাওয়ার আগে বউদের যা আবদার “এই তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু” শোনাতে ভূল করলো না আমার আদরের বউ।

সময় ৩:৩০। বাসার দরজায় কলিংবেল চাপছি কিন্ত দরজা খুলছে না। আজ বৃহস্প্রতিবার,অর্ধদিবস। কিন্তু অফিস শেষে একটা মিটিংয়ের জন্য দেরী হলো। মহারানী কটকটি স্যরি স্যরি রিয়া মনে হয় না খেয়ে আছে। মেয়েটা আমাকে যা ভালোবাসে বলার বাইরে। হঠাই বসের ফোন। রিসিপ করে কথা বলছি।কথা শেষে দেখি দরজা খোলা। বউ ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। আহারে বেচারার মনে হয় খুব ক্ষুদা লাগছে। আমি আবার মুখ-চোখ দেখে বুঝতে পারি না খেয়েছে কি না। তাই পেটের দিকে তাকালাম।

-একি!! আমাদের বিয়ের মাত্র এক মাস হলো!!! এটা কিভাবে সম্ভব??? আ..আ…আমি কিছু করিনি!!!!।

-চুপ ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়(রেগে গিয়ে)

-ক্ষুদা লাগছে তো

-(নিশ্চুপ) ফ্রেশ হয়ে টেবিলে দেখি খাবার নাই, ফ্রিজেও নাই।মানে কি কালকেই তো বাজার করলাম। এতক্ষণে মাথায় ঢুকলো ব্যাপারটা। সময়মত আসিনি বলে ও একাই সব খেয়েছে যাতে কিছু খেতে না পারি। এটাই শাস্তি। আপনাদের কি মনে হয় ও একটু বজ্জাত মেয়ে?

-না ও অনেক অনেক অনেক……………. বজ্জাত মেয়ে। আর এই বজ্জাতটাকে নিয়ে আমার সংসার। ৪বছর পর কোন এক সকালে- -বাঁচাও বাঁচাও(আমি)

-এই কি হলো?; (রান্না ঘর থেকে বউ)

-না কিছু না। আগে ছিলো একজন আর এখন আরও একজন যোগ হয়েছে।আমার মেয়ে। আমাকে এমন চিৎকার করতে দেখে কি আনন্দটাই না ও পেয়েছে!!!!!!। চার হাত পা মিলে তালি দিচ্ছে আর হাসছে। ওর এই হাসিটাকে যে কিভাবে লিখবো আমার জানা নেই। এভাবেই আমার সংসার চলে আসছে,হয়তো এভাবেই।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত