এই দাড়াও।

এই দাড়াও।

রাতে ঘুমটা একটু বেশীই হয়ে গেছে। যার জন্যে সকালে উঠতে একটু দেড়িই হলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় অফিসের সময় হয়ে গেছে। তবে এইটুকু সময়ের মাঝেই আমার হয়ে যাবে।

ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হলাম। সিড়ি দিয়ে নামতেই কেও একজন আমাকে দাড়াতে বললো। আরে বাবা এই সময় আবার কে। এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে তার উপর আবার। আমি পেছনে তাকাতেই দেখি অবনী কোমড়ে হাত দিয়ে মুখে রাগি ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

এই মেয়েকে আমি সবসময় এড়িয়ে চলি। কখন কি করে ফেলে কিছুই বলা যায় না। এই বাসায় উঠার কিছু দিনের মাঝেই আমি ওকে প্রপোজ করেছিলাম।ও কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার গালটা লাল করে দিয়েছিল। তার পর থেকে আমি আর ওর সামনে যাই নি। তবে মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম।

আমি তো কিছু করিনি।সত্যি আমি কিছু করিনি। ‘ কথাটি বলেই আমি গালে হাত দিলাম। যদি আবার একটা দিয়ে দেয় তখন কি হবে। আমার মলিন মুখ দেখে ওর মনে হয় হাসিই পাচ্ছে।তবে তা আর বেশিক্ষন আটকে রাখতে পারলো না। বাহ হাসিটা তো বেশ।কিন্তু মনটা এমন কেন। অবনী হাসতে হাসতেই বললো, -বিকেলে কি ফ্রি আছো। অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় বিকেল হয়ে যাবে। কিন্তু এই মেয়েটার মতলব কি!আমি যখনি না করতে যাব তখনি মেয়েটা আবারও বললো, -ফ্রি না থাকলেও ফ্রি থাকতে হবে। বিকেলে যেন বাসায় পাই। তা না হলে তো বুঝতেই পারছো।কথাটি বলেই অবনী ভেতরে চলে গেল।কি মেয়েরে বাবা। হুমকি দিয়ে চলে গেল। আল্লাহ জানে কপালে কি আছে।আমি আর দাড়ালাম না।এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে।

কলিং বেল বাজতেই আমার ভয়ের বেলটাও বেজে উঠলো।হয়তো অবনী এসে গেছে। কি যে করে মেয়েটা। একবার ভাবলাম দরজাটা খুলবো না কিন্তু না খুললে তো পরে আবার দেখা হলে আমি শেষ। ল্যাপটপে একটা ফ্লিম দেখছিলাম তখনি কলিং বেলটা বেজে উঠলো। ” রেডি হয়ে নাও, বাইরে যাব।

দরজা খুলতেই অবনী কথাটি বললো। বাইরে যাবে মানে কি। বাইরে যেতে আমাকে লাগবে নাকি। কিছু বললেই তো শুরু হয়ে যাবে তাই আর কিছু না বলে ওকে ভেতরে বসতে বলে আমি রেডি হওয়ার জন্যে চলে গেলাম।

ল্যাপটপটা অবনীর হাতে দেখে আমি একটু ভয়ই পেলাম। স্ক্রিন এ অবনীর ছবিই দেওয়া ছিল।লুকিয়ে তুলেছিলাম।এবার আমি শেষ। ও কি ছবিটা দেখে ফেললো। আমি ভয়ে ভয়ে ওর সামনে গিয়ে দাড়াতেই ও ল্যাপটপটা বন্ধ করে আমাকে বললো, -তুমি রেডি। -হুম।-চলো তাহলে। আমি অবনীর পেছন পেছন বের হয়ে আসলাম। মনে হচ্ছে ও দেখেনি। কিন্তু এইটা কিভাবে সম্ভব। ল্যাপটপ খুললেই ছবিটা ভেসে ওঠে।কিন্তু অবনীকে দেখে মনে হচ্ছে ও দেখেনি।

অবনীর সাথে রিক্সায় বসতে ভালই লাগছে। অনেক দিনের ইচ্ছে আজ পুরোন হলো। তবে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে এটাই বুঝতে পারতেছি না।রিক্সা ব্রেক করতেই অবনী আমার হাত চেপে ধরলো।বাহ এটাও হয়ে গেল। অবনী রিক্সা থেকে নেমে বললো,তুমি কি বসেই থাকবে নাকি নামবে!ও হ্যা,আমাকেও তো নামতে হবে। রিক্সা থেকে নামতেই অবনী রিক্সা ভাড়া দিয়ে আমার হাত ধরে এগুতে লাগলো। আরে, এতো শপিংমল। এখানে কেন! আমি কিছুটা ভয়ই পেলাম। সবকিছু তো আবার আমার মানিব্যাগের উপর দিয়ে যাবে না।

দেখো তো এইটা কেমন? অবনীর কথায় আমি ওর দিকে তাকালাম। হাতে একটা শার্ট নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।বাহ,শার্টটা তো দারুন। মেয়েটার পছন্দ আছে। আমার সাথে একদম মিল আছে।

-হুম,ভালো তো। আচ্ছা এটা কার জন্যে? আমি আস্তে করে কথাটি বললাম। অবনী আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো মনে হলো ভুল কিছু বলে ফেলেছি। আরে শুধু জানতেই তো চাইছি। ও আর কিছু বললো না। শার্টটা প্যাক করে দিতে বলে ওই বিলটা মিটিয়ে দিল।

আমি ওর পেছন পেছন পাঞ্জাবীর দোকানে ঢুকলাম। এবার আর আমাকে কিছু না বলেই ও পছন্দ করে একটা কালো পাঞ্জাবী কিনলো। বাহ। কালো তো আমার পছন্দ কিন্তু সেটা ও কিভাবে জানলো।আমিও আর কিছু বললাম না। একই ভাবে প্যান্ট, জুতাও কিনে ফেললো। এখন আর বুঝতে বাকি রইলো যে এগুলো আমার জন্যেই।কিন্তু কেন!

আচ্ছা, সবই তো কিনলে। ঘড়িটা বাদ রেখে কি হবে। ‘ অবনী এবার আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা চলো। ঘড়িটা পুরোনো হয়ে গেছে তাই এই সুযোগে কিনে নিলাম। বাহ,তোমার পারফিউমটা তো বেশ ভালো। কি মিষ্টি গন্ধ। অবনী এবার আমার কথায় ফিক করেই হেসে দিল। -বললেই হয় আগের টা শেষ। এমন পেঁচিয়ে বলার কি আছে। আরে বাবা মেয়েটা সব বুঝে ফেললো নাকি। অবনী একটা পারফিউম নিলো। যেটা ও ব্যাবহার করে। কিন্তু মেয়েটা আমার জন্যে এতকিছু কেন কিনলো। ও তো আমাকে ভালোবাসে না। তাহলে কি ও ও আমাকে।ভাবতেই আমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

আচ্ছা চলো। শপিং ব্যাগ গুলা আমার হাতে দিয়ে অবনী কথাটি বললো। আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।ও আমার জন্যে এতকিছু কিনলো আর ওকে কিছুই দিলাম না। নাহ এইটা হয়না। ওকেও তো কিছু দিতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বাসার সামনে রিক্সা থেমে গেছে সেটাই খেয়াল করিনি। ” এই শোনো।

শপিংব্যাগ গুলা নিয়ে যখনি রুমে ঢুকতে যাব তখনি অবনী আবার ডাক দিল।আমি পেছনে তাকাতেই ও আমার সামনে এসে বললো, এখন থেকে তোমার সব দায়িত্ব আমার। আর কাল যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলে সবসময় ওই রকম স্ট্যাটাস ই দিবা। আমি কালকের স্ট্যাটাস মনে করার চেষ্টা করলাম। হ্যা,, কালকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আজ যদি একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতো তাহলে আজ ঈদের শপিং নিয়ে ভাবতে হতো না। হ্যাশ ট্যাগ এ ছিল, আমার সব দায়িত্ব তো ওনারই।

আমি অবনীর কথায় মাথা নাড়ালাম। বাহ। তাহলে স্ট্যাটাসটাই আমার জীবনে অবনীকে এনে দিল।

-দেখি তোমার ফোনটা। অবনীর কথায় ফোনটা বের করে ওর হাতে দিলাম। অবনী এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা সেলফি তুলে নিলো।

এই নাও। এখন থেকে এই ছবিটাই ল্যাপটপের স্ক্রিন এ রাখবা। যেটা আছে সেটা দেখতে ভাল হয় নি। আর শোনো, রাতে তোমার কিছুই রান্না করা লাগবে না। আমি তোমার পছন্দের বিরিয়ানি রান্না করে নিয়ে আসবো। ঠিক আছে।কথাটি বলেই অবনী ভেতরে ভেতরে চলে গেল। আর আমি ভাবতে থাকলাম অবনীর কথা। মেয়েটা তাহলে আমার প্রেমে পড়েই গেলো।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত