আজ সবুজের বাসররাত। বাসর ঘরে ঢুকে দেখল লম্বা ঘোমটা দিয়ে আছে তার মনের পরী তানিয়া। আস্তে আস্তে ধীরু পায়ে তানিয়ার কাছে গেল। সবুজের কানে কান্নার চাপা আওয়াজ ভেসে আসছে। বুঝতে পারল যে তানিয়া কাদছে। সবুজের মনে অজানা ভয় কাজ করতে লাগল। কারণ সে তানিয়ার ছবি দেখেই তানিয়াকে খুব ভালবেসে ফেলেছে।
অজানা ভয় নিয়েই সবুজ তানিয়াকে জিজ্ঞেস করল – আপনি কাদছেন কেন?
– দেখুন যদি কিছু না বলেন তবে সমাধান হবে কিভাবে?
– আপনি কি কাউকে ভালবাসেন? নাহ। (চাপা কণ্ঠে)
সবুজের বুকটা কিছুটা হালকা হল। স্বস্তির নিশ্বাস নিল।
– তবে কাদছেন কেন? আমি এখন বিয়ে করতে চাইনি। (কেদে কেদে)
– কিন্তু কেন? আমি আরও পড়তে চেয়েছি। (তানিয়া সবেমাত্র মেডিকেলে ভর্ত হয়েছে)
সবুজ হাসি দিয়ে বলল – ও এই কথা! আপনি চাইলে এখনো পড়তে পারেন। কোনো সমস্যা নেই।
সবুজ তানিয়ার মুখে হাসি দেখল। সত্যিই?
– হুম সত্যি। তবে এক শর্তে। কি শর্ত? মলিন মুখে জিজ্ঞেস করল?
– আমার সাথে প্রেম করতে হবে।
তানিয়া লজ্জা পেল।
– লজ্জা পেলে হবে না। উত্তর দিন। জ্বি আচ্ছা।
– আপনি বসুন আমি গোলাপ ফুল নিয়ে আসি। প্রপোজ করতে হবে না?
রুমেই গোলাপ ছিল। সবুজ গোলাপ এনে বিছানায় বসে বলল – আমি আপনাকে ভালবাসি। অনেক অনেক ভালবাসি।
তানিয়া হালকা করে থাপ্পড় মেরে দিল। অনাকাঙ্ক্ষিত হওয়ায় সবুজ অবাক হল।
– থাপ্পড় কেন? আপনি রাজি না? প্রথম প্রপোজে থাপ্পড়ই খেতে হয়। কথাটি বলেই হাসি দিল তানিয়া। সেই সাথে সবুজও হাসি দিয়ে উঠল।
হঠাৎই তানিয়া সবুজের বুকে মাথা রাখল। এটার জন্যও সবুজ অপ্রস্তুত ছিল। তবুও জড়িয়ে ধরল তানিয়াকে।
বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে তাদের জীযবনযাত্রা শুরু হল। কেটে গেল কিছুদিন। মেডিকেল কলেজের বাইরে সবুজ তানিয়ার অপেক্ষা করছে। তানিয়ার বান্ধবীরা জানে যে সবুজ তানিয়ার হাজব্যান্ড। কিছুক্ষণ পর তানিয়া বের হল।
তুমি এখানে! – হুম। তোমাকে ফলো করতে এসেছি।
কথাটা শুনে তানিয়া হাসি দিয়ে বলল আমাকে ফলো করে কি লাভ? – প্রেম করব তাই। ও তাই বুঝি? কিন্তু আমার তো হাজব্যান্ড আছে। (হেসে উঠল)
– আহা এমন কর কেন? একটু প্রেম কর না গো? বাদাম খাওয়াতে পারবা? – অবশ্যই। তাইলে চল পার্কে যেয়ে বসি।
এভাবে প্রায় সময়ই সবুজ তানিয়ার ভার্সিটি যায়। তারপর সেখান থেকে নানান জায়গা ঘুরে। তানিয়া সবুজকে খুব ভালবেসে ফেলে। এদিকে সাংসারিক কাজের চাপে তানিয়ার পড়াশোনা ঠিক মত হচ্ছে না। তাই সবুজ তানিয়াকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু তানিয়া আবার চলে আসে।
– কি হল? কাপড়চোপড় নিয়ে চলে আসলে কেন? আমার স্বামীর বাড়ি আমি যেভাবে আসি তোমার কি?
– ফাইজলামি কর? চল হোস্টেলে দিয়ে আসি।
তানিয়া সবুজকে জড়িয়ে ধরে কাদতে লাগল। তুমি এত স্বার্থপর হলে কিভাবে? আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে? আমি তো থাকতে পারছি না।
– আহারে আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বলছি। আমি এতকিছু বুঝি না। আমি যাব না। এখানেই থাকব।
কথাটি বলে তানিয়া রাগ করে বসে পড়ল।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তবে পড়াশোনা ঠিক মত করতে হবে। তা না হলে হোস্টেলে। তানিয়া ঠিক মত পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কেটে গেল কিছু বছর।
আজ তানিয়া ডাক্তার হয়েছে। সবুজ সহ পরিবারের সবাই খুশি। সকাল থেকে আয়োজন চলছে। তানিয়া এবং সবুজ এতই ব্যস্ত ছিল যে একে অপরকে সময়ই দিতে পারেনি। রাতে ডিনার শেষে যে যার যার রুমে চলে গেল। সবুজও নিজ রুমে চলে এল। রুমে আসার সাথেসাথেই তানিয়া সবুজের পা ধরে সালাম করল।
– এই এই কি করছ উঠ। (তানিয়াকে উঠাল) আজ আমি যা কিছুই হয়েছি। সবকিছু তোমার অবদান।
– তাই বুঝি? তোমার পরীক্ষাগুলো কি আমি দিয়েছিলাম? তুমি যদি পড়াশোনার সুযোগ না দিতে তবে আমি কিছুই হতাম না।
– ডাক্তার তানিয়া, আপনি সেই দিন আমার কাছে যেমন ছিলেন। আজও তাই আছেন। পরিবর্তন হয়েছে শুধু আমার ভালবাসার। আপনাকে আগের থেকেও অনেক বেশি ভালবাসি।
তানিয়া সবুজকে জড়িয়ে ধরে বলল এই ভালবাসা কখনো কমবে নাতো?
– কখনোই না। তবে আমি তোমার একটা জিনিষ খুব মিস করব।
– কি? ভার্সিটিতে তুমি যে প্রতিদিন এসে আমাকে নানান জায়গায় ঘুরাতে নিয়ে যেতে। সেটা খুব মিস করব।
– আসলেই। (মুচকি হেসে) হাসলে কেন? – এমনিই।
আজ চেম্বারে তানিয়ার প্রথম দিন। পরিবারের সবাই এসে অভিনন্দন দিয়ে চলে গেল।
– মে আই কাম ইন মেডাম? তুমি? আরে আস আস।
– জ্বি আমি একটা সমস্যা নিয়ে এসেছিলাম। তোমার আবার কি সমস্যা?
– জ্বি আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান। জানি। কিন্তু এতে সমস্যার কি
– সমস্যাটা হল, আমি জানতে চাই আমি কবে এই চেম্বারে আমার বাবা মার নাতি- নাতনীকে নিয়ে আসতে পারব?
তানিয়া প্রশ্ন শুনে কিছু ভাবনায় পড়ল। পরক্ষণেই লজ্জায় লাল উঠে উঠল।
– মেডাম উত্তরটা দিন। জ্বি আপনার উত্তর আমি পার্সোনাল ভাবে আপনার বাসায় এসে দিব।
– ওকে মেডাম। আল্লাহ হাফেজ। এই নিন। (৫০০টাকার নোট)
তানিয়া নিয়ে নিল। চেম্বারের উদ্ধোধন + তোমার দোয়া হিসেবে রাখলাম। বিকালে তানিয়া চেম্বার থেকে বের হয়ে দেখল সবুজ দাড়িয়ে আছে। তানিয়া সবুজকে দেখে হাসি দিয়ে সবুজের দিকে এগিয়ে আসছে। আর মনে মনে বলছে, পাগল একটা। চাইলেই পুরান দিন গুলো ফিরিয়ে আনা যায়।কষ্ট হয়। তবে অসাধ্য নয়। অটুট থাকুক এরকম হাজারো সত্তিকারের ভালবাসা।