চুমকির সাথে বিয়ে

চুমকির সাথে বিয়ে

বুঝতে শেখার পর থেকে দেখে আসছি মা বাবার ঝগড়া। দুজনই আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আলাদা আলাদা। দুজনের সংমিশ্রণ
ভালোবাসা পাই নি।
এটা দেখে কেনো যেনো নিজেকে একটা আলাদা চরিত্রে রূপ দিয়েছি। একরকম জোর করে বিয়ে দিয়েছে আমাকে মামাতো বোনের সাথে। আমারো মত নেই ওর ও নেই। সমস্যা অন্য জায়গায়। বাসর রাত থেকে চুমকি কান্না আরম্ভ করেছে। আর
থামছে না। আমি ও কান্না করেছি। দুজনেই কাঁদছি। কারণ জানি না।
চুমকিকে কখনো আমি বোন ছাড়া ভাবি নি।
চুমকি ও ভাই ছাড়া
ভাবে নি! বললামঃ-
– চুমকি।
– হুম।
– কাঁদিস কেনো?
– ভাই, আমি মেয়ে বলে কী মানুষ না?
– কী আর বলবি?
আমি ছেলে হয়ে ও তো মানুষ না! আমাদের কথা কেউ শুনবে না।
– কিন্তু আমি তো আপনাকে ভাই ভাবি।
– আমি ও তো বোন ভাবি।
– তাহলে এখন কী হবে?
– বিয়ের পদ্ধতি যখন আল্লাহ করেছে তালাকের পদ্ধতি ও করেছে।
কদিন পর আমরা আলাদা হয়ে যাবো।
– আমি একটা দিন ও সহ্য করতে পারছি না।
– আমি ও না। কিন্তু করতে হবে। উপায় নাই। কিছু বললে আমাদের জবাই করবে। চুমকি নিরলস কান্না করেই যাচ্ছে। এক মাস
জোরপূর্বক কাটিয়েছি। তবু ও কারো প্রতি কারো অনুভূতি আসে না।
আমার ও না। চুমকির ও না।
সকালে চুমকি বললোঃ- – ভাই। – হুম।
– একটা ব্যবস্থা করেন না। এভাবে আর কতো দিন?
– আলাদা হওয়ার কথা বলার আগে আমাদের মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে। পারবি? বেঁচে থাকার জন্য আমাদের একসাথে থাকতে হবে। চুমকি আর কিছু বললো না। সেদিন থেকে চুপচাপ।
আমাকে ডাক দেয়ার আগে ভাই বলবেই।
আমার অবশ্য এমন হয় না। মাঝে মাঝে যখন কারো সামনে ভাই বলে বসে তখন সবাই বিড়বিড় করে কিছু বলতে থাকে। সব
কিছুর আগে ভাই। ভাই এটা করেন ভাই ঐটা করেন। ভাই এটা লাগবে ভাই ঐটা লাগবে। সারাক্ষণই এরকম। মনে হয় না চুমকি আমার স্ত্রী আর চুমকির তো মনে হবে ই না।
একবার জিজ্ঞেস করলোঃ- –
ভাই, আপনি কাউকে ভালোবাসেন না?
প্রশ্নটা শুনে দ্বিধায় পরে গিয়েছিলাম।
বললামঃ- – না। – এতো বড় বুড়া হইছেন তবু ও একটা প্রেম করতে পারলেন না?
– পারলাম না তো। – কী কচু পারেন তাহলে?
– তা তোর কয়টা প্রেমিক শুনি?
– আমার ও তো পোড়া কপাল। আমি তো হবু বরের কথা চিন্তা করে প্রেম-টেমের ধারেকাছে ও যাইনি। কিন্তু যদি জানতাম আপনার সাথে ই মা জোর করে বিয়ে দিবে তাহলে কয়েকটা প্রেম করতাম ঠিক।
– তা আপনার বান্ধুবী
– টান্ধুবী কেউ কী সিঙ্গেল আছে?
– আছে, কিন্তু ঝামেলা তো এটাই। বিবাহিত পুরুষের সাথে। বুঝেন ই তো। আচ্ছা তবু ও দেখছি। এরপর থেকে চুমকি লেগে গেলো মেয়ে খোঁজায়। মানে আমার সাথে প্রেম করানোর জন্য আরকি।

তাহলে বাবার সামনে গিয়ে বলতে পারবো, আমি একজনকে ভালোবাসি। চুমকির সাথে ঘর করতে পারবো না। অনেক চেষ্টা রার পর একটা মেয়ে খুঁজে পাওয়া গেলো। চুমকি তো সেই খুশি। আমাকে শিখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে মেয়েটার সাথে কথা বলতে হবে। কী কী করতে হবে। কী উপহার দেয়া যাবে।
মেয়েরা কী কী পছন্দ করে আর কী কী করে না ইত্যাদি। সেই মেয়েটার নাম ইশা। আজকে ইশার সাথে দেখা করে আসলাম।
বাড়িতে আসার পর চুমকি একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
তারপর ইশার নাম্বারটা আমাকে দিয়ে বললো প্রতিদিন একটু একটু করে কথা বলতে। স্বভাবত কারো সাথে সম্পর্কে জড়ালে
স্ত্রী থাকলে তাঁর থেকে একটু দূরে সরে যেতে হয়। অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়।

কিন্তু আমাদের ব্যাপারটা অদ্ভুত। চুমকি নিজেই সারাক্ষণ চিন্তায় থাকে যদি কথা বলা বন্ধ করি ইশার
সাথে। ইশার সাথে সম্পর্কটা যখন একটু গভীরে যায় তখন থেকে চুমকি অনেকটাই একা হয়ে যায়। এভাবে কয়েক মাস কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ এক দিন ইশা বললো সে গর্ভবতী! কথাটা শুনে পুরো ঘাবড়ে গেলাম আমি। আমি ইশার ঠোঁট পর্যন্ত ই
যাই নি! আর কী না সে গর্ভবতী! ইশার কথা চুমকি বিশ্বাস করবে না তা যেনো সপ্তম আশ্চর্য।
ইশাকে বললাম জরুরী দেখা করতে হবে।
আসার পর বললামঃ-
তোমার পেটের বাচ্চার বাবা কে আমি জানি না। তবু ও আমি বিয়ে করবো। আমি আর তুমি দুজনেই জানি এই বাচ্চার বাবা আমি না। তবু ও মাথা পেতে নিবো। তবে আমি শুধু একটা কথা জানতে চাই।

বাচ্চাটার আসল বাবা কে? জোর করবো না। ইচ্ছা হলে বলো না হলে থাকুক। ইশা আমার কথা শুনে কেঁদে
দিলো। কিছুক্ষণ অঝোর ধারায় কান্না করার পর বললোঃ- –
আমি বলতে পারবো না। এরকম নিকৃষ্ট মানুষের নাম মুখে আসবে না আমার।
– চিন্তা করো না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো। এক সপ্তাহ অপেক্ষা করো শুধু। বলার পরে ইশাকে
রিকশায় তুলে দিয়ে আমি বাড়িতে আসলাম। কিন্তু বাড়িতে এসে দেখলাম অন্য কাহিনী। চুমকি রেগেমেগে একাকার।
আমার বুঝতে অসুবিধে হয় নি যে চুমকি ভেবেছে ইশার গর্ভবতী হওয়ার কারণ আমি।

চুমকি বললোঃ-
– আমি আপনাকে অনেক সম্মান করতাম। আপনি ছাড়া আমার অন্য কোনো মামাতো ভাইয়ের সাথে জোর করে বিয়ে দিলে আমি বাসর রাতেই আত্মহত্যা করতাম। কিন্তু আপনি যে এতো টা বাজে তা আগে কখনো চিন্তা করি নি। এমন তো না আমি
আপনাদের বিয়ের বিপক্ষে। আমি তো চাচ্ছিলাম ই মনে প্রাণে আপনাদের বিয়েটা হোক।
তাহলে কেনো একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করলেন?
– আমি ইশাকে বিয়ে করবো।
– হ্যাঁ সেটা কী গর্ভবতী হওয়ার আগে করা যেতো না?
– সেরকম অবস্থা ছিলো না। তুমি তো জানো ই। চুমকি তখন ঠাস করে একটা থাপ্পড় মারলো আমার গালে! আমি বিরোধ করি নি!
থাপ্পড় দিয়ে বললোঃ- – ছিঃ এতো যখন শরীরের নেশা তাহলে নিজের ঘরেইতো একটা শরীর ছিলো। একটা মেয়ে কমপক্ষে আত্মহত্যা করতো না এর জন্য।
আমি ইশার আত্মহত্যার কথা শুনে যেনো আকাশ থেকে পরলাম।
তাড়াহুড়ো করে বললামঃ-
-আত্মহত্যা করেছে মানে?
– নিজের গলায় নিজে ছুরি চালানো টা কী আত্মহত্যা না?

তাহলে যান ইশাকে গিয়ে বিয়ে করেন। বলে চুমকি চোখেরপানি মুছতে মুছতে কাপড়চোপড় গোছাতে লাগলো। খবর শুনলাম
ইশা সত্যিই আত্মহত্যা করেছে!

ভাবতেই কেমন লাগছে! একটু আগে মেয়েটাকে রিকশায় তুলে দিয়ে আসলাম আর সে এখন দুনিয়াতে নেই। দম ফেটে যাচ্ছে। দরজা জানালা বন্ধ না করেই নিঃশব্দে কাঁদছি। চুমকি হয়তো বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে। চুমকিকে আটকানোর কোনো চেষ্টা করিনি।

সম্ভব না জানি। একটা মিথ্যা অপবাদ নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকতে হবে। সকালে সূর্যের আলো চোখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। চোখ খুলতেই দেখি চুমকি আমার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছে। মাথাটা আমার পায়ে আর খাটে হেলান দেয়া। পা দুটো
ফ্লোরে বিছানো।

চোখগুলো ফুলে আছে। আমি উঠে পরেছি টের পেয়ে চুমকি ও উঠে পরলো। সাথে সাথেই কান্না আরম্ভ করে দিলো পা ধরে। আমি
পা সরিয়ে বললামঃ- – শত হোক তুই আমার স্ত্রী। তোর জায়গা এখনো বুকে। চুমকি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললোঃ- – পুরো ব্যাপারটা জেনে বুঝলাম আমি ক্ষমার যোগ্য না। আপনার ক্ষমা আমাকে আরো আঘাত করছে। দয়া করে আমাকে শাস্তি দিয়ে মুক্তি দিন।
-দিবো, একটা শর্ত আছে। তোমাকে গর্ভবতী হতে হবে।
-হুঁউ কী?
– বললাম মাথা ব্যথা করছে। একটু মাথাটা টিপে দিতে পারবি?
– হুম। আমি শুয়ে পরলাম আবারো। চুমকি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমার চোখে তাকাতেই পারছে না। চাহনীর ভাষা
বদলে গিয়েছে। হ্যাঁ আজকে থেকে আমরা স্বামী স্ত্রী। এখনো মাঝে মাঝে ভাই বলে ফেলার পর নিজেই নিজের দাঁতে কামড়
দেয়। আমি যখন চুমকির খুব কাছে যাই। তখন ভয় পেয়ে বলেঃ-
– বুকের ভিতর কী যেনো নড়াচড়া করে।
– ফিডার খাবি?
– ফিডার খাবো কোন দুঃখে? আর কিছু সময় ও কী তুমি করে বলা যায় না?
– না। তোর জন্য কাল ফিডার আনবো।
– হুম, নিজে খাইয়েন ফিডার।
– না। তুই খাবি আর তোর বাবু খাবে।
– বাবু কই?
– তোর পেটে।
– চুপ। এভাবে কয়েকমাস যাওয়ার পর দুজন দুজনের আত্মা বিনিময় করে নিয়েছি। আমার নিশ্বাসের শব্দ চুমকি শুনতে পায় আর চুমকির হৃদয়ের ধ্বনি আমার কানে সারাক্ষণ বাজে।
নীল কুমড়ার মতো মেয়েটা কিছুদিনেই লাল কুমড়ার মতো হয়ে গেলো। সময়ে অসময়ে চুমকির গাল টানি। চুমকি মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হয়। আবার মাঝে মাঝে গাল না ছুঁলে রাগ করে। ভালোবাসার পরিমাণটুকু খুব বেড়ে যায়। সন্ধ্যা বেলা বাড়ি ফেরার পর
চুমকি বললোঃ- – শুনো।
– বল। – কিছু না। যান হাত-মুখ ধুয়ে খেয়ে নেন। টেবিলে সব দেয়া আছে।
– লক্ষ্মী বলো।
– হুম। হাত-মুখ ধুয়ে আসেন। খাইয়ে দিবো আজকে আমি। খুশির খবর আছে।
– হঠাৎ এতো পিরীত কেনো জাগলো?
– কী বললে?
– না বললাম তুমি কতো আমায় ভালোবাসো আর আমি কতো কম।
– নাহ ঠিকাছে। বেশি ভালোবাসলে আবার গরহজম হবে। আমি আর কিছু না বলে হাত-মুখ ধুয়ে এসে খেতে বসলাম। চুমকি মুচকি মুচকি হাসছিলো।
বললামঃ- – খুশির খবর টা কী বল। – কোনো শির খবর নাই।
-প্রিয়তমা প্রেয়সী,
প্রিয়ন্তী, প্রেরণা বলো এবার। চুমকি কিছু না বলে আমার হাতটা নিজের পেটে রাখলো। আর কিছু বুঝার বাঁকি নেই। আমি মকির কপালে চুমু আঁকলাম। চুমকির চোখ থেকে পানি ঝড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততোই যেনো মনে হচ্ছে জীবনটা কতো মধূর। রাতে চুমকির ঘুম আসছে না। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
চুমকি বললোঃ- – এই যে। – বল। – আবার!
– বলো না। – এতো ভালোবাসো কেনো? আমার মনে হয় কী জানো?
আল্লাহ্ বুটাকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে বাবুর মাকে নিয়ে যাবে। – থাপ্পড় চিনোস?
– বলো না, তুমি কী আরেকটা বিয়ে করবা তখন?
বাবুটাকে একাই লালনপালন করতে পারবা না? মেয়েটা অযথা ই বকছে। চুমকির মুখ বন্ধ করার জন্য ওর ঠোঁটদুটোই বন্ধ করে দিলাম আমার ঠোঁট দিয়ে। মেয়েটা আমার হাত ধরে ঘুমালো। কয়েকমাস যাওয়ার পর একদিন চুমকির খুব ব্যথা শুরু হলো।
হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। আই সি ইউ’তে আছে চুমকি। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। পায়চারি করছি হাসপাতাল জুড়ে।
অনেকক্ষণ পর ডাক্তার এসে ভিতরে যাওয়ার জন্য বললেন। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখলাম চুমকি কাঁদছে। আমি চুমকির
হাতটা ধরার সাথে সাথে বললোঃ- –
আল্লাহ্ আমার সাথে অভিমান করলো কেনো? – কেনো কী হয়েছে?
– বাবুকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে আমাকে তুলে নিতো। আমি তো খুশি ছিলাম। কিন্তু… আমি তখন চুমকির পাশে বাবুটাকে দেখলাম।
চুমকি কান্না করে সারা মুখ ভাসিয়ে দিচ্ছে। আমি চুমকির কপালে চুমু দিয়ে বললামঃ- – বৌ থাকলে বাবুর অভাব হয় না।
আল্লাহ্ অভিমান করে নি তোমার সাথে। দেখো আল্লাহ্ তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে পরেরবার বাবুর মুখ দেখার জন্য। চুমকি আমার
কথা শুনছে না। বাবুর দিকে তাকিয়ে কাঁদছে। মেয়ে হয়েছিলো। যেনো চুমকি নাম্বার টু…..!

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত