সুখের সংসার

সুখের সংসার

অামাদের এভাবে বিয়ে করা কি ঠিক হচ্ছে, পায়েলের মুখ থেকে কথাটি শুনে পা থামিয়ে দিলাম।
একটু থেমে উত্তর দিলাম তুমি কি চাও অামাদের এতো দিনের সম্পর্ক বিবাহে না গড়াক, তুমি নিশ্চয় এটা চাও না এই বলেই অাবারো হাঠা শুরু করলাম।
.
খুব ভোরেই অামরা বাসা থেকে পালিয়েছি পুরো রাস্তা ফাকা এতো সকালে রিক্মাও বের হয়নি।
হেটে হেটেই অামরা কাজী অফিসে অাসলাম।
যদিও অফিস খুলবে দশটায়।
অারো বাকি কয়েক ঘন্টা তাই অাশেপাশে কোন রেস্টুরেন্ট খুজছিলাম মিনিট খানেক হাঠার পর একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম।
.
পায়েল কে বললাম চলো সকালের নাস্তাটা এখানেই সেরে নেয়।
পায়েল ছোট করে উত্তর দিলো অামার ক্ষিদা নেই।
অামি মজা করে বললাম অামি খাবো তুমি দেখবে।
সস্তা রেস্টুরেন্ট সকালের খাওয়ার মতো তেমন কিছু পেলাম না যাই পেলাম তাই অর্ডার করলাম।
অামি খাচ্ছি পায়েল দেখছে অার মনে হয়তো ভাবছে পাজি ছেলে একটু বলবেও না খেয়ে দেখো।
অামি জানি পায়েলের অনেক ক্ষিদা পেয়েছে কিন্তু সে বলছে না কেননা সকাল থেকেই তার মনটা খারাপ কেননা এই ভাবে প্রেমিকের হাত ধরে ঘর থেকে বেরিয়ে অাসলে সকল মেয়েরই মন খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক।
অলরেডি অামার নাস্তা করা প্রায় শেষ অামি যা যা খেলাম সে অনুযায়ী খাবার অাবারো অর্ডার করলাম।
পায়েল এবার একটু নাক ফুলিয়ে বললো অার কতো খাবে।
অামি কিছু না বলেই খাবার গুলো অাসার অপেক্ষায় রইলাম।
খাবার অাসলো এবার পায়েল কে বললাম জ্বি ম্যাম এবার অাপনি খেয়ে নেন এগুলো অাপনার জন্য অর্ডার করেছি।
পায়েল একবার অামার দিকে তাকাচ্ছে অারেকবার খাবারের দিকে পায়েল খাচ্ছে অামি ওর দিকে চেয়ে অাছি।
.
মেয়েটা কত্তোই না কষ্ট করেছে সৎ মায়ের সংসারে বড় হয়েছে নানান অত্যাচারে, তার কষ্ট গুলো বুকের মাঝে চেপে রেখেছে, যেদিন তার হাতটি প্রথম ধরেছিলাম পায়েল বলেছিলো শক্ত করে অামার হাতটি ধরো অামাকে একটু সুখ দাও অামাকে একটা সুখের সংসার দিবে যেখানে থাকবে ভালোবাসা, রাগ অভিমান তবে দিন শেষে যেনো ভালোবাসারই জয় হয়।
.
দুই বছর সম্পর্কের পর এবার অামাদের সম্পর্ক বিয়েতে রুপ নিতে যাচ্ছে, অামার পরিবার থেকে কয়েক দফা বিবাহের জন্য চাপ দিচ্ছে বিজনেস ম্যান বাবার ছেলে অামি বাবার বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে বিবাহ ঠিক করেছে কিন্তু অামি বাবার এই মতে বিবাহ করতে পারবো না কেননা অামি তো পায়েল কে ভালোবাসি, হ্যাঁ পায়েল কে অামি ধোকা দিতে পারবো না।
তাই তো পায়েল কে নিয়ে বের হলাম কাজী অফিসের দিকে।
.
অবশেষে শত ঝড় ঝাপটা পার করে বিয়ে টা সেরে নিলাম।
কাজী অফিস থেকে বের হয়ে পায়েল বলছে।
>= এখন অামরা কোথায় যাবো?
>= কেনো তোমার শুশ্বুর বাড়ি
>= বাবা যদি অামাদের না মেনে নেই
>= মানবে না ক্যানো, অামি তো তার ছেলে।
এই বলেই রিক্মায় উঠলাম অার ভাবছি বাবা কি অামাদের মেনে নিবে অার যদি মেনে না নেয় তাহলে কোথায় উঠবো।
এসব ভেবেই, অামার দুর সম্পর্কের এক মামা কে ফোন করে একটা বাসা ঠিক করে রাখলাম।
.
অাস্তে অাস্তে পায়ে বাসার ভিতর ঢুকলাম।
মা এগিয়ে এসিয়ে বললো সাকিব এই মেয়েটা কে?
ছোট করে বললাম তোমার ছেলের বউ অামার মুখ থেকে এই কথা শুনে মায়ের মুখে হাসি ফুঠে উঠলো।
তখনি বাবা বললো-
>= কে এই মেয়েটি?
>= অামি ওকে ভালোবাসতাম তাই বিয়ে করেছি
কথাটি শুনার পর বাবা অনেক রেগে গেলো।
অার বলতে লাগলো।
অামার বন্ধুকে দেওয়া কথা অামি রাখতে পারেনি, সমাজের কাছে তুমি অামাকে ছোট করে দিলে এখনি এই বাড়ি থেকে তোমার বউ কে নিয়ে বের হয়ে যাও।
.
অামিও জানতাম বাবা এই কথা বলবে একবার বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকালাম অারেকবার পায়েলের দিকে,,, অবশেষে পায়েল কে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।
কান্না কান্না কন্ঠে পায়েল বললো।
>= এখন অামরা কোথায় যাবো?
>= যেখানে ঠায় পাবো সেখানেই যাবো।
পায়েলের মুখে কি যেনো এক টেনশনের ছাপ তার হাতটি শক্ত করে ধরে বললাম অামি অাছি তো।
.
অবশেষে ছোট খাঠো একটা বাসায় উঠলাম।
দিন গুলো ভালোই যাচ্ছে অামাদের।
অামার ছোট খাঠো চাকরির অল্প মাইনে সাথে পায়েলের ভালোবাসা নিজেকে যেনো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি ব্যাক্তি মনে হচ্ছে।
ছোট খাটো সাপ্রাইজ রাগ অভিমান ভালোবাসা মিলিয়ে অামাদের সংসার।
যেখানে চাইলেও অভাব হানা দিতে পারবে না, কেনোনা দু জনের সেক্রিফাস থাকলে সব অভাব কে ভালোবাসা দিয়ে দুর করা সম্ভব।
.
একদিন অফিস থেকে দুপুরে বাসায় চলে অাসলাম।
>= উপমার অাম্মু টা কোথায়?
বিয়ের পর থেকে পায়েল কে উপমার মা বলেই ডাকি কেনোনা অামাদের যদি মেয়ে সন্তান হয় তাহলে নাম রাখবো উপমা।
পায়েল উত্তর দিলো উপমার অাম্মু ওয়াশ রুমে গোছল সেরে অাসছি তুমি রেস্ট নাও অামরা একসাথে খাবো।
.
অামি বসে বসে বাংলাদেশ ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ দেখছি তথোক্ষনে পায়েলের গোছল করা শেষ।
মেয়েটা যখন অামার সামনে অাসলো তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না।
শ্যাম্পু ধোয়া ভেজা চুলে মেয়েটা কে অাজ অসম্ভব সুন্দরি লাগছে অামি বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললাম নতুন করে অাবার তোমার প্রেমে পড়তে চাই। বালিকা তুমি অামার সাথে প্রেম করবে,
পায়েল লজ্বা পেয়ে বললো শখ কতো, ডাইনিং টেবিলে বসো খাবার দিচ্ছি।
.
এভাবেই কেটে গেলো ছয়টি মাস।
অামাদের সুখের সংসার ভালোই চলছে।
.
হঠ্যাৎ একদিন বাবার ফোন।
অাচমকা হয়ে ধীরে ধীরে ফোনটা রিসিভ করলাম।
পরিচিত কন্ঠ অাম্মু বলছে
>= সাকিব কাল একবার অামাদের বাসায় অাসতে পারবি।
>= ক্যানো?
>= তোর বাবা বলছিলো।
>= অাচ্ছা অাসবো কথাটি শোনার পর পরই লাইনটা কেটে গেলো।
ভাবছিলাম অাম্মু কে অনেক কিছু বলবো কিন্তু তা অার হলো না।
.
এরপর দিন সকালে অফিস টাইমে বের হলাম সেই পুরনো বাড়িতে যাবো বলে।
খুব টেনশন হচ্ছে এতো দিন বাবা মায়ের সামনে দাড়াবো।
অপরিচিত লোকদের মতো বাড়ির গেইটে পা রাখলাম।
.
বাসায় ঢুকার পর পরই মা বলছে চল বাবা সকালের খাবার টা খেয়ে নিবি।
ডাইনিং টেবিলে বাবা বলছে, দেখো মানুষ জীবনে ভুল করেই তুমিও করেছো সময় থাকতে ভুল শুধরে নাও। পায়েল কে ডির্ভোস দিয়ে অামার বন্ধুর মেয়ে কে বিয়ে করো।
এতে যতো টাকা লাগে অামরা দিবো।
বাবার কথাগুলো শুনছি ভাতের সাথে যেনো বাবার কথা গুলো পেঠের ভিতর ঢুকে পড়লো।
বাবার কথার কোন উত্তর না দিয়েই অাম্মু কে বললাম অাম্মু রান্না টা অনেক ভালো হয়েছে।
অামাদের বাসায় একদিন অাসো তোমার বউ মা অনেক ভালো রান্না করে এই বলেই অফিসে চলে গেলাম।
বাবাও উনার উত্তর পেয়ে গেলো।
.
কিছুদিন চলে গেলো।
–অাজ শ্রক্রবার অফিস বন্ধ বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে সকাল পযর্ন্ত ঘুমাচ্ছি।
হঠ্যাৎ করেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, ঘুম ভাঙ্গার পর দেখি পায়েল অামার বুকের উপড় মাথা রেখেই ঘুমাচ্ছে।
ঘুমন্ত অবস্থায় মেয়েটা কে অনেক মায়াবি লাগছে মেয়েটা হয়তো এমনি একজন কে চেয়েছিলো যে তাকে সাড়া জীবন অাগলে রাখবে।
অার ভাবছি অামাদের দুজনের সুখের সংসার ভালোই চলছে বাবা মা যদি অামাদের মেনে নিতো তাহলেই পৃকত সুখ পেতাম।
.
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, কে যেনো হঠ্যাৎ দরজায় নক করলো।
দুরু একদম বিরক্ত এমন একটা রোমান্টিক সময়ে কে অাবার দরজায় নক করলো।
ভাবছিলাম উঠবো না কিন্তু এক নাগাড়ে দরজায় নক করেই যাচ্ছি এভাবে পায়েলের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
পায়েল বলছে অারে বাপ অাজব তুমি দরজা খুলবে না বৃষ্টির দিনে কে হয়তো বিপদে পড়েছে তাই এতো নক করছে, এই বলেই পায়েল দরজা খুলতে গেলো।
দরজা খুলার সাথে সাথে দুজন মধ্য বয়স্ক লোক ঘরে ভিতর ঢুকে পড়লো।
পায়েল বলে উঠলো-
>= অারে বাবা মা?
>= কেনো মা অবাক হলে, তোমাদের বাসায় খেতে চলে অাসলাম।
বাবা মা কে দেখে অামি পুরো অবাক।
বাবা এগিয়ে এসে বলছে বাজারে যা বাজার করে অান অাজ বৌমার হাতের রান্না খাবো।
এই বলেই উনারা পায়েল কে বুকে জড়িয়ে নিলো।
খুশিতে পায়েলের চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
.
অামি তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে বাজারে বের হয়ে গেলাম।
অবশেষে পায়েল কে দিতে পারলাম একটা সুখের সংসার অামি পেলাম পৃকত সুখ।

গল্পের বিষয়:
রোমান্টিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত