মহাবন্যার পরে, নোহ এবং তার ছেলেরা একসাথে বসবাস শুরু করল। তারা একসাথে জমি চাষ করত এবং ফসল উপাদন করত। এরপর তার ছেলেদের অনেক ছেলেমেয়ে হল, আর সেই ছেলেমেয়েদেরও অনেক ছেলেমেয়ে হল। এভাবে খুব তাড়াতাড়িই পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। তাই তাদের কেউ কেউ এক জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় বাস করতে গেল এযন তাদের পশুদের জন্য সবুজ ঘাস পাওয়া যায়। সেই সময় সারা পৃথিবীর মানুষ শুধু একটা ভাষাতেই কথা বলত এবং সে ভাষার শব্দ ও একই ছিল। এ কারনে একজনের কথা অন্যজন খুব সহজেই বুঝতে পারত। কোন কিছুর পরিকল্পনা করা এবং একসঙ্গে কাজ করা তাদের পক্ষে বেশ সহজ ছিল। এরপর তাদের মধ্যে কেউ কেউ বাবিলের সমভুমিতে গিয়ে বসবাস শুরু করল। তারা কিভাবে ইট বানাতে হয় সেটা শিখল এবং আল্কাতরা দিয়ে কিভাবে সেসব ইট একসঙ্গে রাখা যায় তারও বুদ্ধি বের করল।
একদিন কেউ বলল, ‘এস, আমরা নিজেদের থাকার জন্য শহর তৈরী করি, এবং আমরা উঁচু দালান বানাই। আর সে দালান এত উঁচু হবে যে, আকাশ ছুয়ে যাবে এবং আমাদের সুনাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।’ তারা সবাই এটি ভাল কথা মনে করে উঁচু দালান বানাতে রাজি হল। তাদের কথা মতই তারা খুব তাড়াতাড়ি এই কঠিন কাজটি করতে শুরু করে দিল।
এ সব লোকেরা কি কাজ করছে তা দেখবার জন্য ঈশ্বর পৃথিবীতে নেমে আসলেন আর তিনি দেখলেন যে তাদের দালান উঁচু থেকে উঁচু হচ্ছিল। তিনি দেখলেন লোকদের ধারণা বড় থেকে বড় হচ্ছে। তিনি জানতেন যে, এসব একদিন বিপদের কারণ হবে। তারা চিন্তা করতে শুরু করল যে, তারা এখন সবকিছু করতে পারে। তাই তারা ভাবতে শুরু করল যে, তারাই দেবতা।
এসব দেখে ঈশ্বর চিন্তা করলেন যে তারা যেহেতু একই ভাষাতেই কথা বলে আর এই কারনে তারা খুব সহজে এই উঁচু দালানটা তৈরী করার সিদ্বান্ত নিতে পেরেছে। তাই ঈশ্বর তাদের মুখের ভাষা বা কথা আলাদা করে দিলেন, কেউ করো বাষা বা কথা আর বুঝতে পারলো না। শেষে তারা উঁচু দালান বানানো কাজ বন্ধ করে দিয়ে এদিক ওদিক চলে গেলেন।
ঈশ্বর দেখলেন যে, লোকেরা যদি নানা ভাষায় কথা বলতে শুরু করে তবে তারা একে অন্যের ভাষা বুঝতে পারবে না, তাদের পক্ষে এক সঙ্গে কাজ করাও কঠিন হবে।
এভাবে ঈশ্বর পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায়(জায়গায়) তাদের ছড়িয়ে দিলেন। পূর্ব ও পশ্চিমে, উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছড়িয়ে পড়ল। তাদের কেউ কেউ সাগর পারে ও ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকের দ্বীপগুলোতে ছড়িয়ে পড়ল। আবার কেউ কেউ মিসর ও আফ্রিকায় গিয়ে বাস করতে লাগল। কেউ কেউ আবার সিরিয়া ও আরবের দিকে চলে গেল।
নোহের পরিবারের লোকেরা এত বেশী বেড়ে গেল যে তারাই পরে অনেকগুলো জাতি হয়ে উঠল। তাদের সবারই নিজের নিজের দেশ ছিল। প্রত্যেকটি দেশের লোকেরা ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলতে লাগল। আর কখনও তারা এক সংগে পরিকল্পনা করে কাজ করবার জন্য এগিয়ে যেতে পারে নি। যখনই লোকেরা বাবিলের উঁচু দালানের বিষয়ে ভাবত তখন তাদের মনে হত কিভাবে তারা এক ভাষা থেকে নানান ভাষায় কথা বলতে শিখেছে।