মৃত লাসার জীবিত হলেন

মৃত লাসার জীবিত হলেন

যীশু যখন যিরূশালেমে যেতেন তখন প্রায়ই তিনি তার বন্ধু মার্থা, মরিয়ম ও তাদের ভাই লাসারের বাড়ীতে থাকতেন। তারা শহর থেকে দু’মাইল দূরে বৈথনিয়া নামে একটি গ্রামে বাস করত।
মার্থা সবসময়ই খাবার-দাবার তৈরীতে ও ঘরের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকত। সে এসব কাজে বেশ পটু ছিল। মরিয়ম একটু চুপচাপ থাকত। যীশু যখন তাদের বাড়ীতে আসতেন তখন সে সব কাজ ফেলে যীশুর কথাই শুনত। এতে মার্থা বিরক্ত হয়ে মাঝে মাঝে বক্বক্ করত।

একদিন সে যীশুকে বলল, ‘গুরু মরিয়মকে একটু বলুন যেন সে আমাকে রান্না ঘরে একটু সাহায্য করে।’
যীশু উত্তরে মার্থাকে বললেন, ‘মার্থা, ব্যস্ত হয়ো না, তুমি অনেক বিষয় নিয়ে ভাবছ। আজ না হয় একটু সাধারণ খাবারই তৈরী কর। মরিয়ম আমার কথা শুনছে, সে তো ঠিক কাজটাই করছে।’

এইদিন এই বোনেরা যীশুকে খবর পাঠাল। ‘লাসার খুব অসুস্থ; যীশু, আমাদের এখানে আসুন।’
তারা জানত যে, যীশু তাদের সবাইকে কত ভালবাসেন। তাই তারা আশা করেছিল যে, খবর পাওয়া মাত্র যীশু সোজা এখানে চলে আসবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে যীশু সেখানে আসলেন আরো দু’দিন পরে। এই সময়ের মধ্যে যীশু জানতেন যে, লাসার মারা গেছে- আর এসবের মধ্যে ঈশ্বরের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল।
যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে বললেন, ‘চল, আমরা বৈথনিয়াতে যাই।’
তারা বলল, ‘ওখানে যাওয়াটা বিপদের হবে। যিরূশালেমে আপনার অনেক শত্রু আছে।’
কিন্তু যীশু পরিষ্কারভাবে বললেন যে তাঁরা ওখানে যাচ্ছেন। তাই থোমা বললেন, ‘চল, আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে যাই যেন সবাই তাঁর সঙ্গে মরতে পারি।’

যীশু যখন বৈথনিয়াতে এলেন তখন চারদিন হয়েছে লাসার মারা গেছে। মার্থা ঘর থেকে বের হয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে এল।
মার্থা বলল, ‘গুরু যদি এখানে থাকতেন তবে আমার ভাই মারা যেত না।’
যীশু বললেন, সে আবার জীবিত হবে।’
উত্তরে মার্থা বলল, ‘আমি জানি সে জীবিত হবে, যখন পুনরুত্থান দিনে ঈশ্বর সব মৃতকে জীবিত করবেন তখন।’
যীশু বললেন, ‘আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর বিশ্বাস করে সে মরে গেলেও বেঁচে থাকবে।’
মার্থা মরিয়মকে বললেন, যীশু তাকে ডাকছে। তাই সে কাঁদতে কাঁদতে তাড়াতাড়ি যীশুর সংগে দেখা করতে বের হল।
সে মার্থাার মতই যীশুকে বলল, ‘আপনি যদি এখানে থাকতেন তবে আমার ভাই মরত না।’
যখন যীশু তাদের কাঁদতে দেখলেন এবং দেখলেন তাদের আত্মীয়রা ও প্রতিবেশীরাও কাঁদছে, তখন তিনি কাঁদলেন। এতে সবাই দেখল যে, তিনি লাসারকে কত ভালবাসেন। সবাই আশ্চর্য হয়ে ভাবল যে, কেন তিনি আগে এলেন না।

যীশু তাদের সবাইকে নিয়ে কবরের কাছে গেলেন।
তিনি আদেশ দিলেন, ‘কবরের মুখ থেকে পাথরখানা সরিয়ে দেও।’
মার্থা বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আজ চারদিন হয়ে গেছে, লাশ থেকে নিশ্চয়ই দুর্গন্ধ বের হচ্ছে!’
যীশু বললেন, ‘আমি কি তোমাকে বলি নি, যদি বিশ্বাস কর তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখতে পাবে।’
তিনি প্রার্থণ করলেন। পরে তিনি জোরে ডাকলেন:
‘লাসার, বের হয়ে এস!’
লাসার বের হয়ে এল! তখনও তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত কবরের কাপড় দিয়ে বাঁধা। তখনকার দিনে মৃতদেহকে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বাঁধা হত।

যীশু বললেন, ‘কাপড়গুলো খুলে দাও।’
যেসব লোকেরা এই ঘটনা দেখছিল তারা বিশ্বাস করল যে, যীশুকেই ঈশ্বরই পাঠিয়েছেন। কিন্তু যখন প্রধান পুরোহিত ও ফরীশীরা এই ঘটনার কথা শুনতে পেল তখন তারা একটি সভা ডাকল।
তারা বলল, ‘যদি আমরা একে না থামাই তবে সবাই এর উপর বিশ্বাস করবে। এতে রোমীয়রা ভাববে যে, আমরা বিদ্রোহ করেছি- এবং তারা আমাদের সবাইকে ধ্বংস করবে।’
সেদিন থেকে তারা যীশুকে মেরে ফেলবার জন্য পরিকল্পনা করতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ধর্মীয়
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত