দেয়াল-ঘেরা যিরীহো শহর

দেয়াল-ঘেরা যিরীহো শহর

তখন বসন্ত কাল। উত্তর দিকের পাহাড়ের বরফ গলতে শুরু করেছে এবং জর্ডান নদীর পাড় ছাপিয়ে তার জল বইছে।

ইস্রায়েলীয়রা নদী পার হবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নদীর উপরে কোন সাঁকো নেই- নেই কোন হেঁটে পার হওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু ঈশ্বর

তাদের বলেছেন যে, এই দিনেই তারা জর্ডান নদী পার হয়ে যাবে। পুরোহিতেরা তাদের আগে আগে আছেন আর তাদের সঙ্গে

আছে সেই নিয়ম-সিন্দুক যার মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের দশ আজ্ঞা। সমস্ত লোকেরা তাদের দিকে চেয়ে আছে কি ঘটবে সেই আশায়।

পুরোহিতেরা যখন জর্ডানের জলে পা রাখলেন তখনই নদীর কিছু দূরে জলের গর্জন শোনা গেল- জলের স্তর দু’ভাগ হয়ে গেল।

নদীর তীরের উপরের জলের স্তর থেমে নিয়ে একটি বাঁধের মত হল আর নীচের স্তরের জল নেমে গিয়ে একটি শুকনা পথ হয়ে

গেল। ইস্রায়েলীয়রা নদীর শুকনা অংশের মধ্য দিয়ে পার হয়ে যিরীহো শহরের দিকে আগাতে লাগল। ঈশ্বর যিনি মিসর দেশ

থেকে তাদের বের করে এনেছেন তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা করা দেশে নিয়ে আসবার জন্য আবারও তাঁর ক্ষমতা দেখালেন।

সবাই নিরাপদে নদী পার হল। তারা নদীর মধ্য থেকে বারোটি পাথর নিয়ে এল- একেকটি একেক বংশের জন্য। তারা নদীর তীরে

সেগুলো জড়ো করে রাখল।

ঈশ্বর বললেন, ‘এই পাথরগুলো একটি চিহ্ন হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে যখন তোমাদের ছেলেমেয়েরা এই পাথরগুলো দেখবে তখন

তোমরা তাদের বলবে, কত আশ্চর্যভাবে আমি তোমাদের এই প্রতিজ্ঞা করা দেশে নিয়ে এসেছি।’

তারপর নদীর সেই জমা হওয়া জল আবার নিজের জায়গায় ফিরে গেল, আবারও নদীর দু’কুল ছাপিয়ে জল উঠতে লাগল।

সেখানে যা যা ঘটেছিল সেই জড়ো করা পাথরগুলো তার স্বাক্ষী হয়ে রইল।

ইস্রায়েলীয়রা যিরীহো শহরের কাছে ছাউনি ফেলে রইল। তখন উদ্ধার-পর্বের সময় হয়েছিল। এর পরের দিনই তারা প্রথমবারের

মত রুটি সেঁকে, প্রতিজ্ঞা-করা কনান দেশে যেসব শস্য জন্মায় তা ভেজে খেল। সেই দিন থেকে তাদের জন্য আর মান্না পড়েনি।

সেই সময় থেকেই তাদের মরুভূমিতে থাকবার দিন শেষ হয়ে গেল। এবং সেই সময় থেকেই তারা সেই দেশের সমস্ত ফলমূল

খেতে শুরু করল।

যিরীহো শহরের রয়েছে অনেক ইতিহাস। সেই শহর ছিল চারদিকে মোটা ও উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। তখন শহরের সদর দরজা

শক্ত করে বন্ধ করে রাখা ছিল। ইস্রায়েলীয়দের জন্যই সেখানে কেউ ঢুকতে পারত না, বের হতেও পারত না।

ঈশ্বর যিহোশূয়কে বললেন, ‘যিরীহো শহর তোমাদের। আমি এই শহর, এর রাজা ও এর শক্তিশালী সমস্ত লোক তোমাদেরকে

দিলাম। তোমাকে শুধু এই কাজ করতে হবে- প্রত্যেক দিন তোমার সৈন্যরা এই শহরের চারদিক একবার করে ঘুরে আসবে। এ

রকম ছয় দিন করবে। সপ্তম দিনে পুরোহিতেরা শিংগা বাজাতে বাজাতে তোমাদের আগে আগে থাকবেন এবং তাদের সঙ্গে

থাকবে আমার নিয়ম-সিন্দুক। বাকী লোকেরা থাকবে চুপচাপ। ঐ দিনে তোমরা সাতবার সেই শহরের চারপাশ ঘুরবে। তারপর

পুরোহিতেরা যখন তাদের শিংগাতে একটানা আওয়াজ তুলবে তখন তোমরা সবাই মিলে জোরে জোরে চিৎকার করবে। এতে

শহরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়বে। আর তখন তোমরা শহরটি দখল করে নেবে।’

যিহোশূয় লোকদের আদেশ দিলেন আর ঈশ্বর যেভাবে বলেছিলেন লোকেরা ঠিক সেইভাবেই করল। সপ্তম দিনে তারা সাতবার

শহরটি ঘুরল আর যখন পুরোহিতেরা তাদের শিংগা বাজাতে লাগলেন তখন যিহোশূয় লোকদের বললেন, ‘জোরে চিৎকার করুন

কারণ ঈশ্বর এই শহর আমাদের দিয়েছেন।’

তখন লোকেরা খুব জোরে চিৎকার করতে থাকলে শহরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ল। তখন তারা শহরে ঢুকে শহরটি দখল করে নিল।

সেখানকার কাউকে বাঁচিয়ে রাখল না। কেবল রাহব ও তার পরিবারের লোকজনকে বাঁচিয়ে রাখা হল যেমন তারা আগে প্রতিজ্ঞা

করেছিল। তারা সেখান থেকে সোনা, রুপা ও ব্রোঞ্জের জিনিস ও লোহা ঈশ্বরের তাঁবুর জন্য নিল। এরপর তারা শহরে আগুন

লাগিয়ে তা পুড়িয়ে দিল। ঈশ্বর তাঁর লোকদের কনান দেশে এই প্রথম একটি বড় বিজয় দিলেন। এতে যিহোশূয়ের সুনাম কাছের ও

দূরের সব দেশে ছড়িয়ে পড়ল ও সব জাতির লোকেরা তাকে ভয় করতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ধর্মীয়
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত