অনেক অনেক আগের কথা, ঈশ্বর চিন্তা করলেন যে তিনি তার মনের মত করে এই পৃথিবী সৃষ্টি করবেন। আর তিনি তাই
করলেন, দিনের আলোর জন্য তিনি সূর্য এবং রাতের জন্য চাঁদ ও তারা সৃষ্টি করলেন। এর সাথে তিনি আকাশ, সাগর, নদী-
নালা,খাল-বিল ও সৃষ্টি করলেন।
এমন কি তিনি এই সুন্দর পৃথিবীটাকে আর ও সুন্দর করার জন্য আকাশে উড়বার জন্য পাখী, সাগরে সাঁতার কাটার জন্য মাছ
এবং শুকনো জমিতে চ ড়ে বেড়াবার জন্য নানারকম প্রাণী সৃষ্টি করলেন। তাঁর সৃষ্টি দেখে তিনি নিজেই খুব খুশী হলেন। সত্যি,
সবকিছু খুব চমৎকার হয়েছে! পৃথিবীটা সত্যিই এখন মানুষ বাস করার জন্য প্রস্তুত হয়েছে। তখন ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করলেন- তারা
ছিলেন আদম ও হবা।
ঈশ্বর আদম ও হবাকে তাঁর এই নতুন এবং সুন্দর পৃথিবী দেখাশোনা করার জন্য দায়িত্ব দিলেন যেন তারা গাছপালা, পশু-পাখি ও
মাছের যত্ন নিতে পারেন। তিনি তাদের বাস করার জন্য খুবই সুন্দর একটি জায়গা দিলেন। সেখানে নদীর ঠান্ডা জল, গাছের ছায়া
এবং খাবার জন্য ছিল সব রকমের ফলের গাছ। এই সুন্দর জায়গাটির নাম ছিল এদন বাগান।
এসব পেয়ে আদম ও হবা খুবই খুশি। এ সব কিছুর ভিতরও ঈশ্বর তাদের একটি বিষয় এর জন্য বারণ করলেন। সেখানে ভাল-
মন্দ-জ্ঞানের গাছ বলে বিশেষ একটি ফলের গাছ ছিল। তিনি তাদের সেই গাছের ফল খেতে বারণ করলেন। ঈশ্বর বললেন যে,
যদি তারা সেই ফল খায় তবে অবশ্যই মারা যাবে। আদম ও হবা সেখানে ঠিক ঈশ্বরের বন্ধুর মত থাকতে লাগলেন। ঈশ্বর যেমন
বললেন তারা সেভাবেই বাস করতে লাগলেন।
কিন্তু সে বাগানে এমন একজন ছিল যে ঈশ্বরের এই সুন্দর পৃথিবী একেবারে শেষ করতে চেয়েছিল। হবা একদিন ভাল-মন্দ-
জ্ঞানের সেই বিশেষ গাছটির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তার কানে আসে সাপের ফিস্ ফিস্ গলার শব্দ।
হবা হবা,হবা দেখ এই ফলটা কত সুন্দর! এই ফল খেলে তুমি জ্ঞানী হবে। এটা যদি খাও তবে তোমরা ঈশ্বরের মতই বুদ্ধিমান
হবে।’
হবা সাপের সেই ফিস্ ফিস্ কথা শুনে ঐ ফলের দিকে চেয়ে দেখলেন। আর তখন হবা ভুলে গেলেন যে ঈশ্বর কত মহান ও
দয়ালু। তিনি ঈশ্বরের মত বুদ্ধিমান হতে চাইলেন এবং নিজের ইচ্ছামত কাজ করতে চাইলেন। হবা হাত বাড়িয়ে একটা ফল পেড়ে
খেতে শুরু করলেন এবং তা থেকে তিনি আদমকেও একটু খেতে দিলেন।
সেই সময় থেকেই তারা দেখল যে তাদের সবকিছুই যেন কেমন ভুলভাল হতে শুরু করেছে ।
ঈশ্বর আগে থেকেই জানতেন আদম ও হবা কি করেছেন। কেউ কোন কিছু তাঁর কাছ থেকে লুকাতে পারে না। আদম ও হবা
ঈশ্বরের বন্ধু হিসাবে আর থাকতে পারলেন না। তিনি তাদের ঐ বাগান থেকে বের করে দিলেন।
ফলে তাদের ভুলের জন্য এদন বাগান থেকে বের হয়ে আসতে হল। সেখানে তারা খুবই সুখে বাস করছিলেন। তারা সেখানে
ঈশ্বরের সঙ্গে বেড়াতেন। কিন্তু এখন ঈশ্বর বাগানের ঢোকার পথে একজন স্বর্গদূতকে পাহারাদার হিসাবে রাখলেন যেন তারা
আর ফিরে আসতে না পারেন।
এখন তাদের খুব কঠিন কাজ করতে হবে- আর এটা এত কঠিন কাজ হবে যে, তারা ক্লান্ত হয়ে যাবে। এখন তারা বুঝতে পারলেন
যে কষ্ট কাকে বলে। সবচেয়ে কষ্টের এবং দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তারা বুঝতে পারলেন যে, তারা যখন বৃদ্ধ হবেন তখন তাদের মারা
যেতে হবে।
আদম ও হবা বাগান থেকে চলে আসবার পরে তাদেরকে ঈশ্বর কয়িন ও হেবল নামে দু’টি ছেলে হয় উপহার দিলেন। বড় হয়ে
কয়িন হল একজন কৃষক। সে জমি চাষ করত এবং ফসল উৎপাদন করত।আর হেবল তার বাবার মেষপাল চড়াত। তাই সে ছিল
রাখাল।
ফসল কাটার সময় হলে পর কয়িন তার ফসল থেকে কিছু অংশ নিয়ে ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করে ধন্যবাদ দিল। আর হেবল তার
মেষের ভিতর থেকে সব চেয়ে সুন্দর মেষটাকে ঈশ্বরের নামে উৎসর্গ করে ধন্যবাদ দিল। এটি ছিল খুবই ভাল একটি উপহার।
কিন্তু আমরা উপহার দিয়ে ইশ্বরের ভালবাসা কিনতে পারি না। আমরা মানুষ হিসাবে আমাদের হৃদয় কেমন তিনি তাই-ই দেখেন।
হেবল একজন ধার্মিক লোক ছিল এবং ঈশ্বরের উপর নির্ভর করত। তাই ঈশ্বর হেবলের উপহার গ্রহণ করলেন। কিন্তু কয়িন ছিল
হিংসুটে ও রাগী। সে তার ভাই হেবলকে ঘৃণা করত। সে জানত যে, ঈশ্বর তার উপহারে খুশী হন নি।
একদিন দু’ভাই যখন মাঠে ছিল তখন কয়িন হেবলকে খুন করল। সে ভেবেছিল কেউ তাকে খুন করতে দেখেনি। কিন্তু সে যা
করেছিল ঈশ্বর সবই দেখেছিলেন।
তাই ঈশ্বর কয়িনকে কঠিন শাস্তি দিলেন। যার ফলে সে তার পরিবার ও ঘর-বাড়ি ছেড়ে দূরে চলে গেল। ঈশ্বরের সৃষ্টি করা এই
নতুন ও সুন্দর পৃথিবী এইভাবেই দিন দিন নষ্ট হয়ে যেতে লাগল।