ইস্রায়েলের উত্তরের রাজ্যে যেখানে এলিয় ও ইলিশায় বাস করতেন- সেখানে প্রায় সবসময়ই রাজ্যের ক্ষমতার জন্য গন্ডগোল লেগেই থাকত। সেখানকার রাজারা ঈশ্বরের অবাধ্য ছিলেন। সেখানে প্রায়ই বিদ্রোহ ও যুদ্ধ লেগে থাকত।
দক্ষিণের রাজ্য যিহূদার অবস্থা অবশ্য এর চেয়ে একটু ভাল ছিল। তাদের রাজধানী যিরূশালেমে একজন রাজা দায়ূদের বংশের লোক। তাদের মধ্যে বেশীর ভাগ রাজাই ছিলেন ভাল এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত, কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন ইস্রায়েলের রাজার মতই দুষ্ট। তারা জীবন্ত ঈশ্বর থেকে মুখ ফিরিয়ে বাল দেবতার পূজা করতেন।
যিহুদার রাজা শলোমনের পরে তার ছেলে রহবিয়াম রাজা হয়েছিলেন। রহবিয়ামের পরে তার ছেলে রাজা অবিয়; তার ছেলে রাজা আসা; তার ছেলে রাজা যিহোশাফট এবং তার ছেলে যিহোরাম রাজা হয়েছিলেন। রাজা যিহোরাম একটি বোকামী করেছিলেন। তিনি ইস্রায়েলের রাজা আহাবের মেয়ে অথলিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। তারা জানা উচিত ছিল যে, এরকম বিয়ে তাকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। আর ঠিক তাই হয়েছিল। কিন্তু এর চেয়েও বেশী বিপদ হয়েছিল যিহোরামের মৃত্যুর পরে।
রাজা যিহোরাম ও রাণী অথলিয়ের ছেলে অহসিয় তার বাবার মৃত্যুর পর রাজা হলেন। রাজা হয়েই তিনি ইস্রায়েল রাজ্যে বেড়াতে যাবার জন্য সিদ্ধান্ত নিলেন। দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি একটি ভুল সময় বেছে নিয়েছিলেন।
তিনি যখন ইস্রায়েলে গেলেন তখন যেহূ নামে একজন সেনাপতি সেখানে রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তাতে ইস্রায়েলের রাজা মারা যান। রাণী ঈষেবলকে রাজপ্রাসাদের জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। তাতে তিনি নির্মমভাবে মারা যান। (অবশ্য ঈশ্বর এভাবেই তার মৃত্যুর কথা বলেছিলেন)।
অহসিয় তার রথে চড়ে পালাতে চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু যেহূর লোকেরা তাকে ধরে ফেলে। তিনি খুব আঘাত পান এবং তার নিজের দেশে ফিরে আসার আগেই মারা যান।
কি ঘটেছে তা যখন রাজমাতা অথলিয়া জানতে পারলেন তখন তিনি প্রতিশোধ নেবার জন্য পাগলের মত একটা কাজ করলেন। তিনি রাজ পরিবারের সব লোককে মেরে ফেলবার আদেশ দিলেন। এরপর তিনি নিজেই যিহুদা-রাজ্য শাসন করতে শুরু করলেন।
এর ফলে রাজা দায়ূদের বংশ শেষ হয়ে যেতে পারত কিন্তু ঈশ্বর দায়ূদের বংশ রক্ষা করলেন। কারণ তিনি দায়ূদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, ‘তোমার বংশ কখনও শেষ হবে না।’
অথলিয়া রাজ পারিবারের সবাইকে মেরে ফেললেন কিন্তু বাকী রইল একজন সে ছিল রাজা অহসিয়ের শিশু ছেলে যোয়াশ। তার এক পিসি তাকে রক্ষা করেছিল। সে তাকে মন্দিরে নিয়ে লুকিয়ে রেখেছিল।
তখনকার মহাপুরোহিত যিহোয়াদা তাকে ছয় বছর গোপনে লালন-পালন করলেন। এটা ছিল খুবই গোপন বিষয়। কেউ এ খবর জানত না। যোয়াশ যখন সাত বছরে পা দিল তখন মহাপুরোহিত যিহোয়াদা প্রধান সেনাপতিকে ডেকে এনে এই গোপন বিষয় তাকে জানান।
যিহোয়াদা তাকে বললেন, ‘আপনাকে এখন এই-এই করতে হবে।’ তিনি তাকে একটি পরিকল্পনার কথা বললেন।
এর পরের শনিবার অর্থাৎ বিশ্রামবারে পালা করে সৈন্যরা মন্দির পাহারা দিচ্ছিল। তখন যিহোয়াদা যোয়াশকে মন্দিরের বাইরে আনলেন। তার সঙ্গে সব সৈন্যরা ছিল। তিনি সেই বালকের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিয়ে তাকে যিহূদার সত্যিকারের রাজা বলে ঘোষণা দিলেন।
এসব দেখে লোকেরা ভীষণ খুশি হল। তারা চিৎকার করে বলল, ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোক!’
অথলিয় যখন এই আওয়াজ শুনতে পেলেন তখন তিনি তাড়াতাড়ি মন্দিরের দিকে এসে দেখতে পেলেন যোয়শ সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।
অথলিয় চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাসঘাতকতা!’ কিন্তু কেউ তাকে সাহায্য করতে গেল না। রাণী অথলিয়ার রাজত্ব ছিল সন্ত্রাসের রাজত্ব। সবাই তাকে ঘৃণা ও ভয় করত। তাই সৈন্যরা তাকে মেরে ফেলল।
এরপর লোকেরা বালদেবের মন্দিরে গিয়ে সেখানকার সব মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে বেদিটা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিল। তারা আবারও স্বাধীনভাবে তাদের ঈশ্বরের উপাসনা করতে এবং শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করল।
রাজা যোয়াশ চল্লিশ বছর রাজত্ব করলেন। মহাপুরোহিত যিহোয়াদা যোয়াশকে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরের আইন-কানুন ভালবাসতে ও তা মানতে শিখিয়েছিলেন, রাজা সেই শিক্ষা কখনও ভুলে যান নি।
সেই সময় ঈশ্বরের মন্দিরের প্রতি খুবই অবহেলা করা হয়েছিল। রাজা হিসাবে যোয়াশ প্রথম যে কাজ করতে চেয়েছিলেন তা ছিল ঈশ্বরের মন্দির মেরামত করা ও সুন্দর করে তৈরী করা। তাই শুধু বালক রাজা হিসাবেই নয়, ঈশ্বরের মন্দিরের মেরামত ও সুন্দর করে সাজাবার জন্য তিনি ইতিহাসে সুনাম লাভ করেছেন।