পৃথিবী সৃষ্টির অনেক অনেক বছর পরের কথা। ধীরে ধীরে অনেক লোকের জন্ম হল। তাদের অনেক ছেলেমেয়ে হল, নাতিপুতি হল,মারাও গেল, এভাবেই লোকসংখ্যা বেড়েই চলছিল। ঈশ্বরের এই সুন্দর পৃথিবীতে সবকিছু খারাপ থেকে আরও খারাপ হতে লাগল। লোকজনেরা একে অন্যের সাথে মারামারি, ঝগড়া-ঝাটি শুরু করল। তারা একজন আরেকজনকে আর ভালবাসত না। এমনকি ঈশ্বরকেও ভালবাসত না। ঈশ্বর যেভাবে চলতে আদেশ করতেন তারা সেভাবে চলত না। কেউ ঈশ্বরের কথা শুনত না। ঈশ্বর এই মানুষ সৃষ্টি করেছেন বলে মনে ভীষণ দুঃখ পেলেন। ঈশ্বর চিন্তা করছিল কি করা যায় – পরে তিনি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলেন আবার নতুন মানুষের মধ্য দিয়ে নতুনভাবে সবকিছু শুরু করা। তাই তিনি একটি বড় বন্যা পাঠিয়ে এই পৃথিবীর সব জীবন্ত প্রাণীকে ধ্বংস করবার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তখনও কিন্তু পৃথিবীতে একজন ভাল লোক ছিলেন, যিনি ঈশ্বরের বাধ্য ছিল। তার নাম নোহ। ঈশ্বর নোহকে ভয়ংকর এক বন্যার বিষয়ে তাঁর পরিকল্পনা জানালেন। ঈশ্বর নোহ ও তার পরিবারকে রক্ষা করতে চাইলেন তাই তিনি নোহকে একটি বড় জাহাজ বানাতে বললেন। জাহাজটা এত বড় হবে যে, সেখানে নোহ, তার স্ত্রী, তার তিন ছেলে শেম, হাম, যেফত এবং তাদের স্ত্রীরা থাকবে। এছাড়া, সব রকমের এক জোড়া করে পশু-পাখীও থাকতে পারবে। সেখানে অনেক দিনের জন্য খাবারও জমা করে রাখতে হবে। নোহ খুব মনোযোগের সঙ্গে ঈশ্বরের কথা শুনলেন এবং ঈশ্বর যেমন বলেছিলেন ঠিক তেমন একটি জাহাজ তৈরী করলেন।
নোহ যখন সেই জাহাজ তৈরী করছিলেন তখন অনেক লোক তা দেখতে আসত। অনেক দিন ধরে তিনি তা তৈরী করেছিলেন। লোকেরা যখন তাকে জিঞ্জেস করত তিনি কি তৈরী করছেন, তখন ঈশ্বর যে বন্যা পাঠানোর কথা বলেছিলেন, সে কথা তিনি তাদের বলতেন এবং তাদেরকে পাপ থেকে মন ফিরানোর কথা বলতে।
কিন্তু সেই কথা তারা পাত্তাই দিত না। তারা ভাবত নোহ পাগল হয়ে গেছে। শুকনা জায়গার মধ্যে সে একটা জাহাজ বানাচ্ছে। সাগর আর নদী তো অনেক দূরে! কিন্তু তাদের কথা শুনে নোহ তার কাজ বন্ধ করেন নি। তিনি জাহাজ বানাতেই থাকলেন এবং একদিন সেই জাহাজ বানানোর কাজও শেষ হলো।
তারপর হঠাৎ একদিন বৃষ্টি শুরু হল। ঈশ্বর আগেই যেমন বলেছিলেন তেমনি নোহ, তার স্ত্রী, ছেলেরা ও তাদের স্ত্রীরা ও সব পশু-পাখী সেই জাহাজে ঢুকল। সবাই ঢোকার পর ঈশ্বর নিজেই সেই জাহাজটির দরজা বাইরে থেকে শক্ত করে বন্ধ করে দিলেন। এরপর শুরু হল বৃষ্টি। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত চলল সেই বৃষ্টি। দেখতে দেখতে নদীগুলো সব পানিতে ডুবে গেল। বন্যায় সব শুকনো জায়গা তলিয়ে যেতে লাগল। বন্যার জল সেই জাহাজের কাছে চলে এল। সেই জল আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলে জাহাজটি সেই জলে ভাসতে লাগল। তখনও বৃষ্টি পড়ছে এবং জলও বাড়ছে। বৃষ্টির জলে আস্ত আস্তে সবকিছু এমনকি মানুষও ডুবে যেতে লাগল, কেউই বেঁচে রইল না। এরপর, বড় পাহাড়ের চুড়াও ডুবে গেল। জল ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। শুধু নোআহ ও তার পরিবারের লোকেরা ও পশু-পাখী যা তাদের সঙ্গে ছিল তারা বেঁচে রইল। একেবারে শুন্য হেয় গেল সমস্ত পৃথিবী।
অবশেষে বৃষ্টি থামল। আস্তে আস্তে বৃষ্টির জল শুকাতে শুরু করল। দেখা গেল জাহাজটি একটি পাহাড়ে আটকে রয়েছে। নোহ দেখতে চাইলেন বৃষ্টির জল শুকিয়েছে কিনা, আর তারা সবাই জাহাজ থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কিনা। তখন তিনি জানালা খুলে ্কটি কাক বাইরে ছেড়ে দিলেন। যখন সেই কাকটি আর ফিরে এল না তখন ছেড়ে দিলেন একটি কবুতর। কিন্তু সেই কবুতরটি শুকনা জায়গা না পেয়ে আবার নোহের কাছে ফিরে এল।
এর কয়েক দিন পর নোহ আবার সেই কবুতরটি ছেড়ে দিলেন। কবুতরটি একটি সবুজ জলপাইয়ের কচি পাতা মুখে নিয়ে আবার তার কাছে ফিরে এল। এতে নোহ বুঝতে পারলেন যে, জল শুকাতে শুরু করেছে। এর কিছুদিন পরে তৃতীয়বারের মত আবার সেই কবুতর ছেড়ে দিলেন, কিন্তু সেটা আর ফিরে এল না। এরপরই নোহ বুঝতে পারলেন, পৃথিবীর মাইট শুকিয়েছে।
তখন ঈশ্বর নোহকে বললেন যে, নতুন পৃথিবীতে আবার নতুন করে সবকিছু শুরু করার জন্য এখন তোমাদের জাহাজ থেকে বের হয়ে আসার সময় হয়েছে। সেই দিনটা কতই না আনন্দের ছিল! মানুষ ও পশু-পাখী শুকনা মাটিতে পা রাখবার জন্য জাহাজ থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে লাগল। নোহ ও তার পরিবারের লোকেরা খুশিতে হাসছে ও চিৎকার করে আনন্দ করছে। শেষে, ঈশ্বর তাদেরকে রক্ষা করেছেন বলে তাঁকে ধন্যবাদ দিল।
তারা একটি পাথরের উপর আরেকটি পাথর রেখে একটি বেদি তৈরী করল। সেখানে তারা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেবার জন্য একটি পোড়ানো-উৎসর্গের অনুষ্ঠান করল। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছিল তখন আকাশে একটি সুন্দর রঙধনু দেখা দিল। ঈশ্বর তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন যে, তিনি আর বন্যা দিয়ে পৃথিবী ধ্বংস করবেন না। তিনি সেই রঙধনুটিকে একটি চিহ্ন হিসাবে দিলেন যেন পৃথিবীর লোকেরা জানতে পারে, ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে চলেছেন।