বৃদ্ধ হওয়ার সুবিধা ৩টি ইসলামী গল্প

(১) বৃদ্ধ হওয়ার সুবিধা

হাদীস শরীফে আছে যে, ‘আল্লাহ্ তা’য়ালা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সম্মানজকন ভাবে বিবেচনা করে থাকেন।’

ইয়াহিয়া ইবনে আকছাম (রঃ) ছিলেন বোখারী শরীফের উস্তাদ। তিনি এই হাদীসটি মনে রেখেছিলেন। যখন তাঁর এন্তেকাল হল এবং আল্লাহ্ পাকের দরবারে পেশ করা হল তখন আল্লাহ্ জিজ্ঞেস করলেন, এই বৃদ্ধ! তুমি কী নিয়ে এসেছো?” ইয়াহিয়া চুপ হয়ে রইলেন। আল্লাহ্ পাক আবার একই কথা জিজ্ঞেস করলেন। তিনি এবারও চুপ থাকলেন। তৃতীয় বার আল্লাহ্ পাক বললেন, “এই বৃদ্ধ! জিজ্ঞেস তোমাকেই করছি, জওয়াব দিচ্ছ না কেন”? তিনি আরজ করলেন, “আয় আল্লাহ্! জওয়াব কী দিব, চিন্তা করছি।” আল্লাহ্ বলেন, “কী চিন্তা করছো?” তিনি আরজ করলেন, “আমি সনদ (সূত্র) সহ একটি হাদীস শুনেছি।” এই বলে তিনি সনদ বয়ান করলেন।

আমি হাদীস শরীফে পড়েছি ‘আল্লাহ্ তা’য়ালা বৃদ্ধ ব্যক্তিকে সম্মানজকন বিবেচনা করে থাকেন। কিন্তু আজ দেখছি বিপরীত আচরণ করা হচ্ছে, তাই চিন্তা করছি।’ আল্লাহ্ পাক এরশাদ করলেন, “তুমি হাদীস ছহীহ শুনেছো। নিশ্চয় আমি বৃদ্ধদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে থাকি। যাও, আজ শুধু বৃদ্ধ হওয়ার কারণে তোমাকে নাজাত দিয়ে দিলাম।” জীবনের সমস্ত এবাদত কবুল হয়ে গেল।

(আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ; খন্ড ৭,পৃষ্ঠা ২১৪)

(২) নকল বৃদ্ধ

সারা জীবনের এবাদত শুধু মাত্র বৃদ্ধ হওয়ার কারণে কবুল হতে পারে। কিন্তু ইচ্ছা করলেই বৃদ্ধ হওয়া যায় না। তাই এক যুবক তার এবাদত কবুল করানোর জন্যে বৃদ্ধ হওয়ার ভান করল। মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে সে তার এক বন্ধকে ওছিয়ত করল, “যখন আমি মরে যাব, আর গোছল ও কাফন পরানোর পরে যখন আমাকে কবরে রাখা হবে তখন তুমি কিছু আটা সঙ্গে নিয়ে যেয়ো। তারপর আমাকে কবরে রেখে দেয়ার পর তুমি আমার কাফন খুলবা এবং সেই আটা আমার দাড়িতে ছিঁটিয়ে দিও। অন্য কাউকে বললে এ কাজটি করবে না।

কিন্তু তোমার উপর আমার আস্থা আছে। তুমি অবশ্যই এই কাজ করবা। কারণ তুমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।” অতঃপর এরূপই করা হল। তারপর যখন এই মৃত ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে পেশ করা হলো তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, “এই আটা দাঁড়িতে ছিঁটানোর কারণ কি ছিল? লোকটি আরজ করল, “আয় আল্লাহ্! আমি আলেমদের কাছে একটি হাদীস শুনেছিলাম যে, আল্লাহ্ তা’য়ালা বৃদ্ধদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করে থাকেন। কিন্তু আমি জোয়ান ছিলাম। আমার দাঁড়ি ছিল কালো। বৃদ্ধ হওয়া সম্ভব ছিল না। ইচ্ছা করে বৃদ্ধ হওয়া যেতো না। কিন্তু ইচ্ছা করে নকল বৃদ্ধ হওয়া যেতো। তাই আটা ছিঁটিয়ে নিয়েছিলাম যেন সাদা দাঁড়ি দেখে আল্লাহ্ তা’য়ালার দয়া হয়, সকল ক্রটি মাফ করে দিয়ে আমার এবাদত কবুল করে নেন।” আল্লাহর আযারের ভয়ের এত ফিকির থাকার কারণে তৎক্ষণাৎ হুকুম হল- যাও, তোমাকে নাজাত দিলাম। (আল এফাযাতুল ইয়াউমিয়্যাহ্ খন্ড ৭, পৃষ্ঠা ২১৫)

(৩) কে বড় সৈয়দ না আলেম?

আদব প্রদর্শনের ব্যাপারে আল্লাহওয়ালাগণ হলেন এক সুন্দর আদর্শ। আলেমগণ সবকিছুকেই যথা নিয়মে মর্যাদা দিয়ে থাকেন। আমাদের হাজী সাহেব (রঃ) আলেম, সৈয়দ এবং বৃদ্ধদের খেদমত গ্রহণ করতেন না। তাদের এই গুণের প্রতি বিশেষভাবে আদব প্রদর্শন করতেন। হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহঃ) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হযরত! আলেম উত্তম না সৈয়দ উত্তম?” হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবি (রহঃ) উত্তরে বললেন, “এ কথা আমরা বলতে পারি যে, তুমি একজন অশিক্ষিত সৈয়দ আমাদের কাছে এনে দাও আমরা তাকে দশ বৎসরে আলেম বানিয়ে দিব। আর আমরা তোমাকে একজন অ-সৈয়দ দিব, তুমি তাকে বিশ বৎসরে সৈয়দ বানিয়ে দিও দেখি!” মাওলানা সাহেবের জওয়াব ছিল কত অদ্ভুত! তুলনা করে বুঝিয়ে দিলেন, অথচ সৈয়দ বংশেরও বেয়াদবী হল না আবার আলেমেরও বেয়াদবী হল না।

(আল এফাযাতুল ইয়্যাউমিয়্যাহ্, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা- ২৭৫)

গল্পের বিষয়:
ধর্মীয়
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত