হিসাব মেলানোর দিন এসে গেছে

হিসাব মেলানোর দিন এসে গেছে

কৃত্রিম একটা পৃথিবী গড়ে তুলেছিলাম আমরা, মেকি কিছু সুখ। করোনা এসে সব তছনছ করে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা বলেছিলাম, বিজ্ঞানই সর্বেসর্বা। করোনার এক ধাক্কায় সেই বিজ্ঞান এখন বিধ্বস্ত।

আমরা বলেছিলাম, মানবতাবাদই পরম ধর্ম, এখন মানবতা বাদ দিয়ে সবাই ‘ইয়া নাফসি’র চৌকাঠ ধরে পড়ে আছে। বলেছিলাম, নারীস্বাধীনতা অর্জিত না হলে সভ্যতা কলঙ্কিত হবে। করোনা এখন সেই বায়বীয় সমীকরণকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে।

আমরা একটা কুহেলিকাপূর্ণ অর্থনীতি দাঁড় করিয়েছিলাম, সুদ কষাকষি থেকে শুরু করে গরিবের রক্ত চোষাচুষি—সবই ছিল। এখন ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আমরা ওপরমহল থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সবাই রিক্তহস্ত।

একটা আভিজাত্য গড়ে তুলেছিলাম, যার ভেতরটা ফোকলা। ঘুণে খাওয়া পরিবার গড়ে তুলেছিলাম, যেখানে সুখ নেই। এখন নিজের গড়া সেই কারাগারে নিজেই কোয়ারেন্টাইনড। পালানোর পথ খুঁজি।

গড়ে তুলেছিলাম প্রতিযোগিতার শহর, কে কার চেয়ে বেশি দুনিয়া কামাতে পারে! সেই দুনিয়া এখন এতটাই সংকীর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এক হাত দূরেও মৃত্যুর পয়গাম নিয়ে অদৃশ্য যবনিকা ঝুলছে। রক্তাক্ত মৃত্যুগুলো দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া আমাদের মধ্যে কবে যে রক্তহীন মৃত্যুর বিভীষিকা তৈরি হয়েছে, বুঝতেই পারিনি। আজ হিসাব মেলানোর দিন এসে গেছে। নেমে গেছে সন্ধ্যা।

ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন; কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)

আধুনিকতা ও বিশ্বায়ন আমাদের কত কিছু দিয়েছে! আমাদের শিখিয়েছে নতুন ভাষা, পরিভাষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, অভ্যাস, সংস্কৃতি—আরো কত কী। আর প্রযুক্তির আস্ফাালনও অস্বীকার করি কিভাবে।

এই সেদিন, আমরা বড় মুখ করে শিখেছি দুটি শব্দ—গ্লোবাল ভিলেজ (Global Village) বা বিশ্বগ্রাম বা বৈশ্বিক পল্লী। বলেছিলাম, বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। পৃথিবীটা যেন একটা পল্লী। যেন আমরা সবাই সেই পল্লীর পরম সুখী বাসিন্দা।

কিন্তু আজ? আজ সেই গ্লোবাল ভিলেজের বিশ্বাস আমাদের বৈশ্বিক মহামারির মুখোমুখি করেছে।

আমরা এখন আলাদা দেশে থাকতে চাই। আলাদা এলাকায় থাকতে চাই। আলাদা, একেবারে আলাদা হয়ে একঘরে থাকতে চাই। আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজের (বিশ্বগ্রাম বা বৈশ্বিক পল্লী) বিশ্বাস থেকে তাওবা করছি!

কেউ কারো নয়—এই চিরসত্য চর্মচোখে প্রত্যক্ষ করছি।

কিন্তু এই আত্মোপলব্ধির সময়ে কোরআনের একটি আয়াতে কি চোখ বুলিয়ে নিতে পারি? যেখানে অজ্ঞাত এক পল্লীর কথা বলা হয়েছে। একসময় তারা নিশ্চিন্ত, নিরাপদ ছিল। পরে…?

পরে আমাদের মতো হয়েছিল তাদের অবস্থা।

কোরআন যে পল্লীর কথা বলেছে, প্রাচীন তাফসিরবিদরা সেই পল্লী হিসেবে মক্কার নাম লিখেছে। কিন্তু একুশ শতকে আমরা যখন কোরআন পড়ছি, তখন এখানে সেই পল্লীর নাম যদি দিই পৃথিবী, তাহলে কেমন হয়? এবার তাহলে মিলিয়ে দেখি! ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক পল্লীর, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। সেখানে আসত সব দিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তা (পল্লীর অধিবাসীরা) আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল। ফলে তাদের কৃতকর্মের কারণে আল্লাহ তাদের ক্ষুধা ও ভয়ের মজা দেখালেন।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১১২)

তবু কি আমাদের হুঁশ ফিরবে না।

গল্পের বিষয়:
ধর্মীয়
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত