আনাস বিন মালেক রা. একটা ঘটনা স্মরণ করে কাঁদতেন। উমর রা. এর খেলাফতকাল। পারস্যের সাথে যুদ্ধ। বিখ্যাত এক শহরের নাম তসতুর। সুরক্ষিত এক দূর্গ। মুসলমানরা গোটা দেড় বছর এ শহর অবরোধ করে রেখেছিল। তারপর আল্লাহ বিজয় দান করলেন। কঠিনতম এক যুদ্ধ ছিল।
দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও দূর্গের প্রধান ফটক কবজ¦া করা যাচ্ছিল না। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ফজরের নামাযের ঠিক আগ মুহূর্তে সদর দরজা দখল হলো। জোয়ারের পানির মতো ত্রিশ হাজার মুজাহিদ শহরে ঢুকে পড়ল। প্রতিপক্ষ দেড় লক্ষ।
নজিরবিহীন লড়াই হলো। মুসলমানদের জন্য ছিল খুব ঝুঁকিপূর্ণূ। দেড়লক্ষ মরিয়া সৈন্যের বিরুদ্ধে , চারদেয়ালের মধ্যে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া চরম ঝুঁকির একটা কাজ। পা-জমিয়ে রাখা কঠিন ছিল।
বিজয় সম্পন্ন হতে হতে সূর্য উঠে গিয়েছিল। ফযর নামায কাজা হয়ে গেল। সঙ্গীন পরিস্থিতিতে ‘সালাতুল খাওফ’ পড়াও সম্ভব ছিল না। আনাস রা. কেঁদে ফেললেন। জীবনে এই প্রথম তাঁর নামায কাজা হলো।
-আপনি তো মাজুর। জিহাদের মতো কাজে ব্যস্ত ছিলেন। ইচ্ছা করলেও তো নামায পড়া সম্ভভ ছিল না। শহরের প্রতিটি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে শত্রু গিজগিজ করছিল ।
-জিহাদ তো জিহাদের যায়গায় আছে। কিন্তু এই ওয়াক্ত নামাযের জন্য তো আমি দুনিয়ার সবকিছু ত্যাগ করতে পারি।
সাহাবায়ে কেরামের বিজয়ের গোপন চাবিকাঠি এখানেই। জিহাদের ময়দানে, অসম্ভব অবস্থায় নামায কাজা করার বিধান আছে ! তবুও তাদের এক ওয়াক্ত নামাযের আকুতি।
শুধু কি নামায ! তারা তো তাকবিরে উলাও ছুটতে দিতে নারায ছিলেন। তারা আসলে নামাযের ভালোবাসার মধ্যে বেড়ে উঠে ছিলেন।
ছেলেবেলা থেকেই নামাযের ভালোবাসা মনে না বসলে , বড় হলে খুব কষ্ট হয়। সহজে নামাযে মতি হয় না। উন্নতমানের নামাযও পড়া হয়ে ওঠে না। দায়সারা গোছের কিছু হয়।
ছেলেবেলাতেই নামাযের ফযিলত শিখিয়ে দেওয়া। ইসলামে নামাযের গুরুত্ব কেমন তা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া। নামায না পড়লে আখিরাতের শাস্তিগুলোর কথাও জানিয়ে দেওয়া।
পুরস্কার তিরস্কার উভয় ভাষায় ব্যবহার করা। সাতবছর থেকেই নামাযে যতœবান হওয়ার ব্যাপারে প্রশিক্ষণ না দিলে , পরবর্তীতে সেটা কঠিন হয়ে যায়। হাদিস মানার মধ্যে বরকত। হাদিরের শিক্ষা হলো, সাত থেকেই সন্তানকে নামাযের প্রতি দাওয়াত দেওয়া শুরু করতে হবে।
জীবনের সবক্ষেত্রেই সফল হতে,নামাযের বিকল্প নাই। সাহাবায়ে কেরামের এটাই ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য।