আদীব !
তোমার কি এখন মনে পড়ে-ডালিম গাছটার কথা। জানালার পাশে নিরব দাঁড়িয়ে থাকত চিকন চিকন পাতা। লাল লাল ফুল। বাঁকা হয়ে নেমে আসা ডালায় ডালায় ডালিম। তুমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকতে। বাতাসের উসকানি পেলে পাতারা তোমার সঙ্গে খেলা করত। তুমিও হাত বের করে দিয়ে ধরতে চাইতে।
হিজল গাছটার কথা তো অবশ্যই মনে আছে তোমার।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে তরতর করে নেমে যেতে চাতালে। হিজল গাছটার কাছে গিয়ে অবাক হতে। পায়ের নিচে এতো ফুল। বসে ছোট ছোট আঙ্গুলে কুড়াতে থাকতে সে ফুল । তারপর তোমাকে কোলে তুলে যখন গাছটা দেখতাম, হাত বাড়িয়ে দিতে ঝুলে থাকা ফুলে থোকায়। কি চমৎকার মালা হয়ে ঝুলে থাকত ফুল। সামান্য দূর থেকে তাকালে মনে হতো নয়ন কাড়া ছবি। সবুজ পাতা। গাড় ঘন সে সবুজের সঙ্গে আহলাদে দুলছে আলতা পরা ফুলেরা।
একদা সে ডালিম গাছটা ছেড়ে এবং হিজলের ফুলগুলো ফেলে আমরা চলে এলাম ঢাকায়। ইট পাথরে ঢাকা এ শহরে।
আদীব!
তখনও তুমি ভুলতে পারনি গ্রাম। তুমি ডালিম গাছটার কথা বলতে। লম্বা নারকেল গাছটার কথা বলতে। বাবুই পাখির বাসাগুলোর কথা বলতে। আমি মনে করিয়ে দিতাম হিজল গাছটার কথা।
তারপরের গল্পটা হয়ত তুমি এখনও ভাবো। প্রিয় ইহতেশাম ঘরের বারান্দায় একটি বাগান করে দিল। মাটির টবে নানা রঙ্গের গাছ। তুমি ছোট। তোমার গাছগুলোও ছোট ছোট। মনে পড়ে, সবুজ জাতায় ছোপ ছোপ হলুদের ছিটা দেখে তুমি বলেছিলে আব্বু, এটা কি গাছ?
: পাতাবাহার।
: অনেক সুন্দর ফুল হবে।
: এর পাতাগুলোই ফুল।
তুমি হেসেছিলে। মন ভালো থাকলে এখনও যেমন হাসো।
তুমি প্রতিদিন সকালে উঠে গাছে পানি দিতে। হাত দিয়ে গাছগুলোকে আদর করতে। তোমার ছ্ট্টো একটা লাল টুকটুকে চেয়ার কিনে দিয়েছিলাম। তোমার ওই বাগানের পাশে চেয়ার বিছিয়ে একা একা বসে থাকতে। রাজার মতো হাসতে ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে। একটু বেলা হলে আসতো প্রজাপতিরা। ওদের ডানার রং তোমাকে মুগ্ধ করত। ধরতে যেতে। উড়ে গেলে খিলখিল করে হাসতে। তোমার আম্মু ঘরের ভিতর থেকে শুকনো গলায় বলত আমার ছেলেটা একা একা হাসে। আনন্দে তার চোখ জল ছলছল হতো।
ভাবি,কি মজার ছিল দিনগুলো। যখন ইটের ঘর করলাম ডালিম গাছটা মারা পড়ল। বাড়িটা যখন বড় হলো খেয়ে ফেলল হিজল গাছটা। মাথাটা উঁচু করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে নারকেল গাছগুলো। পুরোটা বাড়ি এখনও ছায়া দিয়ে শীতল করে রাখে তোমার দাদার আমলের গাছগুলো।
দিনে দিনে শহর ছড়াচ্ছে। অজগরের মতো গিলে খাচ্ছে আমাদের সবুজ। সবুজের কথা আমিও ভাবি। তোমার কথা ভাবি। লাবিব, শাবিব ও আবিরের কথা ভাবি। সবুজ ছাড়া জীবন হয়! ভাবতে ভাবতে মাঝে মধ্যে মন চলে যায় সে অবারিত সবুজের কাছে। যে সবুজ কোনো দিন হারাবে না। কোনো শহর কিংবা অজগর সড়ক গিলে ফেলতে পারবে না যে চিরসুন্দর সবুজ।
আদীব!
তুমিও কিন্তু সে সবুজের গল্প পড়। প্রতিদিনই পড়। মনে পড়ছে তোমার। মনে করিয়ে দিই। এ যে প্রতিদিন মাগরিবের পর সুরা ওয়াকিয়া পড় সেখানে ছড়িয়ে আছে সবুজের গল্প। তোমার শিশুবেলার গাছগাছালির কথা আছে। আছে অনেক মজার মজার কথা। দয়াময় আল্লাহ বলেছেন, আর ডানদিকের দল, কত ভাগ্যবান ডানদিকের দল। তারা এমন বাগানে থাকবে যেখানে কাঁটা ছাড়া বড়ই গাছ। কাঁদি ভরা কলা গাছ। সম্প্রসারিত ছায়া। সদা প্রবাহমান পানি। এবং প্রচুর ফলমূল। যা শেষ হবে না। নিষিদ্ধও হবে না। সুরা ওয়াকিয়ার সাতাশ থেকে তেত্রিশ সংখ্যক আয়াত। এবার গুনগুনিয়ে পড়। মজার সংবাদ।
হ্যাঁ। বেহেশতের কথা বলছি। বেহেশত মানেই বাগান। বাগান মানেই গাছগাছালি আর অবারিত সবুজের সমাহার। অবাক হচ্ছো। তুমি তো পাক কুরআনের হাফেজ। এবং জান্নাত অর্থ যে বাগান তাও তুমি জান। এবার চোখ বন্ধ করে পড়তে থাকো। আল্লাহভীরুদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে এর উপমা হলো এমন : এর পাদদেশে নহর প্রবাহিত । তার ফল ও ছায়া চিরস্থায়ী । সুরা রাদের পঁয়ত্রিশ সংখ্যক আয়াত। এবার সুরা হজে¦র তেইশ সংখ্যক আয়াতটি পড়। যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আল্লাহ তাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে। যার তলদেশে নহর প্রবাহিত । সেখানে তাদেরকে অলংকৃত করা হবে সোনার কাঁকন ও মুক্তা দ্বারা। এবং সেখানে তাদের পোষাক পরিচ্ছদ হবে রেশমের।
এভাবে জান্নাতের যত আয়াত আছে একটা একটা করে পড়তে থাকো। দেখবে যেখানেই জান্নাতের কথা আছে সেখানেই নহরের কথা আছে। নহর মানেই নদী। নদী ঝর্ণা ছাড়া বাগানে প্রাণ আসে না।