জাহাজ চলছে।
কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে উত্তাল তরঙ্গ মাড়িয়ে ছুটে চলেছে জাহাজ। আসরের নামাজের ওয়াক্ত। তিনি ওযু করে অপেক্ষা করছেন আরো কেনো মুসলমানের। তাহলে জামাতে নামাজ পড়া যাবে। অন্তত যদি একজনও পাওয়া যায়। নবীজি বলেছেন, দু’জনেও জামাত হয়।
কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
কেউ নামাজ পড়তে আসছে না।
আসার কথাও ছিল না। পুরো জাহাজে দ্বিতীয় কোনো মুসলমান নেই!
মানুষটি ওযু করে অশান্ত পায়চারী করছেন! পশ্চিম আকাশে সূর্য লাল হয়ে আসছে। তিনি নামাজ পড়তে পারছেন না। একা একা নামাজ পড়ে নেয়া যায়। কিন্তু ২১ বছর হল তিনি জামাত ছাড়া নামাজ আদায় করেননি! আজ মধ্য সাগরে জামাত ছাড়া নামাজ পড়তে হবে; মন মানছে না তাঁর।
জাহাজের সারেং ব্যাপারটি লক্ষ করছিলো। সে উপর থেকে দেখছিলো একজন মানুষ হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো। তাঁর তো রিলাক্সড হবার কথা। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে ফ্রেশ হবার পর তাঁর টেনশন যেনো বেড়ে গেছে আরো। ঘটনা কী?
নেমে এসে জিজ্ঞেস করলো সে। লোকটি জানালেন, আমি একজন মুসলমান। আমি নামাজ পড়তে চাই। কিন্তু পড়তে পারছি না। ২১ বছর হল জামাত ছাড়া নামাজ পড়িনি আমি। এখানে আর কোনো মুসলমান পাচ্ছি না। কাকে নিয়ে জামাত পড়ব!
লোকটি বললো, ক’জন মুসলমান লাগে জামাত হতে?
তিনি বললেন, কমপক্ষে আরো একজন।
সে বললো, চলো, আমাকে কালিমা পড়াও। আমাকে নিয়ে তোমার জামাতে নামাজ আদায় হোক!
তিনি তাকালেন লোকটির দিকে। সে বললো, আমি সত্যি সত্যিই মুসলমান হচ্ছি। ওয়ানটাইম মুসলমান নয়। যে ধর্মের লোক এক নাগারে ২১বছর একটি ধর্মীয় বিধান এত গুরুত্ব দিয়ে পালন করে যায়, সেই ধর্মের সত্যতা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ থাকে না।
ওয়াজ শুনে নয়, কোরআন-হাদিসের রেফারেন্স দেখে নয়, কোনোভাবে প্রভাবিত হয়ে নয়; একজন মুসলমানের একটি আমলের ঐকান্তিকতা দেখেই লোকটি মুসলমান হয়ে গিয়েছিলো। দ্যাটস দ্য স্পিরিট অব ঈমান।
যে মুসলমানের কথা বলা হল, তিনি হলেন মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি। কেমন ছিলেন আমাদের আকাবির? কেমন ছিল তাঁদের ঈমান ও আমল!