প্রতিদিনের মতো আজও,এশার এর আজান দেয়ার পর আমরা ৪ বন্ধুর মধ্যে, ৩জন মসজিদ এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।বাকী রইল একজন।এই একজনকে হাজার বার বলার পর ও মসজিদে নিয়ে যেতে পারি নাহ!!
যাই হোক নামাজ পড়ে এসে দেখলাম যে ও কি নিয়ে টেনশন এ আছে,,কি হইছে জানতে চাওয়াতে বলল আংকেল এর নাকি শরীর খারাপ,,হসপিটাল নিয়ে গেছে,,খবর টা সব বন্ধুদের হৃদয়ে ই আঘাত হানলো,,
একটু পর কল আসলো যে ওর বোন টা নাকি স্কুল থেকে ফেরার সময় এক্সিডেন্ট হ,,তারউপর আজকে আমাদের অনার্স থার্ড ইয়ার এর রেজাল্ট দিছে,,ও ভালো স্টুডেন্ট হলেও রেজাল্ট টা কেন জানি অনেক খারাপ আসছে,, দেখলাম সব মিলিয়ে ও অনেক টেনশন এ আছে এবং পাগল পাগল হয়ে গেছে,,,, তখন তাকে বললাম,,
-বেশী খারাপ লাগতেছে?
-হুমরে দোস্ত
-নামাজে দাঁড়িয়ে যা
-নামাজে দাড়ালে কি হবে
-নবী কারিম (স.) বলছেন যে,,”যখন তোমরা বিপদ এ পড়বে কিংবা অতি ডিপ্রেশন এর মধ্যে থাকবে তখন নামাজে দাড়িয়ে যাবে”।
-কিন্তু আমার তো শরীর পাক নাহ
-চল আজকে আড্ডা দিবো নাহ,,বাসায় গিয়ে তুই পাক হয়ে নামাজ পড়ে নে।
-ওকে
বাসায় এসে ও পাক হয়ে ৪/৬ রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিলো,, বললাম,,
-টেনশন কিছু কমেছে?
-হুম কিছুটা কিন্তু আব্বু-বোন টার খবর তো এখনও পেলাম নাহ রে।
-দেখবি আংকেল আর বোনের কিচ্ছু হবে নাহ
-তাই যেন হয় রে।
নামাজ শেষ করে মুনাজাত শেষ করার পরই ওর বাড়ি থেকে কল আসলো যে আংকেল আর বোনের তেমন বেশি কিছু হয় নি,,আংকেল এর প্রেশার টা লো হয়ে গেছিলো আর বোনের হালকা কাটা ছিড়া গেছিলো,,,৩/৪ দিন এর মধ্যে ই ঠিক হয়ে যাবে। ও এতোটাই খুশি হলো যে আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগলো,,
-আরে আমাকে কেন ধন্যবাদ দিতেছোত?
-তো কাকে দিবো,,
-যিনি আংকেল আর বোন টাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে,,যিনি এই সৃষ্টিকূলের মালিক,,মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দুই রাকাত নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে নে।
ও আর কিছু নাহ ভেবে নামাজ এ দাঁড়িয়ে গেলো!! এরপর থেকে ওরে আর কখনও নামাজ এর প্রতি জোর করতে হতো নাহ,,একদিন ফজর নামাজ শেষে বলতেছে,,,
-দোস্ত নামাজের মধ্যে এত সুখ,,আর আমি কিনা নামাজ ই পরতাম নাহ,,,আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে তো
-হুম করবে,, কারণ আল্লাহ স্বয়ং বলছে যে তোমরা তওবা করো আর ভালো পথে ফিরে আসো।আল্লাহর কাছে অতীত এর জন্য ক্ষমা চেয়ে নিস,,দেখবি ভালো লাগবে।
-হুম রে
-চল এখন একটু ভোরের আবহাওয়া আর সোন্দর্য অনুভব করি
-হুম চল।
একটু পর,,
-দোস্ত আমি এই সুন্দর ভোরের সকাল টাকে আগে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মিস করতাম,,
-হুম তখন তে বুঝতি নাহ,,এখন দেখ নামাজ পরলে কত লাভ,,
-হুম রে
এরপর থেকে ৪ বন্ধু ই নিয়মিত নামাজ আদায় করতে থাকলাম আর পাড়া প্রতিবেশিদের নামাজের জন্য ডাকতাম।আমার ঐ বন্ধুটা টাতো নামাজ এর প্রতি এতো বেশি প্রেমে পড়ছে যে সময় পেলে ই নামাজে দাড়িয়ে যায়।
নামাজ আর আল্লাহর ইবাদত গুলো এমনই,,,নিয়মিত ভাবে আদায় করতে পারলে নিজের কাছে যেমন ভালো লাগে তেমন ই আল্লাহ তায়ালা ও খুশি হন আর আমাদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন।
হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক কে নামাজের গুরুত্ব বুঝার এবং নিয়মিতভাবে পড়ার তৌফিক দান করুন, আমাদের ক্ষমা করুন সকল প্রকার গুনাহ থেকে এবং সকল বিপদআপদ থেকে বাঁচিয়ে রাখুন!!!
—–আমিন
সমাপ্ত