আশ্চর্য নদী
আসুন, এই নদীর ধারে আমরা সবাই বসবো একসঙ্গে
এখানে নেই কালো সাদা টেলিফোন, তার বদলে
 সূর্যমুখী ও চন্দ্রমল্লিকা
 দেহরক্ষীদের রেখেছি কিছুটা দূরে জঙ্গলের আড়ালে
 লাল কার্পেটের বদলে এখানে সবুজ ঘাস
 পা ড়ুবে যাবার মতো নরম
 ছোট ঘোট বোতামের মতন ছড়িয়ে আছে বাস ফুল
 ওরা এই পৃথিবীর অপ্রয়োজনীয় লাবণ্য
 জুতো-মোজা খুলে আসুন,
 পায়ে লাগুক রাত্রির শিশিরবিন্দু
 ব্যক্তিগত সচিব ও ভাষণ-লেখকদের সঙ্গে আনবার দরকার নেই আজ
 কিন্তু সহধর্মিণীরা থাকুন পাশে পাশে
 আঙুলে-আঙুলে ছুঁইয়ে
 আজকের আকাশ মেঘলা কিন্তু সুপবন খেলা করবে চুলে
 এই নদী, অনাদিকালের অনাবিষ্কৃত নদী
 কুলুকুলু সুরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছে
 বসুন, একেবারে জলের ধার ঘেঁষে, এক্ষুনি সব শুরু হবে।
 কে কে আসেন নি এখনো?
 একটু অপেক্ষা করা যাক
 এ তো গোল টেবিল কিংবা শীর্ষবৈঠক নয়
 এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে না,
 কোনো পূর্ব শর্তও নেই
 শুধু কাছাকাছি কিছুক্ষণ বসা, জলের সঙ্গে কিছুক্ষণ খেলা
 অনন্ত ব্যস্ততা থেকে ছিঁড়ে নেওয়া
 কয়েক পলক ছুটি
 যেন স্বপ্নের মধ্যে নিঃসঙ্গতার আহ্বান
 আসছেন, আসছেন, সকলেই আসছেন একে একে
 সদ্য ঘুম ভাঙার মতন বিস্ময় কারুর চোখে মুখে
 কেউ কেউ দর্প এখনো মুছে ফেলতে পারেন নি
 কারুর বা ওষ্ঠে অতি বিনয়ের মিথ্যে হাস্য
 তাতে কোনো ক্ষতি নেই
 কে না জানে, প্রত্যেকের স্বভাবের মধ্যেই রয়েছে স্ববিরোধ!
 সমস্ত দুনিয়াব্যাপী অস্ত্রের ঝঙ্কনার আজ
 সামান্য বিরতি
 কামান ও বিমান, বন্দুক ও কন্দুক সাময়িক ভাবে স্তব্ধ
 পাতালের গুম গুম ও শূন্যবিহারী ধ্বংস দূতেরা
 এক সকাল থেমে থাকবে
 আঁকাবাঁকা সীমান্তগুলিতে সংবরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে
 মৃত্যু ব্যবসায়ীরা মুখ ফেরাবে দেয়ালের দিকে, সময় গুনবে…
হে সমাগত রাজন্যবর্গ, এটা কুরুক্ষেত্র নয়
 আপনাদের সম্বর্ধনার জন্য গান-শ্যালিউটের ব্যবস্থা করা হয় নি
 শুনুন দোয়েল পাখির ডাক
 নিঃশব্দে উড়ে গেল এক ঝাঁক ধপধপে বক
 এর মধ্যেও একটা সঙ্গীত আছে
 কাকচক্ষু এই ভরা নদীর দুকূল ছাপানো জল
 মেহের মতন স্বচ্ছ, ভালোবাসার মন গভীর
 একটু ঝুঁকে তাকিয়ে দেখুন, এ এক মায়াদর্পণ
 এখানে নিজের মুখ দেখা যায় না, অথচ ফুটে উঠছে মুখ
 সবকটিই শিশু, টলটলে চোখ, ঝকঝকে হাসি,
 মাথা ভর্তি চুল
 চিনতে পারছেন না?
 যারা শুধু আদেশ দেয়, তারা নিজেদের বাল্যকাল ভুলে যায়
 পৃথিবীকে প্রথম দেখার স্মৃতি যারা মনে রাখে না।
 তারাই ভাঙতে চায় পৃথিবীকে
 সেইসব মুখগুলি কি একেবারেই হারিয়ে যায়!
সবাই হাত তুলে বললেন, চিনেছি, চিনেছি, এ তো আমারই
 বাচ্চা বয়েসের ফটোগ্রাফ
 জলের মধ্যে দুলছে
 এ অতি সামান্য ম্যাজিক!
 না, ঠিক হয়নি, ভালো করে দেখুন আর একবার
 আপনারাও বাল্যকালে সরল ও নিষ্পাপ ছিলেন
 তা অস্বীকার করছি না
 তবু এই সুন্দর, পবিত্র মুখগুলি কি হুবহু ব্যক্তিগত অতীতের
 কোথাও একটুও অমিল চোখে পড়ছে না?
 শুধু চোখ দিয়ে নয়, মনটাকে কপালের মাঝখানে এনে দেখুন
 খুব কাছাকাছি, তবু অন্য রকম।
 ভুরুর ভঙ্গি, ওষ্ঠের রেখা, চিবুকের ডৌল
 ছবি বদল হয়নি, কোথাও পুরোনো রং নেই
 এইসব মুখের ছবি তোলার মতন আজও
 আবিষ্কৃত হয়নি কোনো ক্যামেরা
 অনাদিকালের এই নদীই শুধু এদের দেখাতে পারে
 এরা অনাগকালের
 আদাদেরই ভবিষ্যৎ প্রপৌত্র ও প্রপৌত্রীরা হাসিমুখে চেয়ে আছে
 ঐ চোখগুলির দিকে তাকিয়ে একবার শুধু ভাবুন
 এদের জন্য কী রকম পৃথিবী রেখে যাবেন আপনারা?
  








