তাহলে দরজারই সমুখে! সেই দরজা! তোমার দরজা!
একদিন যে-দরজা ছিল গরমের খরতাপে বন্ধ ও রঙচটা!
কত সড়কেই না আমি সন্ধান করেছি এমন একটি দরজা
যার পাল্লার কাঠে এসে পড়বে শ্রাবণ-বৃষ্টির সন্তাপহর ধারা।
কিন্তু বিবর্ণ এই সময়, আর আমিও দেখো কী রকম বটে—
তিমির পেটের ভেতরে প্রত্যাদিষ্ট একজন আছি অপেক্ষায়,
কখন বেরুব! তাঁর অপেক্ষারই চাপ আমার সব উচ্চারণে।
একটি বেদনাবৃক্ষ লেবু ফলিয়ে চলেছে জ্যোৎস্নার ভেতরে,
আর সেই জ্যোৎস্না তো আসলে ছিল তোমার ভালোবাসা।
তোমাকে ভালোবেসেই তো আমি দূরপাল্লার যাত্রী, আমি
লেবুগন্ধে মাতাল, আমি প্রতি স্বজনেরই তো দৈনন্দিন পাতে।
সন্ধান আমার শেষ হয় না। দাঁড়াও!—আমি নিজেকে বলছি!
আর এটাও বলে চলেছি, সড়ক তোমাকে একদিন তো ঠিক
ফেরাবেই তোমার প্রার্থিত দরজায়, না হয় এখন খরায়!
নিপুণ তীর, তীক্ষ তীর, রক্তমুখী ভোর, নির্জন সব সড়ক।
এই সব দেখে দেখে নিজের ভেতরেই এক বিচলন আমি
নীলগাইয়ের মতো অনুভব করে চলেছি সেই কতকাল থেকে!
কাল? তার বর্ণটাই বা কেমন? সে কি ঘোর কৃষ্ণলেপিত?
পাটল যেন জমাট রক্ত? নাকি মাঠ ভেসে যাওয়া সর্ষে ফুল?
এই আয়না! ওই দৃশ্যপট! এই সড়ক! আর, ওই দরজা!
নীলগাইয়ের খুরে খুরে উৎপাটিত নক্ষত্র থেকে অগ্নিকণা
এখন আমার সর্বাঙ্গে। কালের আয়নায় আমার চিত্রিত শরীর।
উৎসুক দুটি চোখ, ত্বরিত আমার চলা, পায়ের নিচে পাথর—
আমি তো পৌঁছে যাবারই স্বপ্ন দেখেছি চিরকাল—দরজায়—
তোমারই দরজায়—এখন বৃষ্টিভেজা, শ্রাবণের তুলিতে তার
পাল্লার কাঠে সজল পুষ্পের ছবি ফুটছে একটির পর একটি—
এখনই তো! বৃষ্টিমাথায় দাঁড়িয়ে আছি—খোলো! খুলবে না?
গল্পের বিষয়:
কাব্যগ্রন্থ