আমি ভঙ্গুর হে
আমি যে-নাকি গাইডের কাছে ইতিহাস-শেখা ফোস্কাপড়া পর্যটক
 ছায়ায় হেলান-দেয়া বাতিস্তম্ভের আদলে গিসলুম পিতৃত্ব ফলাবার ইসকুলে
 জানতুম যতই যাই হোক ল্যাজটাই কুকুরকে নাড়ায় রে
আমি যে-নাকি প্ল্যাটফর্মে ভবিষ্যভীতু কনের টাকলামাথা দোজবর
 বস্তাপ্রতিম বানিয়ার বংশে এনেছিলুম হাইতোলা চিকেন চাউনি
 কাদাকাঙাল ঠ্যাঙ থেকে ঝরাচ্ছিলুম ঘেসো ঝিঁঝির সাম্ভানাচ
আমি যে-নাকি ফানুসনাভি ব্যাঙ থপথপে শুশুকমাথা আমলা
 মাটিমাখা নতুন আলুর চোখে-দেখা দু’টাকা ডজন রামপ্রসাদী জবা
 চাষির ঢঙে বলদ অনুসরণ করে পৌঁছেছিলুম বিধানসভার কুয়োতলায়
আমি যে-নাকি পোলকাফোঁটা পুঁইফুলে দু’ভাঁজ করা হেঁইয়োরত বাতাস
 ঢেউ-চাবকানো ঝড়ে যখন বঁড়শি-খেলা পুঁটির পাশে ভাসছি
 তখন বুঝলি লম্বালম্বি করে কাটা কথাবাত্রার লাটিমছেঁড়া ঘুড়ি
আমি যে-নাকি ভূতলবাহী আওয়াজ-মিস্ত্রি হলদে-ল্যাঙোট বাবুই
 চোখে-চোখে শেকল আঁকা ভিড়ের মধ্যে এঁদো বিভাগের কেঁদো
 চি২ড়ি-দাড়া আঙুল দিয়ে খুলছি বসে জটপাকানো মুচকি ঠোঁটের হাসি
কী বিষয় কী বিষয়
আররে রবীন্দ্রনাথ
 তোমার সঙ্গেই তো নেচেছিলুম সেদিন
 আঙুলের ইতিহাসে একতারার হাফবাউল ড়িং ড়াং তুলে
 ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের জমঘট থেকে সদর স্ট্রিটের লবঙ্গবাজারে
 যেতে-যেতে তুমি বললে আমাগো শিলাইদহ থিকা আসতাসি
 আলুমুদ্দিন দপতর যামু
আগুন আর জলের তৈরি তোমার ঠোঁটে
 তখনও একচিলতে ব্রহ্মসঙ্গীত লেগেছিল কী গরম কী গরম
 গ্যাবার্ডিনের আলখাল্লা ফেলে দিলে ছুঁড়ে
 দেখলুম তোমার ফর্সা গায়ে জোঁক ধরেছে
 বড়ো জোঁক বর্ষার জোড়াসাঁকোয়
সেলিমের দোকানে শিককাবাবের গন্ধে
 নেড়েগুলা কী রান্ধতাসে ? জানতে চাইলে
 ও বললে, না বুঝলুঁ ? সাঁড়কে ছালন ছে !
 আহাঁ দেখুঁ না চখকে
চায়ের ঠেকে টাকমাথা চুটকি দাড়ি
 ভ্লাদিমির ইলিচ আর সোনালিচুল ভেরা ইভানোভা জাসুলিচ
 আর তোমার মতন রুপোলি দাড়িতে অ্যাক্সেলরদ আর মারতভ যার গাল আপনা-আপনি কাঁপছিল দেখে
 তুমি বললে, উয়াদের ধড়গুলা কুথায় ?
আমি আমার নাচ থামাতে পারছিলুম না বলে তুমি নিজের একতারাটা দিতে চাইলে কেননা তোমার পা থেকে নাচ যে পেরেছে খুলে নিয়ে গেছে
 আর এখন তো দিনের বেলাও হ্যালোজেন জ্বলে
 কী আনন্দ কী আনন্দ
সদর স্ট্রিটের বারান্দায়
 তোমার তিনঠেঙে চেয়ারখানা পড়ে আছে
 হুড়োহুড়ি প্রেম করতে গিয়ে পায়া ভেঙে ফেলেছিলে
 তারিখ-সন লেখা আছে জীবনস্মৃতিতে
 কী ভালোবাসা কী ভালোবাসা
তোমার ফিটনগাড়ির ঘোড়া তো
 কোকিলের মতন ডাকছে দাদু রবীন্দ্রনাথ
 আর তোমার বীর্যের রেলিক্স থেকে কতজন যে পয়দা হয়েছিল মাটি থেকে ছোলাভাজা তুলে খাচ্ছে
ওগুলা কী ? আমি বললুম কাক;
 ওগুলারে কী কয় ? আমি বললুম সেলিমকেই জিগেস করো
 ও এই অঞ্চলে তোলা আদায় করে ।
 কী ঐশ্বর্য কী ঐশ্বর্য
হার্টঅ্যাটাক
বঁড়শিঝোলানো রোদকিলবিলে নদীর টুকরো থেকে
 এক হ্যাঁচকায় তরল অভিকর্ষ বাতাসে খেলিয়ে ফ্যাকাশে আগুনের পুরুষ
 এই মালগাড়ি-ঘ্যানঘ্যানে গ্রামের গল্ফ-সবুজ দুপুরে বসে রইল কচুপাতায়
 ভ্রাম্যমাণ জলফোসকার দিকে তাকিয়ে
তখন ওর কন্ঠার ঘামফোঁটা বুকের লোমে
 ব্রেইল লিখনে আঙুল বুলিয়ে হাওয়া মাড়াবার নিঃশব্দ আওয়াজ তুলে নামছে
 আর ঝাঁকড়ামাথা কুয়াশায় নাচতে লাগল রোদ্দুরের গন্ধে কাহিল ঝুলশিল্পী
 মাকড়সার ইঁদুর-কালচে দলবল বন্ধ করতে ভুলে-যাওয়া দরোজার
 তাড়া-খাওয়া সুড়ঙ্গে হাওয়ার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল মোমশিখার উদোম হাতছানি
 ক্রমশ আঁটি শক্ত করতে শাঁস আলগা করে দিচ্ছিল গোলাপখাস
  










