দুলে দুলে দুলে দুলে মাটি ওঠে ফুলে ফুলে বাড়ি যাও বাড়ি যাও
বাড়ি যাও বাড়ি যাও, দেখো হাতলণ্ঠনে আছে কিনা কেরোসিন
দেখো পথ দেখে চলো, পেটে খিদে বড় খিদে, বাড়ি গেলে সব পাবে
লেবু আছে নুন আছে, কাঁচা লঙ্কাও গাছে, আছে আছে সব আছে
নেই নেই, পান্তার হাঁড়িতে যে হু হু হাওয়া, কেন এত হু হু হাওয়া
ফুটো হাঁড়ি চোখ আঁকা, জল ছোটে আঁকাবাঁকা চৌকাঠে ভাঙা শাখা
নেই নেই ভাত নেই, আমানি ও চিঁড়ে নই, গুড় নেই খই নেই
কী খাবে গো খাবেটা কী, খিদে জ্বলে দাউ দাউ পেটে কিল পেটে কিল
বউ ছেলে কোথা গেল, ছোট মেয়ে কাঁদুনিটা, সেই মেয়ে কোথা গেল
ঘরে নেই কেউ নেই, আলো নেই ঘর নেই, দেয়ালের চকখড়ি
দাগ নেই দাগ নেই, বসুধারা মুছে গেছে, ঘরভরা ভাঙা কাচে
তালগাছে কেউ নেই, পুকুরেও কেউ নেই, বাতাসেও ঢেউ নেই
কিছুই তো কাঁপে গো, লাউডগা কাঁপে না গো, জানালার খড়খড়ি
কাঁপে গো, কেউ সাড়া দেয় না গো, সারা পাড়া কোনও সাড়া দেয় না গো
ডাকো কার নাম ধরে, কেউ নেই, নাম নেই, নাম ছাড়া কিছু নেই
কেউ নেই একী কথা, নদীটিও কেউ নয়, নীরবতা কেউ নয়
কেউ শাঁখ বাজাল না, প্রতিবেশী সব ঘুমে, কেউ কিছু জানল না
কেউ জেগে উঠল না, একী ঘুম মায়াঘুম, ভাতঘম নেশাঘুম
আর সব ঠিক আছে, চাঁদ ঝোলে নিম গাছে, চাঁদ ফিকিফিকি হাসে
জোনাকিরা ঘোরে কাছে, আর সব ঠিকই আছে, ঠিকঠাক দুরে কাছে
শুধু তুমি একা ঠায় পাছ দুয়োরের কাছে, একা ঠায়, চোখে ভ্রম
কোনও ভ্ৰম, ভ্রম নয়, কিছু নেই কেউ নেই, সব আলো-ছায়া মাখা
দেখা যায় দেখা যায় এক মায়া-সংসার ফুৎকারে উড়ে গেছে
উড়ে গেছে উড়ে গেছে, ভূ-কাঁপনে পাতালের কোথায় যে নেমে গেছে
অথবা কি ছিল কিছু বাড়ি ছিল, ঘর ছিল, প্রেম ছিল, আশা ছিল
বুকভরা দুধ ছিল, কোলজোড়া শিশু ছিল, কান্না ও হাসি ছিল, সব ছিল
কী বিশাল ভাঙনের কিনারায় তুমি একা, মাথা ঘোরে চোখ ঘোরে
তুমি একা তুমি একা, চোখে জল, এত জল, চোখে জল, হু হু জল
কেন আর একা থাকা, কেন আর একা কাঁদা, মাঠে যাও ছুটে যাও ছুটে যাও
মাঠে যাও, কাঠফাটা মাঠে যাও, জল দাও, বুকখালি করে দাও!
গল্পের বিষয়:
কবিতা